1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইভটিজারদের মামলাই নিলো পুলিশ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৮ জানুয়ারি ২০২০

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে এক স্কুল ছাত্রী ইভটিজিং-এর শিকার হয়ে প্রায় দু্ই মাস গৃহবন্দি৷ তার পরিবারের সদস্যেরা পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলে তাদের ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা৷ পুলিশ ও প্রশাসনও তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে৷

Symbolbild - Häusliche Gewalt
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/empics/D. Lipinski

গত ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে ইভটিজিং এর শিকার হয়ে স্কুলে যেতে পারছে না এক ছাত্রী৷ এ বিষয়ে তাদের মামলা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে৷ থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করার পরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ইভ টিজিং এর শিকার ছাত্রীর স্বজনেরা৷ উল্টো অভিযুক্তরাই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে৷ যা নিয়ে ভয়ের মধ্যে রয়েছেন ওই স্কুল ছাত্রী এবং তার পরিবাররে সদস্যরা৷

ইভটিজিং-এর শিকার ছাত্রী স্থানীয় হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, ‘‘আমি ডিসেম্বরের এক তারিখ থেকেই স্কুলে আর তেমন যেতে পারি নাই৷ ওই সময় থেকেই আমাকে উত্যক্ত করত৷ তবুও মাঝেমধ্যে যাওয়ার চেষ্টা করতাম৷ যখনই বের হতাম তারা কয়েকজন মিলে আমাকে খারাপ খারাপ কথা বলতো৷ জোর করে সেলফি তোলার চেষ্টা করে৷ এরপর থেকেই আমার স্কুলে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ৷''

এই ছাত্রী থাকে খালুর বাড়িতে৷ তার খালু জানান, ‘‘স্থানীয় যুবক শরিফুল ইসলাম সজীব এর মূল হোতা৷ সে মেকানিক-এর কাজ করে৷ ডিসেম্বর মাস থেকে সে তার সহযোগীদের নিয়ে উত্যক্ত করা শুরু করে৷ তার পরিবারের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি৷ উল্টো তারা আমার ভায়রার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়৷ ২ জানুযারি সে স্কুলে যাওয়ার পথে গায়ে হাত দিয়ে জোর করে সেলফি তুলতে চায়৷ সে চিৎকার করলে লোকজন আসায় তারা চলে যায়৷''

তিনি অভিযোগ করেন, থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনা জানানোর পরও প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেননি৷ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাদের মামলাও নেননি৷ উল্টো ইভটিজাররা স্কুল ছাত্রীর পরিবারে বিরুদ্ধে মামলা করেছে৷

ছাত্রীর খালু

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘থানায় মামলা করতে গেলেও থানা মামলা নেয়নি৷ উল্টো আমরা অভিযোগ করায় গত ২৪ জানুয়ারি রাত ৮ টার দিকে সজীব তার সহযোগীদের নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালায়৷ আমার স্ত্রী এবং ভাইকে মারধোর করে৷ রাত ১০ টার দিকে পথে আমার ওপর হামলা চালিয়ে আমার মোটরবাইক ছিনিয়ে নেয়৷ এই ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ আমাদের মামলা নেয়নি৷ উল্টো হামলাকারীরা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়৷''

তিনি জাানান, সজীব এলাকার জাহিদুল ইসলাম রনি, ইউসুফ, সাদ্দাম, মোরশেদ নামে আরো কয়েকজনের সাথে এর আগে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন৷ জামিন পাওয়ার পর রাজনৈতিক আশ্রয়ে একটি গ্যাং গড়ে তোলেন৷

ওই স্কুল ছাত্রী এবং তার পরিবারের সদস্যরা এখন ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন৷ যদিও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া খাতুন বলেছেন, মঙ্গলবার তিনি ছাত্রীসহ সব পক্ষের সাথে কথা বলেছেন৷ আর কেউ তাকে বিরক্ত করবে না বলেও আশ্বাস দেন৷

তিনি বলেন, ‘‘তারা ১৫ জানুয়ারি আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন৷ তার আগে আমাকে ফোনে জানিয়েছিলেন৷ তবে ব্যস্ততার কারণে আমি বিষয়টি দেখতে পারিনি৷ আজ (মঙ্গলবার) আমি ওই এলাকায় গিয়েছিলাম৷ আমি ইভটিজিং-এর শিকার মেয়েটি ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি৷ যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি৷ মেয়েটি আমাকে বিভিন্ন সময় উত্যক্ত করার কথা জানিয়েছে৷ কেউ যাতে আর তাকে উত্যক্ত না করে সে ব্যাপারে আমি ব্যবস্থা নিয়েছি৷ ফের এই ঘটনা ঘটলে আমি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি দিতে পারব৷''

ওসি শেখ নেয়ামতউল্লাহ

This browser does not support the audio element.

 এখন কী শাস্তি দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটি ইভটিজিং-এর কথা বললেও আমার সামনেতো ঘটনা ঘটেনি বা হাতেনাতে তো প্রমাণ পাইনি৷ আর স্থানীয়রা বলেছে এখানে রাজনৈতিক বিরোধ আছে৷'' রাজনৈতিক বিরোধের কারণে ইভটিজিং করা যাবে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি আবারো প্রমাণের কথা বলেন৷

বোয়ালখালি থানার ওসি শেখ নেয়ামতউল্লাহ আগে অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেন, ‘‘অভিযোগ পাইনি তাই ব্যবস্থা নিতে পারিনি৷ গতরাতে (সেমাবার দিবাগত রাত) একটি মামলা নিয়েছি৷ আসামিদের কাউকেই এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি৷''

হামলার ঘটনায় মামলা না নিয়ে উল্টো হামলাকারীদের পক্ষে মামলা প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেন, ‘‘যারা আগে এসেছে তাদের মামলা নিয়েছি৷ তারা আসেনি তাই মামলা নেইনি৷''

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য প্রধান অভিযুক্ত সজীবকে চেষ্টা করেও ফোনে পাওয়া যায়নি৷ তবে স্থানীয় চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, ‘‘জোর করে সেলফি তুলতে চাইলে তা ইভটিজিং হয় কীভাবে? সেলফিতো আর তোলেনি৷''

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এর হিসেবে গত বছর ২৫৮ জন নারী ইভটিজিংসহ যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছেন৷ এরমধ্যে ১৮ জন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন৷ দুইজন ছাত্রী স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ এর আগের বছর ২০১৮ সালে ইভটিজিং এর শিকার হয়েছেন ১১৬ জন নারী৷ আটজন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন৷ ছয়জন ছাত্রী স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ