কঙ্গোয় ইবোলায় আক্রান্ত দুই রোগী হাসপাতাল থেকে পালিয়ে একটি প্রার্থনাকক্ষে আশ্রয় নেন৷ কিন্তু তাঁদের কারণে সেখানে উপস্থিত সকলেরই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ পালাতে সাহায্যকারীরাও আছেন আক্রান্তের তালিকায়৷
বিজ্ঞাপন
ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত মৃত্যু পথযাত্রী দু'জন রোগী স্বজনদের সহযোগিতায় মোটর সাইকেলে চড়ে কঙ্গোর একটি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান৷ এরপর তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় একটি প্রার্থনাকক্ষে, যেখানে আরও ৫০ জনের মতো মানুষ ছিলেন৷ এবার ঐ ৫০ জনেরই ইবোলার মতো প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
হাসপাতাল থেকে পালানোর সময়ই ঐ দুই রোগী বারবার বমি করছিলেন৷ বলা বাহুল্য, ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দু'জনেই ছিলেন মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে৷ প্রার্থনাকক্ষে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা পরই কঙ্গোর নদী বন্দর বানডাকা থেকে দু'জনের মৃতদেহ পাওয়া যায়৷ জানান ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স-এর জরুরি সেবা বিভাগের সমন্বয়ক জঁ-ক্লিমঁ কাবরোল৷
আক্রান্ত রোগীর শরীর নিঃসৃত যে কোনো তরল পদার্থ থেকে মারাত্মক ছোঁয়াচে এই ইবোলা ভাইরাস ছড়াতে পারে৷ এর মধ্যে ঘাম বা বমিও আছে৷ তাই কঙ্গোর সরকারকে এ মুহূর্তে রীতিমত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো সজাগ থাকতে হচ্ছে, যাতে ইবোলা মহামারির আকার ধারম করতে না পারে৷
আবার ইবোলার হানা
২০১৪-১৫ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণে হাজারো মানুষের মৃত্যু হয়েছিল৷ এ মাসের শুরুর দিকে কঙ্গোতে আবারো নতুন করে ইবোলার প্রাদুর্ভাব শনাক্ত করা হয়৷ প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
অসুখ বনাম বিজ্ঞান
মধ্য আফ্রিকার উত্তরাংশে কঙ্গোর উপত্যকায় প্রবাহিত ইবোলা নদী থেকে ইবোলা ভাইরাসের নামকরণ করা হয়৷ সর্বপ্রথম ১৯৭৬ সালে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়৷ ১৯৭৬ সালের পর এ নিয়ে নবমবারের মতো ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে কঙ্গোতে৷ ভীষণরকম ছোঁয়াচে এই ভাইরাস রুখতে শুরু হয়েছে বিজ্ঞানের অভিযান৷ কঙ্গোর গবেষণাগারে চলছে ইবোলা সংক্রান্ত নানা পরীক্ষা৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
রোগ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যকর্মীরা
কঙ্গোতে ইবোলার প্রাদুর্ভাব ‘ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা’ স্পষ্ট৷ কারণ আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে৷ এর মধ্যেই রোগের মোকাবিলা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ ছবিতে কঙ্গোর জনৈক ব্যক্তির শরীরে ক্লোরিন স্প্রে করছেন স্বাস্থ্যকর্মী৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
অন্যরকম স্বাগত জানাচ্ছে কঙ্গো
ইবোলা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ‘মহামারীর সময়ের’ মতো করে স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগ মোকাবিলার চেষ্টা চালিয়েছে যাচ্ছেন৷ এমনকি বিমানে করে যাঁরা কঙ্গোতে এসে নামছেন, তাঁদেরও স্বাস্থ্যকর্মীরা পরীক্ষা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
নানারকম কর্মসূচি
কঙ্গোর শহরাঞ্চলেও বহু মানুষের শরীরে ইবোলা শনাক্ত করা হয়েছে৷ ইবোলার প্রাদুর্ভাব যাতে শহর এলাকায় ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য সর্বত্র ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হচ্ছে৷ ছবিতে বিকোরো হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্লিচিং পাউডার ছড়াচ্ছেন৷
ছবি: Reuters/J. R. N'Kengo
ইবোলা রুখতে জোর
ইবোলাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ এমনকি বিমানবন্দরেও সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
জরুরি
ইবোলা আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার প্রায় ৫০ শতাংশ৷ তাই কোনোভাবেই ইবোলা ভাইরাস আটকাতে দেরি করা যাবে না৷ সাধারণভাবে পরিচ্ছন্নতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় যে কোনো সংক্রমণ ঠেকাতে৷ তাই কঙ্গোতেও ইবোলা রুখতে জরুরি পদক্ষেপ হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
বিষাদ
কঙ্গোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিকোরো শহর এবং ইবোকো নামের একটি গ্রামে নতুন করে দু’জন রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে, যাঁরা ইবোলায় আক্রান্ত৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন এই দু’জন নিয়ে মোট ৩১ জন ইবোলা আক্রান্ত রোগীকে সন্দেহের তালিকায় থাকা ৫২ জন রোগীর মধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে৷ ছবিতে কঙ্গোর একটি হাসপাতালের ব্যালকনিতে ইবোলা আক্রান্ত রোগীরা দাঁড়িয়ে৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
দরকার টিকা
কঙ্গো নদীর তীরের জনপদ, অর্থাৎ বন্দর নগরী বানডাকা থেকে রাজধানী কিনশাসায় বসবাসকারী প্রায় ১ কোটি মানুষ এ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে৷ তাই চিকিৎসা বা সেবাকর্মীরা যাতে আক্রান্ত না হন, সে জন্য একটি পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনও চালু হয়েছে ইতিমধ্যে৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
আপৎকালীন পরিস্থিতি
আক্রান্ত রোগীর শরীর নিঃসৃত যে কোনো তরল পদার্থ থেকে মারাত্মক ছোঁয়াচে এই ইবোলা ভাইরাস ছড়াতে পারে৷ তাই কঙ্গোর সরকারকে এ মুহূর্তে রীতিমত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো সজাগ থাকতে হচ্ছে, যাতে ইবোলা মহামারি না হয়ে দাঁড়ায়৷ ছবিতে উপযুক্ত সুরক্ষা নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা দেওয়ার আপৎকালীন কাজ করছেন৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
ইবোলা মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও জানিয়েছে, ইবোলা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কঙ্গোর পার্শ্ববর্তী ন’টি দেশের সঙ্গে কাজ করছে তারা৷ টিকাদানের জন্য কঙ্গোতে অস্থায়ী শিবিরও তৈরি হচ্ছে তাদের উদ্যোগে৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
10 ছবি1 | 10
এরইমধ্যে কঙ্গোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিকোরো শহর এবং ইবোকো নামের একটি গ্রামে নতুন করে দু'জন রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে, যাঁরা ইবোলায় আক্রান্ত৷
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন এই দু'জন রোগী নিয়ে মোট ৩১ জন ইবোলা আক্রান্ত রোগীকে সন্দেহের তালিকায় থাকা ৫২ জন রোগীর মধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে৷
কঙ্গোতে এই নিয়ে নবমবারের মতো ইবোলা ভাইরাস আক্রমণ করল৷ এ দফায় ইতিমধ্যে ২২ জন মারা গেছেন বলে বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে কঙ্গো সরকার৷ যদিও এর আগে তারা ইবোলায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যা ২৭ বলেছিল৷
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, প্রথমে ২৭ জনের কথা বলা হলেও পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে বাকি পাঁচজন অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন৷
দুর্গত এলাকা ঘুরে এসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস-এর জঁ-ক্লিমঁ কাবরোল বলেন, ‘‘পরিবারের সহায়তা নিয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান দু'জন ইবোলা রোগী৷ মোটরবাইকে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়, কেননা পালানোর সময় রোগীরা খুবই দুর্বল ছিলেন এবং হাঁটতে পারছিল না৷’’
তিনি বলেন, ‘‘ঐ দু'জনকে একটি প্রার্থনাকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ যেখানে আরও ৫০ জন ছিলেন প্রার্থনার জন্য৷ সকালে তাঁদের দু'জনকে খুঁজে পাওয়া যায়৷ একজন তারমধ্যেই মারা গিয়েছেন৷ আর আরেকজন মৃতপ্রায় ছিলেন, অসম্ভবব বমি করছিলেন৷ প্রার্থনাকক্ষে থাকা ঐ ৫০ জনেও এখন ইবোলায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷’’
প্রাণীদের দ্বারা রোগে আক্রান্ত
অনেক মানুষ প্রাণীদের সাথে খুব সহজেই বন্ধুত্ব করতে পারে৷ তাছাড়া কুকুর, বিড়াল তো অনেক শিশুর খেলার সাথী, এমনকি তারা কেউ কেউ এক বিছানায় ঘুমায়ও৷ আতঙ্কের ব্যাপার হলো, প্রাণীদের গায়ে থাকে নানা রোগের জীবাণু৷
ছবি: Fotolia/pitrs
কুকুরের লোম থেকে অ্যালার্জি
পোষা কুকুরের লোম থেকে অনেক সময় শিশুদের শরীরে অ্যালার্জির সংক্রমণ হয়ে থাকে যা পরবর্তীতে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে৷ তাছাড়া জার্মানিতে প্রতিটি কুকরকেই জলাতঙ্ক রোগের টিকা দিতে হয় এবং কুকুরদের বিভিন্ন অসুখের জন্য টিকা দেওয়ারও নিয়ম রয়েছে৷ বিশেষ করে বিদেশে কোথাও ভ্রমণ করার আগে তো অবশ্যই৷
ছবি: Fotolia/Simone van den Berg
বেড়ালদের ‘চুলকানো’ অসুখের
বেড়াদের ‘চুলকানো’ অসুখ খুবই বিপজ্জনক৷ অসুস্থ বেড়ালের ক্ষত থেকে মানুষে শরীরে সংক্রমিত হয়ে থাকে এ অসুখ৷ তবে বেড়াল নিজে বছরের পর বছর এই রোগের জীবাণু রক্তের মধ্যে বহন করতে পারে৷ জার্মানিতে শতকরা ১৩টি বেড়ালই এই রোগের ভাইরাসে সংক্রমিত৷ মানুষের এ রোগ হলে অল্পক্ষণের জন্য জ্বর হয় এবং চুলকানির ফলে বিভিন্ন জায়গা ফুলে যায়৷
ছবি: Fotolia/millaf
ইবোলার সংক্রমণ ছড়ানোর প্রথম বাহক বাঁদুর
আমরা জানি বাঁদুরকে ‘ইবোলা’ সংক্রমণ ছড়ানোর প্রথম বাহক হিসেবেই ধরা হয়৷ তবে পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি এলাকায় বাঁদুরের মাংস সুস্বাদু খাবার হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে৷ ইবোলার প্রথম ভাইরাস কিন্তু প্রাণী থেকেই মানুষের শরীরে প্রবেশ করে৷ তারপর একজন মানুষের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে সংক্রমিত হয়৷ এভাবেই ছড়িয়ে পরে ভয়ংকর ইবোলা ভাইরাস৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গরু-বসন্ত
গরুরও বসন্ত রোগ হয়, বিশেষ করে বাছুর বা শিশু গরুদের৷ আর মানুষেরও হয় এই গরু-বসন্ত৷ জার্মানিতে গরু-বসন্তের টিকা এখনো বের হয়নি৷ তবে যাঁদের সাধারণ বসন্তের টিকা দেয়া থাকে, তাঁরা গরু-বসন্ত হবার ভয় থেকে সুরক্ষিত৷ আগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গো-দোহনের সময়ই এ সব অসুখ মানুষের শরীরে সংক্রমিত হতো, বিশেষকরে প্রথমেই আক্রান্ত হতো হাত দুটো৷
ছবি: Witolld Janczus
বিপজ্জনক কামড়
আজকের দিনে মানুষ বা প্রাণী কারো জন্যই এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করা কোনো সমস্যাই নয়, ঠিক এশীয় টাইগার মশার মতো৷ বিভিন্ন দেশ থেকে জাহাজের মাধ্যমে পণ্যদ্রব্যের সাথে মশা রোগের জাবাণু বহন করে ইউরোপে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় ডেঙ্গু জ্বর৷
ছবি: picture alliance/Mary Evans Picture Library
টিয়া পাখির অসুখ
টিয়া পাখি অসুখ হচ্ছে ‘জু-নোজ’, যা শিশু এবং দুর্বল মানুষদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টিয়া পাখি বা পায়রার শুকনো মল বা বিষ্ঠা থেকে বাতাসের মাধ্যমে মানুষেকে সংক্রমিত করে৷
ছবি: Proaves
শেয়াল
২০০৮ সাল পর্যন্ত জার্মানিতেও ছিল জলাতঙ্ক রোগ৷ এই রোগ সাধারণত শেয়ালের থেকেই সংক্রমিত হয়ে থাকে৷ বিশাল এক টিকা অভিযানের মাধ্যমে এই বিপজ্জনক রোগ নির্মূল করা হয়েছে৷ আগে এই ভাইরাসে যাঁরা আক্রান্ত হতেন, তাঁরা মৃত্যুর ছোবল থেকে রক্ষা পেতেন না৷ জার্মানি অবশ্য এখন এই রোগের সংক্রমণ থেকে মুক্ত৷
ছবি: imago/blickwinkel
7 ছবি1 | 7
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) ইমারজেন্সি রিসপন্স বিভাগের প্রধান পিটার সালামা জানান, মোটর বাইকে করে ঐ দুই ইবোলা রোগীকে পালাতে যাঁরা সাহায্য করেছেন, তাঁদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ কেননা, ছোঁয়াচে ইবোলা হয়ত সাহায্যকারীদের মাধ্যমেই মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়বে৷ তিনি বলেন, ‘‘ঐ দুইজন পালানোর পর থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য সহযোগী সংস্থা রোগীদের সম্ভাব্য সংস্পর্শে এসেছেন এমন সব মানুষের ওপর কড়া নজরদারি করছে৷’’
এদিকে ইবোলা মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের ত্রৈমাসিক তহবিল বাড়িয়ে ৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার করেছে, যা এর আগের ঘোষণার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ৷
পিটার সালামা বলেন, ‘‘ধরা যাক, কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি কঙ্গো নদী ধরে হাঁটা শুরু করলেন৷ তখন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় একইসাথে ইবোলা দেখা দেবে৷ আসলে যে কোনো সময় এটা ঘটতে পারে৷ এ কারণেই বাজেট বাড়ানো হয়েছে৷’’
এ সময় তিনি কঙ্গো নদীর তীরের জনপদ, অর্থাৎ বন্দর নগরী বানডাকা থেকে রাজধানী কিনশাসায় বসবাসকারী প্রায় ১ কোটি মানুষ এ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে আশঙ্কার কথা জানান৷
২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পশ্চিম আফ্রকায় ইবোলা ছড়িয়ে পড়ে৷ তারপর থেকে অবশ্য এর চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে৷ বিশেষ করে চিকিৎসা বা সেবাকর্মীরা যাতে আক্রান্ত না হন, সে জন্য একটি পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনও চালু হয়েছে ইতিমধ্যে৷
কিন্তু স্থানীয় আফ্রিকানদের মধ্যে ইবোলা নিয়ে ভীতি বা পলায়ন মনোবৃত্তি রয়েছে৷ পাশাপাশি তাঁদের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা না রাখার ব্যাপারেও সংস্কার রয়েছে৷ ফলে এর চিকিৎসা এখনো জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি৷
অতীতে দেখা গেছে, ইবোলা আক্রান্ত রোগী মারা যাওয়ার পর, তাঁর স্বজনেরা আবেগের বশে রোগীকে জড়িয়ে ধরেছেন এবং পরে নিজেরাই ইবোলায় আক্রান্ত হয়েছেন৷
এইচআই/ডিজি (আরটিআরই, রয়টার্স)
২০১৪ সালের ৮ আগস্টের ছবিঘরটি দেখুন...
মহামারি ইবোলা ভাইরাস
ইবোলা বা এবোলা ভাইরাসকে চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভাইরাস হিসেবে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ এতে আক্রান্ত হলে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর অবধারিত৷ তাই বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা জারি করেছে সংস্থাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান মার্গারেট চান এবোলাকে মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি অন্যতম ঘাতক জ্বর হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন যে, আফ্রিকায় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে রক্তপ্রদাহজনিত এই জ্বর৷ তাই বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন তিনি৷
ছবি: picture alliance/dpa
পশ্চিম আফ্রিকায় মহামারি
মারাত্মক এবোলা ভাইরাসের আক্রমণে পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১,০০০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭১১৷ গিনিতে গত মার্চে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে এবোলা ভাইরাসের প্রকোপ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লাইবেরিয়ায় জরুরি অবস্থা
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হিসেবে বিশ্বে এই ভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম দেশ লাইবেরিয়ায় বৃহস্পতিবার জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে৷ এতে সরকার বিভিন্ন কঠোর ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবে৷ প্রাণঘাতী এবোলা ভাইরাস এখন আফ্রিকা থেকে বিশ্বের অন্যান্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
আক্রান্ত অন্যান্য দেশের নাগরিক
স্পেনের একজন প্রবীণ ক্যাথলিক ধর্মপ্রচারক মারাত্মক অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরে গেছেন৷ তিনি এবোলায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ সৌদি আরবে একজন রোগীর মৃত্যুর কারণও এবোলা বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা৷ নাইজেরিয়াতেও একজন নার্স এবোলার সংক্রমণে মারা গেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এবোলা সংক্রমণের লক্ষণ
এবোলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মারাত্মক জ্বর এবং কারও কারও অবিরত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে৷ সঙ্গে থাকে মাথা, পেশী এবং তলপেটে তীব্র ব্যথা৷ রোগীর একদিকে ক্ষুধা কমে যায়, অন্যদিকে শুরু হয় পাতলা পায়খানা৷ সাধারণত শরীর থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন তরল পদার্থের মাধ্যমে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আক্রান্ত চিকিৎসক
বলা বাহুল্য, আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচর্যাকারীর মধ্যে ভাইরাসটি সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ লাইবেরিয়াতে যেমন এবোলা রোগীদের পরিচর্যাকারী দুই মার্কিন স্বাস্থ্যকর্মী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর, তাঁদের চিকিৎসার জন্য সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংক্রমণের আশঙ্কা
মূলত কোনো প্রাণী বা মানুষের রক্ত, বীর্য, যোনিরস বা দেহ নির্গত অন্য কোনো তরলের সংস্পর্শে এ রোগ ছড়ায়৷ বলা বাহুল্য, অনিয়ন্ত্রিত এবং অনিরাপদ যৌন মিলনেও এ রোগের সংক্রমণ হয়ে থাকে৷ অর্থাৎ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এইডস রোগের সঙ্গে এবোলার মিল রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
উড়ন্ত খ্যাঁকশিয়াল
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পশ্চিম আফ্রিকায় এবোলা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণ উড়ন্ত খ্যাঁকশিয়াল৷ এই প্রাণীটি ভাইরাসটি বহন করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে৷ এমনকি সংক্রমিত প্রাণীটি যখন ফলমূল ও অন্যান্য প্রাণী খাচ্ছে, তখন সেসব খাদ্যের অবশিষ্ট অংশ থেকেও ছড়িয়ে পড়ছে এবোলা৷
ছবি: imago
সংক্রমণের ঝুঁকি
তার মানে শুধু মানুষ থেকে মানুষে নয়, মানুষ যখন এবোলায় আক্রান্ত প্রাণীর রক্ত বা মাংসের সংস্পর্শে আসে, তখনও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে৷ বরং সেক্ষেত্রে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বলে জানান চিকিৎসকরা৷ তাই খ্যাঁকশিয়াল থেকে অন্য প্রাণী বা ফলমূল হয়ে সহজেই মানুষের মধ্যে এবোলা ভাইরাস তার বংশবৃদ্ধি করে৷
ছবি: DW
৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যু
এবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর অবধারিত৷ সেজন্যই তো একে মহামারি বলে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
ছবি: Reuters
বড় সমস্যা
বলা বাহুল্য, আফ্রিকায় বন্য প্রাণী খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে৷ সব বাজারেই এ সব মাংস পাওয়া যায়৷ গবেষকদের ধারণা, এ ধরনের বন্য প্রাণীর মাংস থেকে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে এবোলা৷ তার সঙ্গে অনিরাপদ যৌন মিলন তো রয়েছেই!
ছবি: picture-alliance/dpa
পরীক্ষামূলক ওষুধ এখনই নয়
এবোলা সংক্রমণ নিরাময়ের উপায় এখনো আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি৷ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি একটি ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করার সময় এখনো আসেনি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ কারণ মার্কিন দুই স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর ওষুধটি প্রয়োগে তাঁদের উন্নতির ধরণে তারতম্য দেখা গেছে৷