টুইটারে হ্যাশট্যাগ #Mahasen৷ ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ নেই বটে, তবে নিউজ ফিডে ঘুরছে একটাই শব্দ ‘মহাসেন’৷ বৃহস্পতিবার সকাল অবধি এই ঝড় নিয়ে ছিল আতঙ্ক, এখন অনেকের মাঝেই স্বস্তির নিঃশ্বাস৷
বিজ্ঞাপন
স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের গতিপথ দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে৷ এই বিষয়টি বুধবারই টুইটারে জানান রেজওয়ান ইসলাম৷ টুইটে প্যাসিফিক ডিজাস্টার সেন্টারসহ কয়েকটি ওয়েবসাইটের লিংক প্রদান করেন তিনি৷ পাশাপাশি ম্যাপিং বাংলাদেশ নামক একটি ওয়েবসাইটে উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত সাইক্লোন শেল্টারগুলো সম্পর্কে তথ্য যোগ করা হয়েছে৷ টুইটারে এই ওয়েবসাইটের লিংকও শেয়ার করেছেন অনেকে৷
টুইটারে #Mahasen নামটিকে হ্যাশট্যাগ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ফলে যেকেউ মহাসেন সম্পর্কে জানতে পারছেন খুব সহজেই৷ অনেকে আবার ইন্সটাগ্রামে ঝড়ের ছবি তুলে প্রকাশ করেছেন টুইটারে৷
আতঙ্ক ছড়ালেও দুর্বল ছিল মহাসেন
মহাসেন নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয় গোটা বাংলাদেশে৷ মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক৷ তবে স্থলভাগে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুর্বল হয়ে যায় মহাসেন৷ তাসত্ত্বেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন এলাকায়৷
ছবি: Soe Than Win/AFP/Getty Images
মহাসেনের সর্বশেষ পরিস্থিতি
ঘূর্ণিঝড় মহাসেন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে তৈরি হয় ব্যাপক আতঙ্ক৷ তবে স্থলভাগে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুর্বল হয়ে গেছে মহাসেন৷ তা সত্ত্বেও বার্তা সংস্থা এপির হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং শ্রীলঙ্কায় প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে ৪৫ ব্যক্তি৷
ছবি: STRDEL/AFP/Getty Images
নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন অনেকে
ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের কবল থেকে রক্ষা পেতে উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলো থেকে অনেক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন৷ বার্তাসংস্থা এপি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ঝড় আঘাত হানার আগে দশ লক্ষের বেশি মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়ে সরে যায়৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সাইক্লোন শেল্টার, স্কুল, সরকারি ভবন
মহাসেন থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন সাইক্লোন শেল্টার, স্কুল এমনকি সরকারি ভবনে৷ কক্সবাজার অঞ্চলে অনেকে হোটেলেও উঠেছেন৷ আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ কেউ আবার সঙ্গে গৃহস্থালীর জিনিসপত্র, এমনকি গবাদি পশু নিয়ে এসেছে৷
ছবি: Reuters
বৃহস্পতিবার ভোরে আঘাত
বৃহস্পতিবার ভোরে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবর্তী অঞ্চল খেপুপাড়ায় প্রথম আঘাত হানে মহাসেন৷ সেসময় এটির গতি ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার৷ এরপর সেটি উপকূল ধরে চট্টগ্রামের দিকে এগিয়ে যায় এবং কক্সবাজারে আঘাত হানে৷ সামগ্রিকভাবে মহাসেন উপকূলে পৌঁছে দুর্বল হয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/AP
প্রস্তুত নৌ ও বিমান বাহিনী
মহাসেনকে ঘিরে ব্যাপক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার৷ ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতা চালাতে নৌবাহিনীর ২২টি জাহাজ ও বিমানবাহিনীর ১৯টি হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: ChinaFotoPress via Getty Images
প্রস্তুত মেডিক্যাল টিম
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক জানান, উপকূলবর্তী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ১,৩২৭টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷ বাতিল করা হয়েছে চিকিত্সকসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি৷ প্রস্তুত আছেন রেড ক্রিসেন্টের ৪২,৬৭৫ জন প্রশিক্ষিত উদ্ধারকর্মীও৷
ছবি: Soe Than Win/AFP/Getty Images
ঘূর্ণিঝড় নতুন নয়
ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশে নতুন নয়৷ এর আগে ১৯৯১ সালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারায় ১৩৯,০০০ মানুষ৷ সেসময় কয়েক কোটি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে৷ ২০০৮ সালে মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড়ে নিহতের সংখ্যা ১৩০,০০০৷ তবে মহাসেন তীব্রতার বিচারে নার্গিসের সঙ্গে তুলনীয় নয়৷ ‘ক্যাটেগরি ১’ মাত্রার সাধারণ ঘূর্ণিঝড় এটি৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
ভারতে সতর্কতা
বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের মতো পরিস্থিতি না হলেও ভারতের কিছু অঞ্চলের জেলেদেরকে অন্তত ৩৬ ঘণ্টা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে বলেছে সেদেশের সরকার৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
মসজিদে আশ্রয়
মিয়ানমারের এই রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছেন একটি মসজিদে৷ তাদের সাধারণ আবাসনগুলো বেশ দুর্বল৷ মিয়ানমার সরকারের বঞ্চনার শিকার রোহিঙ্গারা এমনিতেই দুর্বল৷ এরকম ঘূর্ণিঝড় তাদের আরো বেশি অসহায় করে দেয়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
জাতিসংঘের উদ্বেগ
জাতিসংঘের মানবিক সাহায্য বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের কারণে বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রায় ১ কোটি মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে৷ বিশেষ করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সবচেয়ে সঙ্গীন হয়ে পড়তে পারে৷ তাই ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে উপদ্রুত অঞ্চলে দ্রুত উদ্ধার এবং ত্রাণ কর্মসূচি পরিচালনা জরুরি৷
ছবি: Soe Than Win/AFP/Getty Images
10 ছবি1 | 10
মহাসেন নিয়ে টুইটারের চেয়ে বড় আলোচনা অবশ্য চলছে ফেসবুকে৷ ইতোমধ্যে গণমাধ্যমের সূত্রে জানা গেছে, মহাসেন যতটা ক্ষতি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল, ততটা ক্ষতি আসলে উপকূলবর্তী অঞ্চলে হয়নি৷ তাসত্ত্বেও উপকূলে প্রাণহানি ঘটেছে, হাজার হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে৷
ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় বরিশাল থেকে সানজিদা আক্তার জানিয়েছেন, তাঁর এলাকায় প্রাণহানির কোনো খবর তিনি এখনও শোনেননি৷ ফিরোজ আশরাফ শান্ত নামক আরেক পাঠক মন্তব্য করেছেন, ‘‘কোনো দুর্যোগ দেখতে চাই না, চাইনা আর কোনো ক্ষতি হোক৷ এমনিতেই হরতাল দুর্যোগে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে এ দেশের৷''
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় নতুন কোনো দুর্যোগ নয়৷ ১৯৯১ সালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছে ১৩৯,০০০ মানুষ৷ ২০০৭ সালে সাইক্লোন সিডরও কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য প্রাণ৷ এছাড়া বিভিন্ন সময় ছোটখাট ঝড়, নিম্নচাপ উপকূলবর্তী অঞ্চলের মানুষদের কাছে নিয়মিত ঘটনা৷ ঠিক এই বিষয়টিকে ফেসবুকে তুলে এনেছেন ব্লগার আরিফ জেবতিক৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘আমরা লড়াকু জাতি, উপকূলে লড়াইয়ের ইতিহাস আমাদের নতুন নয়৷ আমরা গরীব হতে পারি, কিন্তু অল্পকে সম্বল করেই ঝড় মোকাবেলায় আমাদের জন্ম থেকে প্রজন্মের অভিজ্ঞতা৷ মৃত্যুঞ্জয়ী রেশমাদের দেশে মহাসেন নিপাত যাক৷''
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত যা খবর, তাতে মহাসেনে প্রাণহানি ঘটেছে কম৷ তবে উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নেহাত কম নয়৷ হাজার হাজার ঘরবাড়ি মহাসেনের ছোবলে ধ্বংস হয়েছে৷ ফলে গৃহহীণ এখন অনেক মানুষ৷ ঝড়ের পরের এই দুর্যোগ সম্পর্কে ফেসবুকে লিখেছেন বিজয় মজুমদার৷ তাঁর কথা হচ্ছে, ‘‘...ইতোমধ্যে মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় কোথায় কোথায় ঝড় আঘাত হেনেছে তার বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে, সে সমস্ত জায়গায় কি ভাবে দ্রুত সাহায্য পৌঁছানো যায়, তার উদ্যোগ নেওয়ার শুরু করার সময় কিন্ত এখনই৷''