সর্বাধুনিক দুর্ঘটনার আগে এয়ারএশিয়া-র সেফটি রেকর্ড ছিল একদম নিখুঁত৷ কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার অপরাপর বিমান পরিবহণ সংস্থার ক্ষেত্রে সে’কথা বলা যায় না – ডয়চে ভেলেকে এমনটাই বলেছেন এভিয়েশন এক্সপার্ট ক্রিস ইয়েটস৷
বিজ্ঞাপন
এয়ারএশিয়া-কে ডিসকাউন্ট এয়ার ট্রাভেল-এর ক্ষেত্রে এশিয়ায় পথিকৃৎ বলা চলতে পারে৷ তা সত্ত্বেও ইন্দোনেশিয়ার এই এয়ারলাইন্সটি ২০০২ সালে কাজ শুরু করা যাবৎ কোনো প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় সংশ্লিষ্ট হয়নি – কিউজেড৮৫০১-এর আগে৷
দৃশ্যত ইন্দোনেশিয়া-ভিত্তিক অপরাপর এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে সে'কথা বলা চলে না৷ এভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্ক নামধারী একটি নিরপেক্ষ উদ্যোগ বিমান দুর্ঘটনা ও বিমানযাত্রার নিরাপত্তার উপর নজর রাখে৷ তারা গত দশ বছরের খতিয়ান থেকে জানাচ্ছে যে, ঐ এক দশকে ইন্দোনেশিয়ার বিমান পরিবহন সংস্থাগুলি ৫০টি নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঘটনায় জড়িত ছিল৷
গারুডা এয়ারলাইন্স, মান্ডালা এয়ারলাইন্স (বর্তমানে বন্ধ), এয়ারফাস্ট এবং এক্সপ্রেস ট্রান্সপোর্টাসি আন্টারবেনুয়া (চলে প্রিমিএয়ার নামে) এবং এয়ারএশিয়া, এই চারটি ব্যতিক্রম ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার বাকি সব প্যাসেঞ্জার এয়ারলাইন্সের আপাতত ইউরোপ অভিমুখে ওড়া নিষিদ্ধ – তার কারণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ৷
বিমান পরিবহণের ব্যাপারে ব্রিটেনের নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ ক্রিস ইয়েটস ডয়চে ভেলেকে একটি একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন যে, শুধুমাত্র ২০১৪ সালেই ইন্দোনেশিয়ার এয়ারলাইন্সগুলিকে কেন্দ্র করে ন'টি নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঘটনা ঘটেছে৷ তাঁর মতে এয়ারএশিয়ার কিউজেড৮৫০১ উড়ালের দুর্ঘটনা সম্ভবত আবহাওয়া খারাপ থাকার দরুণ ঘটেছে৷ তা সত্ত্বেও এই দুর্ঘটনা আবার দেশটির সামগ্রিক সেফটি রেকর্ড নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটাবে, মনে করেন ইয়েটস৷
ডিডাব্লিউ: ইন্দোনেশিয়ার ‘সেফটি রেকর্ড' কি সত্যিই খারাপ?
ক্রিস ইয়েটস: এটা সত্যি যে, ইন্দোনেশিয়ার সেফটি রেকর্ড বিশেষ ভালো নয়৷ শুধু এ বছরেই ন'টি ঘটনা ঘটেছে, যদিও ভাগ্যক্রমে কেউ হতাহত হয়নি৷ সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর ঘটনাটি ঘটে ২০০৭ সালে, যখন অ্যাডামএয়ার-এর একটি বোয়িং ৭৩৭ বিমান পামবাউয়াং-এর ৮৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ভূপাতিত হয়৷ ঘটনায় ১০২ জন প্যাসেঞ্জার ও ক্রু-র সকলেই নিহত হন৷
কিউজেড ৮৫০১ দুর্ঘটনা কিভাবে ঘটল?
ক্রিস ইয়েটস: বিমানটি বিষুবরেখা অঞ্চল দিয়ে যাচ্ছিল৷ এ অঞ্চলে আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ হয়ে থাকে৷ দুর্ঘটনার সময় বর্ষার মেঘ কিমিউলাস নিম্বাস ছিল পঞ্চাশ হাজার ফুট অবধি উঁচু – তার ফাঁকে ফাঁকে চলছিল ঝড় আর প্রচণ্ড বৃষ্টি৷ পাইলট তাঁর পরিকল্পিত রুট ছেড়ে একটু ওপরে ওঠার অনুমতি চান, যদিও ওপরে বিমান থাকায় সে অনুমতি দেওয়া হয়নি৷ বিমানচালক হয়ত অপেক্ষাকৃত শান্ত বাতাসের খোঁজে ছিলেন৷ আমার মতে আবহাওয়া পরিস্থিতিই এই দুর্ঘটনার একমাত্র কারণ৷
ফিরে দেখা: ২০১৪ সালের কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা
রবিবার সকালে এয়ারএশিয়ার কিউজেড৮৫০১ বিমানটি সিঙ্গাপুরের পথে জাভা সাগরের উপরে রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ ২০১৪ সালে এ রকম আরো কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ সেগুলো নিয়েই এ ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Pleul
রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
এয়ারএশিয়ার এয়ারবাসটি ইন্দোনিশেয়ার সুরাবায়া থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল৷ উড্ডয়নের ৪০ মিনিট পর রবিবার ভোরে বিমানটির সঙ্গে এয়ার ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রকদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ আর সেই সময়ের পর থেকে বিমানটির আর কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি৷ উদ্ধার অভিযান চলছে৷ বিমানটিতে ১৬২ জন আরোহী রয়েছেন৷
ছবি: Reuters/E. Nuraheni
জাভা সাগরের উপর থেকে হাওয়া
বিমানটি হারিয়ে যাওয়ার আগে বৈমানিক বিরূপ আবহাওয়া এড়াতে বিমানটির গতিপথ পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন বলে শোনা যাচ্ছে৷ বিমানটির দুর্ঘটনা সবাইকে মার্চের এক স্মৃতি ফিরিয়ে দিচ্ছে৷ সেসময় মালয়েশিয়ার এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ বিমানটি হারিয়ে যায়৷
ছবি: Aditya/AFP/Getty Images
বিপদের ওপর বিপদ
২০১৪ সালে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স তাদের দু’টি বোয়িং ৭৭৭ বিমান হারিয়েছে৷ এর মধ্যে একটি এখনো ‘মিসিং’৷ ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায় সেই বিমানটি৷ রুটিন মাফিক একটি রেডিও ম্যাসেজ দেয়ার পরই বিমানটি রাডার থেকে গায়েব হয়ে যায়৷ এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, রাডার থেকে হারিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বিমানটি ভারত মহাসাগরে বিধ্বস্ত হয়৷
এমএইচ৩৭০ হারিয়ে যাওয়ার পর, স্যাটেলাইটে ওঠা বিভিন্ন বস্তুর ছবি বিশ্লেষণ করে বিমানটি খোঁজার চেষ্টা হয়েছে৷ কিন্তু জানা গেছে, ছবিগুলো আসলে সমুদ্র ভেসে থাকা আবর্জনার, বিমানের ধ্বংসাবশেষ নয়৷ জাহাজ এবং ডুবোজাহাজ ব্যবহার করে বিমানটির ফ্লাইট রেকর্ডারের সিগন্যালও খোঁজা হয়েছে৷ কিন্তু সাফল্য আসেনি৷ তাই বিমানের ২৩৯ জন আরোহীর ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা আজও অজানা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিরপরাধ ভুক্তভোগীরা
২০১৪ সালের ১৭ জুলাই মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের অপর একটি বিমান এমএইচ১৭ বিধ্বস্ত হয়৷ ইউক্রেনের উত্তরাংশে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয় বলে অভিযোগ৷ আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুর যাচ্ছিল বিমানটি৷
ছবি: Reuters
উদ্ধার তৎপরতায় বাধা
বিমানটি দুর্ঘটনার পর মরদেহ উদ্ধার এবং দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কাজ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে৷ প্রথমদিকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে অবস্থানরত বিদ্রোহীরা আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দল এবং দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞদের দুর্ঘটনাস্থলে যেতে বাধা দেয়৷
ছবি: Reuters
দায়ী কে?
দুর্ঘটনার পর প্রথম পাঁচদিন বিমানটির ফ্লাইট রেকর্ডার নিজেদের কাছে রেখে দেয় বিদ্রোহীরা৷ এরপর সেটি মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়৷ প্রাথমিক ফলাফলে বিমানটি ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য মিসাইলের আঘাতে ধ্বংস হয়েছে বলে অনেক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷ তবে বিমানটি – বিদ্রোহী, রাশিয়া, না ইউক্রেন – কাদের সোনাদের গোলাতে ভূপাতিত হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি৷
ছবি: Reuters
গতিপথ বদলানোর অনুরোধ
২৪ জুলাই স্প্যানিশ কোম্পানি সুইফটএয়ারের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া এয়ার আলজেরিয়ার একটি বিমান মালিতে ১১৬ যাত্রীসহ বিধ্বস্ত হয়৷ বিমানটি বুর্কিনা ফাসো থেকে আলজিয়ার্স যাচ্ছিল৷ এয়ারএশিয়ার মতো সেই বিমানের পাইলটও গতিপথ বদলাতে চেয়েছিলেন৷
ছবি: cc-by-sa/Dura-Ace/curimedia
ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে যায়
বিমানটি দৃশ্যত প্রচণ্ড গতিতে ভুমিতে আছড়ে পড়ে৷ বুর্কিনা ফাসোর সীমান্তের কাছে সেটি ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়৷ সম্ভবত ঝড়ের কারণে সেটি বিধ্বস্ত হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/Sia Kambou
মারাত্মক রণকৌশল
২০১৪ সালের ২৩ জুন জার্মানির সাওয়ারল্যান্ড অঞ্চলে সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ চলাকালে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়৷ জার্মান এয়ার ফোর্সের একটি ইউরোফাইটারের সঙ্গে লেয়ারজেটের একটি বিমানের ধাক্কা লাগে বলে জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bernd Wüstneck
খুব কাছে
ধারণা করা হচ্ছে লেয়ারজেটটি এয়ারফোর্স প্লেনের খুব কাছ থেকে যাচ্ছিল৷ ফলে ধাক্কা লাগে৷ প্রশিক্ষণের জন্য ভাড়া নেয়া বেসামরিক বিমানটি কোলনের একটি গ্রামে ভূপাতিত হয়৷ সেটির পাইলট এবং কো-পাইলট প্রাণ হারান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/BS f. Flugunfalluntersuchung
ক্ষতি সত্ত্বে নিরাপদে অবতরণ
মধ্য আকাশে সংঘর্ষে ইউরোফাইটার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেটি নিরাপদে অবতরণে সক্ষম হয়৷ বিমানটি চালাচ্ছিলেন ৩৩ বছর বয়সি একজন বৈমানিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/BS f. Flugunfalluntersuchung