জাহাজ, গাড়ি, বিমান বা ট্রেন চলাচলের কারণে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে বনভূমি ধ্বংসের কারণে৷ পৃথিবীতে প্রতি বছর গড়ে গ্রিসের আয়তনের সমান বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে৷ এখন অবশ্য বনায়নের নতুন উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ইন্দোনেশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জঙ্গলে ঘন সবুজ গাছপালা আর বিভিন্ন প্রাণীর দেখা মেলে৷ আর এই সবুজের বড় শত্রু বাওয়ালরা৷ প্রতি কিউবিক মিটার কাঠ সংগ্রহ করে তারা আয় করে বিশ ইউরোর মতো৷
অর্থ আয়ে তারা সংরক্ষিত বন থেকেও অবৈধভাবে গাছ কাটে৷ এমনকি জার্মান-ইন্দোনেশীয় বন প্রকল্পের কর্মকর্তারাও তাদের ঠেকাতে পারে না৷ প্রশ্ন হচ্ছে, বাওয়ালরা কি জানে এটা অবৈধ? তাদের পুলিশ ধরতে পারে৷ এক করাতির বলেন, ‘‘অবশ্যই আমরা ভীত''৷ হাসতে হাসতে একথা বলেন করাতি৷ কেননা তিনি জানেন, পুলিশ ঘুস নেয়৷
জার্মানির বন-জঙ্গল
জার্মানরা বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন৷ এভাবে অবসর সময় কাটাতে আর হাঁটতেও ভালোবাসেন তাঁরা৷ চলুন সে রকমই জার্মানির কিছু বনানির সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/Thomas Muncke
জাতীয় পার্ক ইয়াসমুন্ড
ইয়াসমুন্ডের এই পার্কটি জার্মানির জাতীয় পার্কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট পার্ক৷ বিখ্যাত ব়্যুগেন দ্বীপের একেবারে উত্তরে অবস্থিত এই পার্কের সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে, করে মুগ্ধ৷ ইউনেস্কো ২০১১ সালে ইয়াসমুন্ড পার্কটিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়৷
ছবি: Scoopshot/ac-images
এলবে নদীর নিসর্গ
প্রকৃতি সৃষ্ট নিসর্গের মধ্যে অন্যতম নদী পরিবেষ্টিত চরগুলি৷ নিয়মিত বন্যা হওয়ার কারণে এই সব চরে গাছপালা এবং পশুপাখিরা আনন্দে বেঁচে থাকে৷ যেমনটা এখানে, ব্রান্ডেনবুর্গের এলবে নদীতে৷ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এলবে নদীর এই চরটিকে ১৯৭৯ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যর অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZB
হারৎস
জার্মানির মধ্যভাগে অবস্থিত হারৎসের পাহাড়ি অঞ্চল শুধু জার্মানির সবচেয়ে বড় বনভূমি নয়, জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় বনাঞ্চলও বটে৷ ১৮২৪ সালে অন্যতম জার্মান লেখক হাইনরিশ হাইনে তাঁর ভ্রমণ কাহিনিতে এই অঞ্চলকে তুলে ধরেন৷ যাঁরা হাঁটতে পছন্দ করেন তাঁদের কাছে জায়গাটি খুবই প্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/ZB
হাইনিশ জাতীয় পার্ক
জার্মানির ট্যুরিঙ্গেন রাজ্যে রয়েছে ‘বুখেন’ বা বীচ গাছে ঘন জঙ্গল৷ এই বনের কয়েকটা গাছ আবার গত ৮০০ বছর ধরে এইভাবে একেবারে সাড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ এর জন্যই ইউনেস্কো ২০১১ সালে এই বনভূমিকে বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ এখানে বনবিড়ালের মতো অনেক বিরল প্রাণীও দেখা যায়৷
ছবি: DW/C. Hoffmann
স্পেসার্ট
জার্মানির দক্ষিণে অবস্থিত বাভারিয়া এবং হেসেন রাজ্যের মাঝামাঝি একটি পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত এই বনটি৷ আগে স্পেসার্ট ছিল ধনী ও বিশপদের শিকার করার জায়গা৷ শুধু তাই নয়, ঊনিশ শতকে এই জঙ্গলেই আস্তানা গড়েছিল জার্মানির কুখ্যাত ডাকাতরা৷ ১৮২৭ সাল থেকে ‘‘দাস ভির্টহাউস ইম স্পেসার্ট’’ নামে পরিচিতি লাভ করে এই ঘন বনাঞ্চল৷
ছবি: picture-alliance/Thomas Muncke
ব্ল্যাক ফরেস্ট
ব্ল্যাক ফরেস্ট বা কৃষ্ণ অরণ্য নিয়ে নানা রকম ভূতের গল্প প্রচলিত আছে জার্মানিতে৷ আছে এই জঙ্গলের নামে একটি কেক-ও৷ সে জন্যই হয়ত এই কৃষ্ণ অরণ্যের জাতীয় পার্কের মর্যাদা পাওয়া উচিত বলে মনে করেন অনেকে৷ আবার অন্যদের আশঙ্কা, জাতীয় পার্ক হলে এখান থেকে আর ফল সংগ্রহ বা গাছ কাটা যাবে না – জার্মানিতে পরিবেশ রক্ষা সত্যিই যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়!
ছবি: picture-alliance/Ronald Wittek
বাভারিয়ার জাতীয় পার্ক
রাখেল লেক বাভারিয়ার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ হ্রদের মধ্যে একটি৷ লেকটি ঘিরে প্রায় ১০৭০ মিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত এই বন, যেখানে গত কয়েক দশকে একটি গাছও কাটা হয়নি৷ খুবই নিরিবিলি ও শান্ত পরিবেশ এখানে৷ তাই হাঁটার জন্যও খুব উপযোগী এই অঞ্চল৷ ১৯৭০ সালে এই পার্কটিকে জার্মানির প্রথম জাতীয় পার্ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাতীয় পার্ক ব্যার্শটেসগাডেন
এটা আলপস পর্বতমালায় অবস্থিত জার্মানির একমাত্র জাতীয় পার্ক৷ পার্কটি উচ্চ পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থানের কারণে পর্যটকরা এখানে এলে বিরল প্রাণীর দেখা পান৷ তাই তো পক্ষীপ্রেমী আর বন্যপ্রাণী গবেষকদের জন্য এটা দারুণ একটা জায়গা৷
ছবি: picture-alliance/Thomas Muncke
8 ছবি1 | 8
বন প্রকল্পের কর্মকর্তা সোলিচিন সহকর্মীদের সহায়তায় অবৈধ গাছ কাটা বন্ধ করতে চান৷ ২৪ হাজার হেক্টর বনের দায়িত্ব সরকার তাদের দিয়েছে৷ এই বন রক্ষা করতে চান সোলিচিন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কী পরিমাণ কার্বন আছে এবং দাবানলসহ নানা কারণে কী পরিমাণ কার্বন কমার শঙ্কা রয়েছে তা জানলে হিসেব সহজ হয়৷ আমরা বুঝতে পারি, কতটা কার্বন জমা করা যেতে পারে এবং পরবর্তীতে কতটা কার্বন ক্রেডিট হিসেবে বিক্রি করা যাবে৷''
বড় বড় শিল্পসংস্থাগুলো বর্তমানে তাদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট উন্নয়নে কার্বন ক্রেডিট কিনে নেয়৷ আর তা বিক্রি করে প্রকল্পের জন্য অর্থ আয় এবং বন রক্ষা সম্ভব হয়৷ সোলিচিনের সহকর্মীদের কাছে এটা অর্থ আয়ের নতুন উপায়৷ আগে তারা অবৈধভাবে কাঠ কাটতো৷ এখন বন থেকে গাছের চারা সংগ্রহ করে গ্রামে নিয়ে যায়৷
গ্রামের নাম বিনা ডেসা৷ ১৫০ জন মানুষের এই গ্রামে একটি নার্সারি রয়েছে৷ বন থেকে আনা চারা এখানে তিন মাস ধরে বড় করা হয়৷ তারপর বন প্রকল্পে সেগুলো রোপণ করা হয়৷ পরিবেশ সুরক্ষায় এ ধরনের প্রকল্প পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও চালু করা সম্ভব৷