ইন্টারনেটে ধর্মীয় বিশ্বাস প্রচারে ক্যাথলিক খ্রিষ্টান তরুণরা
১৫ আগস্ট ২০১১খ্রিষ্টীয় ক্যাথলিকরা প্রতি বছর পালন করছে বিশ্ব যুব দিবস৷ সেই উপলক্ষ্যে গোটা বিশ্বের ক্যাথলিক খ্রিষ্টান যুবক-যুবতীরা সমবেত হয়৷ এবার ১৬ আগস্ট থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত এই সমাবেশ চলবে৷
প্রতিদিনের জীবনে ইন্টারনেট
জার্মানির মিউনিখ শহরের বাসিন্দা ইয়োজেফ রোমেল সামাজিক বিজ্ঞান এবং রেগিনে ফ্রে ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করছেন৷ ইন্টারনেট ছাড়া তাঁরা যেন কোনকিছু ভাবতেই পারেন না৷ ইন্টারনেট তাঁদের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত৷ কেবল পড়াশোনাতেই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও৷
যেমন রোমেল বললেন, ‘‘প্রতিদিন আমি দুই থেকে তিন ঘন্টা ইন্টারনেটে সময় কাটাই৷ তবে যখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে তখন আরও বেশি, কখনো হয়তো চার থেকে পাঁচ ঘন্টা৷''
অন্যদিকে ফ্রে তার ইন্টারনেট ব্যাবহার নিয়ে বললেন, ‘‘আমি ব্লগ পড়ি না, যদি না তাতে বিশেষ কিছু থাকে৷ তবে বিশ্ব যুব দিবস'এর সময় দেখবো ব্লগগুলিতে ঐ সমাবেশ নিয়ে নতুন কী খবর আছে৷''
ইন্টারনেটেও ধর্মীয় প্রচারণা
ইন্টারনেটে ধর্মও এখন একটি বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এই নিয়ে ইন্টারনেটে বর্তমানে বিস্তর আলোচনা চলছে৷ রয়েছে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে ইন্টারনেট ফোরাম, ধর্মীয় সংবাদ বিষয়ক পোর্টাল৷ এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্লগ৷ ব্লগ হচ্ছে অনেকটা প্রতিদিনের ডায়রির মতো এবং এখানেও নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রচার করে চলেছেন অনেকে৷ তেমন একটি ওয়েবসাইট frischfischen.de৷ এই ওয়েবসাইটটি চালান ক্যাথলিক ব্লগার স্টেফান লেস্টিং৷ জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের বাসিন্দা লেস্টিং এই ব্যাপারে বলেন, ‘‘গির্জা এবং ইন্টারনেট এখন একসঙ্গেই অবস্থান করছে৷ এমনকি সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এখন গির্জার যাজকরাও অনলাইনে বসেন এবং এটা, এখন একটা স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে৷ আমার কাছে এই সহাবস্থানটা অত্যন্ত খ্রিষ্টীয় বলে মনে হয়৷''
২৫ বছর বয়সি এই ব্লগারের ব্লগের বিষয় ধর্ম এবং নৈতিকতা৷ একইসঙ্গে আসন্ন বিশ্ব যুব দিবস উপলক্ষ্যে স্পেনে অনুষ্ঠেয় ক্যাথলিক যুব সমাবেশ নিয়েও লিখে চলেছেন স্টেফান লেস্টিং৷ গোটা বিশ্বেই এখন অনলাইনের রাজত্ব৷ এমনকি যাঁরা সশরীরে এই যুব সমাবেশে যেতে পারবেন না, তাঁদের জন্য ফেসবুকে খোলা হয়েছে ভার্চুয়াল যুব সমাবেশ নিয়ে একটি পাতা৷ তবে লেস্টিং মাদ্রিদের সেই যুব সমাবেশে এবার নিজেই হাজির থাকতে চান বলে জানান, ‘‘ইন্টারনেটের ফলে এবারের বিশ্ব যুব দিবসের অনেক কিছুই খুব সহজ হয়ে গেছে৷ যেমন এবার অনেকের সঙ্গে আমার দেখা হবে, যাঁদের সঙ্গে ইন্টারনেটে আমি গত দুই থেকে তিন বছর ধরে যোগাযোগ করে চলেছি৷ ভার্চুয়াল বিশ্ব যুব দিবস নামে ফেসবুকে একটি পাতাও রয়েছে৷ তবে সেখানে সশরীরে মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় না৷ তাই শুধুমাত্র অনলাইনে নিজেদের যোগাযোগ করাটা যথেষ্ট নয়৷ আমি জানিনা এবার সমাবেশে কতো মানুষ আসবে৷ তবে যখন হাজার হাজার মোমবাতি একসঙ্গে জ্বালানো হবে, তখন মনে হবে যেন আলোর মিছিল৷ এই অভিজ্ঞতা ইন্টারনেটে পাওয়া যায় না৷
ক্যাথলিকদের মিশনারি লক্ষ্য
এবারের ক্যাথলিকদের বিশ্ব যুব দিবস উপলক্ষ্যে ইন্টারনেটে অনেক ওয়েবসাইট চালু হয়েছে, যারা মিশনারি উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে চলেছে৷ তাদের একটি weltjugendtag.de৷ এই সাইটটির দেখাশোনা করেন গিয়র্গ ফেসেলমাইয়ার৷ মাদ্রিদের যুব সমাবেশে যাওয়ার জন্য আগ্রহীদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থাও করে দিচ্ছেন তিনি৷ এছাড়া তিনি triff-den-papst.de নামেও একটি ওয়েবসাইটও চালু করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘triff-den-papst নামে এই ওয়েবসাইটে পোপ বেনেডিক্টের ভাষণগুলো দেওয়া আছে৷ এতে তাঁকে সরাসরি দেখানোরও সুযোগ রয়েছে৷ এছাড়া, যুব সমাবেশ নিয়ে ফেসবুকে পাতা রয়েছে এবং এই সমাবেশের আনন্দ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজও করছে এই ওয়েবসাইটটি৷ ভাবুন তো, দুই হাজার বছর আগের মানুষ যদি এই ইন্টারনেট সম্পর্কে জানতো, তাহলে তারা কেমন খুশি হতো? আমার মতে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুব সমাজের কাছে আরও বেশি বার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে৷''
ইন্টারনেটে এই যুব সমাবেশ ছাড়াও, ক্যাথলিক বিশপদের সম্মেলন নিয়েও নানা তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে৷ আর ইন্টারনেটে যেসব ক্যাথলিক ব্লগার খ্রিষ্টান ধর্মের বাণী প্রচার করছেন, তাঁদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভ্যাটিক্যান সিটি৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ