কয়েক সপ্তাহ ধরে নৌকায় সাগরে অপেক্ষার পর অবশেষে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে নামতে সক্ষম হয়েছেন কয়েকশো রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ গত নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত অনেক রোহিঙ্গা অনিয়মিত সাগর পথে দেশটিতে পৌঁছেছেন৷
বিজ্ঞাপন
তিনশো থেকে চারশোর মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী রোববার ইন্দোনেশিয়া আচেহ প্রদেশের সমুদ্রতটে নামতে সক্ষম হয়েছেন৷ তার আগে দুটো নৌকায় কয়েক সপ্তাহ সাগরে কেটেছে তাদের৷ মূলত বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে নৌকায় করে গত কয়েক সপ্তাহে সহস্রাধিক শরণার্থী ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছেন৷
নিজেদের কথা শোনাতে লড়ছে রোহিঙ্গা নারীরা
15:35
নৌকায় করে সর্বশেষ ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছানো এক রোহিঙ্গা ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানান যে তাদের নৌকা ছয় সপ্তাহের মতো সাগরে ছিল৷ নৌকাটি এক পর্যায়ে ডুবতে শুরু করে এবং তাতে কোনো খাবার বা পানীয় জল অবশিষ্ট ছিল না বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
তবে ইন্দোনেশিয়া কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের আপাতত সমুদ্রসৈকতের পাশেই রেখেছেন৷ তাদের কীভাবে সহায়তা করা হবে সেই সিদ্ধান্ত না নেয়া অবধি তাদেরকে সেখানে রাখা হবে৷
ইন্দোনেশিয়া কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয়রা সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গাদের নৌকা তীরে ভিড়তে বাধা প্রদান করেছে৷ তাদের বক্তব্য হচ্ছে, শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার মতো সংগতি আচেহ এর সম্প্রদায়গুলোর নেই৷
রোববারের নতুন আগতরা ছাড়াও দেশটিতে গত একমাসে বারোশর মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর৷
এদিকে, শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো জানিয়েছেন যে তার সন্দেহ সর্বশেষ শরণার্থী আগমনের পেছনে মানবপাচারকারীদের হাত রয়েছে৷ তার সরকার মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
উইডোডো জানিয়েছেন যে ইন্দোনেশিয়া শরণার্থীদেরকে সাময়িক সহায়তা প্রদান করবে৷ তবে স্থানীয়দের স্বার্থের বিষয়টিও তার বিবেচনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে শত শত রোহিঙ্গা
সাগরপথে মিয়ানমার থেকে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে পৌঁছেছেন দুশোর বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ সবমিলিয়ে এক সপ্তাহে সেখানে গিয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
ঝুঁকিপূর্ণ পথে ইন্দোনেশিয়ায় রোহিঙ্গারা
ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের একটি সমুদ্রতটে বসে আছেন এক রোহিঙ্গা নারী৷ মিয়ানমার থেকে সাগরপথে সেখানে পৌঁছেছেন তিনি৷ গত কয়েকদিনে তার মতো এক হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছেন৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
সাগর শান্ত থাকলে শরণার্থী বাড়ে
প্রতিবছর নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস অবধি সাগর তুলনামূলক শান্ত থাকে৷ এই সময়ে মিয়ানমার থেকে দুর্বল নৌকায় করে দেশটিতে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়া চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ ছবিতে বুধবার ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছানো একদল রোহিঙ্গা শরণার্থীকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
অধিকাংশই নারী ও শিশু
আচেহর জেলে সম্প্রদায়ের প্রধান মিফতাক কাট আদেক জানিয়েছেন যে সম্প্রতি তার উপকূলে হাজির হওয়া ২১৬ রোহিঙ্গা শরণার্থীর অধিকাংশ নারী ও শিশু৷ ছোট ছোট নৌকায় করে তারা অনিয়মিত পথে সাগর পাড়ি দিয়ে দেশটিতে পৌঁছান৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
সুনির্দিষ্ট কারণ নেই
ইন্দোনেশিয়ায় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র মিত্রা সালিমা সুরিয়নো জানান যে নির্দিষ্ট কোনো কারণে সম্প্রতি অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী সেদেশে পৌঁছাননি৷ সামগ্রিকভাবে নিরাপদ জীবনের আশায় তারা দেশ ছেড়েছেন বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
কাঠের নৌকায় সাগর পাড়ি
মিয়ানমার থেকে অনিয়মিত পথে ইন্দোনেশিয়া পৌঁছাতে সাধারণত এরকম কাঠের নৌকা ব্যবহার করেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
স্থানীয়দের বাধা
আচেহর বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা শুরুতে রোহিঙ্গাদের সেখানে ভিড়তে দেননি বলে জানিয়েছেন সুরিয়নো৷ তবে, একপর্যায়ে রোহিঙ্গারা সেখানে নামতে সক্ষম হন৷ ইন্দোনেশিয়া কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে তাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
নিজ দেশে নিপীড়নের শিকার
রোহিঙ্গাদের নিজের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার৷ বৌদ্ধপ্রধান দেশটিতে তারা নানাভাবে নিপীড়নের শিকার হন৷ একারণে অনেকে মিয়ানমার ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ পথে নিরাপদ জীবনের আশায় অন্যত্র চলে যান৷
ছবি: Riska Munawarah/REUTERS
কোনো দায় আছে বলে মনে করে না ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার কোনো দায় বা ক্ষমতা নেই দেশটির৷ তাদের জন্য কোনো স্থায়ী সমাধানও হতে চায় না দেশটি৷
ছবি: Str/REUTERS
ভবিষ্যত কী?
নিজ দেশে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ, দশ লাখের বেশি, বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থান করছেন৷ পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন অনেক রোহিঙ্গা৷ মিয়ানমার রোহিঙ্গাদেরকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করতে আগ্রহী নয়৷
ছবি: Str/REUTERS
9 ছবি1 | 9
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন থেকে বাঁচতে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা প্রতিবেশি দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেন৷ মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের নাগরিক মনে করে না এবং তাদেরকে পদ্ধতিগতভাবে নানা সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখে৷
তবে শিবিরগুলোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি ঘটায় এবং শিক্ষা ও কাজের সুযোগ তেমন একটা না থাকায় নিরাপদ জীবনের আশায় অনেক শরণার্থী পরিবারসহ অনিয়মিত সাগর পথে ইন্দোনেশিয়া বা মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোতে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷