গ্রাহকদের পণ্য দিতে না পেরে পাওনাদারদের চাপের মধ্যে ছিলেন ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল৷ আগামী রোববার তাদের কার্যালয় আবার খোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
গত জুলাইয়ে নতুন ই কমার্স নীতিমালা প্রকাশের এক সপ্তাহ আগেই গত ২৭ জুন ঢাকার ধানমণ্ডির ইভ্যালির কার্যালয় বন্ধ করে কার্যক্রম সীমিত করে প্রতিষ্ঠানটি৷
মোহাম্মদ রাসেল বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে আগামী রোববার তাদের কার্যালয় চালু করার ঘোষণা দেন৷ তবে পাওনাদারদের এক সঙ্গে কার্যালয়ে এসে বিশৃঙ্খলা না করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি৷
রাসেল বলেন, ‘‘অনেকে বলছেন ক্রেতারা দলবেঁধে আসবেন, কিছু একটা হবে৷ অনেকে ওই দিন লাইভ করতে যাচ্ছেন৷ এভাবে জোর করে যেহেতু বেনিফিট আসছে না, আপনারা চেষ্টা করুন, অ্যাপয়েন্টমেন্টের বাইরে না আসার৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘রোববার থেকে অন্তত ১৫টা দিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া আসবেন না, গ্রুপ করে আইসেন না৷ কারণ আপনারা আসবেন পজিটিভ সেন্সে, এইটাকে ক্যাপিটালাইজ করে একটা অ্যাক্সিডেন্ট হবে৷ আপনাদের ছোট্ট কিছু ভুলের জন্য সবগুলো ব্যাপার এলোমেলো হয়ে যাবে৷ ব্যাড ইনটেনশনের লোক যখন চান্স নিতে আসবে না, তখন আপনারা আইসেন৷ মিডিয়া ইজ ফ্যান্টাসটিক৷ কিন্তু মিডিয়াকর্মী সবাই একরকম নয়৷ কেউ কেউ হয়ত শুধু নেগেটিভ জিনিসগুলো হাইলাইট করবেন৷’’
এতদিন অফিস না খোলার কারণ জানাতে গিয়ে রাসেল বলেন, ‘‘আমরাও বুঝতে পারছিলাম না এই লকডাউনটা আবার দেবে কিনা৷’’
ইভ্যালি অগ্রিম টাকা নিয়েও মাসের পর মাস গ্রাহকের পণ্য বুঝিয়ে না দেওয়া এবং বাজারমূল্যের চেয়ে অর্ধেক বা তার চেয়েও কম দামে পণ্য বিক্রির ঘোষণা দিয়ে বেচাকেনার স্বাভাবিক ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারায় সমালোচিত হচ্ছিল৷
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্তে ইভ্যালির প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকার দায়ভার সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসার পর তুমুল আলোচনা শুরু হয় এবং তাদের ব্যবসা নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়৷ রাসেলের বিদেশ যাওয়ায়ও নিষেধাজ্ঞা আসে৷ রাসেল বৃহস্পতিবার লাইভে এসে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন৷
‘পালাবোনা’
রাসেল বলেন, ‘‘অনেকে সন্দেহ পোষণ করেন যে আমরা দেশ ছাড়ি কিনা ৷ আমার মাথায় এটা কখনোই আসেনি ৷ বাংলাদেশ ব্যাংকও দেখেছে আমার কোনো অ্যাসেট নেই, তাহলে আমি কী নিয়ে পালাবো?
অস্বাভাবিক মূল্যছাড় দিতে গিয়ে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকার দায়ভার সৃষ্টি হলেও ব্যাপারটিকে এখনো অস্বাভাবিকভাবে দেখেন না বলে দাবি করে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা রাসেল৷ তিনি বলেন, ‘‘কোনো বিনিয়োগই নিজস্ব বিনিয়োগ থাকে না৷ কেউ ব্যাংক থেকে নেন, কেউ নেন অন্যদের থেকে৷''
কোম্পানিগুলো সাপ্লায়ারের, ডিলার এবং গ্রামীণফোনেও তাদের আগাম টাকা জমা দেওয়া আছে বলে জানান তিনি৷ এখনো মাসে ১০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হচ্ছে দাবি করে রাসেল বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের দুটি পথ খোলা আছে৷ হয়ত তহবিল সংগ্রহ করতে হবে, নয়ত বিক্রিটা নিয়মিত রাখতে হবে৷ যমুনা গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়, বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে সময় লাগবে৷’’
বাংলাদেশ ও বিশ্বের কয়েকটি জনপ্রিয় শপিং সাইট
সাধারণ দোকানে কেনাকাটার উপর অনেকটাই ভাগ বসিয়েছে অনলাইন শপিং সাইটগুলো৷ অনলাইনের সঙ্গে সাধারণ দোকানের যুদ্ধ কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা সময়ই বলে দেবে৷ বিশ্বের ও বাংলাদেশের কয়েকটি জনপ্রিয় অনলাইন শপিং সাইটের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
অ্যামাজন ডট কম
www.amazon.com এমন একটি ওয়েবসাইট প্রত্যেকটি দেশের জন্যই যাদের আলাদা ব্যবস্থাপনা আছে৷ ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়া – ভোক্তাদের জন্য সবকিছু আছে অ্যামাজনে৷ এমনকি ভারতের মতো বিশাল দেশসহ অন্য দেশের স্থানীয় অনলাইন শপিং পোর্টালগুলোর সঙ্গে রীতিমত প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে অ্যামাজন৷ এখন পর্যন্ত অ্যামাজন কেনাকাটার ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে৷
ছবি: amazon.com
ইবে ডট কম
www.ebay.com-এর ভাবনাটা অসাধারণ৷ এই ওয়েবসাইটের সাহায্যে যেকোন মানুষ তার জিনিস ইচ্ছেমত বেচতে পারে এবং একই সময় নতুন বিক্রেতারা নতুন নতুন জিনিসও বিক্রি করতে পারে৷ তাই দেখা যায় এই সাইটে অদ্ভুতসব জিনিস নিয়ে এলে সেগুলোও অনলাইনে বিক্রি হয়ে যায়৷ ইবে-তে গেলেই দেখতে পাবেন আপনার যা চাই সবই আছে সেখানে৷ বিশ্বের কোথাও যে জিনিসটি খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, ইবে-তে সেটা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি৷
ছবি: DW
ওয়ালমার্ট ডট কম
না বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই! ওয়ালমার্টেরও অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট আছে www.walmart.com৷ অনলাইনে বিশাল পণ্যের সমাহার আছে তাদের৷ এমনকি দোকানে যেসব জিনিস পাওয়া যায় না, অনলাইনে সেসব জিনিস পাবেন আপনি৷ সবচেয়ে সুবিধা হলো দোকানে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই৷ ঘরে বসে একটা ক্লিক করলেই দরজায় পৌঁছে যাচ্ছে ওয়ালমার্টের পণ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reynolds
আলীবাবা ডট কম
www.alibaba.com বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন শপিং পোর্টাল৷ এই পোর্টাল থেকে আপনি অনেকরকম পণ্য কিনতে পারবেন৷ কৃষি থেকে শুরু করে রাসায়নিক সবধরনের দ্রব্য পাওয়া যায় এখানে, যাই কিনুন ঠিক আপনার বাসায় পৌঁছে দেবে৷ কোন পণ্য অর্ডার করার পর তাদের পাঠানোর প্রক্রিয়া এবং দাম নেয়ার পদ্ধতি বেশ সন্তোষজনক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y.Ming
ফ্লিপকার্ট ডট কম
www.flipkart.com এটি একটি ভারতীয় অনলাইন শপিং এর ওয়েবসাইট, যেটি বিশ্বব্যাপী বাজার বিস্তার করেছে৷ এশিয়ার মানুষের কাছে এই সাইটটি ব্যাপক জনপ্রিয়৷ অ্যামাজনের পর কেনাকাটার দিক থেকে বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফ্লিপকার্ট৷ এই সাইটটি শুরু হয়েছিল অনলাইনে বই বিক্রির মধ্য দিয়ে, এখন বিশাল মহীরূহে পরিণত হয়েছে এটি৷
ছবি: flipkart.com
রকমারি ডট কম, বাংলাদেশ
অনলাইন এ বই কেনার কথা ভাবছেন? তাহলে www.rokomari.com-এ একবার আপনাকে প্রবেশ করতেই হবে৷ ২০১২ সালের ১৯শে জানুয়ারি এই সাইটটির যাত্রা শুরু হয়৷ এর মাধ্যমে অল্প খরচে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয় বই৷
বিক্রয় ডট কম, বাংলাদেশ
বাংলাদেশে কেনা-বেচার ক্ষেত্রে এই সাইটটি খুব জনপ্রিয়৷ বাড়ি, গাড়ি থেকে মোবাইল ফোন যা বিক্রি করতে বা কিনতে চান অতি সহজেই এই সাইটটির সাহায্যে তা করতে পারবেন৷ এমনকি চাকরির খোঁজও পাবেন এখানে৷ শুধু তাই নয় কোরবানির পশু ক্রয় উপলক্ষ্যে www.bikroy.com-এ একবার ঢুঁ মারতে পারেন৷ গত বছরও ক্রেতাদের ঘরে বসেই কোরবানির পশু পছন্দ করার সবচেয়ে বড় আয়োজন রেখেছিল বিক্রয়ডটকম৷
দারাজ ডট কম ডট বিডি
www.daraz.com.bd এটি জার্মানভিত্তিক কোম্পানির একটি শপিং সাইট৷ এখানে পোশাক থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্সসহ প্রায় ব্যবহারিক সব পণ্য পাওয়া যায়৷
আজকের ডিল ডট কম
www.ajkerdeal.com বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা অনলাইন শপিং পোর্টাল৷ বাংলাদেশভিত্তিক প্রথম বাংলা ই-কমার্স এবং বাংলাদেশি মালিকানায় বাংলাদেশি প্রথম ই-কমার্স সাইট৷ আজকের ডিল ডট কম বিডি জবস-এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান৷ এই সাইট থেকে আপনি প্রায় সবধরনের কেনাকাটা করতে পারবেন৷
প্রিয়শপ ডট কম
www.priyoshop.com ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে চালু হয়৷ অথ্যাধুনিক ট্রেন্ডের পোশাক থেকে শুরু করে গহনা, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি – সবকিছুই পাওয়া যায় এই সাইটে৷
সহজ ডট কম
www.shohoz.com বাংলাদেশের এই অনলাইন শপিং সাইটটি মূলত জনপ্রিয়তা পেয়েছে ঈদের সময় বাসের টিকেট বিক্রির জন্য৷ ঈদে বাস ও ট্রেনের টিকেট কেনার ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই এখন সহজ ডট কম-এর আশ্রয় নেন৷ এছাড়া বিভিন্ন কনসার্টসহ নানা ইভেন্টের টিকেট কেনার অন্যতম মাধ্যম এখন সহজ ডট কম৷
11 ছবি1 | 11
রাসেল গ্রাহকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘যতই প্রেসার দেন না কেন চেক দেওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই, আমরা পণ্যই দেবো৷ আপনারা যদি বলেন চেক না দিলে আর সময় দেবো না, তাহলে আর সময়ও চাইতে পারবো না৷ দিলে পরদিনই মন্ত্রণালয় থেকে বড় ধরনের অ্যাকশন আসবে৷’’
প্রায়োরিটি পয়েন্ট যাদের বেশি তাদের ডেলিভারি এখন দ্রুত হচ্ছে, তাই প্রায়োরিটি পয়েন্টে কেনাকাটা বাড়ানোর অনুরোধ জানান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল৷