ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য পশ্চিম জাভায় অনেকগুলো ইংরেজি গানের কথাকে ‘অশ্লীল' ও ‘নেতিবাচক' হিসেবে আখ্যায়িত করে সেগুলো প্রচারের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
এসব গান টেলিভিশন ও রেডিওতে প্রচারের সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে৷ পশ্চিম জাভা প্রচার কমিশন ‘শুধু প্রাপ্তবয়স্কের জন্য' ৮৫টি ইংরেজি গান চিহ্নিত করেছে৷ এসব গান রাত ১০টা থেকে ভোর তিনটা পর্যন্ত প্রচার করা যাবে৷
গানগুলোর মধ্যে এড শিরানের ‘শেপ অফ ইউ', ব্রুনো মার্সের ‘দ্যাট'স হোয়াট আই লাইক' ও আরিয়ানা গ্রান্ডে'র ‘লাভ মি হার্ডার' রয়েছে৷
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে অসাম্প্রদায়িক দেশ হলেও সম্প্রতি তারা অনেক কন্টেন্ট ও আচরণকে পর্নোগ্রাফিক হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং স্থানীয়শরিয়া আইন অনুযায়ী তাতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে৷
‘‘অশ্লীলতা, যৌনতা... ও মাদক- এ বিষয়গুলো দেখানো হচ্ছে এমন গান ও ভিডিওগুলো প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আছে,'' প্রচার কমিশনের সদস্য নেনেঙ আতিয়াতুল ফাইজিয়াহ মঙ্গলবার এ কথা বলেন৷
তিনি বলেন যে, জনগণের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ এমন আরো হাজারো গান নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান তিনি৷
ফাইজিয়াহ আরো বলেন যে, শুধু ইংরেজি নয়, ইন্দোনেশিয়ার ‘অ্যাডাল্ট' গানগুলো নিয়েও একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে৷
ইন্দোনেশিয়ার যেখানে শরিয়া আইন চালু আছে
জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের আচেহ প্রদেশে শরিয়া আইন চালু আছে৷ শাস্তি হিসেবে সেখানে বেত্রাঘাত করার পাশাপাশি মাথার চুলও কেটে নেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Mahyuddin
যেভাবে শুরু
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে অবস্থিত আচেহ প্রদেশে এখনো শরিয়া আইন চালু আছে৷ ঐ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন থামানোর লক্ষ্যে সরকার ২০০১ সালে ঐ প্রদেশের জন্য ‘বিশেষ স্বায়ত্তশাসন’এর ব্যবস্থা করার পরই ইসলামি শরিয়া আইন বাস্তবায়ন শুরু হয়৷ এরপর ২০০৫ সালে শান্তিচুক্তি সই হওয়ার পর আইনের প্রয়োগ আরও জোরালো হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Mahyuddin
যেসব অপরাধে শাস্তি দেয়া হয়
জুয়া খেলা, অ্যালকোহল পান করা, সমকামিতা, বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি নানা কারণে অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হয়ে থাকে৷ শাস্তি হিসেবে সাধারণত বেত্রাঘাত করা হয়৷ অপরাধের ধরণ বিবেচনায় নিয়ে বেত্রাঘাতের পরিমাণ ঠিক করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Simanjuntak
অবিবাহিতদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক
সোমবার (১৩ অক্টোবর) আচেহ প্রদেশের রাজধানী বান্দা আচেহ’র একটি মসজিদ প্রাঙ্গণে শরিয়া আইন না মানার কারণে ১৩ জনকে শাস্তি দেয়া হয়৷ এর মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সি ছয় জোড়া তরুণ-তরুণীও ছিল৷ তাঁদের অপরাধ, বিয়ে না করেই ঘনিষ্ঠ হয়েছেন৷ শরিয়া আইন বলছে, বিয়ে না করে ছেলে-মেয়েদের একে অপরকে ছোঁয়া, চুমু দেয়া, জড়িয়ে ধরা অপরাধ৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Mahyuddin
নিভৃত স্থানে একসঙ্গে সময় কাটানো
ছয় জোড়া যুগল ছাড়াও সোমবার আরেক ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়ার কারণ, তাকে গোপন স্থানে বিপরীত লিঙ্গের একজনের সঙ্গে এমনভাবে সময় কাটাতে দেখা গেছে যা হয়ত ব্যভিচার পর্যন্তও গড়াতে পারত৷
ছবি: picture alliance/dpa/H.Simanjuntak
হাসিঠাট্টায় মগ্ন দর্শক
বেতের আঘাতে ব্যথা পেয়ে একজন তরুণী যখন চিৎকার করে কাঁদছিল তখন চারদিকে দাঁড়িয়ে জনতা সেটি উপভোগ করছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Mahyuddin
ডেপুটি মেয়রের আশা
আচেহ’র ডেপুটি মেয়র জয়নাল আরিফিনের আশা, এই ধরণের শাস্তির ব্যবস্থা করার কারণে ভবিষ্যতে নাগরিকরা শরিয়া আইন ভাঙার মতো কাজে জড়াবে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/F.Reza
নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি
সাম্প্রতিক সময়ে আচেহ’তে শাস্তি দেয়া বেড়েছে৷ আগের চেয়ে এখন বেশি সংখ্যক নারীকে এই আইনের আওতায় শাস্তি দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Simanjuntak
মানবাধিকার কর্মীদের প্রশংসা
না, শরিয়া আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রশংসা নয়, বরং বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছে আচেহ প্রদেশ কর্তৃপক্ষ৷ তবে সম্প্রতি এক সিদ্ধান্তের কারণে মানবাধিকার কর্মীরা আচেহর প্রশংসা করেছে৷ সেটি হচ্ছে, চাকরিরত নারী কর্মীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয়মাস করা হয়েছে৷ ইন্দোনেশিয়ার যে-কোনো প্রদেশের চেয়ে এটি বেশি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Simanjuntak
জুয়া খেলার শাস্তি
২০১২ সালের ৫ অক্টোবরের এই ছবিতে জুয়া খেলার দায়ে এক ব্যক্তিকে শাস্তি পেতে দেখা যাচ্ছে৷ সেদিন মোট তিনজনকে এই অপরাধে শাস্তি দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/epa/H. Simanjuntak
যে কারণে এই শাস্তি
২০১১ সালের ডিসেম্বরে ‘পাংক’ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ৷ তারপর তাদের এই শাস্তি দেয়া হয়৷ এরপর তাদের জন্য ১০ দিনের একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা করা হয়৷ সেখানে তাদের মানসিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
পশ্চিম জাভায় ৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষের বাস৷ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে রক্ষণশীল রাজ্যগুলোর একটি এটি৷ জাতীয় পর্যায়েও পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে কড়া আইন আছে দেশটির৷ সমালোচকরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে সৃজনশীল কাজের ওপর এই আইনের ভুল প্রয়োগের আশঙ্কা করছেন৷
গত মাসেও দেশটির সংসদ সংগীত বিষয়ক একটি বিল পাস করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু শিল্পী ও অধিকার কর্মীদের প্রতিবাদের কারণে পারেনি৷ স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঐ বিলটিতে বলা হয়েছিল যে, এমন কোনো গান তৈরি করা যাবে না যেখানে বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাব রয়েছে, কিংবা এসব গানের কারণে মানুষ সহিংস হয়ে ওঠেন এবং আইন ভঙ্গ করেন৷ প্রতিবাদকারীদের বক্তব্য ছিল, এই আইন তাদের বাক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ৷