ইনস্টাগ্রামের ইনফ্লুয়েন্সাররা যখন সেল্ফি না তুলে, আলোকচিত্রীদের দিয়ে ফটো তোলান, তখন সেটা নির্দোষ ইনস্টাগ্রাম জগতের আদর্শের সঙ্গে কতটা মেলে? ‘লাইক’ জোটানোর আপ্রাণ প্রচেষ্টার একটা কারণ কি বিজ্ঞাপন থেকে অর্থোপার্জন নয়?
বিজ্ঞাপন
স্যান ফ্রান্সিসকোয় গেলে ফটো না তুলে উপায় নেই, শহরটাই এমন সব দর্শনীয় বস্তুতে ভরা৷ আবার শুধু স্ন্যাপশটে চলবে না, কেননা ছবিগুলো ইনস্টাগ্রামে আপলোড করে লাইক সংগ্রহ করতে হবে৷ সেজন্য ছবিগুলো পার্ফেক্ট হওয়া চাই, বলে ক্রিস্টিন ট্র্যান-এর মতো৷ ক্রিস্টিন হলেন একজন তথাকথিত ‘ইনফ্লুয়েন্সার’, কাজেই তিনি আজ নিজে সেল্ফি না তুলে, একজন পেশাদার ফটোগ্রাফারকে দিয়ে নিজের ছবি তোলান৷
পেশাদার ইনস্টাগ্রামার হিসেবে তাঁর প্রোফাইলের মধ্যে টার্গেট গ্রুপের উপযোগী বিজ্ঞাপন দেওয়া থাকে৷ বিশেষ বিশেষ জায়গায় ক্রিস্টিনের ছুটি কাটানোর ছবি যাতে তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হয়, সেজন্য ট্রাভেল এজেন্সিগুলো রীতিমতো পয়সা দিয়ে থাকে৷
নারীর সৌন্দর্যের সংজ্ঞা নারীরাই পাল্টে দিচ্ছেন!
জার্মানির লাইপজিগ শহরের এক প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে, টাম্বলর ও ইন্সটাগ্রাম প্রজন্মের শিল্পীরা কীভাবে নারীর সৌন্দর্য সম্পর্কে তাঁদের চিন্তাভাবনা ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় পেশ করছেন৷
ছবি: Juno Calypso
আরেক নন্দনতত্ত্ব
‘ভার্চুয়াল নরম্যালিটি – ওমেন নেট আর্টিস্টস ২.০’ প্রদর্শনীতে যে ১৩ জন শিল্পী তাঁদের শিল্পকর্ম পেশ করছেন, তাঁরা সবাই ‘ডিজিটাল নেটিভ৷’ তাঁদের শিল্পের প্রেরণা আসে অনলাইন বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এবং তাঁরা বিভিন্ন লিঙ্গ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা ও আরোপিত সত্তা পাল্টে দিতে চান৷ জাপানি আলোকচিত্রী ইজুমি মিয়াজাকি (ছবি) তাঁর শিল্পকর্মে সেল্ফি সংক্রান্ত প্রচলিত ধ্যান-ধারণা নিয়ে খেলা করে থাকেন৷
ছবি: Izumi Myazaki
প্ররোচনামূলক রোল-প্লেয়িং
মিয়াজাকির পরাবাস্তববাদী শৈলী সত্যিই অবাক করে৷ যেমন, এই ছবিটি, যার শিরোনাম ‘টমেটো’৷ মিয়াজাকি ও তাঁর সতীর্থরা ভার্চুয়ালিটির বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে খেলা করেন ও সেজন্য নিজেদের শরীরকে নানাভাবে উপস্থাপন করেন, নতুন চরিত্র ও ভূমিকা সৃষ্টি করেন৷ নিজেদের এই ‘রূপান্তরের’ মাধ্যমে তাঁরা প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে তুলে ধরেন ও ব্যঙ্গ করেন৷
ছবি: Izumi Myazaki
লিঙ্গান্তরী বিদ্বেষ
আলোকচিত্র ছাড়া লাইপজিগের প্রদর্শনীতে একাধিক ভিডিও রাখা হয়েছে, যেমন অ্যালি কোট্স ও সিনিয়ে পিয়ার্সের ‘অ্যামেরিকান রিফ্লেক্স’৷ ২০১৩ সালের এই শর্ট ফিল্মটি একটি সামাজিক এক্সপেরিমেন্ট৷ পিয়ার্স মুখোস পরে সাউথ ক্যারোলাইনার মির্টল বিচ দিয়ে হাঁটছেন; পথচারীরা তাঁর লিঙ্গ বা যৌনতা সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করতে পারেন৷ ভিডিওটি শেষ হচ্ছে লাগামছাড়া বহিরাগত বিদ্বেষ ও সহিংসতার একটি দৃশ্য দিয়ে৷
ছবি: Alli Coates, Signe Pierce
শরীর নিয়ে খেলা
লাইপজিগ প্রদর্শনীর শিল্পীদের মধ্যে নারীদেহ নিয়ে এমন কিছু শিল্পকর্ম আছে, যা অনেকের কাছে মাত্রাতিরিক্ত বলে মনে হতে পারে৷ সুইডেনের শিল্পী আর্ভিডা বাইস্ট্র্যোম আডিডাস কোম্পানির একটি প্রচার অভিযানে তাঁর না কামানো পা দু’টি প্রদর্শন করে এমনকি ধর্ষণের হুমকি পেয়েছিলেন৷
ছবি: Arvida Bystroem
লাস্যময়ী
বাইস্ট্র্যোম বা তাঁর নিউ ইয়র্কের সতীর্থ লিয়া শ্রাগার অনলাইনে অশ্রাব্য মন্তব্যে ভয় পাবার পাত্রী নন৷ তাঁদের শিল্পকর্মের একটি উদ্দেশ্য যেমন প্ররোচনা, তেমনি অপর একটি লক্ষ্য হলো নারীদেহের স্বাধীনতা৷ তার ফলে যদি এ ধরণের ‘লাস্যময়ী’ ছবি সৃষ্টি হয়, তো তাই সই৷
ছবি: Leah Schrager
চুলও একটা বক্তব্য হতে পারে
পশ্চিমে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা কৃষ্ণকেশীদের কিভাবে প্রভাবিত করেছে? নাকেয়া ব্রাউন তাঁর শিল্পকর্মে সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন৷ বহু কোঁকড়ানো কালো চুলের অধিকারিণী তাঁদের চুল ইস্তিরি করে সোজা করার ব্যবস্থা করতেন এককালে৷ ২০০০ সালে মার্কিন মুলুকে যে ‘স্বাভাবিক চুল আন্দোলন’ শুরু হয়, তার পর থেকে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মহিলাদের তাঁদের নিজস্ব কেশবিন্যাস বজায় রাখার উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে৷
ছবি: Nakeya Brown
ঘৃণা নয়, বিদ্বেষ নয়
‘ভার্চুয়াল নরম্যালিটি – উওমেন নেট আর্টিস্টস ২.০’ প্রদর্শনীর শিল্পীরা সকলেই অনলাইনে বিদ্বেষপূর্ণ সমালোচনা ও মন্তব্যের শিকার হয়েছেন৷ তবুও তাঁরা তাঁদের জোরালো নারীবাদী মনোভাব ও শিল্প পরিত্যাগ করতে রাজি নন৷ অপরদিকে তাঁদের ঘোষিত লক্ষ্য হলো, ‘যাবতীয় ঘৃণা ও বিদ্বেষ দূর হওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাও৷’ লাইপজিগের মিউজিয়াম অফ ভিজুয়াল আর্টস-এ প্রদর্শনীটি চলবে আগামী এপ্রিলের ৮ তারিখ অবধি৷
ছবি: Juno Calypso
7 ছবি1 | 7
ট্র্যান বলেন, ‘‘কোনো কোনো ইনস্টাগ্রামার ছবি প্রতি হাজার-দু'হাজার ডলার চার্জ করে থাকে, বলে আমার ধারণা....আবার কেউ কেউ শুধু কয়েকশ’ ডলার নেয়, কাজেই রেঞ্জটা খুব বড়....তবে এ থেকে সহজেই মাসে হাজার দুয়েক ডলার কি তারও বেশি রোজগার করা যায়৷’’
ইনস্টাগ্রামে বিজ্ঞাপনের পুরো প্রক্রিয়াটা পরিচালিত হয় এখান থেকে, মেনলো পার্কে ইনস্টাগ্রামের হেডকোয়ার্টার্স থেকে৷ ফেসবুক সংস্থা ২০১২ সালে মোট ৭৬ কোটি ইউরো মূল্যে ইনস্টাগ্রাম কিনে নেয়৷ আজ মেনলো পার্কে মোট ৫০০ কর্মী ইনস্টাগ্রামের ৮০ কোটি ইউজারের দেখাশোনা করেন৷
ইনস্টাগ্রামের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাইক ক্রিগার বললেন, ‘‘মানুষজনের দুনিয়াটাকে দেখার ভঙ্গিই কিছুটা পালটে যায়৷ ইনস্টাগ্রাম অ্যাপ আর তার ব্যবহারকারীরা সেটা নিয়ে কি করছে, এই দুই-এর পারস্পরিক প্রভাবটা খুবই কৌতূহলজনক৷ লোকে যখন বলে, ‘আজ আমি অনেক কিছু দেখি, অনেক কিছু খেয়াল করি’ – তখন আমার খুব ভালো লাগে৷ যেন তারা নতুন চোখ দিয়ে পৃথিবীটাকে দেখছে৷’’
কি চোখে তোমায় দেখি
শুধু দুনিয়া দেখার ভঙ্গিই যে পালটে যায়, এমন নয়৷ পৃথিবীটাও ইনস্টাগ্রামের জন্য বদলে যাচ্ছে৷ যেমন এক ডিজাইনার একটি রেস্তোরাঁ অত্যন্ত ‘ফটোজিনিক’ করে গড়ে তুলেছেন৷ অনেক আলো, খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়া হয়েছে৷ অতিথিরা মনের সুখে ছবি তুলতে পারেন৷ তাতে কাজ হয়েছে, ইনস্টাগ্রামে রেস্তোরাঁর ছবি ভরে গেছে৷
ইনস্টাগ্রামের ছবিতে উত্তর কোরিয়া
প্রায়ই সংবাদপত্রের শিরোনামে থাকলেও উত্তর কোরিয়া দেশটি বিচ্ছিন্ন ও প্রায় অজানা৷ ব্রিটিশ ইনস্টাগ্রামার পিয়ের ডেপন্ট নিয়মিতভাবে উত্তর কোরিয়ায় গিয়ে সেখানকার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ছবি তোলার চেষ্টা করেন৷
ছবি: DW/P.Depont
অজানার আকর্ষণ
উত্তর কোরিয়া গোপনে থাকতেই পছন্দ করে, বলা হয়ে থাকে৷ দেশটি কিন্তু বিদেশি পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে৷ উত্তর কোরিয়ায় পর্যটক হওয়ার অর্থ, বিশেষ ‘গাইড’-রা প্রতিপদে সঙ্গে থাকবে ও নজর রাখবে৷ এ সব সত্ত্বেও পিয়ের ডেপন্ট সাত বার উত্তর কোরিয়া যাত্রা করেছেন ও সেখানকার সাধারণ মানুষদের ছবি তুলেছেন৷
ছবি: DW/P. Depont
পুঁজিবাদের ভূত?
ডেপন্ট প্রথম উত্তর কোরিয়ায় যান ২০১৩ সালে৷ সেযাবৎ কর্তৃত্ববাদী দেশটিতে পরিবর্তন এসেছে, বলে তিনি লক্ষ্য করেছেন৷ বিগত দু’তিন বছরের মধ্যে ‘‘পিয়ংইয়াংয়ে নিজের সম্পদ প্রদর্শন করাটা গ্রহণযোগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে৷’’ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সত্ত্বেও পিয়ংইয়াংয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাড়ছে ও প্রচুর বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে৷
ছবি: Pierre Depont
আলাপ করা সহজ নয়
ডেপন্ট দেখেছেন, পিয়ংইয়াংয়ের রাস্তায় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলা সহজ নয়৷ প্রথমত, গাইডদের একজন সবসময় কান খাড়া করে শোনে৷ দ্বিতীয়ত, স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের ফটো তুলতে দিতে বিশেষ পছন্দ করেন না৷ রাস্তাঘাটে মহিলারা ক্রমেই আরো ফ্যাশনদুরস্ত হয়ে উঠছেন বটে, তবে সেটা প্রধানত বড় শহরগুলোয়৷
ছবি: DW/P. Depont
শহর বনাম গ্রাম
পিয়ংইয়াংয়ের মেট্রো স্টেশনটি দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়: মনে হবে যেন কারুকার্য করা শ্বেতপাথরের দেওয়ালের ওপর সুবিশাল ঝাড়বাতি ঝুলছে৷ ডেপন্টের কাছে উত্তর কোরিয়া ‘‘ফটো তোলার একটা আশ্চর্য জায়গা,’’ কেননা এখানে রাস্তাঘাটে কোনো বিজ্ঞাপন নেই৷ অপরদিকে শহরে স্বাচ্ছল্যের নানা চিহ্ন চোখে পড়লেও, গ্রামাঞ্চলে এখনও চরম দারিদ্র্য বিরাজ করছে৷
ছবি: Pierre Depont
টুরিস্টরা যা দেখতে পান না...
...তা হলো উত্তর কোরিয়ার গ্রামাঞ্চলের মানুষদের বাস্তবিক পরিস্থিতি৷ সামরিক খাতে বিপুল বিনিয়োগ করলেও, দেশটি কৃষিপ্রধানই রয়ে গিয়েছে৷ ‘‘প্রত্যেকটি ছোট ক্ষেতে চাষ করা হয়, প্রতি বর্গমিটার জমি ব্যবহার করা হয়,’’ বলেছেন ডেপন্ট৷
ছবি: Pierre Depont
মেকি প্রাচুর্য?
টুরিস্টদের শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় বৈকি, তবে বড় বড় কৃষি সমবায়ের গাইডেড টুরে৷ ডেপন্ট দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হামহুং-এর কাছে একটি কৃষি সমবায়ে যাওয়ার সুযোগ পান; সেখানকার ছোট্ট বাজারটিতে সুন্দর করে পণ্য সাজানো ছিল ও অনটনের কোনো চিহ্নই ছিল না – খুব সম্ভবত ‘‘শুধু লোক-দেখানো,’’ বলে ডেপন্ট মন্তব্য করেছেন৷
ছবি: DW/P.Depont
হালফ্যাশনের স্কুল, তবে সবার জন্য নয়
উত্তর কোরিয়ায় টুরিস্ট হিসেবে সেখানকার একটি এলিট স্কুল বা মডার্ন স্কুল না দেখে ছাড় নেই৷ সংডোওয়ান ইন্টারন্যাশনাল সামার ক্যাম্পটি পূর্ণ সংস্কারের পর আবার খোলা হয় ২০১৪ সালে৷ সেখানে ছেলেমেয়েরা সর্বাধুনিক আর্কেড গেম্স নিয়ে খেলছে আর তাদের ব্যবহারের জন্য গোটা বিশেক কম্পিউটার রাখা আছে দেখে ডেপন্টের মনে হয়, দৃশ্যটা ‘‘কিছুটা অবাস্তব৷’’
ছবি: DW/P.Depont
সর্বত্র মিলিটারি
দেশটির সত্তা ও সমাজের প্রাণকেন্দ্র হল মিলিটারি৷ দেশের জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ মিলিটারিতে কাজ করে৷ দেশের অর্থনৈতিক ক্ষমতার তুলনায় সামরিক খাতে পিয়ংইয়াংয়ের ব্যয় বিশ্বের বৃহত্তম মিলিটারি বাজেটগুলির মধ্যে পড়ে৷ উত্তর কোরিয়ার কচিকাঁচারা মিলিটারি প্রতীকে অভ্যস্ত – এমনকি খেলার জায়গাতেও৷
ছবি: Pierre Depont
কর্তাভজা
মিলিটারি, রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং কিম জং-উন ও তাঁর পূর্বপুরুষদের ঘিরে ‘ব্যক্তি উপাসনা’ – এই হলো উত্তর কোরিয়ার কাহিনি৷ মহান নেতাদের কিংবদন্তিকে বাঁচিয়ে রাখতে ও তাঁদের সুবিশাল মূর্তিগুলোর পরিচর্যায় যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়, তা দেখে ডেপন্ট চমৎকৃত৷
ছবি: DW/P.Depont
9 ছবি1 | 9
ডিজাইনার হানা কলিন্স-এর মতে, ‘‘জিনিসপত্রের নানা নকশা থাকে, টেক্সচার থাকে, যা তাদের নিজস্ব৷ তাই দেখে লোকে বলে, ‘ওয়াও, এটা তো আমি আগে দেখিনি৷ একটা ছবি তুলতে হবে৷’’
ইতিমধ্যে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের জন্য বিষয় অনুযায়ী ছবি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
ইনস্টাগ্রামে খারাপ বা বেদনাদায়ক ছবির কোনো জায়গা নেই৷ জীবনের ছায়াময় দিকটা এখানে ফিল্টার করে বার করে দেওয়া হয়, বলে মনে করেন স্যান ফ্রান্সিস্কোর ফাইন আর্টস মিউজিয়ামের অধ্যক্ষ ম্যাক্স হলাইন৷
ফাইন আর্টস মিউজিয়ামের কর্মী ম্যাক্স হলাইন বললেন, ‘‘শুরুতে ফেসবুক অথবা অন্যত্র ‘লাইক’-এর যে অর্থ ছিল, তা ধীরে ধীরে খোয়াতে বসেছে, বলে আমার ধারণা৷ আজ ঐ ‘লাইক’ শুধুমাত্র একটা স্বীকৃতি যে, আমি তোমার পোস্টটা দেখেছি – যেটা এসেছে মার্কিন সংস্কৃতি থেকে, যেমন এখানে সকলেই বলে, ‘ইট'স গ্রেট’৷’’
ইনস্টাগ্রাম হবে হেট স্পিচ আর ফেক নিউজ বর্জিত একটি সহজ-সরল নেটওয়ার্ক – কিন্তু দ্বিধা থেকেই যায়: যেমন বিজ্ঞাপনের কী ও কেন এবং বাস্তবই বা কী৷
ইনস্টাগ্রাম বলে, অতো জেনে কি হবে, সুন্দর হলেই হলো৷
স্প্রেয়ে/হর্ন/এসি
২০১৫ সালের ছবিঘরটি দেখুন...
ইনস্টাগ্রাম লেন্সের চোখে বার্লিন
বার্লিনে ফেব্রুয়ারি মাস মানেই ধূসর, বরফে ঢাকা, বৃষ্টি-ভেজা পরিবেশ৷ কিন্তু ইনস্টাগ্রামের ফটোগ্রাফারদের জন্য এর আলাদা আকর্ষণ রয়েছে৷ কী দেখেন তাঁরা নিজেদের লেন্সের চোখে? বার্লিনে ইনস্টাগ্রামের জগতেই বা কী চলছে?
ছবি: Instagram/Tobias Koch
কুৎসিত, অথচ আকর্ষণীয়
বার্লিন শহর নোংরা, ধূসর, কুৎসিত৷ যুদ্ধের ক্ষতচিহ্নের অভাব নেই৷ অনেক বাড়িঘর কিছুটা তৈরি হয়ে পড়ে আছে, অথবা ভেঙে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু সেটাই তো চোখে পড়ার মতো! বার্লিন প্রাচীর পতনের পর থেকে মুক্তি ও সৃজনশীলতার তাগিদ অনুভব করা যায় বলে মনে করেন মিশায়েল শুলৎস৷ তিনিই ইনস্টাগ্রামে বার্লিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাকাউন্ট @berlinstagram-এর স্রষ্টা৷
ছবি: Instagram/Michael Schulz
মোবাইল নয়, আসল ক্যামেরার কারসাজি
‘আমার ফোন কখনো কাদায় পড়ে যায়নি’ – গর্ব করে এ কথা বলতে পারেন ক’জন? মোবাইল ফোনের ক্যামেরার অনেক উন্নতি সত্ত্বেও লিন্ডা ব্যার্গ (@lindaberlin) কিন্তু তাঁর পেশাদারী ডিএসএলআর ক্যামেরার উপরই নির্ভর করেন৷ সেই ক্যামেরার অনেক কারসাজি দিয়ে অভিনব প্রেক্ষাপটে শহরের স্থাপত্য তুলে ধরেন তিনি৷
ছবি: Instagram/Linda Berg
বাড়ির উঠানেই জীবনের কাহিনি
ডকুমেন্টরি ফটোগ্রাফার কারোলিন ভাইনকফ (@careauxphotography) বার্লিনের সদা পরিবর্তনশীল দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ছবি তোলেন৷ ইনস্টাগ্রাম যেন তাঁর ভার্চুয়াল ডায়রি৷ ধৈর্য ধরে সব সময়ে ‘মোটিফ’-এর সন্ধান করে বেড়ান তিনি৷ আচমকা অসাধারণ মুহূর্ত উঠে আসে চোখের সামনে৷ প্রস্তুত না থাকলেই সেটি চিরকালের জন্য হাতছাড়া হয়ে যায়৷
ছবি: Instagram/Carolin Weinkopf
লেন্সের সামনে খাদ্যের সমাহার
মুখে জল আনা খাবার-দাবার ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করেন এৎসগি পোলাট (@ezgipolat)৷ তবে ফিল্টার নয়, স্বাভাবিক আলোতেই ছবি তুলতে ভালেবাসেন তিনি৷ স্থানীয় বাজার থেকে তাজা ফলমূল, তরিতরকারি এনে সুন্দরভাবে সাজিয়ে দেন তিনি৷ হাটেও আনাগোনা রয়েছে তাঁর৷ শহরের কোন পাড়ায় কবে কোন হাট বসে, সে খবর তাঁর ঝুলিতে রয়েছে৷
ছবি: Instagram/Ezgi Polat
অন্যদের সঙ্গে আদান-প্রদান
খুঁটিনাটি নিয়ে মাথা ঘামানো বৃথা বলে মনে করেন মিশায়েল শুলৎস৷ আনাড়ি ফটোগ্রাফারদের জন্য তাঁর পরামর্শ – নিখুঁত ছবির বদলে নিজস্ব আগ্রহের মোটিফ ও গল্প বলার ভঙ্গি গড়ে তোলাই মূল কাজ৷ স্থানীয় ফটোগ্রাফারদের কাজ দেখতে, চলতি প্রবণতা বুঝতে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা উচিত (যেমন #igersberlin, #berlin, #kreuzberg)৷ ছবির ‘জিওট্যাগিং’ করাও জরুরি৷
ছবি: Instagram/Michael Schulz
মোটিফ সর্বত্র, প্রস্তুত থাকা চাই
ফটোগ্রাফার হিসেবে টোবিয়াস কখ (@tokography) আরও ব়্যাডিকাল হতে পিছপা হন না৷ তিনি ব্যস্ত রাজপথের মাঝখানে গিয়ে সবার ভ্রূকুটি অগ্রাহ্য করে ছবি তোলেন৷ ফোনের ক্যামেরাই তাঁর সঙ্গী৷ সেটি কখনো হাত ফসকে কাদায় পড়েনি৷ বিষয় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো ছুতমার্গ নেই তাঁর৷ রাস্তার গর্ত থেকে শুরু করে দোকানের জানালা – যে কোনো জায়গায় আকর্ষণীয় মোটিফ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে৷