আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ইবোলা চরম আকার ধারণ করেছে৷ তবে এখনো এই রোগের কোনো ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না৷ জার্মানিতে এ লক্ষ্যে চলছে গবেষণা৷ আর এতে ব্যবহার হচ্ছে তামাক গাছ৷
বিজ্ঞাপন
জীববিজ্ঞানী ইউরি ক্লেবা ও তাঁর সহকর্মীরা জার্মানির হালে শহরে অবস্থিত তাঁদের গ্রিনহাউসে শত শত তামাক গাছ প্রতিপালন করেন৷ গাছগুলো খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়, যা থেকে অ্যান্টিবডি তৈরি করেন তাঁরা৷ এই অ্যান্টিবডি দিয়ে ইবোলার ওষুধ তৈরি করা যেতে পারে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা৷
ক্লেবা বলেন, ‘‘এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া৷ এর ফলে গাছগুলো ফরেন ডিএনএ দ্বারা সংক্রমিত হয়, যেটা তাদের শুধুমাত্র প্রোটিন উৎপাদন ছাড়া আর অন্য সব কাজ করতে বাধা দেয়৷ এই প্রোটিনই হচ্ছে ওষুধ, যা আমরা তৈরি করতে চাই৷''
ইবোলা ভাইরাসের আতঙ্ক সারা বিশ্বে
পশ্চিম আফ্রিকায় ইতিমধ্যে ৪,০০০ মানুষ ইবোলা সংক্রমণে মারা গেছে৷ ইউরোপ এবং অ্যামেরিকায় ইবোলার প্রথম সংক্রমণের পর মহামারির রূপ নিতে পারে এমন আতঙ্ক বাড়ছে৷ দেখুন ইবোলার বিস্তার এবং আতঙ্ক নিয়ে আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডালাস, অ্যামেরিকা
টেক্সাসের এক হাসপাতালের একজন নার্স ইবোলা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ায় তাঁর বাড়িতে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় পুলিশ৷ স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদেও একজন ইবোলায় সংক্রমিত হয়েছেন৷ আক্রান্ত হওায়ার আগে ইবোলায় আক্রান্ত রোগীর সেবা করেছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/Jaime R. Carrero
মিলান্ডু, গিনি
গিনির গ্রাম মিলান্ডুতে গত বছর ইবোলার সূত্রপাত হয়৷ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর দু’বছরের এক শিশু মারা যায়৷ সম্ভবত ওই শিশুটিই ছিল সাম্প্রতিক কালে মহামারির রূপ নেয়া ইবোলার প্রথম শিকার৷ তারপরই এই ভাইরাসে মারা যায় শিশুটির বোন, মা এবং নানি৷ এ বছরের মার্চ মাসে গিনির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ডাব্লিউএইচও-কে ইবোলার প্রাদুর্ভাবের কথা জানায়৷
মনরোভিয়া, লাইবেরিয়া
গিনির পর ইবোলা আঘাত হানে পার্শ্ববর্তী দেশ সিয়েরা লিওন ও লাইবেরিয়ায়৷ লাইবেরিয়ায় নার্সদের ধর্মঘটে ইবোলা রোগীদের সংকট কিছুটা বেড়ে যায়৷ তবে আশার কথা, সেনেগাল এবং নাইরেজিয়ায় এরই মধ্যে ইবোলা সংক্রমণের হার কিছুটা কমেছে৷
জেনেভা, সুইজারল্যান্ড
ইবোলা একটি সংক্রামক রোগ৷ রক্ত, বীর্য, যোনিরস, লালা বা দেহ নির্গত অন্য পদার্থ যেমন মলমূত্র বা বমির সংস্পর্শে এ রোগ ছড়ায়৷ আক্রান্ত রোগীদের পরিবারের সদস্য, ডাক্তার ও সেবাকর্মীদের এ রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বেশি৷ তবে সংক্রমণ নিরোধক পোশাক এবং জীবাণুনাশক ব্যবহার করলে ইবোলায় সংক্রমিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, মনে করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Getty Images/P. Guyot
লাইপসিশ, জার্মানি
গত মঙ্গলবার জার্মানিতে আসা জাতিসংঘের দু’জন কর্মীর মধ্যে একজন লাইপসিশে মারা গেছেন, যিনি লাইবেরিয়াতেই ইবোলা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলেন৷ আর একজনকে বিশেষ ব্যবস্থায় ফ্রাংকফুর্ট শহরে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷ জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী হ্যারমান গ্যোহে অবশ্য আশার কথা শুনিয়েছেন৷ তাঁর মতে, ‘‘জার্মানিতে ইবোলা সংক্রমণের আশঙ্কা খুবই কম৷’’
ছবি: Reuters/R. Orlowski
5 ছবি1 | 5
ইউক্রেনের বিজ্ঞানী ক্লেবা-র সহকর্মীরা এসেছেন সারা বিশ্ব থেকে৷ তাঁরা আফ্রিকা থেকে আসা সব সংবাদের দিকে নজর রাখছেন৷ মার্কিন দুটো ওষুধ কোম্পানি তাঁদের প্রযুক্তির পেটেন্ট চায়৷ ইবোলার ওষুধ তৈরিই তাঁদের উদ্দেশ্য৷ তবে গবেষণার কাজে প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য তাঁরা সরকারের উপর নির্ভরশীল৷
ক্লেবা বলেন, ‘‘ওষুধ তৈরির আগে শুধুমাত্র গবেষণা, উন্নয়ন ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্যই বড় কোম্পানিগুলিকে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়৷ তবে ওষুধটা যদি হয় এমন কোনো মহামারির জন্য, যেটা আগে থেকে অনুমেয় নয় এবং যেটা এমন কোনো দেশে হয়েছে যেখানকার রোগীরা আধুনিক ওষুধ কেনার মতো সমর্থ নয়, তাহলে সেই ওষুধ তৈরির যথার্থতা প্রমাণ বড় কোম্পানির জন্য একটু কঠিনই বটে৷''
এই গাছ থেকে পাওয়া উপাদান প্রথম পর্যায়ে শুধুমাত্র গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হতো৷ আর এটা থেকে যে ওষুধ তৈরি হয়েছে সেটা অল্প কয়েকজন রোগীর উপর পরীক্ষা করা হয়েছে৷
ক্লেবা-র দলে ৩০ জন বিজ্ঞানী কাজ করছেন, যাঁদের অনেকেই সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বেরিয়েছেন৷ ২০০৪ সাল থেকে তাঁরা এই জটিল বিষয় নিয়ে কাজ করছেন, যেটা শুধু যে একটা রোগের বিরুদ্ধেই লড়ে, তা নয়৷ ক্লেবা বলেন, ‘‘এটা অনেক রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী, ইবোলা তার মধ্যে একটি৷ ফলে এমন একটা ভালো উপায় থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷''
বর্তমানে তাঁরা শুধু ইবোলা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরির কাজে মনোযোগ দিচ্ছেন৷ এবং দ্রুত অনুমোদন পাবার আশা করছেন৷