পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের সাবেক প্রধান চীনা নাগরিক মেং হোংওয়েকে ঘুস নেয়ার দায়ে সাড়ে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ মঙ্গলবার চীনের একটি আদালত এই রায় দেন৷
বিজ্ঞাপন
কারাদণ্ড ছাড়াও হোংওয়েকে দুই লাখ ৯০ হাজার ডলার বা দুই কোটি ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে৷
গত জুনে হোংওয়ে ২.১ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১৮ কোটি টাকা ঘুস নেয়ার কথা আদালতে স্বীকার করেন৷
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে চীনে যাওয়ার পর কয়েকদিন তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না৷ পরে জানা যায়, ঘুস নেয়ার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এরপর তাঁকে কমিউনিস্ট পার্টি থেকেও বহিষ্কার করা হয়৷
ঘুসের ঝুঁকিতে থাকা শীর্ষ দেশগুলো
ঘুস দেওয়া-নেওয়ায় সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঘুসবিরোধী বৈশ্বিক সংগঠন ট্রেস ইন্টারন্যাশনাল৷ এই তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশ৷
ছবি: Colourbox/W. Zwanzger
কেমন করে এই সূচক
সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক মিথস্ক্রিয়া, ঘুস-বিরোধী তত্ত্ব ও প্রয়োগ, সরকার ও সিভিল সার্ভিসের স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি পর্যবেক্ষণ প্রকাশে সুশীল সমাজের সক্ষমতা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা- প্রধানত এই চারটি ক্ষেত্রে ভালো-মন্দ বিবেচনায় ১-১০০’র মধ্যে স্কোরের ভিত্তিতে ঘুসের ঝুঁকি পরিমাপ করা হয়েছে৷ এই সূচকে ২০০টি দেশের অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে৷
ভালো-মন্দ বিবেচনায় ১-১০০’র মধ্যে যে দেশের স্কোর বেশি সেই দেশে ঘুসের ঝুঁকি সবথেকে বেশি৷ আর যে দেশের স্কোর সব থেকে কম সে দেশে ঘুস লেনদেনের ঝুঁকিও তত কম৷
ছবি: Colourbox/W. Zwanzger
শীর্ষে সোমালিয়া
ট্রেস ইন্টারন্যাশনালের ২০১৯ সালের সংস্করণে ঘুসের ঝুঁকির ক্ষেত্রে ৯৪ স্কোর নিয়ে সব থেকে তলানিতে রয়েছে সোমালিয়া৷ এর অর্থ হলো এই দেশে ঘুসের ঝুঁকি সব থেকে বেশি৷
ছবি: AFP/Getty Images/Y. Chiba
দক্ষিণ সুদান
ঘুস দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে উত্তর আফ্রিকার এই দেশটি ৯২ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Messara
উত্তর কোরিয়া
পূর্ব এশিয়ার এই রাষ্ট্রটি ৮৬ স্কোর নিয়ে ঘুস লেনদেনের ঝুঁকির তালিকায় খারাপের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/A. Khitrov
ইয়েমেন
মধ্যপ্রচ্যের এই দেশটি ৮৫ স্কোর নিয়ে আছে চতুর্থ স্থানে৷
ছবি: Colourbox
ভেনেজুয়েলা
ক্যারিবীয় সাগরের তীরে অবস্থিত এই রাষ্ট্রটি ঘুস লেনদেনের ঝুঁকির তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে৷ চারটি ক্ষেত্রে ভালো-মন্দ বিবেচনায় এই দেশের স্কোর ৮৫ হলেও অন্যান্য সূচক বিবেচনায় দেশটির অবস্থান ইয়েমেনের নিচে৷
ছবি: Reuters/S. Moraes
চাড
মধ্য আফ্রিকার এই দেশটিতে নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষের বসবাস৷ ঘুস দেওয়া-নেওয়ায় ৮৪ স্কোর নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় এর অবস্থান ষষ্ঠ৷
ছবি: Reuters/Emmanuel Braun
লিবিয়া
যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই দেশটি ৮২ স্কোর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঘুসবিরোধী বৈশ্বিক সংগঠন ট্রেস ইন্টারন্যাশনালের ঘুস দেওয়া-নেওয়ায় সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Honda
তুর্কমেনিস্তান
লিবিয়ার সমান পয়েন্ট (৮২) হলেও অন্যান্য সূচক বিবেচনায় ঘুস দেওয়া-নেওয়ায় সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় তুর্কমেনিস্তানের অবস্থান অষ্টম৷
ছবি: DW/S. Tanka Shokran
ইকুয়েটোরিয়াল গিনি
স্কোর ৮২ হলেও প্রধান চারটিসহ অন্যান্য সূচক বিবেচনায় মধ্য আফ্রিকার দেশটির অবস্থান নবম স্থানে৷
ছবি: picture alliance/ANP
ডিআর কঙ্গো
আফ্রিকা মহাদেশের যুদ্ধ বিধ্বস্ত রাষ্ট্র কঙ্গোর স্কোর ৮২ হলেও অন্য সূচক বিবেচনায় তালিকায় এর অবস্থান দশম৷ বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য ক্ষেত্রে ঘুসের ঝুঁকির বিষয়ে ব্যবসায়ী মহলে আরও বেশি নির্ভরযোগ্য তথ্যের প্রয়োজন মেটাতে ২০১৪ সালে প্রথম এই সূচক প্রকাশ করে ট্রেস ইন্টারন্যাশনাল৷
ছবি: Colourbox
কম ঝুঁকির ৫ দেশ
এই সূচকে সবচেয়ে কম ঘুসের ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি দেশ হলো- নিউজিল্যান্ড (৪ পয়েন্ট), নরওয়ে (৭ পয়েন্ট), ডেনমার্ক (৭ পয়েন্ট), সুইডেন (৮ পয়েন্ট) এবং ফিনল্যান্ড (৯ পয়েন্ট)৷ সব থেকে খারাপ অবস্থানে থাকা সোমালিয়ার স্কোর ৯৪৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Melville
বাংলাদেশ ১৭৮তম
ঘুসের ঝুঁকির ক্ষেত্রে গতবারের চেয়ে দুই পয়েন্ট বেড়ে এবার ৭২ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ১৭৮তম অবস্থানে আছে৷ এর অর্থ হলো- এদেশে ঘুসের ঝুঁকি আগের চেয়ে বেড়েছে৷ এই তালিকায় ৪৮ স্কোর নিয়ে ভারত ৭৮তম এবং ৬২ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান ১৫৩তম অবস্থানে আছে৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
14 ছবি1 | 14
হোংওয়ের স্ত্রীর অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত৷ গত বছর জানুয়ারিতে হোংওয়ের স্ত্রী ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় পান৷
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ছয় বছরের শাসনামলে পরিচালিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ১০ লাখের বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে৷
বেইজিং বলছে, দুর্নীতি প্রতিরোধে এই অভিযান৷ তবে বিশ্লেষকদের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরিয়ে দিতেও এই অভিযানকে কাজে লাগানো হচ্ছে৷
ঘুস দিন, সেবা নিন?
কাঙ্খিত সেবা পেতে ঘুস দিতে হয় বাংলাদেশের জনগণকে৷ টিআইবি পরিচালিত ‘সেবাখাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০১৭’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে ২০১৭ সালে সেবা পেতে ১৮৬৭ দশমিক ১ কোটি টাকা ঘুস দিতে হয়েছে জনগণকে৷
ছবি: bdnews24.com
নিরাপত্তা পেতে ঘুস
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের৷ টিআইবি পরিচালিত জরিপেও দেখা গেছে, সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত খাত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং ২০১৭ সালে এ খাতে খানা প্রতি ঘুস প্রদানের হার শতকরা ৭২ দশমিক ৫ ভাগ৷ সংস্থাটির কাছ থেকে সেবা নিতে গিয়ে গড়ে প্রতিটি খানাকে ৬ হাজার ৯৭২ টাকা ঘুস দিতে হয়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
পরিচয়পত্র পেতেও ঘুস
পাসপোর্ট পাওয়া নাগরিকের অধিকার৷ কিন্তু টিআইবি জরিপ বলছে, এ অধিকার পেতে ২০১৭ সালে খানা প্রতি ঘুস প্রদানের হার ছিল শতকরা ৬৭ দশমিক ৩ ভাগ৷ এ খাতে খানাপ্রতি গড় ঘুসের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৮৮১ টাকা৷
ছবি: DW/D. Guha
তৃতীয় অবস্থানে বিআরটিএ
সম্প্রতি নিরাপদ সড়কের দাবিতে করা ছাত্র আন্দোলনের সময়ও রাস্তায় দলবেঁধে ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন কিংবা ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানোর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল৷ কিন্তু ওঝার ঘাড়েই যে ভূত! টিআইবি জরিপে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সেবা দিতে গিয়ে ঘুস নেয়ার তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
আরো যারা ঘুস নেন
টিআইবি করা এ জরিপে সেবা দিতে গিয়ে ঘুসগ্রহণকারী অন্য সংস্থাগুলো হলো যথাক্রমে: বিচারিক সেবা (৬০ দশমিক শতাংশ), ভূমিসেবা (৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ), শিক্ষা (সরকারি ও এমপিওভুক্ত) (৪২ দশমিক ৯ শতাংশ) এবং স্বাস্থ্য (৪২ দশমিক ৫ শতাংশ)৷
ছবি: DW
বেড়েছে ঘুস প্রদানের পরিমাণ
টিআইবি বলছে, জাতীয়ভাবে প্রাক্কলিত মোট ঘুসের পরিমাণ ২০১৫ সালে ছিল ৮ হাজার ৮২১ দশমিক ৮ কোটি টাকা৷ ২০১৭ সালে তা এক হাজার ৮৬৭ দশমিক ১ কোটি টাকা বা শতকরা ২১ দশমিক ২ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৬৮৮ দশমিক ৯ কোটি টাকা , যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের (সংশোধিত) শতকরা ৩ দশমিক ৪ ভাগ৷
ছবি: Privat
ঘুস না দিলে সেবা দেয়া হয় না
‘ঘুস না দিলে কাঙ্খিত সেবা পাওয়া যায় না’ এমনটি মনে করেন জরিপে অন্তর্ভুক্ত শতকরা ৮৯ খানা৷ ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল শতকরা ৭০ দশমিক ৯ ভাগ৷ টিআইবি বলছে, ‘‘এর মাধ্যমে ধারণা করা যায় যে, দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ তুলনামূলক বৃদ্ধি পেয়েছে৷’’