একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকে সবকিছু তছনছ করে দেয় ছাত্ররা। শরণার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে দেয় তারা।
বিজ্ঞাপন
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিমে বান্দা আচে শহরে এই ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লেখা ছাত্ররা বুধবার কার্যত হামলা চালায় একটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে। সেখানে একটি সরকারি হলে ১৩৭ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে থাকার জায়গা দেয়া হয়েছিল।
ছাত্ররা সেখানে গিয়ে প্রথমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এরপর পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে তারা ঢুকে পড়ে অভিবাসী শিবিরে। সেখান থেকে অভিবাসীদের একটি ট্রাকে তুলে অন্য এক জায়গায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে তারা। হাতের কাছে যা আছে তা নিয়ে দুইটি ট্রাকে উঠতে বাধ্য হন অভিবাসীরা।
রোহিঙ্গা আগমন বাড়ায় বিরক্ত ইন্দোনেশিয়ার মানুষ
চলতি বছর নৌকায় করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে৷ এতে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা৷
ছবি: Rahmat Mirza/AP/picture alliance
রোহিঙ্গার সংখ্যা
জাতিসংঘের শরণার্থী সংখ্যার হিসাবে নভেম্বরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২০০ এর বেশি রোহিঙ্গা নৌকায় করে মিয়ানমার থেকে ইন্দোনেশিয়া পৌঁছেছে৷ তারা দেশটির আচেহ প্রদেশে ঢুকেছে৷
ছবি: Rahmat Mirza/AP/picture alliance
একসময় সহানুভূতি ছিল
আচেহ প্রদেশে কিছু বিষয়ে ইসলামি শরিয়া আইন কার্যকর আছে৷ সেখানকার মানুষেরা একসময় রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন৷ কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি নেই৷
ছবি: Chaideer Mahyuddin/AFP/Getty Images
‘কেন তাদের নেব?’
আচেহর পিদি এলাকার ২৭ বছর বয়সি এলা সাপতিয়া রয়টার্সকে বলেন, ‘‘এখনও এখানে অনেক গরিব মানুষ আছেন৷ আমরা কেন হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের নেব? তারা অনেক সমস্যা করে৷ তারা বিয়েবহির্ভূত যৌনমিলনে লিপ্ত হয়, মাদক সেবন করে৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
নৌকা ফিরিয়ে দেওয়ার হুমকি
চলতি বছর রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের কাছ থেকে শত্রুতাপূর্ণ আচরণ পেয়েছে৷ এমনকি তাদের নৌকা ফিরিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছে৷ গত সপ্তাহে সাবাঙ এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি তাঁবু সরিয়ে ফেলেন স্থানীয়রা৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
আরও প্রতিক্রিয়া
আচেহতে এখন অনেক বেশি রোহিঙ্গা বলে মন্তব্য করেছেন ৩০ বছর বয়সি দেশি সিলভানা৷ ‘‘এ বছর কয়েকশ, না কয়েক হাজার এসেছেন৷’’ সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একজন লিখেছেন, ‘‘যদি রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যবহার করা হয় তাহলে আমি কর দিতে চাই না৷’’ আরেকজন রোহিঙ্গাদের ‘পরজীবী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
নভেম্বর থেকে এপ্রিল
বছরের এই সময়টায় সাগর শান্ত থাকায় মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা নৌকা করে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেন৷
ছবি: Rahmat Mirza/AP/picture alliance
প্রেসিডেন্টের বিবৃতি
শুক্রবার এক বিবৃতিতে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জকো উইদোদো বলেন, মানবপাচারকারীদের কারণে রোহিঙ্গাদের আগমন বেড়েছে৷ তাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেন তিনি৷
ছবি: Presidential Secretariat Press Bureau
7 ছবি1 | 7
ছাত্রদের বক্তব্য, অভিবাসীদের একটি সরকারি দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ওই অভিবাসীদের ডিপোর্ট করতে হবে সরকারকে। তাদের আর ইন্দোনেশিয়ায় থাকতে দেওয়া যাবে না।
গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত মানবাধিকার কর্মীরা। এদিনের ঘটনার যে ভিডিও ফুটেজ মিলেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, কাঁদতে কাঁদতে সহায়সম্বলহীন ভাবে ট্রাকে উঠছেন অভিবাসীরা। কেউ কেউ কাঁদছেন। কেউ প্রার্থনা করছেন।
প্রশাসনের বক্তব্য
ইন্দোনেশিয়ার প্রশাসন জানিয়েছে, ইন্টারনেটে ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর ছড়িয়ে এই ঘটনা ঘটেছে। ভুয়া খবর এমনভাবে ছড়ানো হয়েছে, যাতে ছাত্রদের একত্রিত করা যায়। ভুয়া খবরের উপরের ভিত্তি করেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছাত্ররা এই বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসন আগেই কেন কোনো ব্যবস্থা নিল না!
ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে শত শত রোহিঙ্গা
সাগরপথে মিয়ানমার থেকে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে পৌঁছেছেন দুশোর বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ সবমিলিয়ে এক সপ্তাহে সেখানে গিয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
ঝুঁকিপূর্ণ পথে ইন্দোনেশিয়ায় রোহিঙ্গারা
ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের একটি সমুদ্রতটে বসে আছেন এক রোহিঙ্গা নারী৷ মিয়ানমার থেকে সাগরপথে সেখানে পৌঁছেছেন তিনি৷ গত কয়েকদিনে তার মতো এক হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছেন৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
সাগর শান্ত থাকলে শরণার্থী বাড়ে
প্রতিবছর নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস অবধি সাগর তুলনামূলক শান্ত থাকে৷ এই সময়ে মিয়ানমার থেকে দুর্বল নৌকায় করে দেশটিতে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়া চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ ছবিতে বুধবার ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছানো একদল রোহিঙ্গা শরণার্থীকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
অধিকাংশই নারী ও শিশু
আচেহর জেলে সম্প্রদায়ের প্রধান মিফতাক কাট আদেক জানিয়েছেন যে সম্প্রতি তার উপকূলে হাজির হওয়া ২১৬ রোহিঙ্গা শরণার্থীর অধিকাংশ নারী ও শিশু৷ ছোট ছোট নৌকায় করে তারা অনিয়মিত পথে সাগর পাড়ি দিয়ে দেশটিতে পৌঁছান৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
সুনির্দিষ্ট কারণ নেই
ইন্দোনেশিয়ায় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র মিত্রা সালিমা সুরিয়নো জানান যে নির্দিষ্ট কোনো কারণে সম্প্রতি অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী সেদেশে পৌঁছাননি৷ সামগ্রিকভাবে নিরাপদ জীবনের আশায় তারা দেশ ছেড়েছেন বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
কাঠের নৌকায় সাগর পাড়ি
মিয়ানমার থেকে অনিয়মিত পথে ইন্দোনেশিয়া পৌঁছাতে সাধারণত এরকম কাঠের নৌকা ব্যবহার করেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
স্থানীয়দের বাধা
আচেহর বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা শুরুতে রোহিঙ্গাদের সেখানে ভিড়তে দেননি বলে জানিয়েছেন সুরিয়নো৷ তবে, একপর্যায়ে রোহিঙ্গারা সেখানে নামতে সক্ষম হন৷ ইন্দোনেশিয়া কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে তাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
নিজ দেশে নিপীড়নের শিকার
রোহিঙ্গাদের নিজের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার৷ বৌদ্ধপ্রধান দেশটিতে তারা নানাভাবে নিপীড়নের শিকার হন৷ একারণে অনেকে মিয়ানমার ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ পথে নিরাপদ জীবনের আশায় অন্যত্র চলে যান৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
কোনো দায় আছে বলে মনে করে না ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার কোনো দায় বা ক্ষমতা নেই দেশটির৷ তাদের জন্য কোনো স্থায়ী সমাধানও হতে চায় না দেশটি৷
ছবি: Str/REUTERS
ভবিষ্যত কী?
নিজ দেশে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ, দশ লাখের বেশি, বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থান করছেন৷ পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন অনেক রোহিঙ্গা৷ মিয়ানমার রোহিঙ্গাদেরকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করতে আগ্রহী নয়৷
ছবি: Str/REUTERS
9 ছবি1 | 9
গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংক্রান্ত সংস্থা ইউএনএইচআরসি। তারা জানিয়েছে, অবিলম্বে ওই অভিবাসীদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ইউএনএইচসিআর-ও জানিয়েছে, ভুয়া খবরের উপর ভিত্তি করে এই গোটা ঘটনা ঘটেছে।
মিয়ানমার থেকে প্রচুর অভিবাসী ইন্দোনেশিয়ায় পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার বেশ কিছু শহরে তাদের অস্থায়ী আশ্রয় শিবির দেয়া হয়েছে।