রাজধানী জাকার্তা বিমানবন্দর থেকে ওড়ার কিছুক্ষণ পরেই ১৮৯ জন আরোহী নিয়ে সমুদ্রে বিধ্বস্ত হয়েছে লায়ন এয়ারের একটি ফ্লাইট৷ আরোহীদের উদ্ধারে কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা৷ বিমানটি একেবারেই নতুন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
বিজ্ঞাপন
ইন্দোনেশিয়ার বাজেট এয়ারলাইন লায়ন এয়ার জাকার্তার সুকর্ণ-হাতা বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেয়ার মাত্র ১৩ মিনিট পর জাভা সাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ৷ লায়ন এয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিমানটিতে ৮ জন ক্রুসহ মোট ১৮৯ জন আরোহী ছিলেন৷ এছাড়া আরোহীদের মধ্যে ছিলেন ২৩ জন সরকারি কর্মকর্তা৷ উদ্ধার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাভার পশ্চিম প্রদেশ কারাওয়াং-এর উপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিমানটির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ ইন্দোনেশিয়ার উদ্ধারকারী সংস্থার প্রধান বলেছেন, ‘‘এই দুর্ঘটনায় কারো বাঁচার সম্ভাবনা আছে কিনা আমরা বলতে পারছি না৷ আমরা কেবল প্রার্থনা করছি, কিন্তু নিশ্চিত করে কিছুই বলার নেই৷''
উদ্ধারকর্মীরা এখন পর্যন্ত বিমান আরোহীদের কয়েকটি মোবাইল ফোন, লাইফ ভেস্ট এবং বিমানের কিছু ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেছেন৷
ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান টুইটারে উদ্ধারকাজের কিছু ছবি টুইট করেছেন৷
লায়ন এয়ার জানিয়েছে, সুমাত্রার পূর্বাঞ্চলে বাঙ্কা দ্বীপে রওনা হয়েছিল যাত্রীবাহী বিমানটি৷ পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্য এবং স্থানীয় জেলেরাসহ অন্তত তিনশ' মানুষ উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করছেন৷ ডুবুরিরা বিমানটি ঠিক কোন জায়গায় বিধ্বস্ত হয়েছে তা খোঁজার চেষ্টা করছেন৷
সুইডিশ ফ্লাইট ট্রেকিং সার্ভিস ফ্লাইটরাডার-২৪ জানিয়েছে, বোয়িং ৭৩৭ এমএএক্স ৮ ফ্লাইটটিকে গত আগস্টে লায়ন এয়ারের কাছে হস্তান্তর করা হয়৷ তারা টুইটারে জানিয়েছে, প্রাথমিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বিমানের গতি খুব বেশি ছিল এবং শেষ মুহূর্তে এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে৷
লায়ন এয়ার সাংবাদিকদের জানিয়েছে, আগস্ট থেকে তারা এই বিমানটি পরিচালনা করছে৷ এর পাইলট এবং কো-পাইলট দু'জনই অন্তত ১১ হাজার ঘণ্টা ‘ফ্লাইং টাইম' পাড়ি দিয়েছেন৷ বিমানটি ওড়ার সময় আবহাওয়া একেবারে ভালো ছিল, কোনো মেঘ, ঝড় বা ঝড়ো বাতাসের লক্ষণ ছিল না৷
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি বোয়িং জানিয়েছে, তারা এই ঘটনায় ভীষণভাবে শোকাহত৷ এর তদন্তে তারা সব ধরনের সহযোগিতা করবে৷ ইন্দোনেশিয়ায় সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে৷ ২০১৩ সালে বালির কাছে লায়ন এয়ারের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল৷
বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ/অনিরাপদ এয়ারলাইন্সের তালিকা
২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ৬০টি এয়ারলাইন্সের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ এবং সবচেয়ে অনিরাপদ এয়ারলাইন্সগুলোর তালিকা করেছে জার্মানির জেএসিডিইসি ইনস্টিটিউট৷ তালিকাটি দেখে বোঝা যায় বিমানযাত্রায় বড় ঝুঁকির মুখে রয়েছে মানুষ৷
ছবি: Reuters/E. Su
অনিরাপদ চায়না এয়ারলাইন্স
২০১৬ সালে ৩৭০ কোটি যাত্রী তাদের বিমানে যাতায়াত করেছে৷ যাঁরা চায়না এয়ারলাইন্সে যাতায়াত করেছেন তাঁদের অনেকেরই মনে হয়েছে এটি একটি অনিরাপদ পরিবহন৷ তাই ৬০ টি এয়ারলাইন্সের তালিকায় তাইওয়ানিজ এয়ারলাইন সবচেয়ে অনিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/X. Qintao
কলম্বিয়ার অ্যাভিয়াঙ্কার বিকল্প নেই
গত ৩০ বছরের নিরাপত্তার উপর ভিত্তি করে ঐ তালিকা করা হয়েছে৷ বিমান কতবার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে, কত যাত্রী নিহত হয়েছে, বিধ্বস্ত হয়েছে কিনা, এছাড়া কত কিলোমিটার যাত্রা করেছে এবং যাত্রী সংখ্যা কত- এসবের ভিত্তিতে তালিকা করা হয়েছে৷ এসবের ভিত্তিতে তাদের ০ থেকে ১.০০ পয়েন্ট দেয়া হয়েছে৷ কলম্বিয়ার অ্যাভিয়াঙ্কার স্কোর দাঁড়িয়েছে ০.৯১৪৷ ২০১৬ সালের সবচেয়ে খারাপ বিমানের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থান তাদের৷
ছবি: AFP/Getty Images
ইন্দোনেশিয়ায় এয়ারলাইন্সে বিধ্বস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি
গারুদা ইন্দোনেশিয়ার স্কোর ০.৭৭৭৷ খারাপ বিমানের তালিকায় এর অবস্থান তৃতীয়৷ ১৯৫০ সালে চলাচল শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এই এয়াররলাইন্স ৪৭টি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে, দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে মোট ৫৮৩ জন৷
ছবি: A.Berry/AFP/GettyImages
গবেষণা নিয়ে সমালোচনা
কিন্তু জেএসিডিইসি’র তালিকা কিছুটা সমালোচনার মুখে পড়েছে, কেননা, টেকনিক্যাল কোনো ত্রুটির কথা তারা উল্লেখ করেনি৷ এমনকি মানব আচরণের সমস্যার কথাও নেই সেখানে৷ আবহাওয়া বা সন্ত্রাসী হামলার উল্লেখ নেই, যেমন, সন্ত্রাসবাদ বিমানের নিরাপত্তার জন্য বর্তমানে সবচেয়ে বড় হুমকি৷ এর কারণে ১০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ বিমান নিরাপত্তা বিশ্লেষক সিমন অ্যাশলে বলেছেন, সন্ত্রাসের ভয় দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ৷
ছবি: AP
খারাপ আবহাওয়া
এছাড়া ভয়াবহ খারাপ আবহাওয়ার কারণে বহু দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিমান৷ সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, দুর্ঘটনার ১০ ভাগ দুর্ঘটনা তুষারপাত, কুয়াশা এবং ঝড়ের কবলে পড়ে হয়েছে৷
ছবি: dapd
প্রযুক্তিগত কারণ
বর্তমানের বিমানগুলো নতুন প্রযুক্তি সমৃদ্ধ৷ দুর্ঘটনার ২০ ভাগ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eisele
মানব আচরণ
বিমানের চালকরা ঝুঁকির অন্যতম কারণ৷ সাম্প্রতিক সময়গুলোতে অর্ধেকের বেশি দুর্ঘটনা হয় তাদের ভুলের কারণে৷ মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভুল থেকেও দুর্ঘটনা ঘটে৷ এছাড়া পাইলটের মানসিক অবস্থার উপরও দুর্ঘটনা নির্ভর করে৷
ছবি: picture alliance/ROPI
আকাশের হিরো
২০০৯ সালে হাডসন নদীতে ১৫৫ জন যাত্রী নিয়ে নেমে পড়েছিল বিমান৷ পাইলট ছিলেন চেসলে শুলেনব্যর্গার৷ কিন্তু তিনি পানিতে বিমানটি অবতরণ করাতে পারায় প্রাণে বেঁচেছিলেন যাত্রীরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Day
দুর্ঘটনার শিকার বিমান
দুর্ঘটনার পর যেসব বিমান মেরামত করে আবার চালানো হয়, সেগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে সবসময়ই উদ্বেগ থাকে৷ বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে কখনোই প্রশ্ন তোলেন না যে দুর্ঘটনায় পড়া বিমান আদৌ নিরাপদ কিনা৷
ছবি: Reuters
এবং বিজয়ী
হামবুর্গভিত্তিক ঐ গবেষণা তালিকায় হংকংয়ের ক্যাথে প্যাসিফিক ২০১৬ সালের সবচেয়ে নিরাপদ এয়ারলাইন্স হয়েছে৷ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে এয়ার নিউজিল্যান্ড এবং তৃতীয় অবস্থানে চীনের হাইনান এয়ারলাইন্স৷ জার্মানির লুফৎহানসার অবস্থান তালিকায় দ্বাদশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে দুর্ঘটনা সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছে
জেএসিডিইসি জানিয়েছে, গত বছর বিমান দুর্ঘটনায় ৩২১ জন প্রাণ হারিয়েছে৷ এ বছর যে বিমান দুর্ঘটনাটি সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছে, সেটা হলো ৭২ জন যাত্রী নিয়ে বলিভিয়া থেকে কলম্বিয়া যাওয়ার সময় মেডেলিন বিমানবন্দরের কাছে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা, যেখানে ব্রাজিলের শাপেকোইনসি রেয়াল ফুটবল দলের খেলোয়াড়রাও নিহত হন৷