ইন্টারনেট ব্যবহারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিশু যৌন নিপীড়ন৷ বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই প্রবণতা প্রবল৷ থাইল্যান্ডে আয়োজিত এক সম্মেলনে এমনটিই বলেন বিশেষজ্ঞরা৷ বলেন, শিশুরাও এই প্রবণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে৷
বিজ্ঞাপন
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে আয়োজিত এ সম্মেলনে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রধান নিল ওয়ালশ বলেন, ‘‘অনলাইনে শিশু নিপীড়ন ক্রমাগত বাড়ছে৷'' আর এর জন্য মূলত প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধিকেই দায়ী মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ইন্টারনেট সেবার বিস্তার এবং ব্যবহার দ্রুত গতিতে বাড়ছে৷ ফিলিপাইন্সে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আঞ্চলিক পর্যায়ে ইন্টারনেট প্রাপ্যতা শতকরা ৫০ ভাগ থেকে বেড়ে ৫৮ ভাগ হয়েছে৷ থাইল্যান্ডে বেড়ে হয়েছে শতকরা ৬৭ ভাগ৷
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
শিশুরা বিকৃতকাম মানুষের সহজ শিকার৷ সারল্যের সুযোগ নিয়ে সহজে ভোলানো যায় তাদের৷ অনেক সময় শিশুরা বুঝতে পারে না, চিনতে পারে না পিশাচের থাবা৷ আর বুঝলেও করতে পারে না প্রতিবাদ, প্রতিরোধ৷ শুধু একটা অস্বস্তি থেকে যায় সারাটা জীবন৷
ছবি: picture alliance/abaca
ভয়াবহ অবস্থা ভারতে
ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের অর্ধেকেরও বেশি বাচ্চা যৌন নিগ্রহের শিকার৷ তবে সবচেয়ে ভয়ংকর সত্য হলো, নাবালিকা বা শিশুর ওপর যৌন হেনস্থার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে পরিবারের মধ্যে, পরিবারেরই কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত সদস্যের হাতে৷ তাই সে সব ঘটনা পুলিশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, হচ্ছে না কোনো ডাইরি অথবা মামলা৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব
এভাবে প্রতিদিন বিকৃত যৌন নির্যাতনে হারিয়ে যাচ্ছে অগুন্তি শৈশব৷ অনেকক্ষেত্রেই শিশুরা বুঝে উঠতে পারছে না, বলে উঠতে পারছে না তাদের অমানবিক সেই সব অভিজ্ঞতার কথা৷ তাই শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত, বিকৃত মানুষগুলো থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে৷ সমাজবিদরা বলছেন, এ জন্য আগাম সতর্কতার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবক এবং স্কুলের৷ শিশুকে দিতে হবে তার প্রাপ্য শৈশব৷
ছবি: Fotolia/Kitty
যেভাবে বোঝাবেন বাচ্চাদের
সহজ ভাষায় খেলা বা গল্পচ্ছলে শিশুদের এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে তোলা যেত পারে৷ বাচ্চাদের বলতে হবে যে, তাদের শরীরটা শুধুমাত্র তাদের৷ অর্থাৎ কেউ যেন তাদের ‘গোপন’ জায়গায় হাত না দেয়৷ তাই কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির আচরণ অস্বস্তিকর ঠেকলে, কেউ তাদের জোর ঘরে কোনো ঘরে নিয়ে গেলে, খেলার ছলে চুমু দিলে বা শরীরের কোথাও হাত দিলে – তা যেন মা-বাবাকে জানায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিনিয়ে দিন যৌনাঙ্গ
অনেক বাবা-মা নিজ সন্তানের সঙ্গে যৌনাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেন৷ কিন্তু এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং খুব ছোটবেলাতেই ছবি এঁকে অথবা গল্পে-গানে বাচ্চাকে তার শরীরের অন্য সব অঙ্গের মতো যৌনাঙ্গ, লিঙ্গ ইত্যাদি চিনিয়ে দিতে হবে৷ এমনটা করলে কেউ যদি তাদের সঙ্গে পিশাচের মতো ব্যবহার করে, তাহলে শিশুরা সহজেই বলতে পারবে কে, কখন, কোথায় হাত দিয়েছিল৷
ছবি: DW/S.Rahman
শিশুর কথা শুনুন, তার পক্ষ নিন
শিশু যাতে আপনাকে বিশ্বাস করতে পারে, বন্ধুর মতো সবকিছু খুলে বলতে পারে – সেটা নিশ্চিত করুন৷ আপনার বাচ্চা যদি পরিবারের কাউকে বা আপনার কোনো বন্ধুকে হঠাৎ করে এড়িয়ে যেতে শুরু করে অথবা আপনাকে খুলে বলে বিকৃত সেই মানুষের কৃতকর্মের কথা, তবে সময় নষ্ট না করে শিশুটির পক্ষ নিন আর তিরস্কার করে বাড়ি থেকে বার করে দিন ঐ ‘অসুস্থ’ লোকটাকে৷
ছবি: Fotolia/pegbes
স্কুলেরও দায়িত্ব আছে
বাচ্চারা দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়৷ তাই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলের একটা বড় দায়িত্ব থেকে যায়৷ তবে স্কুলের মধ্যে, বিদ্যালয় চত্বরেও ঘটতে পারে শিশু নির্যাতনের ঘটনা৷ তাই স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চা যদি অতিরিক্ত চুপচাপ থাকে, একা একা সময় কাটায় বা পড়াশোনা করতে না চায়, তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলুন৷ জানতে চান কী হয়েছে, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানান৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
ছেলে-মেয়ে সমান!
আমাদের সমাজে ছোট থেকেই মেয়েদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়৷ মেয়ে হলেই হাতে একটা পুতুল আর ছেলে হলে ধরিয়ে দেয়া হয় বল বা খেলনার পিস্তল৷ ছেলের পাতে যখন তুলে দেয়া হয় মাছের বড় টুকরোটা, তখন মেয়েটির হয়ত এক গ্লাস দুধও জোটে না৷ এ বৈষম্য বন্ধ করুন৷ বাবা-মায়ের চোখে ছেলে-মেয়ে সমান – সেভাবেই বড় করুন তাদের৷ তা না হলে নারীর ক্ষমতায়ন হবে কীভাবে? কীভাবে কমবে শিশু নির্যাতন?
ছবি: picture alliance/abaca
7 ছবি1 | 7
এর পাশাপাশি যা লক্ষ্যণীয়, তা হলো, অনলাইন দুনিয়ায় শিশুদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি৷ অনেক শিশুই অনলাইনে নিজেদের ফুটেজ শেয়ার করছে৷ কখনো স্বেচ্ছায়, কখনো অন্যের প্ররোচনায়৷ পরে সেই ফুটেজ ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের বিরুদ্ধেই৷
অস্ট্রেলীয় পুলিশের যৌন নিপীড়নবিরোধী ইউনিট ‘টাস্কফোর্স আরগোস'-এর কর্মকর্তা জন রাউজ৷ তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংককে ৩ হাজার ৬০০ ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেগুলো থেকে নিয়মিতই শিশু নিপীড়নের ছবি বা ভিডিও শেয়ার করা হয়৷
এর আগে গত আগস্টে এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জানায়, মেকং অঞ্চলে শিশুদের দিয়ে যৌন নিপীড়নের লাইভ স্ট্রিমিং করানোর চাহিদা বাড়ছে৷ সেখানে আরো বলা হয়, অনলাইনে ব্যাপক যৌন নিপীড়নের জন্য পরিচিত ফিলিপাইন্স থেকে এ প্রবণতা থাইল্যান্ডের দিকে ছড়িয়ে পড়ছে৷ ২০১৬ সালের আরেক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জানিয়েছিল, ফিলিপাইন্সে অনেক বাবা-মা-ও দারিদ্র্যের কারণে শিশু সন্তানদের যৌনমিলনের দৃশ্য ‘লাইভ' করেন৷
সম্মেলনে নিল ওয়ালশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমরা যদি বলি সংকট থেকে দূরে আছি, তাহলে অন্যায় করা হবে৷''