রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) শ্রমিকরাও এখন থেকে দর-কষাকষি করার জন্য সমিতি করার সুযোগ পাবেন৷ অর্থাৎ তাঁরা নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দর-কষাকষির জন্য শ্রমিক কল্যাণ সমিতি করতে পারবেন৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা ইপিজেড শ্রম আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়৷ সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়৷
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, ‘‘এই আইনের খসড়া অনুযায়ী সমিতির মাধ্যমে শ্রমিকদের দর-কষাকষি করার ক্ষমতা থাকবে৷ সমিতি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কারখানার ৩০ শতাংশ শ্রমিককে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে৷ আর তারপর আবেদনকারীদের মধ্যে ভোট হবে৷ তাদের ৫০ শতাংশ যদি সমিতির পক্ষে থাকে, তাহলেই সমিতি হবে৷''
পোশাক শ্রমিকদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত
বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন সম্প্রতি গিয়েছিলেন একটি পোশাক কারখানায়৷ তাঁর অভিজ্ঞতা ছবিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
অনিশ্চিত ভবিষ্যত
ঢাকার পূর্ব রামপুরার টিএম গার্মেন্টস-এর এই কর্মীরা জানেন না তাঁদের ভবিষ্যত৷ কারণ তাঁদের এখানে শ্রম আইন এবং মজুরি বোর্ড পুরোপুরি কার্যকর নেই৷ তাঁদের অগ্নিনিরাপত্তাও পর্যাপ্ত নয়৷ এমনকি ভবনটিও পুরনো৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
সংসার চালানো কষ্টকর
টিএম গার্মেন্টস-এর পোশাক কর্মী সুফিয়া বেগম যে বেতন পান তা দিয়ে সংসার চালান কষ্টকর৷ তবুও তার এরচেয়ে বেশি কিছু করার সুযোগ নেই৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
সর্বনিম্ন বেতনও পান না
সর্বনিম্ন বেতন ৩০০০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও রাহেলা আক্তার তা পান না৷ তাঁকে বেতন দেয়া হয় ২৫০০ টাকা৷ সে নতুন বলেই তাঁকে নাকি কম বেতন দেয়া হয়৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
নতুন, তাই বেতন কম
সুমি বেগমেরও বেতন অনেক কম৷ কারণ তিনিও নতুন৷ খরচে পোষায় না বলে তাঁরা পাঁচজন মিলে একটি রুম ভাড়া নিয়ে থাকেন৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
গেটে তল্লাশি
এই পোশাক কর্মীদের গার্মেন্টস-এ প্রবেশ এবং বের হওয়ার আগে গেটে তল্লাশী চালানো হয়৷ আর ‘ফ্রেশ’ হতে গেলেও বলে যেতে হয়৷ আর ফিরতে যদি একটু দেরি হয়, তাহলে মেলে গালমন্দ৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ
ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করেন এঁরা৷ তাপ ওপর মেশিনপত্রও পুরনো৷ কাজ করতে গিয়ে পুরনো মেশিনপত্রের কোনো ক্ষতি হলে কখনো কখনো জরিমানাও করা হয় তাঁদের৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
রঙিন স্বপ্ন
রঙিন পোশাক আর রঙিন স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় আসেন কুড়িগ্রামের মৌসুমী৷ পোশাক কারখানায় কাজ নেয়ার পর ধীরে ধীরে তাঁর স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
শ্রমিকরা অপুষ্টির শিকার
আছিয়া বেগমকে দেখেই বোঝা যায় তিনি অপুষ্টির শিকার৷ সকাল-সন্ধ্যা গার্মেন্টস-এ কাজ করেও তিনি জোটাতে পারেন তাঁর প্রয়োজনীয় খাবার৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
8 ছবি1 | 8
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই আইন হলে শ্রমিকদের অধিকার বাড়বে৷ তিনি জানান, ‘‘আইনটি বাংলাদেশ শ্রম আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, কিন্তু অভিন্ন নয়৷''
ইপিজেড শ্রম আইনের খসড়ার ১৬টি অধ্যায়ের ২০৪টি ধারায় শ্রমিকদের নিয়োগ, চাকরির শর্তাবলি, প্রসূতি সুবিধা, কাজের পরিবেশ, কর্মঘণ্টা, মজুরি, ইপিজেড-এর শ্রম আদালত গঠনসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে৷
গত বছরের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের পর শ্রমিক নিরাপত্তা এবং শ্রমিকদের বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার বিষয়টি সামনে আসে৷ সরকার এর আগে পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের বিধান করলেও ইপিজেড এর বাইরে ছিল৷ তবে তৈরি পোশাকের আন্তর্জাতিক ক্রেতা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি ফিরে পেতে ইপিজেড-এ ট্রেড ইউনিয়নের চাপ বাড়ছিল৷ ইপিজেড-এর বাইরে নতুন আইনে এখন পর্যন্ত ২৫০টি ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা হয়েছে৷
তবে অভিযোগ রয়েছে যে, আইনে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার দেয়া হলেও নানাভাবে ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের হয়রানি করা হচ্ছে৷ এছাড়া শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত না হতে কৌশলে চাপ দিচ্ছেন মালিক পক্ষ৷
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির বর্ষপূর্তি
২৪শে এপ্রিল, ২০১৩৷ সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছের সুউচ্চ ভবন ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ল বিকট শব্দে৷ ধসের আশঙ্কাকে আমলে না নেয়ার পরিণাম ১,১৩৫ জন পোশাক শ্রমিক, করুণ মৃত্যু৷ আহত এক হাজারেরও বেশি মানুষের এখনো দিন কাটে আতঙ্কে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাঁচা আর বাঁচানোর লড়াই
ভবন মালিক সোহেল রানার অর্থলিপ্সার নির্মম শিকার পোশাক শ্রমিকদের বাঁচানোর জন্য সরকারি উদ্যোগের অপেক্ষায় বসে থাকেননি সাধারণ মানুষ৷ দূর দূরান্ত থেকে ছুটে এসে একরকম খালি হাতেই অনেকে নেমে পড়েন উদ্ধার কাজে৷ নিজেদের প্রাণ বাজি রেখে বহু পোশাক শ্রমিককে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনেন তাঁরা৷
ছবি: Reuters
অসহায়ত্ব
আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সুযোগ-সুবিধার অভাব থাকলেও, ঘটনাস্থলে উদ্ধারকর্মীর কমতি ছিল না৷ তবুও অনেকেই চলে গেছেন স্বজনদের কাঁদিয়ে৷ এ ছবির মতো অবস্থাতেও উদ্ধার করতে হয়েছে অনেক মৃতদেহ৷ ৮০০-রও বেশি মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা গেলেও, অনেকের পরিচয় আজও জানা যায়নি৷ কিছু লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে৷ কিন্তু ৮৭ জনের জন্য নতুন করে নমুনা চাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রেশমার ফেরা
রানা প্লাজা ধসের ১৭তম দিনে ঘটে বিস্ময়কর এক ঘটনা৷ ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে আর কাউকে জীবন্ত উদ্ধার করা সম্ভব নয় ভেবে সাধারণ উদ্ধারকারীদের অনেকে যখন ঘরে ফিরছেন, তখনই প্রায় সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ২২ বছর বয়সি পোশাক শ্রমিক রেশমাকে৷
ছবি: Reuters
এখনো কাঁদে প্রাণ
ধসের পর ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন অনেকে৷ বিজিএমইএ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিয়েছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা৷ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১২৭ কোটি টাকা জমা হয়েছে ঠিকই, তবে বিতরণ করা হয়েছে ২২ কোটি টাকা৷ ভবন ধসের বর্ষপূর্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের মুখে শোনা গেছে হতাশা আর ক্ষোভের কথা৷ পপি বেগমকে কেড়ে নিয়েছে রানা প্লাজা৷ ঢাকার জুরাইন কবরস্থানে তাঁর কবর জিয়ারত করতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন বোন রোজিনা৷
ছবি: DW/M. Mamun
মায়ের কান্না
জুরাইন কবরস্থানে রশিদা খাতুনের কবরের পাশে সফুরা খাতুন৷ ভবন ধসের প্রায় দশ মাস পর, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি পেয়েছিলেন সন্তানের লাশ খুঁজে পাওয়ার সান্ত্বনা৷
জুরাইন কবরস্থানে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করতে মূলত তাঁদের পরিবারের সদস্যরাই এসেছিলেন৷ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির বর্ষপূর্তিতে আয়োজন ছিল অনেক, তবে জুরাইন কবরস্থানে ভিড় ছিল না তেমন৷ সেখানে এভাবেই হারানো স্বজনের ছবি হাতে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছিলেন এক নারী৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রদর্শনী
রানা প্লাজা ধসের ছবি নিয়ে ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী৷ বাংলাদেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত ৬০ জন আলোকচিত্র সাংবাদিকের তোলা ছবি স্থান পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ফুলের জলসা
রানা প্লাজা ধসে নিহতদের ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছে বেশ কিছু শ্রমিক সংগঠন৷
ছবি: DW/M. Mamun
মোনাজাত
জুরাইন কবরস্থানে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত৷
ছবি: DW/M. Mamun
10 ছবি1 | 10
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ট্রেড ইউনিয়নের আবেদনের ৩০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি আদায় করাই কঠিন হয়ে পড়ছে, কারণ তাঁরা চাকরি হারানোর ভয় পাচ্ছেন৷'' ইপিজেড এলাকায় এটা আরো কঠিন হবে বলে জানান তিনি৷
তিনি বলেন, ‘‘ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে সরকারের ইতিবাচক প্রচারণা দরকার৷ শ্রমিকদের মধ্যে এই আস্থা আনতে হবে যে ট্রেড ইউনিয়ন করলে হয়রানির শিকার হতে হবে না৷ শুধু তাই নয়, মালিকদেরও বুঝতে হবে যে ট্রেড ইউনিয়ন হলে তাঁদেরও সুবিধা৷ কারণ ট্রেড ইউনিয়ন হলে শ্রমিকরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে দাবি-দাওয়া আদায় করবে৷ আন্দোলনের নামে কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না৷''
সিরাজুল ইসলামের মতে, ‘‘ক্রেতা বা বিদেশিদের দেখানোর জন্য নয়, ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে সরকারকে৷''