ইথিওপিয়ায় জন্ম নেয়া অনেক ফসলের জাত হারিয়ে গেছে৷ তবে সেগুলোর নমুনা জমা ছিল জার্মানির এক বীজ ব্যাংকে৷ সম্প্রতি এমন প্রায় সাত হাজার নমুনা ইথিওপিয়ায় পাঠানো হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
জীববিজ্ঞানী উলরিকে লোভাসা তার তিন দর্শনার্থীকে জার্মানির ‘লাইবনিৎস ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যান্ট জেনেটিকস অ্যান্ড ক্রপ প্ল্যান্ট রিসার্চের’ মাঠ ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন৷ তারা ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবার বায়োডাইভারসিটি ইনস্টিটিউটের বীজ ব্যাংকে কাজ করেন, যা আফ্রিকার মধ্যে সবচেয়ে বড়৷ বীজের মান উন্নত করতে জার্মান গবেষকরা কী ধরনের কাজ করছেন, তা দেখতে এসেছলেন তারা৷
আয়রুসালেম আরুসি মোর্কা হাতেকলমে যা শিখছেন তা নিজ দেশে কাজে লাগাতে চান৷ আদ্দিস আবাবার বীজ ব্যাংকের ম্যানেজার তিনি৷ মোর্কা বলেন, ‘‘আমরা কেউ জানি না, কাল কী হবে৷ তাই আমরা সবসময় বায়োডাইভারসিটি রক্ষা করতে চাই৷ জীবন, খাবার, আশ্রয়, মেডিসিন রক্ষার এটা একটা উপায়৷ এটা জীবনযাপনের ভিত্তি৷ এটা বাঁচার প্রশ্ন, অন্যকিছু নয়৷’’
উলরিকে লোভাসা তার অতিথিদের বীজ ব্যাংক দেখিয়েছেন৷ সেখানে সারা বিশ্বের প্রায় দেড় লাখ জাতের বীজ আছে৷ কয়েক দশক ধরে এগুলো জোগাড় করা হয়েছে৷
জার্মানির এই বীজ ব্যাংক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাংকগুলোর একটি৷
নয় বছর ধরে আদ্দিস আবাবার গবেষকদের সঙ্গে কাজ করছেন লোভাসা৷
হারিয়ে যাওয়া বীজ ফিরে পেল ইথিওপিয়া
04:03
লোভাসা বলেন, ‘‘পুরানো জাতে ফসল উৎপাদন কম হয়, কিন্তু এগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ভালো মানিয়ে চলতে পারে৷ খরার সময় এগুলো থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়৷ পানির অভাবে অনেকসময় মাটিতে অম্লতা বেড়ে যায় এবং মাটিতে খনিজ ও ভারী পদার্থ তৈরি হয়৷ এমন পরিবেশে আধুনিক জাতের চেয়ে পুরানো জাত ভালো কাজ করে৷''
ইথিওপিয়ার কৃষকদের সমস্যা নিজ চোখে দেখেছেন লোভাসা৷ সে দেশের কৃষকরা বছরের পর বছর একই ফসল ফলিয়েছেন৷ এতে মাটির গুণের পাশাপাশি উৎপাদনও কমে গেছে৷
ইথিওপিয়ায় জন্ম নেয়া অনেক ফসল হারিয়ে গেছে৷ তাই জার্মানির ব্যাংকে থাকা প্রায় সাত হাজার নমুনা সেদেশে পাঠানো হয়েছে৷
মোর্কা বলেন, ‘‘আমরা আমাদের কাছে থাকা উপকরণ দিয়ে এসব বীজ উন্নয়নের কাজ করছি৷ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করা গবেষক ও পিএইচডি শিক্ষার্থীরা তাদের কাজের জন্য এসব বীজ চাইছেন৷’’
ইথিওপিয়া থেকে আগত দর্শনার্থীরা তাদের নিজ দেশের প্রতিষ্ঠানে পুরানো জাতের বীজ পরীক্ষা করে দেখতে চান৷ তারা জানতে চান, কোন বীজগুলো খরা আর অ্যাসিডিক মাটির চাপ সহ্য করতে পারে- টেকসই কৃষির জন্য যা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷
কর্নেলিয়া বরমান/জেডএইচ
২০১৫ সালের ছবিঘরটি দেখুন...
অন্যরকম এক ‘বীজ ব্যাংক’-এর কথা
কোনো সংকটের কারণে একটি নির্দিষ্ট জাতের বীজ যেন চিরতরে হারিয়ে না যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করে ‘স্ভালবার্ড গ্লোবাল সিড ভল্ট’৷
ছবি: Michael Marek
১২০ মিটার ভেতরে
দেখছেন ‘স্ভালবার্ড গ্লোবাল সিড ভল্ট’-এর প্রবেশমুখ৷ নরওয়ের মূল ভূখণ্ড থেকে জাহাজে করে প্রায় সাড়ে ন’শ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যেতে হবে স্ভালবার্ডে৷ সেখানেই পাহাড়ের প্রায় ১২০ মিটার ভেতরে আছে এই ভল্ট৷
ছবি: Michael Marek
সংকটের সময় যেন কাজে লাগে
ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন ভল্টের ভেতরের অংশ৷ এই টানেলের শেষপ্রান্তে ভল্টের মূল অংশের দেখা পাওয়া যায়৷ স্থানীয় কিংবা বৈশ্বিক সংকটের কারণে বিশ্বের কোথাও কোনো বীজ হারিয়ে গেলে যেন একটা উপায় খুঁজে পাওয়া যায় সে লক্ষ্যে ২০০৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়৷
ছবি: Michael Marek
এই সেই দরজা
টানেলের শেষপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন আপনি৷ এটাই ভল্টের দরজা৷ মার্কিন কৃষিবিদ ক্যারি ফাওলার-এর উদ্যোগে ভল্টটি তৈরি হয়েছে৷ খাদ্যশস্যের বৈচিত্র্যতা হারিয়ে গেলে মানবজাতি অনেক বিপদে পড়তে পারে, সেই আশংকা থেকেই ভল্টটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷
ছবি: Michael Marek
নরওয়ে সরকারের অর্থায়ন
ভল্টটি তৈরিতে প্রায় ৯ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে৷ পুরোটাই দিয়ে নরওয়ে সরকার৷ তবে কার্যক্রম চালানোর খরচ জোগাতে নরওয়ে সরকারের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ফাওলারের প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল ক্রপ ডাইভারসিটি ট্রাস্ট’৷ গেটস ফাউন্ডেশন সহ অন্যান্য সংগঠন এই ট্রাস্টে অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে৷
ছবি: Michael Marek
এক প্রজাতির ৫০০ বীজ
এবার আপনি ভল্টের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন৷ এখানেই বীজগুলো রাখা হয়৷ প্রায় ৪৫ লক্ষ জাতের বীজ রাখার ব্যবস্থা আছে সেখানে৷ একেক প্রজাতির প্রায় ৫০০টি করে বীজ রাখা হয়৷ বীজ রাখার জন্য বছরে তিনবার এই ভল্ট খোলা হয়৷ ভল্টের তাপমাত্রা সবসময় মাইনাস ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখা হয়৷
ছবি: Michael Marek
বিশেষ প্যাকেট
দেখছেন জার্মানি থেকে সেখানে পাঠানো বীজ৷ এমন বিশেষ প্যাকেটে বীজ রাখা হয়৷ বর্তমানে সারা বিশ্ব থেকে যাওয়া ৫,১০৩টি জাতের প্রায় সাড়ে আট লক্ষ বীজ সেখানে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে৷
ছবি: Michael Marek
প্রথম ঘটনা
এ ধরণের ভল্ট যে কেন প্রয়োজন তার প্রমাণ ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে৷ ছবিতে সিরিয়ার যে সংগঠনটির নাম দেখছেন চলমান সিরিয়া সংকটের শিকার হয়ে আলেপ্পোতে থাকা সেই সংগঠনের সদর দপ্তর ধ্বংস হয়ে গেছে৷ ফলে হারিয়ে গেছে খাদ্যশস্যের বীজ৷ কিন্তু ভাগ্য ভালো তারা আগেই তাদের বীজগুলো স্ভালবার্ডের সিড ভল্টে রেখে দিয়েছিলেন৷ এখন তারা সেগুলো চেয়ে পাঠিয়েছেন৷
ছবি: Michael Marek
কেন স্ভালবার্ড?
কারণ নরওয়ে সাধারণত যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে দূরে থাকে৷ তাছাড়া স্ভালবার্ড এলাকাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৩০ মিটার উঁচুতে৷ ফলে বন্যার সম্ভাবনা নেই৷ আশেপাশে নেই কোনো আগ্নেয়গিরি৷ এমনকি ভূমিকম্পের সম্ভাবনাও সেখানে সীমিত৷ এবার ভল্ট নিয়ে ভিডিও দেখতে চাইলে উপরে ‘+’ চিহ্নতে ক্লিক করুন৷