গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের পর সে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে৷ গতবছর বেলারুশে বিতর্কিত নির্বাচনের পরও তা করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের যেসব স্থানে অগণতান্ত্রিক উপায়ে সরকারব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে সেসব জায়গায় নতুন শাসকদের ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে৷ ফলে আফগানিস্তানে তালেবান আসায় সেখানেও হয়ত এমন পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে৷
এই অবস্থায়ও বার্তা আদান প্রদানের কিছু উপায় আছে৷ যেমন ‘ব্রায়ার' অ্যাপ ৷ এটি একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ৷ এর মাধ্যমে ব্লুটুথ বা ওয়াইফাই ব্যবহার করে এক স্মার্টফোন থেকে আরেক স্মার্টফোনে বার্তা আদানপ্রদান করা যায়৷ এই অ্যাপের সবচেয়ে বড় সুবিধা, এটি একটি সরাসরি সংযোগ মাধ্যম, যা এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের কারণে ব্যবহার করা শতভাগ নিরাপদ৷ অর্থাৎ গোয়েন্দা সংস্থা, মোবাইল অপারেটর কিংবা হ্যাকাররা বার্তা পড়তে পারেননা৷
তবে ব্রায়ার অ্যাপের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে, এর মাধ্যমে ব্লুটুথ ব্যবহার করে মাত্র ১০ মিটার দূরত্বে বার্তা পাঠানো যায়৷ অবশ্য ওয়াইফাই ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ ১০০ মিটার দূরে বার্তা পাঠানো সম্ভব৷
ঘরে ইন্টারনেট নেই, তবুও চলছে লেখাপড়া
করোনাকালে বিশ্বের অনেক দেশেই চলছে অনলাইন ক্লাস৷ কিন্তু ফিলিপাইনসের কিছু জায়গায় ইন্টারনেট সংযোগের অবস্থা এমন যে লেখাপড়ার জন্য একরকম যুদ্ধেই নামতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
ফিলিপাইনসের পরিস্থিতি
বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পড়াশোনার পরিস্থিতি কেড়ে নিয়েছে৷ অনলাইনে পড়াশোনার দিকে সবাই ঝুঁকলেও বিশ্বের বহু জায়গায় পর্যাপ্ত ইন্টারনেট পরিষেবা নেই৷ ফলে, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত অসংখ্য শিক্ষার্থী৷ ফিলিপাইনসের অবস্থাও অনেকটা এমনই৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
ছাদে সংযোগ
দশ বছর বয়েসি ঝায় আর চালমার বাসার ভেতরে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায় না৷ তাই করোনাকালে পঞ্চম শ্রেণীর এই শিক্ষার্থীকে ছাদে উঠে চালের ওপর বসে বসেই করতে হয় অনলাইন ক্লাস৷ তার মা জানিয়েছেন, ‘‘মাঝে মাঝে আমরা সিমকার্ড পরিবর্তন করি যাতে আরেকটু ভালো সংযোগ পাওয়া যায়৷ কিন্তু সবসময় তা করার মতো টাকা হাতে থাকে না৷’’
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
সরকারের সাহায্য
ফিলিপাইনসের সরকার অন্যান্য দেশের মতোই শিক্ষার্থীদের এই পরিস্থিতিতে ট্যাব বা মোবাইল ফোন দিয়েছে, যার সাহায্যে তারা অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে পারে৷ কথা ছিল জানুয়ারি মাসেই স্কুল খুলবে৷ কিন্তু ফিলিপাইনসে বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত৷ ফলে, আরো কিছু দিন অনলাইনেই চলবে পড়াশোনা৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
পরিসংখ্যান যা বলছে
অনলাইন পড়াশোনায় উন্নত বিশ্বের দেশগুলি সাফল্য পেলেও ফিলিপাইনসে বাস্তবতা ভিন্ন৷ দশ কোটি আট লাখ মানুষের দেশটিতে মাত্র পাঁচ ভাগের এক ভাগের হাতেই, অর্থাৎ মাত্র দুই কোটি মানুষের কাছে রয়েছে ইন্টারনেটের সুবিধা৷ এছাড়া আরো অনেক পরিবারেরই নেই মোবাইল কেনার সামর্থ্য৷ অন্যদিকে ইন্টারনেট না থাকায় স্কুলছুট হয়েছে সেদেশের শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ, জানাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
পরিবারের ভূমিকা
এগারো বছরের লাভলি তার পরিবারের সাথে ম্যানিলার একটি কবরস্থানেই থাকে৷ মুরগি বেচে সংসার চালান তার বাবা-মা৷ বাসার মানুষের কাছ থেকে সে পড়াশোনায় সাহায্য না পেলেও তাদের পাশে, কবরের ওপরে বসেই, পড়ার কাজ শেষ করে৷ লাভলির মা জানেন, এই পরিস্থিতি পড়াশোনার জন্য অনুকূল নয়৷ তবে পরিস্তিতি মেনে নিয়েই তাকে বলতেহয়, ‘‘ব্যবসা না দেখলে ওকে খাওয়াবো কী? ও পড়াশোনা করে চাকরি পেলে তবেই আমরা এখান থেকে বেরোতে পারবো৷’’
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
পড়ার জন্য পাহাড় চড়া
কলেজপড়ুয়া মার্ক ফিলিপাইনসের বাতাঙ্গাস অঞ্চলের বাসিন্দা৷ ইন্টারনেট সংযোগের জন্য তাকে কখনো জঙ্গলের ভেতর, কখনো পাহাড়ে চড়তে হয়৷ পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় ইন্টারনেটের খরচ জোগাতে পার্ট-টাইম কাজও করে সে৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
তবুও নাছোড়বান্দা যারা
হাজারো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লক্ষ্যে অনড় মার্ক৷ তার বক্তব্য, ‘‘আমি জানি, আমরা ধনী নই, তাই পড়াশোনা শেষ করেই আমি বাবা-মায়ের ঋণ শোধ করতে চাই৷ হাল না ছেড়ে, ধৈর্যের সাথে এই কঠিন সময়েও আমি পড়ায় মন দিতে চাই৷ উন্নতি করতে চাই৷’’
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
7 ছবি1 | 7
ব্রায়ার শুধু অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ব্যবহার করা যায়৷ ব্রায়ারের মতো একই পদ্ধতিতে কাজ করা ‘ব্রিজফাই' অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস উভয় ডিভাইসে কাজ করে৷ সে কারণে হংকংয়ের অনেক বিক্ষোভকারী ব্রিজফাই অ্যাপ ব্যবহার করেছেন৷
অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা যদি চান তাদের পাঠানো বার্তা কেউ পড়তে না পারুক সেক্ষেত্রে ‘সাইলেন্স' অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন৷ অবশ্য গোয়েন্দা বা মোবাইল অপারেটর কিংবা হ্যাকাররা বার্তা পড়তে না পারলেও বার্তাটি কখন ও কাকে পাঠানো হয়েছে তা পড়তে পারবে৷
কাশ্মীরে ‘ইন্টারনেট এক্সপ্রেস’
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ১৬২ দিন ধরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রয়েছে৷ তাই ইন্টারনেটের খোঁজে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা রেলপথ পাড়ি দিচ্ছেন কাশ্মীরীরা৷
ছবি: picture-alliance/AP/C. Anand
সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ইন্টারনেট বন্ধ
গতবছরের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে ভারতের নরেন্দ্র মোদীর সরকার৷ এরপর বিক্ষোভ প্রতিরোধের নামে ঐ এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়৷ এখনও তা অব্যাহত আছে৷ ফলে ১৬২ দিন ধরে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না কাশ্মীরীরা৷ কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের শাসনামলে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার এটিই সবচেয়ে দীর্ঘ ঘটনা৷
ছবি: DW/P. Samanta
ইন্টারনেটের খোঁজে
জম্মুর বানিহাল শহরে সরকার কয়েকটি ইন্টারনেট ক্যাফে খুলেছে৷ ট্রেনে করে সেখানে যাতায়াতে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে৷ কিন্তু তাতে কী! অনেক কাশ্মীরী সেটিই করছেন৷ কারণ ইন্টারনেটতো ব্যবহার করতে হবে৷ ছবিতে বানিহাল স্টেশনে যাত্রীদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/A.
‘ইন্টারনেট এক্সপ্রেস’
যে ট্রেনে করে কাশ্মীরীরা বানিহাল যাতায়াত করেন সেটির নাম তাঁরা দিয়েছেন ‘ইন্টারনেট এক্সপ্রেস’৷ এক ঘণ্টা ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ৪.২ ডলার বা সাড়ে তিনশ টাকা খরচ করেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/AP/C. Anand
‘এই সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না’
১৮ বছর বয়সি আবরার আহমেদ বানিহালের ইন্টারনেট ক্যাফেতে গিয়ে অনলাইনে চাকরির আবেদন জমা দিয়েছেন৷ থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে তিনি জানান, ইন্টারনেট ব্যবহারের এই সুযোগ হাতছাড়া করার উপায় নেই৷ কারণ পরিবার চালাতে তাঁকে একটি চাকরি পেতেই হবে৷ গতবছর রাজমিস্ত্রি বাবা দুর্ঘটনায় এক পা হারানোর পর ছয় সদস্যের পরিবার চালানোর দায়িত্ব এখন তাঁর কাঁধে৷
ছবি: Reuters/A.
অনেক ভিড়
কাশ্মীরের বুড়গামে সরকার প্রতিষ্ঠিত একটি ইন্টারনেট ক্যাফের সামনের লাইন এটি৷
ছবি: Reuters/A.
বিপুল আর্থিক ক্ষতি
কাশ্মীর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল মজিদ মীর জানিয়েছেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে এখন পর্যন্ত ২.৪ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২০ হাজার তিনশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে৷ চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার জন৷