ইন্দোনেশিয়ায় একটি দ্বীপে ভূমিকম্প এবং সুনামিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪২৪ জন৷ গুরুতর আহত আড়াই হাজার৷ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ সংস্থা৷
বিজ্ঞাপন
গত শুক্রবার সুলাওয়েসি প্রদেশে ভূমিকম্প এবং সুনামি আঘাত হানে৷ এখনো অনেকেই কাদা-মাটির নীচে চাপা পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার এক মুখপাত্র৷ তিনি বলছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় দুর্গত এলাকায় পৌঁছে তাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না৷ তিনি জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং অন্যান্য দেশের ১১টি বিমান ত্রাণ বিতরণে কাজ করছে৷
এদিকে, সুলাওয়েসি দ্বীপে ত্রাণ সামগ্রী লুট করার জন্য এখন পর্যন্ত ৯২ জনকে আটক করেছে ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ৷ বৃহস্পতিবার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডেডি প্রাসেতিও জানান, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হলো পালু৷ সেখানে নিরাপত্তা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা৷
দুর্গতদের কাছে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে খুব ধীর গতিতে৷ প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে কিছু কিছু দোকান দুর্গতদের জন্য খুলে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ৷ জানিয়েছেন, দোকান মালিকদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া হবে৷ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত বিমানবন্দরে বিমান চলাচল শুরু হবে আজ সন্ধ্যা থেকে৷ তবে পালু'র বিমানবন্দরটি চালু হতে আরো কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ পালুতে আহতদের উদ্ধারে সাহায্য করছে সেনাবাহিনী৷ হেলিকপ্টারের সাহায্যে চলছে উদ্ধার কাজ৷ এদের মধ্যে রয়েছে একদল শিক্ষার্থী, যাঁদের মেদান শহরে একটি ইসলামিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার কথা ছিল৷
৭০ হাজার মানুষ এখনো আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে৷ যাঁরা ঘর-বাড়ি হারিয়েছেন, তাঁরা কবে নিজেদের ঘর-বাড়ি ফিরে পাবেন, তা অনিশ্চিত৷ জাতিসংঘ দেড় কোটি মার্কিন ডলার সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছে৷
এপিবি/এসিবি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
১ অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...
ইন্দোনেশিয়া: এক সুনামি-বিধ্বস্ত জনপদ
ভূমিকম্পের পর ভয়াবহ সুনামিতে বিধ্বস্ত হয়েছে পর্যটন দ্বীপ সুলাওয়েসি৷ এরই মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে আট শতাধিক মরদেহ, বিচ্ছিন্ন হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, দেখা দিয়েছে খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট৷
ছবি: BNPB
ধ্বংসপ্রাপ্ত সেতু
৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে নিহত হয়েছেন শত শত মানুষ৷ উদ্ধারকাজ পুরোপুরি শেষ হলে এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশংকা কর্তৃপক্ষের৷ জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কায় ভেঙে পড়েছে পালুর ৩০০ মিটার দীর্ঘ সেতু৷
ছবি: BNPB
বিধ্বস্ত মসজিদ
শুক্রবার যখন পালুতে সুনামি আঘাত করে, তখন মসজিদে নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মুসল্লিরা৷ কর্তৃপক্ষ বলছে, সেসময় সমুদ্র সৈকতে আয়োজিত এক উৎসবের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন অনেকে৷ তাঁদের বেশিরভাগই নিহত হয়েছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Samad
জায়গা নেই হাসপাতালে
আহতদের ভিড় সামাল দিতে পারছে না স্থানীয় হাসপাতাল৷ আহতদের হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসা দিতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিৎসকরা৷ পালুর একটি হাসপাতালের পরিচালক কোমাং আদি সুয়েন্দ্র বলছেন, ‘‘আমাদের এই মুহূর্তে সব ধরনের সাহায্য প্রয়োজন৷ ফিল্ড হাসপাতাল, মেডিকেল কর্মী, ওষুধ, কম্বল, সবকিছু৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/M. Rifki
নিখোঁজ অনেকেই
এখনো শহরজুড়ে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছেন অনেকে৷ যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উদ্ধাকাজ চালানো যাচ্ছে না পূর্ণ গতিতে৷ উদ্ধারকর্মীরা আশংকা করছেন, নিহতের সংখ্যা কয়েক হাজারে পৌঁছুতে পারে৷
ছবি: Reuters/Antara Foto
জ্বালানি সংকট
ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে পুরো দ্বীপ এখনো বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে৷ ফলে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকটও৷ অনেককেই দেখা গেছে, বাসার জেনারেটরের জন্য গ্যাস স্টেশনে নিজ হাতে গ্যাস নিতে৷
ছবি: DW/N. Amir
বেড়েছে লুটতরাজ
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকটে পড়েছে পালু৷ বেঁচে থাকা অধিবাসীদের অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রবেশ করছেন বিধ্বস্ত শপিং মল ও সুপারমার্কেটে৷ খুঁজে বের করছেন ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র৷
ছবি: Reuters/DRONE PILOT TEZAR KODONGAN
জেল ভেঙে পলায়ন
অস্থিরতার সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন দ্বীপের কয়েদিরাও৷ স্থানীয় বিভিন্ন জেল ভেঙে অন্তত ১২০০ অপরাধী পালানোর তথ্য জানানো হয়েছে সংবাদমাধ্যমে৷ পলাতক কয়েদিদের ধরতে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা শুরুর কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Syuflana
পুনর্নিমাণের ঘোষণা
সুনামির আঘাতে বন্ধ হয়ে যাওয়ার একদিন পর পালু বিমানবন্দর খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ৷ তখন থেকে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করে সেনাবাহিনী৷ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোও সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন দ্বীপের অবস্থা, অঙ্গীকার করেছেন পুনর্নিমাণের৷