পরপর দুই দিন ধরে উত্তর টিগ্রেতে বিমান ও ড্রোন হামলা। মৃত অন্ততপক্ষে ১০ জন। মেকেলেতে আবাসিক এলাকায় ড্রোন-হামলা।
বিজ্ঞাপন
বুধবারের হামলায় ১৪ জন আহতও হয়েছেন। দুইটি ড্রোন থেকে আবাসিক এলাকা ডাগিম আমসালে হামলা করা হয়। ঘটনাস্থলেই পাঁচজনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে আরো পাঁচজন মারা যান।
জরুরি পরিষেবার সঙ্গে জড়িতরা জানিয়েছেন, এই অঞ্চলের সঙ্গে বাইরের বিশ্বের কোনো যোগ নেই। তাই প্রয়োজনীয় জিনিসের একান্তই অভাব রয়েছে। চিকিৎসক কিবরন জানিয়েছেন, ''আমি কী করব জানি না। অক্সিজেন নেই। ওষুধ নেই। ফলে যাদের সুস্থ করে তোলা যেত, তাদের আমরা হারাচ্ছি।'' আর এক চিকিৎসক বলেছেন, ''বেশ কিছু মানুষের অস্ত্রোপচার করা দরকার। কিন্তু তা করা সম্ভব হচ্ছে না।''
টিগ্রে: যুদ্ধের বলি নারীরা
মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, নানা ধরনের অপরাধও বেড়ে চলেছে৷ টিগ্রে কেন্দ্র করে গৃহযুদ্ধ বিশেষ করে নারীদের ওপর যৌন নিপীড়ন একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে৷
ছবি: Ben Curtis/AP/picture alliance
পালাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ
প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের টিগ্রে আঞ্চলিক সরকারের সঙ্গে ইথিওপিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহযুদ্ধ চলছে। প্রচণ্ড ক্ষুধা এবং যুদ্ধাপরাধের হুমকিতে দিন কাটাচ্ছেন সে এলাকার মানুষ।স্বঘোষিত টিগ্রে ডিফেন্স ফোর্সেস- টিডিএফ টিগ্রের আঞ্চলিক রাজধানী মেকেলে পুনরায় দখল করার পর লাখ লাখ মানুষ এখন পলাতক৷
ছবি: YASUYOSHI CHIBA/AFP
দুর্ভিক্ষের হুমকি
জাতিসংঘের হিসাবে, অঞ্চলটির চার লাখের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত, আরো প্রায় ১৮ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। আবি আহমেদ এমন তথ্য অস্বীকার করে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। ইউনিসেফ বলেছে, "খাদ্য, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি এবং পয়ঃনিষ্কাষণ অবকাঠামো ধ্বংসের ফলে পুষ্টির সংকট দেখা দিয়েছে।"
ছবি: AP
ধ্বংসস্তূপ
ইথিওপিয়ার সেনাবাহিনী ইরিত্রিয়ার সৈন্যদের সঙ্গে মিলে যুদ্ধ করেছে৷ কিন্তু সে যুদ্ধে কেবল টিগ্রের বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদেরই নয়, বেসামরিক জনগোষ্ঠীকেও লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবি মনে করেন, টিগ্রে অঞ্চলে প্রতিরোধ গুঁডিয়ে দেয়ার জন্য এমন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার তথ্য জড়ো হচ্ছে। পুড়ে যাওয়া গাড়ি এবং ধ্বংস হওয়া বাড়ি এখানকার নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছবি: GIULIA PARAVICINI/REUTERS
যুদ্ধের অস্ত্র ধর্ষণ
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য ধর্ষণ এবং যৌন সহিংসতাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। সংস্থাটির মতে, ইরিত্রিয়ার সৈন্যরাও এই অপরাধে ব্যাপকভাবে জড়িত। এক নারী বলছিলেন, "তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেছিল। কেউ বলছিল, 'ওকে আমরা হত্যা করি।' অন্যরা বলছিল, 'না, না। ধর্ষণই তার জন্য যথেষ্ট৷'
ছবি: Ben Curtis/AP/picture alliance
গণহত্যা এবং অস্থায়ী কবর
দুই পক্ষের যোদ্ধাদের মরদেহ সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। কখনো কখনো তাদের অস্থায়ী কবরস্থানে কবর দেয়া হয়; কখনো মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়, অথবা ঘটনাস্থলেই ফেলে রাখা হয়। ছবিতে একজন ইথিওপীয় সৈন্যের অস্থায়ী কবর দেখা যাচ্ছে।
ছবি: GIULIA PARAVICINI/REUTERS
কিশোর যোদ্ধা
ইথিওপিয়ার এবং ইরিত্রিয়ার সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আরো বেশি সংখ্যক কিশোর নাম লেখাচ্ছেন। টিডিএফ-এর নতুন যোদ্ধাদের অনেকেই কেবল কৈশোরে পা দিয়েছেন। একটি অনিশ্চিত এবং সম্ভাব্য রক্তাক্ত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
ছবি: YASUYOSHI CHIBA/AFP
6 ছবি1 | 6
এই ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কারণ আরো বেশ কিছু মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ইথিওপিয়ার টিগ্রেতে সাড়ে তিন লাখ মানুষ অনাহারে মৃত্যুর অপেক্ষায়। ৫৫ লাখ মানুষ চরম খাদ্য সংকটে। জাতিসংঘের রিপোর্টে প্রকাশ।
ছবি: Omer Erdem/AA/picture alliance
মন্বন্তর পরিস্থিতি
জাতিসংঘের খাদ্য সংক্রান্ত সংস্থা একটি বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, টিগ্রের সাড়ে তিন লাখ মানুষ মন্বন্তর পরিস্থিতির মধ্যে আছে। ৫৫ লাখ॥ মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছেন। ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে সোমালিয়ায় যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়ংকর।
ছবি: AP
খাবার নেই শিশুদের
২০১০ থেকে ২০১২ সালের মন্বন্তরে সোমালিয়ায় মৃত্যু হয়েছিল প্রায় আড়াই লাখ মানুষের। তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ছিল শিশু। টিগ্রের অবস্থা তার চেয়েও খারাপ বলে মনে করা হচ্ছে। শিশুদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে।
ছবি: Mahmoud Hjaj/AA/picture alliance
জি সেভেনে আর্জি
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠনের প্রধান মার্ক লোকক বৃহস্পতিবার একটি উচ্চপর্যায়ের ভারচুয়াল বৈঠক করেন। সেখানে জি সেভেন নেতাদের কাছে তিনি আর্জি জানান, টিগ্রে নিয়ে যেন আলোচনা করেন তারা। অনাহার কমানোর প্রস্তাব নেন।
ছবি: Baz Ratner/REUTERS
অর্থের প্রয়োজন
জাতিসংঘের বক্তব্য, টিগ্রের অবস্থা প্রতিদিন খারাপ হচ্ছে। তবে এখনো পরিস্থিতির পরিবর্তন করা সম্ভব। মানুষের কাছে খাবার এবং ওষুধ পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু তার জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। শক্তিশালী দেশগুলি যেন সেই অর্থের ব্যবস্থা করে। নইলে ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
ছবি: Maria Gerth-Niculescu/DW
খাবার পৌঁছানো যাচ্ছে না
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গ্রামের ভিতর এখনো খাবার পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না। অস্ত্র নিয়ে গ্রামের বাইরে পাহারা দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। তাদের মোকাবিলা করার জন্যও এগিয়ে আসতে হবে শক্তিধর দেশগুলিকে।
ছবি: Minasse Wondimu Hailu/AA/picture alliance
ইথিওপিয়া সরকার এবং টিপিএলএফ
ইথিওপিয়ায় নতুন সরকার গঠনের আগে থেকেই টিগ্রের ক্ষমতা দখল করে রেখেছে টিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট। নতুন সরকারের সঙ্গে তাদের তীব্র লড়াই হচ্ছে। তারই জেরে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। অনাহারে ভুগছেন লাখ লাখ মানুষ।
ছবি: Minasse Wondimu Hailu/AA/picture alliance
কবে থামবে যুদ্ধ
যুদ্ধ কবে থামবে, কেউ জানে না। পার্শ্বর্তী রাষ্ট্রগুলিও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষকে বাঁচাতে হবে, এমনই সংকল্পের কথা বলা হয়েছে জাতিসংঘের রিপোর্টে। তার জন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ছবি: Baz Ratner/REUTERS
7 ছবি1 | 7
ইথিওপিয়ার সেনার সঙ্গে টিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের লড়াই আবার শুরু হয়েছে। তার জেরেই এই ড্রোন-হামলা। টিপিএলএফের মুখপাত্র বলেছেন, আদ্দিস আবাবাতে যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা শান্তি চাইছেন না। তারা লড়াই করতে চান। সেজন্যই বিমান ও ড্রোন হামলা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী অ্যাবি আহমেদ সরকারের তরফে এই হামলা নিয়ে কেউ মুখ খোলেননি।
তবে ইথিওপিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, টিপিএলএফ যে আবার আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে, তাকে তারা স্বাগত জানাচ্ছেন। আফ্রিকান ইউনিয়ন এই শান্তিপ্রচেষ্টা করছে।