৫৯ জন বিদেশিকে সম্মাননা
২ অক্টোবর ২০১৩বাংলাদেশের নির্যাতিত ও মুক্তিপ্রাণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এসব বিদেশি বন্ধুরা প্রমাণ করেছিলেন যে, মানবমুক্তির লড়াইয়ে দেশ, রাষ্ট্র, জাতি কোনো বাধা নয়৷ বিশ্বজুড়ে স্বার্থ, হানাহানি ও ঘৃণ্য রাজনীতির বিপক্ষে দাঁড়িয়ে তাঁরা বলেছিলেন মানুষকে ভালোবাসার কথা৷ তাই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধে অকৃত্রিম বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়া এসব মহত্প্রাণ মানুষদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন৷ জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবর্গ, কূটনীতিকবর্গ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই সম্মাননা অনুষ্ঠানে যোগ দেন৷ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এ সমস্ত হৃদয়বান মানুষদের অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন৷ আর সম্মাননা হিসেবে প্রত্যেককে দেয়া হয় ২২ ভরি রূপার উপর এক ভরি স্বর্ণ দিয়ে খচিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ সংবলিত পদক৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে আর কেউ বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না৷ তিনি বলেন, ‘‘যারা আমাদের মা-বোন, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল তারাই ক্ষমতায় এসেছিল৷ তারা ক্ষমতায় ছিল ২১ বছর৷ মানুষকে এ জন্য অনেক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়েছে৷ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আবার উজ্জীবিত করি৷ আমাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনে এ সুযোগ দেয়ার জন্য দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই৷'' প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে কাজ করতে হবে৷ এর সুফল জনগণের মধ্যে আমরাই ছড়িয়ে দিতে পারবো৷ বিদেশি যেসব বন্ধুরা আমাদের সহযোগিতা করেছিল তাঁদের আমরা সম্মানিত করেছি৷ আমরা একটি কৃতজ্ঞ জাতি৷ যাঁরা যতটুকু করেছে আমরা যেন তা স্মরণ করি৷''
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীসহ বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক, কূটনীতিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সংগঠন সে সময় নানাভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতা করেন৷ বিশ্বের কাছে তাঁরা তুলে ধরেন পাকিস্থানি বাহিনীর বর্বর গণহত্যার কথা, বাঙালির স্বাধীকারের দাবির কথা৷ মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর পর আরো একবার প্রমাণিত হলো যে বাঙালি জাতি এক বিশাল হৃদয়ের অধিকারী৷ দেরিতে হলেও তারা ভোলেনি এই বন্ধুদের অবদান৷ দেশ, রাষ্ট্র, জাতিতে ভিন্নতা যতই থাকুক মনুষত্বই মানুষের পরিচয়৷ মহান মুক্তিযুদ্ধে যখন বাঙালিরা যুদ্ধ করছে তখন বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ৷
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের মধ্যে এবার সম্মাননায় ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমদ ও প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী গুলজারিলাল নন্দকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা' দেয়া হয়৷ এছাড়া অন্য ৫৭ ব্যক্তি ও মিশরভিত্তিক সংগঠন আফ্রো-এশিয়ান পিপলস সলিডারিটি অর্গানাইজেশনকে দেয়া হয় ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা'৷ ফখরুদ্দিন আলী আহমদের পক্ষে তাঁর ছেলে পারভেজ আহমদ ও গুলজারিলাল নন্দের পক্ষে তাঁর ছেলে তেজুস নাইক সম্মাননা গ্রহণ করেন৷ এবার সম্মাননা পাওয়াদের মধ্যে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ খান আবদুল গাফফার খান ও খান আবদুল ওয়ালী খান, ভারতের বিখ্যাত লেখক অনিরুদ্ধ রায়, জাপানের সমাজকর্মী কেন আরিমিটসুসহ ডাক্তার, সেনা অফিসার, সাংবাদিক ও রাজনীতিকরা রয়েছেন৷
এবারের সম্মাননা প্রাপ্তদের তালিকায় ছিলেন ভারতের ৪৪ জন, পাকিস্তানের চার জন, যুক্তরাষ্ট্রের চার জন, যুক্তরাজ্যের দু'জন, জাপানের দু'জন এবং শ্রীলঙ্কার, তুরস্ক ও মিশরের একজন করে৷ ২০১১ সালের ২৫ জুলাই ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা' দেয়ার মাধ্যমে বন্ধুদের সম্মাননা জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে তাঁর পুত্রবধূ ও ভারতের কংগ্রেস পার্টির সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন৷ এছাড়া গত ৪ মার্চ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি গ্রহণ করেন ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা' পদক৷