বিষয়টি অনুসন্ধান করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অ্যাক্টিভিস্টরা গেছেন চীনে; সিএনএন থেকে শুরু করে আল-জাজিরা অবধি সব বড় বড় মিডিয়া সংস্থা রিপোর্ট করেছে৷ দৃশ্যত শুধু চীন উত্তেজিত নয়!
বিজ্ঞাপন
সিএনএন ও অপরাপর পশ্চিমা মিডিয়ায় সমালোচনার ধারাটা দ্বিবিধ৷ প্রথমত, চীনে জুতো তৈরির কারখানাগুলিতে দীর্ঘ কাজের সময়, কম পারিশ্রমিক, সংকীর্ণ পরিবেশ ইত্যাদির দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে ও সেই সঙ্গে ইভানকা ট্রাম্পের মতো কোম্পানিগুলি যে অপেক্ষাকৃত চড়া দামে সেই সব জুতো পশ্চিমে বিক্রি করে থাকে, তার তুলনা করা হচ্ছে৷
দ্বিতীয়ত, ইভানকার পিতা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে চীনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গীরণ করে আসছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে ইভানকা ট্রাম্পের কোম্পানি যে চীনের একাধিক কারখানায় জুতো তৈরি করিয়ে থাকে – এই পরস্পরবিরোধিতার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷
তৃতীয় একটি দৃষ্টিকোণও যে আছে, সেটা বোঝা যায় ‘গ্লোবাল টাইমস'-এর ভিডিও রিপোর্টটা দেখলে৷ পত্রিকাটির মালিক চীনের ‘পিপলস ডেইলি' ও এক হিসেবে ‘গ্লোবাল টাইমস' ইংরেজিতে আন্তর্জাতিক পাঠকমহলের জন্য চীনের অভ্যন্তরীণ খবরাখবর পেশ করে থাকে৷
সেই ‘গ্লোবাল টাইমস' পত্রিকা দক্ষিণ চীনের গুয়ানডং প্রদেশের ডংগুয়ান শহরে রিপোর্টার পাঠিয়ে ইভানকা ট্রাম্পের কোম্পানির জন্য জুতো তৈরি করে, এমন একটি কারখানার বিবরণ দিয়েছে৷ সিএনএন-এর মতো এই ভিডিও রিপোর্টেও জুতো তৈরির বিভিন্ন পর্যায় ও প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে – শুধুমাত্র শ্রমিকদের খাবার বা থাকার জায়গা বাদে৷
‘গ্লোবাল টাইমস'-এর মহিলা রিপোর্টার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, গুচ্চি অথবা মার্ক ফিশার-এর মতো বড় বড় ব্র্যান্ডের জুতোও এই কারখানাতে তৈরি হয়৷ কিন্তু ইভানকা ট্রাম্পের কোম্পানির জন্য জুতো তৈরি নিয়ে এ ধরনের কোম্পানিগুলিকে মাত্রাতিরিক্ত ‘মিডিয়া অ্যাটেনশান' সহ্য করতে হচ্ছে, যার ফলে কারখানাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা সহ তিনজন কর্মীর চাকরি গেছে, কেননা তারা একজন বিদেশি ফটোগ্রাফারকে বিনা অনুমতিতে কারখানার শ্রমিকদের ছবি তুলতে দিয়েছিলেন৷
রিপোর্টের শেষে অনামা বিশেষজ্ঞদের দোহাই দিয়ে বলা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর সব ঘোষণা সত্ত্বেও, ‘‘ইভানকার জুতো তৈরি করার'' মতো চাকরিগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যেতে পারবেন বলে মনে হয় না৷
অপরদিকে সিএনএন-এর রিপোর্ট শেষ হচ্ছে এক মার্কিন বিশেষজ্ঞের এই ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে যে, ট্রাম্প চীন থেকে আসা পণ্যের উপর শুল্ক বাড়ালে ইভানকার জুতো তৈরির কাজ বাংলাদেশ কিংবা ভিয়েতনামে চলে যাবে৷
ইভানকা ট্রাম্পের অন্যরকম জীবনধারা
ধনী পিতামাতার সন্তান থেকে মডেল, প্রেসিডেন্ট কন্যা -ইভানকা ট্রাম্পের জীবন যে অন্য আর দশটা মেয়ের মতো নয়, তা বোঝাই যাচ্ছে৷ এখানে রয়েছে তাঁর অন্যরকম জীবনযাপনের কিছু মুহূর্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Savignano
বিচ্ছেদের সন্তান
১৯৯৪ সালে নিউ ইয়র্কে ইউএস ওপেন চলাকালে তোলা এই ছবিতে ১২ বছরের ইভানকা আর তাঁর ধনী ব্যবসায়ী বাবা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখা যাচ্ছে৷ ইভানকা মেরি ট্রাম্পের জন্ম ১৯৮১ সালে৷ তাঁর মা চেক-অ্যামেরিকান মডেল ইভানা ট্রাম্প৷ ইভানকা, ট্রাম্প ও ইভানা দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান৷ ইভানকার যখন ১০ বছর বয়স তখন তাঁর বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে৷
ছবি: picture alliance/ASSOCIATED PRESS/R. Frehm
সম্মিলিত যৌথ পরিবার
ইভানকা তাঁর ছোট সৎ বোন টিফানিকে কোলে নিয়ে আছেন৷ ট্রাম্পের ৫০তম জন্মদিনে তোলা এই ছবিতে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লাকে দেখা যাচ্ছে৷ ইভানকারা চার ভাই-বোন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Savignano
কিশোরী মডেল
১৯৯৭ সালে ১৬ বছর বয়সি ইভানকা প্যারিসে বিখ্যাত ডিজাইনার টিয়েরি মুগলারের একটি ফ্যাশন শো-তে অংশ নিয়েছিলেন৷ মাত্র ১৫ বছর বয়সে ইভানকা মুগলারের হয়ে মডেলিং শুরু করেন৷ এছাড়া ভ্যার্সাচে এবং পাকো রাবানে-র হয়েও মডেলিং করেছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আদর্শ মডেলের খোঁজে
১৯৯৭ সালে নিউ ইয়র্কের ব্রিজহ্যাম্পটনে একটি পোলো ক্লাবে কিশোরী ইভানকা তাঁর ধনী বাবার দিকে তাকিয়ে আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ipol Grant
মাল্টি-মিলিয়ন ব্যবসায়ী নারী
২০১২ সালে নিউ ইয়র্কে ‘ইভানকা ট্রাম্প কালেকশন রানওয়ে’-র উদ্বোধনের দিন কথা বলছেন ট্রাম্প কন্যা৷ এই কোম্পানিতে ডায়পার ব্যাগ থেকে শিশুদের জুতা, জামা, অলংকার সব পাওয়া যায়৷
ছবি: picture alliance/abaca/D. Van Tine
অপরাধে অংশীদার
২০১২ সালে ইস্তানবুলে ট্রাম্প টাওয়ার মল উদ্বোধনের সময় তোলা ছবিতে ইভানকা আর ডোনাল্ড হাসছেন৷ ২০০৫ সালে পরিবার ব্যবসায় যুক্ত হন ইভানকা৷ দুই ভাই ডোনাল্ড জুনিয়র এবং এরিক-এর সঙ্গে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন৷ সে সময়ে ইভানকা ঘোষণা দেন, বাবা ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিলে এই অর্গানাইজেশন থেকে ছুটি নেবেন তিনি৷
ছবি: picture alliance/dpa/T. Bozoglu
পারিবারিক জীবন
ছবিটি ইভানকার স্বামী জ্যারেড কুশনার এবং তাঁদের সন্তানদের৷ ২০১৭ সালে ওয়েস্ট পাম বিচে এয়ারফোর্স ওয়ানে করে পৌঁছান ইভানকা পরিবার৷ ইভানকা, কুশনারকে বিয়ে করেন ২০০৯ সালে৷ তাঁদের তিনটি সন্তান৷
ছবি: picture alliance/AP Images/W. Lee
ট্রাম্পের প্রচারণায় প্রধান নেতৃত্ব
২০১৬ সালে সাউথ ক্যারোলাইনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় বাবার পক্ষে সমর্থদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন ইভানকা ট্রাম্প৷ ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণায় তাঁর মুখ্য ভূমিকা ছিল এবং নারী ভোটারদের টানতে তাঁর প্রচারণা সাহায্য করেছিল বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/A. Sanz
হোয়াইট হাউজের পথে
২০১৭ সালের মার্চে হোয়াইট হাউজের কেবিনেট কক্ষে ছবিটি তোলা, যাতে দেখা যাচ্ছে ইভানকা জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে ফিসফিস করে কথা বলছেন৷ গত সপ্তাহে যখন ঘোষণা করা হয় ইভানকা তাঁর বাবার উপদেষ্টা হতে যাচ্ছেন৷ নির্দিষ্ট কোনো পদ না থাকলেও, হোয়াইট হাউজে তাঁর একটি অফিস থাকবে৷ এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা মুখে পড়েন তিনি৷
হোয়াইট হাউজে তাণর অনানুষ্ঠানিক ভূমিকা নিয়ে নীতি নির্ধারক ও বিশেষজ্ঞরা যখন সমালোচনায় মুখর, তখন ২৯ মার্চ ইভানকা জানান যে, তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতে চলেছেন৷