ইভিএম নাকি ব্যালটে ভোট হবে ভারতে?
৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮![Indien Ansturm auf Bank Umtausch von Rupien Scheinen](https://static.dw.com/image/36368281_800.webp)
ভারতের সাধারণ নির্বাচন ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন'-এ হবে, নাকি সাবেক ব্যালট পেপারে– এই প্রশ্নে রাজনীতি সরগরম৷ তবে কেন্দ্রীয় সরকার, শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি এবং স্বতন্ত্র সংস্থা জাতীয় নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ভোট গ্রহণের দিকেই এগোচ্ছে৷ তা সত্ত্বেও কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, সিপিআই, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, ডিএমকে, টিডিপি, আম আদমি পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, ন্যাশনাল কনফারেন্সসহ প্রায় সবকটি বিরোধী দল ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালটে ভোট করানোর দাবি তুলেছে৷ এমনকি বিজেপির দীর্ঘদিনের সঙ্গী, তথা এনডিএ শরিক মহারাষ্ট্রের শিবসেনাও ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালটে ভোট করানোর জন্য গলা চড়িয়েছে৷বরং বিরোধীদের পেছনে ফেলে শিবসেনাপ্রধান উদ্ধভ ঠাকরে এ-ও বলেছেন যে, ইভিএমে ভোট করানো হলে বিরোধীদের উচিত সেই ভোট বয়কট করা৷ সম্প্রতি রাজধানী দিল্লিতে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত এক সর্বদল বৈঠকে আরো একবার এই দাবি জানিয়েছে বিরোধী শিবির৷ ওই বৈঠকে ৭টি জাতীয় দল ও ৫১টি রাজ্যস্তরের দলের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিলেন৷ বৈঠকের পর ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ওমপ্রকাশ রাওয়াত সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইভিএম নিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে৷ তবে কমিশন এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি৷''
কিন্তু কংগ্রেস আমলেই তো ইভিএমে ভোটগ্রহণ পদ্ধতি শুরু হয়েছে৷ তাহলে এখন কেন এমন দাবি? আসলে এর পেছনে রয়েছে কিছু সন্দেহ৷ কিছু সংশয়৷ কিছু অবিশ্বাস৷ বিরোধীরা মনে করছে, ইভিএমে ভোট হলে যেভাবেই হোক জয় ছিনিয়ে নেবে শাসক দল বিজেপি৷ যুক্তি-পাল্টা যুক্তি সামনে আসছে৷ তবে আজ অবধি ইভিএমে নির্দিষ্টভাবে কারচুপির কোনো সঠিক তথ্য-প্রমাণ মেলেনি৷ এর আগে নির্বাচন কমিশন সর্বসমক্ষে ইভিএমে কারচুপি করে দেখানোর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলিকে৷ কিছু দল তাতে অংশ নিলেও কয়েকটি দল অংশ নেয়নি৷
প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের বক্তব্য, ইদানিং বহু জায়গায় ভোটগ্রহণ চলাকালীন ইভিএম খারাপ হওয়ার খবর পাওয়া যায়৷ তারপর ওইসব বুথের ফলাফলে দেখা গেছে শাসক দল জয়ী হয়েছে৷ অভিযোগ উঠেছে, যে-কোনো প্রতীকের বোতাম টিপলেও বিজেপি প্রার্থীর পক্ষে ভোট পড়ে৷ গত কয়েক বছরে উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র-সহ বিজেপি-শাসিত বহু রাজ্যে ইভিএম কারচুপির ঘটনা নজরে এসেছে৷
তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘বিশ্বের বহু উন্নত দেশ ইভিএম ছেড়ে ব্যালটে ফিরে এসেছে৷ কারণ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইভিএমে কারচুপি করার সম্ভাবনা থেকেই যায়৷ তাছাড়া সরকার বা কমিশন যদি আধুনিকতার দোহাই দেয়, তাহলে আরো আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে অনলাইনে ভোটগ্রহণ পদ্ধতি চালু করার কথা ভাবা হোক৷'' অভিজ্ঞ এই রাজনীতিকের অভিযোগ, উত্তর প্রদেশ ও গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জয় শুধু রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেই নয়, সাধারণ মানুষের মনেও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে৷ জনমানসে চরম সরকার-বিরোধিতা সত্ত্বেও কীভাবে বিপুল ভোটে জয়ী হচ্ছে বিজেপি? তারপর কয়েকটি রাজ্যের লোকসভা উপ-নির্বাচনের দিকে তাকালে ছবিটা আরো স্পষ্ট হয়৷ কৈরাণা কেন্দ্রের নির্বাচনে এক নির্দল প্রার্থী লড়েছিলেন৷ ফল ঘোষণার পর দেখা গেছে, তিনি তাঁর নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ভোটটুকুও পাননি!''
বিরোধীরা যা-ই বলুক, শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি অবশ্য নির্বাচনের পক্ষে সায় দিয়েছে৷
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সম্পাদক সায়ন্তন বসুর সঙ্গেও কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বললেন,‘‘বিরোধীরা পরাজয়ের আগেই হেরে বসে আছে৷ তাই বোধহয় ইভিএম-কে কাঠগড়ায় তুলতে চাইছে৷'' তাঁর যুক্তি, ২০০৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার এই ইভিএমে ভোট করেই ক্ষমতায় এসেছিল৷ পশ্চিমবঙ্গে ২০১১ ও ২০১৬ সালে এই ইভিএম-ভোটেই জিতেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জী৷ দিল্লিতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় এসেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ বিহারে পরাজয় হয়েছিল বিজেপির৷ কিন্তু ২০১৯ যত এগিয়ে আসছে, ততই পরাজয়ের আশঙ্কায় ইভিএমের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে বিরোধী দলগুলো৷
এদিকে, এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ জোরদার সওয়াল শুরু করেছেন একসঙ্গে সমস্ত নির্বাচন করানোর৷ যার অর্থ হলো, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভারতে সবক'টি প্রদেশে পৃথক বিধানসভা নির্বাচন হয়৷ কেন্দ্রীয়ভাবে লোকসভা নির্বাচন হয়৷ মোদী-শাহরা চাইছেন, এই সব রাজ্যের বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচন হোক একসঙ্গেই৷ নির্বাচন কমিশন বলেছে, এমনটা সম্ভব নয়৷ নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ভোট করানোর পক্ষে৷ তারা চাইছে, ইভিএমকে গ্রহনযোগ্য করে তুলে রাজনৈতিক দলগুলির বিশ্বাস অর্জন করতে৷ অতীতে ইভিএম নিয়ে বিতর্কের পর ভিভিপ্যাট আমদানি করেছে তারা৷ বর্তমান নিয়মে ইভিএমের সঙ্গে যু্ক্ত রাখা হয় ভিভিপ্যাট৷ প্রতিটি ভোটার ভোটদানের পর এই মেশিন থেকে একটি ছোট্ট কাগজ বের হয়৷ ফল ঘোষণার আগে মোট ভোটের সঙ্গে এই কাগজের হিসেব মিলিয়ে দেখা হয়৷ ফলে সহজেই অনুমেয়, ভারতে ইভিএমেই ভোট হবে৷ কিন্তু ইভিএম বিতর্ক চলছে, চলবে৷