ইথিওপিয়ায় প্রথা ভেঙে স্কেটবোর্ডে মেয়েরা
১৭ জানুয়ারি ২০২৫
ইথিওপিয়ায় ঐতিহ্যবাহী পোশাক হাবেশা কেমিস পরে মেয়েরা পুরুষপ্রধান এক খেলায় নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন৷ ইথিওপিয়ান গার্ল স্কেটার্সের প্রতিষ্ঠাতা সোসিনা চাল্লা বলেন, ‘‘আমরা যেহেতু হাবেশা, আমাদের অনেক সংস্কৃতি, আদর্শ এবং অন্যান্য বিষয়াদি আছে৷ এটা এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ক্রীড়াকে উৎসাহিত করে না৷''
২৬ বছর বয়সি সোসিনা চাল্লা ইথিওপিয়ায় নারীদের স্কেটিংয়ের পথিকৃৎ৷ তিনি নয় বছর ধরে এই ক্রীড়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং একসময় শুধু একাই এটির চর্চা করতেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সেসময় আমি আর আমার কাজিনরা পানির বোতল চুর্ণ করতাম৷ আমি এটার উপর দাঁড়ানোর চেষ্টা করতাম এবং একে অপরকে ধাক্কা দিতাম৷ আমরা এসবে অভ্যস্ত ছিলাম৷ সেদিন আমি একটি স্কেটবোর্ড দেখি, ছেলেরা স্কেটিং করছিল এবং বেশ মজা ছিল৷''
সোসিনা ২০১৯ সালে ইথিওপিয়ান গার্ল স্কেটার্স প্রতিষ্ঠা করেন৷ কিন্তু সেটা সবচেয়ে সহজ ছিল৷ সে তুলনায় অন্য মেয়েদেরকে তার সঙ্গে যোগ দিতে উৎসাহিত করাটা কঠিন ছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘যখনই আমরা, এবং আমি এবং আমার বন্ধু সেখানে যাই, তারা সাধারণত স্কেটবোর্ড ব্যবহার করতে চায় না, কিন্তু আমি যখন মেয়েদেরকে বলি যে তোমরা এটা চেষ্টা করতে পারো বা এরকম কিছু তখন তারা আগ্রহী হয়৷ কিন্তু ছেলেরা স্কেটবোর্ড নিয়ে তাদের কাছে গেলে তারা আগ্রহী হয় না৷ তাই আমি ভাবলাম, আমি যদি মেয়েদেরকে শেখাই তাহলে তারা খুশি হবে৷ সুতরাং আমি যখনই সেখানে যাই, মানে প্রতি রোববার, আমি তাদেরকে আমার স্কেটবোর্ড দেই এবং বাড়তি স্কেটবোর্ডও সঙ্গে নিয়ে যাই৷ ফলে আমি যখনই যাই তখন তারা সেগুলো নিয়ে স্কেট করতে পারে৷''
এভাবে একদল সমমনা মেয়ে তার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকেন এবং সপ্তাহে একদিন তারা সাক্ষাৎ করতে শুরু করেন৷ স্কেটার মাইরেট সামসও বলেন, ‘‘আমি তাদেরকে সোশ্যাল মিডিয়ায় পেয়েছি৷ মাঝে মাঝে আমি তাদেরকে সেখানে দেখেছি এবং স্কেটের প্রতি আগ্রহী হয়েছি৷''
আরেক স্কেটার আরসেমা এন্ডালু বলেন, ‘‘স্কেট পার্কের পাশে একটি গ্রন্থাগার রয়েছে৷ একারণে আমি সেখানে যেতাম এবং একদিন দেখলাম ছেলেরা স্কেটিং করছে৷ তখন আমি তাদের সঙ্গে যোগ দিতে চেয়েছিলাম৷ তখন তারা আমাকে বললো সে শুধু মেয়েদের জন্য একটি স্টেশন আছে৷ সেটি প্রতি শনিবার চালু থাকে৷''
বিশজনের বেশি সক্রিয় সদস্য এবং ইন্সটাগ্রামে ৪৫ হাজার অনুসারী নিয়ে ইথিওপিয়ান গার্ল স্কেটার্স ইতোমধ্যে বেশ নাম করেছে৷ এই ক্রীড়া তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর পাশাপাশি কিছু বাস্তবমুখী শিক্ষাও দিয়েছে৷
স্কেটার আরসেমা এন্ডালুর কথায়, ‘‘এটি আমাকে ধৈর্য এবং আত্মবিশ্বাস শিখিয়েছে৷ আমার আত্মবিশ্বাস গড়ে দিয়েছে৷''
সোসিনার কাছে স্কেটিং আবেগের চেয়েও বড় ব্যাপার৷ তিনি এটিকে দেখেন মেয়ে ও নারীদের জন্য সুযোগ তৈরির এক মাধ্যম হিসেবে৷ যদিও তাদের সমাজ এবং পরিবার শুরুর দিকে এই বিষয়টি নিয়ে সংশয়ী ছিল, সোসিনা মনে করেন তার মতো নারীরা এগিয়ে আসায় সেই সংশয় দূর হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা অনেকটা স্বাধীনচেতা অ্যাক্টিভিস্ট৷ সৃজনশীল কিছু করতে, অন্যদের জন্য কিছু করতে দৃশ্যত কিছুটা অবাধ্য হতে হয়৷ বোঝেনই তো, আমাদের সাফল্য না দেখা পর্যন্ত অভিভাবকরা কথা শোনাবেন, সবাই কিছু না কিছু বলবে ন৷, সুতরাং আমাদের যেভাবেই হোক এটা করতে হবে৷''
স্কেটিংয়ে ইথিওপীয় মেয়েরা নতুন হলেও তাদের সাফল্য দেখার মতোই৷
প্রতিবেদন: ওয়াকারা ন্যুনজিরি/এআই