রবিবার ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া শহরে তিনটি গির্জার উপর আত্মঘাতী বোমা আক্রমণের পর সোমবার সেখানকার প্রধান পুলিশ কার্যালয়ে একটি বোমা ফেটেছে৷ আট বছরের কন্যাসন্তানসহ এক পাঁচ সদস্যের পরিবার দৃশ্যত এই হামলার জন্য দায়ী৷
বিজ্ঞাপন
সুরাবায়া ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর৷ পাঁচ সদস্যের পরিবারটি সুরাবায়ার মুখ্য পুলিশ কার্যালয়ের উপর মোটর সাইকেল থেকে আক্রমণ চালায় বলে প্রকাশ৷
মাত্র গতকালই সুরাবায়ার তিনটি গির্জার উপর বোমা হামলায় অন্তত আট জন নিহত ও অনেকে আহত হন৷ এইসব আক্রমণের জন্য যে পরিবারটি দায়ী, সেই পরিবারেও দু'টি নয় ও বারো বছরের কিশোরী ছিল৷
এ পর্যন্ত যা জানা গেছে
- সকাল আটটা পঞ্চাশ মিনিটে পুলিশ কার্যালয়ের বাইরে অবস্থিত সিকিউরিটি চেকপয়েন্টে একটি মোটরসাইকেল বোমা ফাটে বলে পুলিশ জানিয়েছে;
- পাঁচ সদস্যের পরিবারটি দু'টি মোটরসাইকেলে চড়ে আসে৷ শুধুমাত্র আট বছর বয়সের মেয়েটি এই আত্মঘাতী বোমা হামলা থেকে প্রাণে বাঁচে, পরিবারের বাকি চার সদস্য নিহত হয়৷ ঘটনায় চারজন পুলিশ কর্মকর্তা ও ছ'জন বেসামরিক নাগরিকের আহত হয়েছে বলে জানা গেছে
- সিসিটিভির ফুটেজে একটি বিস্ফোরণের দৃশ্য দেখা গেলেও, মোট দু'টি বোমা ফাটানো হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের ধারণা;
- ঘটনার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে সুরাবায়ার দক্ষিণে একটি ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণ ঘটার পর, ফ্ল্যাটের মালিক পুলিশের গুলিতে নিহত হয়৷
সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সংস্কার করবে
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো সুরাবায়ার হামলার নিন্দা করে বলেছেন যে, ইসলামি জঙ্গিদের মোকাবিলা করার জন্য নতুন সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইন চালু করা হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা কাপুরুষদের কাজ, বর্বর ও মর্যাদাহীন৷’’
দেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা মন্ত্রী ভিরান্তো বলেন যে, সংস্কারকৃত আইনের বলে কর্তৃপক্ষ এ ধরনের আক্রমণ রোখার জন্য ‘‘প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ’’ নিতে পারবেন৷
এ ধরনের জঙ্গি হামলার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে৷ সেবার চার আত্মঘাতী বোমারু ও বন্দুকধারী রাজধানী জাকার্তার একটি ব্যবসায়িক এলাকার উপর আক্রমণ চালায়৷
ইন্দোনেশিয়ায় বোমা সন্ত্রাসের সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনাটি ঘটে ২০০২ সালে, যখন পর্যটকদের প্রিয় বালি দ্বীপে এক সিরিজ বোমা বিস্ফোরণে এক রাত্রে ২০২ জন প্রাণ হারান৷ নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন বিদেশি৷
এসি/এসিবি (এপি, এএফপি)
ইন্দোনেশিয়ায় মৃতদের নিয়ে উৎসব
ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপ সুলায়েসি থেকে বেশ খানিকটা দূরে তোরজ অঞ্চল৷ সেখানকার বাসিন্দারা মৃতদেহকে কফিনে পুরে অনেকদিন বাড়িতে রাখার পর একরকম উৎসব উদযাপনের মাধ্যমেই সমাধিস্থ করে৷ ‘মানেনে’ নামের এ উৎসব নিয়েই আজকের ছবিঘর....
ছবি: Reuters/S. Whiteside
ছয় বছর পর
তোরজা অঞ্চলের বেশিরভাগ বাসিন্দাই খ্রিস্টান৷ তাঁরা ঐতিহ্যে বিশ্বাস করেন এবং তার মর্যাদা রক্ষায় এখনও প্রাচীন নানা রীতি মানেন৷ প্রিয়জনের মৃত্যুতে শুধু শোক না করে তা উদযাপনও সেরকম এক রীতি৷ ইয়োসেফিনা নামে ছবির এই ব্যক্তি ছয় বছর পর কফিন থেকে বের করা তাঁর এক আত্মীয়ের মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে বলছিলেন, ‘‘তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে৷’’
ছবি: Reuters/S. Whiteside
পরিবারের জন্য
সবাই মনে করেন, পরিবারের মৃত ব্যক্তিটি শারীরিকভাবে তাঁদের সঙ্গে নেই, কিন্তু কোথাও একটি সংযোগ আছে৷ রয়টার্স জানাচ্ছে, লোকোমাটা নামক একটি জায়গায় একাধিক পরিবার জড়ো হয় কফিন নিয়ে আসতে৷ এটি বিশাল একটি পাথরের ভাস্কর্যের মতো দেখতে৷ তার মধ্যেই রাখা থাকে কফিন৷
ছবি: Reuters/S. Whiteside
এখনও বেঁচে আছে
মৃতদেহকে সমাধিস্থলে পৌঁছানোর আগে কফিনে করে নিজের বাড়ীতে কয়েক মাস এমনকি বছর পর্যন্ত রাখা হয়৷ আত্মীয়স্বজনরা মৃতদের সাথে কথা বলে, তাদেরকে খাবার, পানীয় দিতে চাওয়া হয় যেন তারা এখনও বেঁচে আছে৷ পরিবারের সাথেই আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Samudra
নতুন করে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
যাদের সামর্থ্য আছে তারা সমাধিস্থ করার আগে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷ এই অনুষ্ঠানের নাম ‘রাম্বু সলো’৷ পুরো গ্রামের মানুষকে দাওয়াত দেয়া হয় এতে৷ ঝলসানো শূকরের মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় তাদের৷ আর পরিবারের সদস্যরা এমনভাবে কাঁদতে থাকেন যেন সদ্য মারা গেছেন কেউ৷
ছবি: Reuters/S. Whiteside
কফিনের সাজ
কফিনগুলো সাধারণত উজ্জ্বল লাল রং ও আঁকানো কাপড় দিয়ে মোড়ানো থাকে৷
ছবি: DW/G.Simone
ঐতিহ্যধারণ
সাধারণত পরিবারের বয়স্ক কেউ ছোটদের বা পরের প্রজন্মকে এসময় এ ঐতিহ্য মেনে চলতে নানাভাবে উৎসাহিত করেন৷ আনুষ্ঠানিক বক্তব্যও দেন৷
ছবি: Reuters/S. Whiteside
শ্রদ্ধা নিবেদন
কফিনের ভেতরে মৃত ব্যক্তিটির মৃত্যুর আগের একটি ছবি রাখা হয়৷ সাধারণত মাথার কাছে রাখা হয় ছবিটি৷ সেই ছবির মতো করেই মৃতদেহকে সাজানোর চেষ্টা করা হয৷ সবাই আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে শ্রদ্ধা জানায়৷ ইন্দোনেশিয়া মূলত মুসলিমপ্রধান দেশ হলেও সে দেশে অনেক হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং ভিন্ন ঐতিহ্যে বিশ্বাসী গনগোষ্ঠিও রয়েছে৷