অগাস্টে বিখ্যাত এই শহরটি দখল করেছিল টিগ্রে বাহিনী। পরে তা ইথিওপিয়ার সেনা উদ্ধার করে। রোববার ফের তা টিগ্রে বাহিনীর হাতে চলে গেছে।
বিজ্ঞাপন
ইথিওপিয়ায় এখনো সেনার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে টিগ্রে বাহিনী। টিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফোর্স (টিপিএলএফ) একের পর এক শহর নিজেদের দখলে নিয়ে নিচ্ছে। নভেম্বরে অবশ্য ইথিওপিয়ার সেনা দাবি করে, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা তারা পুনর্দখল করেছে। টিপিএলএফ-কে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
টিগ্রে: যুদ্ধের বলি নারীরা
মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, নানা ধরনের অপরাধও বেড়ে চলেছে৷ টিগ্রে কেন্দ্র করে গৃহযুদ্ধ বিশেষ করে নারীদের ওপর যৌন নিপীড়ন একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে৷
ছবি: Ben Curtis/AP/picture alliance
পালাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ
প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের টিগ্রে আঞ্চলিক সরকারের সঙ্গে ইথিওপিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহযুদ্ধ চলছে। প্রচণ্ড ক্ষুধা এবং যুদ্ধাপরাধের হুমকিতে দিন কাটাচ্ছেন সে এলাকার মানুষ।স্বঘোষিত টিগ্রে ডিফেন্স ফোর্সেস- টিডিএফ টিগ্রের আঞ্চলিক রাজধানী মেকেলে পুনরায় দখল করার পর লাখ লাখ মানুষ এখন পলাতক৷
ছবি: YASUYOSHI CHIBA/AFP
দুর্ভিক্ষের হুমকি
জাতিসংঘের হিসাবে, অঞ্চলটির চার লাখের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত, আরো প্রায় ১৮ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। আবি আহমেদ এমন তথ্য অস্বীকার করে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। ইউনিসেফ বলেছে, "খাদ্য, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি এবং পয়ঃনিষ্কাষণ অবকাঠামো ধ্বংসের ফলে পুষ্টির সংকট দেখা দিয়েছে।"
ছবি: AP
ধ্বংসস্তূপ
ইথিওপিয়ার সেনাবাহিনী ইরিত্রিয়ার সৈন্যদের সঙ্গে মিলে যুদ্ধ করেছে৷ কিন্তু সে যুদ্ধে কেবল টিগ্রের বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদেরই নয়, বেসামরিক জনগোষ্ঠীকেও লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবি মনে করেন, টিগ্রে অঞ্চলে প্রতিরোধ গুঁডিয়ে দেয়ার জন্য এমন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার তথ্য জড়ো হচ্ছে। পুড়ে যাওয়া গাড়ি এবং ধ্বংস হওয়া বাড়ি এখানকার নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছবি: GIULIA PARAVICINI/REUTERS
যুদ্ধের অস্ত্র ধর্ষণ
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য ধর্ষণ এবং যৌন সহিংসতাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। সংস্থাটির মতে, ইরিত্রিয়ার সৈন্যরাও এই অপরাধে ব্যাপকভাবে জড়িত। এক নারী বলছিলেন, "তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেছিল। কেউ বলছিল, 'ওকে আমরা হত্যা করি।' অন্যরা বলছিল, 'না, না। ধর্ষণই তার জন্য যথেষ্ট৷'
ছবি: Ben Curtis/AP/picture alliance
গণহত্যা এবং অস্থায়ী কবর
দুই পক্ষের যোদ্ধাদের মরদেহ সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। কখনো কখনো তাদের অস্থায়ী কবরস্থানে কবর দেয়া হয়; কখনো মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়, অথবা ঘটনাস্থলেই ফেলে রাখা হয়। ছবিতে একজন ইথিওপীয় সৈন্যের অস্থায়ী কবর দেখা যাচ্ছে।
ছবি: GIULIA PARAVICINI/REUTERS
কিশোর যোদ্ধা
ইথিওপিয়ার এবং ইরিত্রিয়ার সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আরো বেশি সংখ্যক কিশোর নাম লেখাচ্ছেন। টিডিএফ-এর নতুন যোদ্ধাদের অনেকেই কেবল কৈশোরে পা দিয়েছেন। একটি অনিশ্চিত এবং সম্ভাব্য রক্তাক্ত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
ছবি: YASUYOSHI CHIBA/AFP
6 ছবি1 | 6
কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অন্যরকম। ইথিওপিয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর লালিবেলা। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ শহর এটি। বহু পুরনো গির্জা আছে সেখানে। ইথিওপিয়ার খ্রিস্টানরা ওই শহরে তীর্থেও যান। গত অগাস্ট মাসে সেই লালিবেলা টিগ্রে বাহিনী দখল করে। একটিও গুলি না চালিয়ে তারা লালিবেলা দখল করেছিল বলে স্থানীয় মানুষ জানিয়েছিলেন। কিন্তু ডিসেম্বরের গোড়ায় ইথিওপিয়ার সেনা লালিবেলা উদ্ধার করে।
রোববার লালিবেলার মানুষ জানিয়েছেন, শহরে আবার টিগ্রে বাহিনী ঘুরতে শুরু করেছে। তবে এবারও তারা গুলি না চালিয়েই শহরের দখল নিয়েছে। শনিবার রাতে লালিবেলার বাইরে গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে তারা জানিয়েছেন।
টিপিএলএফ লালিবেলার দখল নেওয়ার পর বহু মানুষ লালিবেলা ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে সরকার এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানায়নি। ইথিওপিয়ার রাজধানী থেকে লালিবেলা খুব দূরে নয়। এরপর টিপিএলএফ ফের রাজধানীর দিকে অগ্রসর হবে বলে মনে করছে।
আফ্রিকার দেশগুলি সহ একাধিক ইউরোপের দেশ টিপিএলএফ এবং সরকারের মধ্যে মধ্যস্থতার কথা বলেছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের রাস্তা খোঁজার কথা বলেছেন তারা। কিন্তু সরকার এবং টিপিএলএফ কেউই আলোচনায় বসতে রাজি হয়নি।