ইউরোপে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার কারণ নাকি শেঙেন চুক্তি৷ এ মত অনেকেরই৷ তবে ডয়চে ভেলের ‘কনফ্লিক্ট জোন' অনুষ্ঠানে ইউরোপোল প্রধান রব ওয়েনরাইট জানান, শেঙেন চুক্তি নয়, ইউরোপে ইন্টারনেটই সন্ত্রাসের জন্য দায়ী৷
বিজ্ঞাপন
‘‘দুর্ভাগ্যক্রমে বার্লিন (অর্থাৎ ১৯শে ডিসেম্বরের আক্রমণ) আমাদের দুঃখজনকভাবে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমরা হাজার হাজার সম্ভাব্য উগ্রপন্থিদের নিয়ে কাজ করছি যারা এ ধরনের আক্রমণ করতে পারে'', বলেন ইউরোপের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান বব ওয়েনরাইট৷
ইউরোপোল ‘‘সেই বিপদকে শূন্যে নামিয়ে আনতে পারে না'', বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ ইউরোপোলের প্রতিপক্ষ আজ ‘‘আইএস-এর মতো একটি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও ক্ষমতাশালী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী, যারা তাদের যুদ্ধ চোরাপথে ইউরোপে আনতে বদ্ধপরিকর, যেমন আমরা প্যারিস ও ব্রাসেলস এবং এখন বার্লিনেও দেখেছি'', বলেন ওয়েনরাইট৷
জার্মানিতে যেসব সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা হয়েছিল
গত আঠারো মাসে বেশ কয়েকবার জার্মানিতে সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা করা হয়েছে, যার অধিকাংশই অবশ্য পুলিশ আগেভাগে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়৷ আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস-এর অন্যতম টার্গেট এখন ইউরোপের এই দেশটি৷
ছবি: Reuters/M. Rehle
লাইপসিশ, অক্টোবর ২০১৬
লাইপসিসের পুলিশ দু’দিন ধরে তল্লাশি চালানোর পর ২২ বছর বয়সে সিরীয় শরণার্থী জাবের আল-বাকেরকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়৷ চেমনিৎসে তার অ্যাপার্টমেন্টে বিস্ফোরক এবং বোমা তৈরিত সরঞ্জাম পাওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ সন্দেহ করা হয় যে, বার্লিন বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছিল সে৷ গ্রেপ্তারের দুই দিন পর অবশ্য কারাগারে আত্মহত্যা করে এই সিরীয় শরণার্থী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Willnow
আন্সবাখ, জুলাই ২০১৬
গত জুলাই মাসে জার্মানিতে দু’টি হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস৷ দু’টি হামলাই শরণার্থীরা ঘটিয়েছিল৷ এর মধ্যে বাভারিয়ার আন্সবাখ শহরে একটি মিউজিক ফেস্টিভ্যালের প্রবেশ মুখে এক সিরীয় শরণার্থী বিস্ফোরণ ঘটালে ১৫ ব্যক্তি আহত হন৷ হামলায় হামলাকারী অবশ্য নিজেও প্রাণ হারায়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/D. Karmann
ভ্যুয়র্ত্সবুর্গ, জুলাই ২০১৬
১৭ বছর বয়সি এক শরণার্থী ভ্যুয়র্ত্সবুর্গে একটি ট্রেনের মধ্যে কুড়াল ও ছুরি নিয়ে যাত্রীদের উপর হামলা চালায়৷ এতে হংকং থেকে আসা এক পর্যটক পরিবারের চার সদস্য এবং অন্য একজন আহত হন৷ পুলিশ হামলাকারীকে গুলি করে হত্যা করে৷ পুলিশ জানায়, হামলাকারী তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সদস্য না হলেও এই জঙ্গি গোষ্ঠীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে হামলা চালিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Hildenbrand
ড্যুসেলডর্ফ, মে ২০১৬
ইসলামিক স্টেট-এর তিন সন্দেহভাজন সদস্যকে নর্থ রাইনওয়েস্টফেলিয়া, ব্রান্ডেনবুর্গ এবং বাডেন ভ্যুর্টেনবের্গ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ কর্তৃপক্ষ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দু’জন ড্যুসেলডর্ফের শহরতলীতে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেছিল৷ অপরজন এবং ফ্রান্সে গ্রেপ্তারকৃত চতুর্থ জিহাদি বন্দুক ও বিস্ফোরক নিয়ে পথচারীদের হামলার পরিকল্পনা করছিল বলে খবর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hitij
এসেন, এপ্রিল ২০১৬
এসেনে একটি শিখ মন্দিরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ বিস্ফোরণে তিন ব্যক্তি আহতও হন৷ সিসিটিভি ফুটেজ প্রচারের পর ১৬ বছর বয়সি এক সন্দেহভাজন নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে৷ আর অন্য তরুণ সন্দেহভাজনকে বাড়ি থেকে আটক করে স্পেশাল পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kusch
হানোফার, ফেব্রুয়ারি ২০১৬
১৬ বছর বয়সি জার্মান-মরোক্কান তরুণী সোফিয়া এস. হানোফার ট্রেন স্টেশনে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত করে৷ ধারণা করা হয়, ইসলামিক স্টেট-এর সদস্যরা তাকে এই হামলায় প্ররোচিত করেছিল৷
ছবি: Polizei
বার্লিন, ফেব্রুয়ারি ২০১৬
বার্লিনে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে ইসলামিক স্টেট-এর সন্দেহভাজন তিন আলজেরীয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ বার্লিনের প্রসিকিউটরের দপ্তরের তথ্য আনুযায়ী, রাজধানীতে হামলা করার জন্য তাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত ছিল কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
ওবারউরসেল, এপ্রিল ২০১৫
এশবর্ন-ফ্রাংকফুর্ট সিটি লুপ বাইক রেস বাতিল করে পুলিশ, কেননা তারা সন্দেহ করছিল যে সেই রেসে ইসলামিক স্টেট হামলা চালাতে পারে৷ হামলা পরিকল্পনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৩৫ বছর বয়সি এক তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান এবং তাঁর ৩৪ বছর বয়সি স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে৷ বাইক রুটের কাছে তাদের বাড়ি থেকে বোমা তৈরির উপকরণও উদ্ধার করে পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
8 ছবি1 | 8
গত ডিসেম্বরে বার্লিনের একটি বড়দিনের বাজারের উপর আক্রমণের আততায়ী আনিস আমরির রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ হয়েছিল, কিন্তু টিউনিশিয়া থেকে তার কাগজপত্র না আসায় তাকে বহিষ্কার করা যায়নি৷ সেপ্টেম্বরে মরক্কোর গুপ্তচর বিভাগ দু'দু'বার জার্মান গুপ্তচর বিভাগকে আমরি সম্পর্কে সাবধান করে দেয়৷ আমরি মার্কিনিদের তালিকায় ছিল ও ইটালিতে জেল খেটেছে৷
তাহলে কি কর্তৃপক্ষ কিছু করার আগে আমরিকে খবরের কাগজে তার সন্ত্রাসী পরিকল্পনার নোটিস দিতে হবে? বব ওয়েনরাইটকে প্রশ্ন করেন ‘‘কনফ্লিক্ট জোন''-এর সঞ্চালক টিম সেবাস্টিয়ান৷ এক্ষেত্রে ওয়েনরাইট ইউরোপোলের কোনো দায়িত্ব অস্বীকার করেন৷ ইউরোপ জুড়ে বহু মানুষের ওপর নজর রাখা হচ্ছে, কিন্তু এ ধরনের মানুষের সংখ্যা এত বেশি যে, কার তরফ থেকে যে পরবর্তী আক্রমণ আসবে, তা ভবিষ্যদ্বাণী করা সহজ নয় – বলেন বব ওয়েনরাইট৷
বস্তুত ইউরোপোলের সংগ্রাম সংগঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধবৃত্তির বিরুদ্ধে হলেও, ইউরোপোল ইইউ-এর সদস্যদেশগুলিতে তদন্ত চালাতে পারে না অথবা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে পারে না৷ কাজেই ইইউ-এর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রধানত একটি তথ্য আদানপ্রদানের পন্থা ছাড়া আর বিশেষ কিছু নয়, যে কারণে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া ইউরোপোলের পক্ষে সম্ভব নয়৷
ওয়েনরাইটকে প্রশ্ন করা হয় যে, শেঙেন চুক্তি অনুযায়ী ইইউ-এর অভ্যন্তরে অবাধ যাতায়াতের স্বাধীনতা এই সন্ত্রাসবাদের যুগে নিরাপত্তার বাস্তবসম্মত নীতি হতে পারে কিনা৷ সেই প্রসঙ্গে ওয়েনরাইট বলেন যে, শেঙেন চুক্তির চেয়ে ইন্টারনেটই অপরাধ ও সন্ত্রাসকে সহজতর করে তুলেছে – ‘‘কিন্তু সেজন্য কেউ ইন্টারনেট পরিত্যাগ করার কথা বলছেন না৷'' জনসাধারণের কাছ থেকে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা বা স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়াটা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হতে পারে না, বলে অভিমত প্রকাশ করেন বব ওয়েনরাইট৷
কারোলিন স্মিট/এসি
আপনার কী মনে হয়? কোনটা বেশি বিপজ্জনক? ইন্টারনেটের বিস্তার না শেঙেন চুক্তি? লিখুন নীচের ঘরে৷