টিগ্রে বিদ্রোহীরা গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল নেয়ার পর নাগরিকদের হাতে অস্ত্র নিতে বললো ইথিওপিয়ার সরকার।
বিজ্ঞাপন
জিবুতি বন্দর যাওয়ার পথে মূল রাস্তার সঙ্গে সংযোগকারী সড়কের ধারে কোমবোলচা শহর দখল করে নিল টিগ্রে বিদ্রোহীরা। দীর্ঘদিন সেনার সঙ্গে লড়াই করে এই শহর দখল করেছে বলে তারা দাবি করেছে। এছাড়া ওলোমো লিবারেশন ফ্রন্ট(ওএলএফ) দাবি করেছে, তারা সেনার কাছ থেকে আদ্দিস আবাবা থেকে ৩২৫ কিলোমিটার দূরের শহর কেমিস দখল করে নিয়েছে।
এরপরই ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবেদন জানিয়েছে, নাগরিকরা এবার হাতে অস্ত্র তুলে নিন। তারাও এবার বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে সামিল হোন।
কী বলছে বিদ্রোহীরা
টিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট(টিপিএলএফ)-এর মুখপাত্র বলেছেন, কোমবোলচার নিয়ন্ত্রণ এখন পুরোপুরি তাদের হাতে।
তিনি জানিয়েছেন, ওই শহরে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে তারা জাতিসংঘের সঙ্গে সহায়তা করবেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, উপদ্রুত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে সরকার সহযোগিতা করছে না। তারা রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে।
টিগ্রে: যুদ্ধের বলি নারীরা
মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, নানা ধরনের অপরাধও বেড়ে চলেছে৷ টিগ্রে কেন্দ্র করে গৃহযুদ্ধ বিশেষ করে নারীদের ওপর যৌন নিপীড়ন একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে৷
ছবি: Ben Curtis/AP/picture alliance
পালাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ
প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের টিগ্রে আঞ্চলিক সরকারের সঙ্গে ইথিওপিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহযুদ্ধ চলছে। প্রচণ্ড ক্ষুধা এবং যুদ্ধাপরাধের হুমকিতে দিন কাটাচ্ছেন সে এলাকার মানুষ।স্বঘোষিত টিগ্রে ডিফেন্স ফোর্সেস- টিডিএফ টিগ্রের আঞ্চলিক রাজধানী মেকেলে পুনরায় দখল করার পর লাখ লাখ মানুষ এখন পলাতক৷
ছবি: YASUYOSHI CHIBA/AFP
দুর্ভিক্ষের হুমকি
জাতিসংঘের হিসাবে, অঞ্চলটির চার লাখের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত, আরো প্রায় ১৮ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। আবি আহমেদ এমন তথ্য অস্বীকার করে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। ইউনিসেফ বলেছে, "খাদ্য, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি এবং পয়ঃনিষ্কাষণ অবকাঠামো ধ্বংসের ফলে পুষ্টির সংকট দেখা দিয়েছে।"
ছবি: AP
ধ্বংসস্তূপ
ইথিওপিয়ার সেনাবাহিনী ইরিত্রিয়ার সৈন্যদের সঙ্গে মিলে যুদ্ধ করেছে৷ কিন্তু সে যুদ্ধে কেবল টিগ্রের বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদেরই নয়, বেসামরিক জনগোষ্ঠীকেও লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবি মনে করেন, টিগ্রে অঞ্চলে প্রতিরোধ গুঁডিয়ে দেয়ার জন্য এমন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার তথ্য জড়ো হচ্ছে। পুড়ে যাওয়া গাড়ি এবং ধ্বংস হওয়া বাড়ি এখানকার নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছবি: GIULIA PARAVICINI/REUTERS
যুদ্ধের অস্ত্র ধর্ষণ
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য ধর্ষণ এবং যৌন সহিংসতাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। সংস্থাটির মতে, ইরিত্রিয়ার সৈন্যরাও এই অপরাধে ব্যাপকভাবে জড়িত। এক নারী বলছিলেন, "তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেছিল। কেউ বলছিল, 'ওকে আমরা হত্যা করি।' অন্যরা বলছিল, 'না, না। ধর্ষণই তার জন্য যথেষ্ট৷'
ছবি: Ben Curtis/AP/picture alliance
গণহত্যা এবং অস্থায়ী কবর
দুই পক্ষের যোদ্ধাদের মরদেহ সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। কখনো কখনো তাদের অস্থায়ী কবরস্থানে কবর দেয়া হয়; কখনো মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়, অথবা ঘটনাস্থলেই ফেলে রাখা হয়। ছবিতে একজন ইথিওপীয় সৈন্যের অস্থায়ী কবর দেখা যাচ্ছে।
ছবি: GIULIA PARAVICINI/REUTERS
কিশোর যোদ্ধা
ইথিওপিয়ার এবং ইরিত্রিয়ার সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আরো বেশি সংখ্যক কিশোর নাম লেখাচ্ছেন। টিডিএফ-এর নতুন যোদ্ধাদের অনেকেই কেবল কৈশোরে পা দিয়েছেন। একটি অনিশ্চিত এবং সম্ভাব্য রক্তাক্ত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
ছবি: YASUYOSHI CHIBA/AFP
6 ছবি1 | 6
টিপিএলএফের দাবি সত্য হলে এটা সরকারের কাছে একটা বড় ধাক্কা। টিপিএলএফ ইতিমধ্যেই টিগ্রের অধিকাংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে। তারা এখন রাজধানী থেকে ৩৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
ইথিওপিয়ার উত্তরভাগে মিডিয়া ব্লকআউট চলছে। তাই টিপিএলএফের দাবি যাচাই করাটা শক্ত।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
ইথিওপিয়া সরকার জানিয়েছে, তারা এখনো হারেনি। লড়াই চলছে। টিপিএলএফ ও ওএলএফের সঙ্গে সেনা লড়াই করছে।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ফেসবুক পোস্টে দেশের নাগরিকদের কাছে হাতে অস্ত্র তুলে নেয়ার অনুরোধ করেছেন। টিপিএলএফ ও ওএলএফের মোকাবিলা করতেই এই অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকরি মুখপাত্রের দাবি, বিমান বাহিনী রোববার বিদ্রোহীদের সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপর বোমা ফেলেছে।
আমহারা রিজিওন্যাল স্টেট কাউন্সিল জরুরি অবস্থা জারি করেছে। তারা বলেছে, পুরো বাজেট এখন লড়াইয়ের কাজে লাগাতে হবে। তারা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে, তারা যেন লড়াইয়ের ময়দানে গিয়ে কাজ করেন। আর নাগরিকদের বলা হয়েছে, তারা যেন তাদের গাড়ি লড়াইয়ের জন্য দেন।