আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান ভিত্তিই হলো অ্যালগোরিদম৷ মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, অ্যাপ ইত্যাদি এই অ্যালগোরিদমের ভিত্তিতেই কাজ করে৷ কিন্তু সেটি যদি নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য করে, তখন কী করা যায়?
বিজ্ঞাপন
ইন্টারনেটেও নারী-পুরুষের বৈষম্য?
03:23
This browser does not support the video element.
অনলাইনে ‘অফিস কর্মী'-র খোঁজ করলে বদ্ধমূল ধারণাগুলিই আরও পোক্ত হয়৷ অফিস কর্মী মানেই নারী৷ অন্তত অ্যালগোরিদম তাই মনে করে৷ সিইও বা কোম্পানির প্রধান মানেই পুরুষ, নার্স মানেই নারী৷ প্রচলিত অনুবাদ সফটওয়্যারও শব্দগুলির এমন মূল্যায়ন করে৷
বিভিন্ন পেশা সংক্রান্ত নিরপেক্ষ শব্দগুলিকে একটা ছাঁচে ফেলে দেয় ডিজিটাল জগত৷ যেমন ফিনিশ ভাষায় শব্দের লিঙ্গভেদ নেই৷ তা সত্ত্বেও ‘বেবিসিটার' শব্দটিকে ‘শিশুর দেখাশোনা করে, এমন এক নারী' হিসেবে তুলে ধরা হয়৷ জয়ী মানেই পুরুষ৷ সেক্রেটারি মানেই নারী৷ বস অবশ্যই পুরুষ৷
দৈনন্দিন জীবনে অ্যালগোরিদমের এই একপেশে মনোভাবের মারাত্মক পরিণতি দেখা যায়৷ যেমন চাকুরি খোঁজার ক্ষেত্রে৷ এক মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে যে, পুরুষদের তুলনায় নারীদেরই কম বেতনের চাকুরি খোঁজার পরামর্শ দেওয়া হয়৷
প্রযুক্তি ব্যবহারের মন্দ দিক
ইন্টারনেট, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, আইফোন ইত্যাদি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কত সুবিধাই না আমরা আজকাল ভোগ করছি৷ তবে অন্য সব কিছুর মতো এ সবেরও মন্দ দিক আছে বৈকি! গবেষকদের জানানো সেরকমই কিছু তথ্য পাবেন ছবিঘরে৷
ছবি: Cover/Getty Images
ইয়ারফোনে গান শোনা দুর্ঘটনার কারণ
প্রায়ই দেখা যায় আজকালকার তরুণরা কানে ইয়ারফোন লাগিয়েগান শুনতে শুনতে রাস্তায় চলাফেরা করছে৷ কানে ইয়ারফোন থাকায় অনেক সময় রাস্তার সতর্ক সংকেত বা গাড়ি, সাইকেলের শব্দ শুনতে পায় না তারা৷ ফলে ঘটে অ্যাক্সিডেন্ট৷ এ কথা জানান জার্মান হাসপাতালগুলোর জরুরি বা ‘এমারজেন্সি’ বিভাগের ‘ট্রমা সার্জারি’-র প্রফেসার রাইনহার্ড হফমান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Ossinger
ছবি তোলাতেই যেন বেশি আনন্দ!
যে কোনো ধরনের স্মৃতিকেই মানুষ ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে চায়৷ বিশেষ করে, দেশ-বিদেশে ঘুরতে বা বেড়াতে গেলে তো কথাই নেই! কিন্তু ছবির প্রতি সমস্ত মনোযোগ দিতে গিয়ে পর্যটকরা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর ছবি তোলার জায়গাগুলোর কথা আর সেভাবে মনে করতে পারেন না৷ সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স ম্যাগাজিন থেকে এই তথ্য জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডিসপ্লে থেকে জীবাণু যায় শরীরে
স্মার্টফোন, ট্যাবলেট কিংবা আইফোন ছাড়া যেন আজকাল কারুর চলেই না৷ যদিও এ সবে অসংখ্য জীবাণু, ছত্রাক আর ব্যাকটেরিয়া লুকিয়ে থাকে৷ এই জীবাণু থেকেো কিন্তু আপনি অসুস্থ হতে পারেন৷ বিশেষ করে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের জন্য এই ঝুঁকি আরো বেশি৷ তাই এগুলো নিয়মিত পরিস্কার রাখা জরুরি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
ইন্টারেনেটে বই পড়া
বই হাতে নিয়ে পড়াটা যেন আজকাল উঠেই যাচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে৷ আসলে আজকাল যে ইন্টারনেটে মুহূর্তের মধ্যেই সব রকম তথ্য পাওয়া যায়৷ অবশ্য আরাম করে বই হাতে নিয়ে পড়ার থেকে ইন্টারনেটে পড়লে যে বেশি ক্লান্ত বোধ হয়, তা অনেকেই হয়ত স্বীকার করবেন৷ আর এ কথাটিই প্রমাণ করেছেন জার্মানির ট্যুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা৷
ছবি: AndreyPS - Fotolia.com
কফি মেশিনে জীবাণু!
আজকাল নানা ধরনের কফি মেশিন পাওয়া যায় আর খুব সহজেই নানা স্বাদের কফি তৈরি করা যায়৷ একেক মেশিনের একেকটি বোতামে টিপ দিলে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের কফি বেরিয়ে আসে৷ দেখলেই অবাক লাগে, তাই না? কিন্তু সেই মেশিনই নিয়মিত পরিষ্কার না রাখলে রয়েছে জীবাণুর ভয়৷ তাই সাবধান!
ছবি: Cover/Getty Images
5 ছবি1 | 5
তবে কাটারিনা ইয়ারমুল মনে করেন, দোষটা মোটেই অ্যালগোরিদমের নয়৷ মানুষই সেই অ্যালগোরিদম প্রোগ্রাম করে ও তাতে তথ্য ভরে দেয়৷ তিনি বলেন, ‘‘মেশিন লার্নিং প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে আমরা প্রশিক্ষণ দেই বলেই অ্যালগোরিদম শিক্ষা নেয়৷ নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ‘ডিপ লার্নিং' হোক, অথবা ‘শ্যালো মেশিন লার্নিং' হোক, তার ফল একই হয়৷ তথ্য ভরে আমরা তাকে মত স্থির করতে বলি৷ কিন্তু তথ্যের মধ্যে যদি বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতি অন্যায়ের ছাপ থাকে, তার ভিত্তিতেই অ্যালগোরিদম মনস্থির করবে৷''
যেমন অনুবাদ সফটওয়্যার৷ লক্ষ লক্ষ টেক্সট শিখে সেই সফটওয়্যার সঠিক শব্দ বাছাই করে৷ কিন্ডারগার্টেনের প্রসঙ্গে যদি শিক্ষকের তুলনায় শিক্ষিকাদের কথা বার বার উঠে আসে, তখন অ্যালগোরিদম সেটিকেই স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেয়৷
ছবি শনাক্ত করার অ্যালগোরিদম ছবির বিশাল তথ্যভাণ্ডার থেকে শিক্ষা নেয়৷ সেখানে রান্নাঘরে পুরুষদের তুলনায় নারীদের ছবির সংখ্যা অনেক বেশি৷ ফলে অ্যালগোরিদম রান্নাঘরের সঙ্গে নারীদের যোগাযোগ স্থাপন করে৷
আরেকটি সমস্যা হলো অ্যালগোরিদম প্রচলিত জ্ঞানকে আরও জোরদার করে৷ তার মাত্রা এমন এক পর্যায়ে যেতে পারে, যে অ্যালগোরিদম পুরুষকে নারী হিসেবে শনাক্ত করে৷ এই প্রক্রিয়ার মোকাবিলা করা অত্যন্ত কঠিন ও সময়সাপেক্ষ৷ কাটারিনা ইয়ারমুল বলেন, ‘‘তাদের তথ্যের সব উৎস জানা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ অনেক সময় জুড়ে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করলে সচেতনভাবে সেগুলি একবার একাধিক মানুষকে দিয়ে খতিয়ে দেখা উচিত৷ তাতে কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অন্যায় বা ক্ষতিকর কিছু পেলে সরিয়ে দেওয়া উচিত৷''
অ্যালগোরিদমের কোড বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চরম গোপনীয়তার বেড়াজালে থাকে৷ তাই কোনো অ্যালগোরিদম অন্যায় আচরণ বা বৈষম্য করছে কিনা, তা প্রমাণ করা কঠিন৷ টেমিস নামের এক সফটওয়্যার অ্যালগোরিদম পরীক্ষা করে বৈষম্য শনাক্ত করতে পারে৷ ভুয়া অ্যাকাউন্ট সৃষ্টি করে সেটি আচরণ যাচাই করে প্রাথমিক তুলনা করে৷ লিঙ্গ ছাড়া সেই সব অ্যাকাউন্ট হুবহু আসলের মতো৷ কাটারিনা ইয়ারমুল বলেন, ‘‘জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও সততা মেশিন লার্নিং-এর ভবিষ্যৎ৷ অ্যালগোরিদমকে বিশ্বস্ত করে তুলতে হবে৷ সেটি কীভাবে কাজ করে, কী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় – মানুষকে এই সব প্রশ্ন করার অনুমতি দিতে হবে৷''
অ্যালগোরিদম যে একপেশে আচরণ করতে পারে, এ বিষয়ে এক সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে৷ সেইসঙ্গে চাই মানুষের নিয়ন্ত্রণ৷
ইন্টারনেটে সবচেয়ে প্রভাবশালী যারা
ইন্টারনেটে যে কেউ যে কোনো সময় আলোচনায় আসতে পারেন৷ আফগানিস্তানের এক গ্রাম থেকে পোস্ট করা ছবি মেসি অবধি পৌঁছাতে পারে, আলোড়ন তুলতে পারে যেকোন ভিডিও৷ চলুন ইন্টারনেটে সবচেয়ে প্রভাবশালীদের দেখে নেই৷
ছবি: Colourbox/L. Dolgachov
গেমারের ভক্ত চার কোটি!
সুইডেনের কম্পিউটার গেমার ফিলিক্স আরভিড উলফ শেলবের্গের ইউটিউব চ্যানেলের সাবসক্রাইবারের সংখ্যা চার কোটির বেশি৷ গত বছর টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ইন্টানেটে প্রভাবশালীদের তালিকায় তাঁকে সবার আগে রাখা হয়েছে৷ তালিকায় থাকা আরো কয়েকজন সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন নেক্সট বাটনে৷
ছবি: Roslan Rahman/AFP/Getty Images
সংগীত তারকার উত্তর
২৫ বছর বয়সি সংগীত তারকা টেইলর সুইফটের ইন্টারনেট ভক্তের সংখ্যা কয়েক কোটি৷ তাঁর সবগুলো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম অ্যাকাউন্টই ভক্ত সংখ্যার বিবেচনায় বেশ উপরের দিকে৷ ভক্তদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন৷ কেউ গালি দিলে জবাব দেয়া কিংবা প্রেমে ব্যর্থ ভক্তের জন্য গান খুঁজে দেয়ার মতো কাজও করেছেন তিনি৷ ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া মানুষদের নিয়ে একাধিক পার্টিও করেছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/G. Denholm
দ্য জেস্টার
কারো কাছে হিরো, বাকিদের কাছে ক্রিমিনাল৷ দ্য জেস্টার ইন্টারনেটে প্রভাবশালী হ্যাক্টিভিস্টদের একজন, যাদের কাজ হচ্ছে ইন্টারনেট সন্ত্রাসী এবং ঘৃণা ছড়ানো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করা৷ জেস্টার দাবি করেন, তিনি তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস-সহ ক্ষতিকর ১৮০টি ওয়েবসাইট হ্যাক করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Tirl
ভাইনে সবচেয়ে জনপ্রিয় যিনি
সোশ্যাল মিডিয়া ভাইন যারা ব্যবহার করেন কিংবা যারা এখন টিনএজার, তাদের কাছে এক অতি পরিচিত নাম ন্যাশ গ্রিয়ার৷ ১৭ বছর বয়সি এই তরুণের ভাইনে ফলোয়ারের সংখ্যা এক কোটি পচিশ লাখের বেশি৷
ছবি: picture alliance/empics/A. Matthews
ফেসবুকে যাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করা হয়
বলছি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কথা৷ টাইমের হিসেবে ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি লাইক পাওয়া বিশ্বে নেতা তিনি, টুইটারে সবচেয়ে বেশি অনুসারী আছেন এমন বিশ্ব নেতাও তিনি৷ রেডিট-এর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার প্রদর্শিত হয়েছে বারাক ওবামার ‘আস্ক মি এনিথিং’ পাতাটি৷
ছবি: Gabriel Bouys/AFP/Getty Images
ইন্সটাগ্রাম রানি কিম কার্দেশিয়ান
মার্কিন টিভি তারকা কিম কার্দেশিয়ান নানাভাবে নিজেকে আলোচিত রাখেন৷ ইন্সটাগ্রামে তাঁর ভক্তের সংখ্যা ছয় কোটির মতো৷ সেখানে মূলত সেলফি পোস্ট করে এত ভক্তকে সন্তুষ্ট রেখেছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/D. Becker
আছেন এক লাইফস্টাইল ব্লগারও
টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ত্রিশ ব্যক্তির তালিকার প্রথম সাতজনের মধ্যে আছেন একজন লাইফস্টাইল ব্লগারও৷ ব্লগার জয় চো আছেন জনপ্রিয় সব সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে৷ তবে পিন্টারেস্ট-এ তাঁর এক কোটি ত্রিশ লাখ ভক্ত থাকাটা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়৷