ইন্দিরা গান্ধীর ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী
৩০ অক্টোবর ২০০৯ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী নেহেরুর জন্ম ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে, এলাহাবাদে৷ নেহেরু পরিবার সবসময়ই জড়িত ছিল রাজনীতিতে৷ যার কারণে ছোটবেলা থেকেই বাপ-দাদার রাজনৈতিক মতাদর্শের দিকে ঝুঁকে পড়েন ইন্দিরা গান্ধী৷ ভারতবর্ষ তখনো ব্রিটিশদের দখলে৷ ব্রিটিশদের ভারত দখলের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি৷ ইন্দিরার বয়স যখন মাত্র চার তখনই তাঁর বাবা এবং তাঁর দাদা কারাবন্দি হন৷ কারণ তারা ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী৷ ইন্দিরা গুটিয়ে যান নিজের মধ্যে৷ একা থাকতেন, বেশির ভাগ সময়ই একা কাটাতেন৷ বলা প্রয়োজন, মহাত্মা গান্ধী ইন্দিরার রাজনৈতিক জীবনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিলেন৷ ১৯৩৬ সালে ইন্দিরার মা কমলা নেহেরু পরলোক গমন করেন৷ ইন্দিরা হয়ে পড়েন ভীষণভাবে একা৷ ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করার সময়ই ইন্দিরার পরিচয় পার্সি ফিরোজ গান্ধীর সঙ্গে৷
১৯৩৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন৷ ১৯৪২ সালে তিনি বিয়ে করেন সাংবাদিক ফিরোজ গান্ধীকে৷ বিয়ের কিছুদিন পরই তাঁরা কারাবন্দী হন৷ এলাহাবাদের নৈনি কারাগারে তাঁরা ৮ মাস বন্দী থাকেন৷ ইন্দিরা গান্ধী জন্ম দেন দুটি পুত্র সন্তানের৷ সঞ্জয় এবং রাজীব৷সঞ্জয় এবং রাজীব গান্ধীর করুণ পরিণতির কথা আমরা সবাই জানি৷ দুজনকেই মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হয়েছিল৷ অকালে ঝড়ে গেছেন দুজনেই৷
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে ব্রিটিশ শাসন থেকে৷ সে বছরই ইন্দিরার বাবা জওহরলাল নেহেরু স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন৷ তখন থেকেই ইন্দিরা প্রায় ছায়ার মত বাবার পাশে পাশে থাকতেন৷
১৯৫৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন৷
১৯৬৬ সালে প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বচিত হন৷ ১৯৭১ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক ভোট পেয়ে ইন্দিরা গান্ধী দ্বিতীয় বারের মত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন৷ একটানা ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইন্দিরা গান্ধী৷ ১৯৭৫ সালে তিনি দেশে শান্তি এবং শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ জরুরী আইন জারী করেন৷ এ জন্য সমালোচিত হন ইন্দিরা গান্ধী৷ এরপর ১৯৮০ সালে চতুর্থবারের মত নির্বাচনে বিজয়ী হন ইন্দিরা গান্ধী, হন প্রধান মন্ত্রী৷ ১৯৮৪ সালের জুন মাসে ইন্দিরা গান্ধীর আদেশে শিখদের পবিত্র ধর্মাশালা স্বর্ণ মন্দিরে ভারতীয় সেনা হানা দেয়৷ তার খেসারত ইন্দিরা গান্ধী দেন সে বছরই ৩১শে অক্টোবর৷ তাঁর নিজের দেহরক্ষীরাই তাঁর জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়৷
সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ বছর ভারত শাসন করেছেন ইন্দিরা গান্ধী৷ তুখোর রাজনীতিবিদ ইন্দিরা গান্ধী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন ভারতে৷ ২৫ বছর পর ভারত তথা বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গন স্মরণ করছে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে৷
ইন্দিরা গান্ধীর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আর কোন নারী এখনো আসেননি৷ তবে রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন প্রতিভা পাটিল৷
প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার