প্রবল বর্ষণে কারণে সৃষ্ট বন্যার ফলে ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সুমাত্রা প্রদেশে ভূমিধসের ঘটনা ঘটে৷ এর ফলে অন্তত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
ইন্দোনেশিয়ার প্রাদেশিক উদ্ধারকারী দলের প্রধান আব্দুল মালিক রয়টার্সকে জানান, ‘‘(বন্যা এবং ভুমিধসের ঘটনায়) ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ আমরা অনুসন্ধানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি৷ চারজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন৷'' পরে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪-এ। এখনো পর্যন্ত ১৬ জনের খোঁজ মেলেনি।
পশ্চিম সুমাত্রার দুর্যোগ মোকাবেলা সংস্থার মুখপাত্র ইলহাম ওয়াহাব বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, " ৩৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। কমপক্ষে ১৮ জন আহত হয়েছেন। আমরা এখনো ১৬ জনের সন্ধানখোঁজ করছি।"
দেশের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবেলা সংস্থা বিএনপিবি জানিয়েছে, শনিবার রাত থেকে বন্যার ফলে তানাহ দাতার রিজেন্সির পাঁচটি উপ-জেলা প্রভাবিত হয়েছে৷ বন্যার সঙ্গে প্রচুর কাদা এসে ব্যাপক এলাকা ঢাকা পড়েছে৷
বিএনপিবি জানিয়েছে, তাদের সর্বশেষ মূল্যায়নে ৮৪টি আবাসন, ১৬টি সেতু এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দিতে ভারি সরঞ্জামের মাধ্যমে দ্রুত রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে৷
শনিবার মাঝরাতে মাউন্ট মেরাপিরনদীর শাখা ভেঙে প্রবল জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়৷ টানা বৃষ্টি এবং ভূমিধসের ফলে পশ্চিম সুমাত্রার আগাম এবং তানাহ দাতার জেলার পাহাড়ি গ্রামে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে৷ জাতীয় বিপর্যয় মোকাবেলা সংস্থার মুখপাত্র আবদুল মুহারি বলেছেন, কমপক্ষে ১০০টি বাড়িঘর ভেসে গেছে৷
বার্তাসংস্থা এপির খবরে বরা হয়, প্রবল বর্ষণ, ঠান্ডা লাভার প্রবাহ এবং কাদার স্রোত আগ্নেয়গিরির ঢাল বেয়ে নামায় আকস্মিক বন্যার সূত্রপাত ঘটেছে৷ ঠান্ডা লাভার স্রোত লাহার নামেও পরিচিত৷ এটি আগ্নেয় পদার্থ এবং নুড়ির মিশ্রণ, যা বৃষ্টির ফলে মাউন্ট মেরাপি আগ্নেয়গিরির ঢালে প্রবাহিত হয়েছিলো৷
জাভায় জেগে উঠেছে আগ্নেয়গিরি সেমেরু
ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের সবচেয়ে উঁচু আগ্নেয়গিরি সেমেরু পর্বতের অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে৷ আশেপাশের বাসিন্দাদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ৷ ছবিঘরে বিস্তারিত৷
ছবি: Samsul Arifin/ANTARA/REUTERS
দূর থেকে
রোববারই নড়েচড়ে ওঠে জাভার পূর্বে অবস্থিত সেমেরু পর্বত৷ স্থানীয় সময় দুপুর তিনটা পর্যন্ত তিন হাজার ৬৭৬ মিটার অগ্ন্যুৎপাত রেকর্ড করেছে কর্তৃপক্ষ৷ এ সময় বিশাল ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে যায়৷ সুমবারউলুহ গ্রামের বাসিন্দারা দূর থেকে সেই দৃশ্য দেখছেন৷
ছবি: Umarul Faruq/ANTARA/REUTERS
ধোঁয়াচ্ছন্ন আকাশ
লাভা ছড়িয়ে পড়ে পর্বতের চারপাশে৷ ঢেকে যায় ধানক্ষেত, সড়ক, সেতু৷ কালো হয়ে যায আকাশ৷ স্থানীয় একজন কর্মকর্তা থলিব ভেতেলেহান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘গতকাল বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেশি ছিল, এতে পর্বতের চূড়া থেকে সমস্ত উপাদান নীচে গলে পড়েছে৷’’
ছবি: Iwan/ANTARA/REUTERS
ভেঙ্গে পড়েছে সেতু
অগ্ন্যুৎপাতে আশেপাশের যোগাযোগ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ছবিতে লুমাজাংয়ে অবস্থিত গ্লাদাক পেরাক সেতুর নাজুক পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: BNPB/ANTARA/REUTERS
সর্বোচ্চ সতর্কতা
সোমবার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আগ্নেয়গিরির আশেপাশের এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে৷ আট কিলোমিটারের মধ্যে চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ গ্রামবাসীরা তাদের জরুরি জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে গেছেন৷
ছবি: Juni Kriswanto/AFP/Getty Images
উদ্ধার কাজ
পরিস্থিতি তদারকি করছেন উদ্ধারকর্মীরা৷ দুই হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সক্ষম হন তারা৷
ছবি: BNPB/ANTARA/REUTERS
আশ্রয়কেন্দ্র
আশপাশ থেকে গ্রামবাসীকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ লুমাজাংয়ে একটি জেলা কার্যালয়কে সাময়িক আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে৷ সেখানে বিশ্রাম নিচ্ছেন মানুষ৷ এখন পর্যন্ত কোন হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Umarul Faruq/ANTARA/REUTERS
গবাদি পশু
গবাদি পশু যাদের আছে তারা পড়েছেন বেশি বিপাকে৷ কাজার কুনিং নামের একটি গ্রামের দুই বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে তাদের ছাগল সরিয়ে নিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Juni Kriswanto/AFP/Getty Images
অগ্ন্যুৎপাতের পর
আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার জমিতে লাভা ছড়িয়ে পড়েছে৷ তৈরি হয়েছে ছাইয়ের আস্তরণ৷ অগ্ন্যুৎপাতের পর দুই বাসিন্দা ফিরে এসেছেন তাদের জমির পরিস্থিতি দেখতে৷
ছবি: Bayu Novanta/Xinhua/IMAGO
প্রাণঘাতী
গত বছর সেমেরুর অগ্ন্যুৎপাতে ৫০ জনেরও বেশি প্রাণ হারিয়েছেন৷ কয়েক হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন৷
ছবি: Samsul Arifin/ANTARA/REUTERS
শতাধিক আগ্নেয়গিরি
১৭ হাজার দ্বীপ নিয়ে গঠিত ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল৷ দেশটিতে ১৪২টি আগ্নেয়গিরি রয়েছে৷ বিশ্বের আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি সবচেয়ে বেশি মানুষ বসবাস করেন ইন্দোনেশিয়াতে৷