ইন্দোনেশিয়ার আগ্নেয়গিরিতে অগ্নুৎপাত, নিহত ৬, নিখোঁজ অনেকে
৪ নভেম্বর ২০২৪
রোববার রাতে আচমকাই পূর্ব ইন্দোনেশিয়ায় একটি আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠে। মাঝরাতেই শুরু হয় অগ্নুৎপাত।
বিজ্ঞাপন
ইন্দোনেশিয়ার প্রশাসন জানিয়েছে, আগ্নেয়গিরিটি যে জেগে উঠবে তার আগাম খবর ছিল না। বহু মানুষ তখন ঘুমোচ্ছিলেন। তারই মধ্যে গলিত লাভার স্রোত জনবসতির উপর চলে আসে। বহু মানুষ সঙ্গে সঙ্গে পালান। তবে এখনো লাভার স্রোতে ভেঙে যাওয়া বাড়ির ধ্বংসাবশেষ থেকে মানুষদের উদ্ধারের কাজ চলছে। ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বহু মানুষ নিখোঁজ।
ঘটনাটি ঘটেছে ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট লিয়োতোবি লাকি লাকি পাহাড়ে। এটি ইন্দোনেশিয়ার ফ্লোরস দ্বীপে অবস্থিত।
বৃষ্টির জন্য ইন্দোনেশিয়ার টেঙ্গারিজদের প্রার্থনা
ইন্দোনেশিয়ার হিন্দু ধর্মাবলম্বী টেঙ্গারিজরা সম্প্রতি ভালো ফলনের আশায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি চেয়ে প্রার্থনা করেছেন৷ কয়েকশ বছরের পুরোনো কাসাদা উৎসবে অংশ নেন তারা৷
ছবি: Willy Kurniawan/REUTERS
টেঙ্গারিজ কারা?
ইন্দোনেশিয়ায় কয়েকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে৷ এর মধ্যে মাউন্ট ব্রোমো একটি৷ এর আশেপাশে একটি জাতীয় উদ্যান রয়েছে৷ সেখানকার কয়েকটি গ্রামে টেঙ্গারিজ সম্প্রদায়ের মানুষেরা বসবাস করেন৷ হিন্দু ধর্মের অনুসারী টেঙ্গারিজরা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন৷ জাকার্তা থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দক্ষিণে পূর্ব জাভার শহর প্রোবোলিঙ্গোর কাছে ঐ জাতীয় উদ্যানটি অবস্থিত৷
ছবি: Willy Kurniawan/REUTERS
কাসাদা উৎসব
টেঙ্গারিজরা ১৩ শতক থেকে এই উৎসব পালন করে আসছেন৷ এর মাধ্যমে পূর্বপুরুষ ও দেবতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়৷ উৎসবের অংশ হিসেবে টেঙ্গারিজরা সবজি, ফল, ছাগল ও অন্যান্য গবাদিপশু নিয়ে ২,৩২৯ মিটার উচ্চতার মাউন্ট বোরোর শীর্ষে ওঠেন৷ এরপর সঙ্গে আনা জিনিসগুলো আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে নিক্ষেপ করা হয়৷
ছবি: Willy Kurniawan/REUTERS
বেশি ফলনের আশা
গত ২১ ও ২২ জুন এ বছরের কাসাদা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ এতে অংশ নেন ৬৪ বছরের আসিহ৷ তারা ভালো ফলনের আশায় প্রার্থনা করেছেন বলে জানান৷ তিনি বলেন, আগে বছরে ক্ষেত থেকে তিনবার বাঁধাকপি তুলতে পারতেন৷ এখন মাত্র একবার পারেন৷ বৃষ্টি কম হওয়া এর কারণ বলে জানান আসিহ৷
ছবি: Willy Kurniawan/REUTERS
খরা
গতবছর পুরো জাভাসহ ইন্দোনেশিয়ার দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ ২০১৯ সালের পর সবচেয়ে বেশি শুষ্ক মৌসুমের মুখোমুখি হয়েছিলেন৷ সে কারণে ফসল উৎপাদন কম হয়েছে৷ দাবানল বেশি হয়েছে৷ এবছর একটু বেশি বৃষ্টি হওয়ার কথা৷ তবে এখনও অনেক কৃষক টিকে থাকার সংগ্রাম করছেন৷
ছবি: Willy Kurniawan/REUTERS
আলুর বদলে পেঁয়াজ চাষ
মাউন্ট ব্রোমার কৃষকেরা ভালো ফলনের জন্য বৃষ্টি এবং বৃষ্টির পানিতে পরিপূর্ণ লেকের উপর নির্ভর করেন৷ কিন্তু বৃষ্টির পরিমাণ কমতে থাকায় ৫৬ বছরের কৃষক ইরাওয়ান কারিওতো এখন আলুর বদলে কম লাভের পেঁয়াজ চাষ করছেন৷
ছবি: Willy Kurniawan/REUTERS
5 ছবি1 | 5
ইন্দোনেশিয়ার প্রশাসনিক কর্তা আবদুল মুহারি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এখনো পর্যন্ত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের দেহ উদ্ধার হয়েছে। তবে বহু মানুষ এখনো ঘটনাস্থলে আটকে। অনেকে নিখোঁজ।
রোববার রাতে পর পর দুইবার অগ্নুৎপাত হয় আগ্নেয়গিরিটিতে। প্রথমে রাত ১টা ২৭ নাগাদ, তারপর আবার রাত দুইটা ৪৮ মিনিটে। গত বৃহস্পতিবার থেকেই আগ্নেয়গিরিটি জ্বেলে উঠছিল। রোববার রাতে প্রায় দুহাজার ফুট পর্যন্ত আগুনের হলকা দেখা যায় আকাশে।
প্রশাসন জানিয়েছে, বহু বাড়ি লাভার নিচে চলে গেছে। একটি ক্যাথলিক নানদের থাকার জায়গাও সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
ঘটনার পর এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে সরকার। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চলছে। যে কোনো সময় আবার আগ্নেয়গিরিটি থেক অগ্নুৎপাত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এলাকার সাত কিলোমিটারের মধ্যে কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এর আগে জানুয়ারি মাসে ওই দ্বীপেই অন্য আগ্নেয়গিরিতে অগ্নুৎপাত হয়েছিল। ওই ঘটনাতেও অনেকের মৃত্যু হয়েছিল।