‘ইভ টিজিং' শব্দের ‘ইভ' অর্থ নারী, টিজিং মানে উত্যক্ত বা বিরক্ত করা৷ সহজভাষায় বলা যায়, ইভ টিজিং মানে, নারীদের উত্যক্ত করা৷ তবে বিষয়টা এত সহজ না৷
বিজ্ঞাপন
ইভ টিজিংয়ের সত্যিকার অর্থ হচ্ছে, ‘‘কেউ নারী বলেই তাকে উত্যক্ত করা৷'' বাক্যটা সামান্য বড় করার ফলে পুরো বিষয়টিতে লুকিয়ে থাকা সবচেয়ে জরুরি কথাটা বের হয়ে আসে৷ জানা যায়, নারীদের কেন উত্যক্ত করা হয় এবং কেন ঘটনাটিকে একটি ‘টার্ম' দিয়ে প্রকাশ করতে হয়৷
ইভ টিজিং বলতে যেমন একটা চিত্র চোখে আসে, কিছু মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে আর বখাটে কিছু ছেলে পথে দাঁড়িয়ে দু'টো শব্দ উড়িয়ে দিচ্ছে বা শিস দিচ্ছে৷ বাস্তবে ইভ টিজিং বিষয়টা এখানেই সীমাবদ্ধ না৷ এর প্রয়োগ এতই ব্যাপক যে, ‘ইভ টিজিং' শব্দটা পুরো ঘটনা ব্যাখ্যা করার সাপেক্ষে অনেক হালকা একটা শব্দ৷
আপনার অফিসে একজন নারীকে হেয় করে কিছু বললেন – সেটা ইভ টিজিং৷ পুরুষ শিক্ষক নারী শিক্ষার্থীকে তুচ্ছজ্ঞান করলেন বা কোনো দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখলেন – সেটাও ইভ টিজিং৷ বাসে মহিলা সিট খালি নেই বলে একজন নারীকে কন্ডাক্টর বাসেই উঠতে দিলেন না – সেটাও ইভ টিজিং৷ এমনকি পরিবারে বাবা ঠাট্টারছলে মাকে বললেন, ‘‘মেয়েলোকের বুদ্ধি কম'' – এটাও ইভটিজিং৷ প্রতিদিনের এ রকম ছোট ছোট অসংখ্য ঘটনা একটি সামাজিক ধারণাতে এনে সমাজকে দাঁড় করায়, তা হচ্ছে — একজন মানুষ নারী বলেই তার শক্তি কম, অপরদিকে একজন শুধু পুরুষ বলেই তার শক্তি বেশি৷ আর সেই শক্তিবলে পুরুষ চাইলেই নারীকে হেয় করতে পারে, তাকে তুচ্ছ করতে পারে, তাকে নিয়ে উপহাস করতে পারে এবং তাকে অবহেলাও করতে পারে – এরই কেতাবি নাম, ‘ইভ টিজিং'৷
বাংলাদেশে যৌন শিক্ষা
পাঠ্যপুস্তকে যৌন স্বাস্থ্যের বিষয়টি ইতিমধ্যেই অন্তর্ভুক্ত করেছে সরকার৷ কিন্তু যৌন শিক্ষা পড়ানো নিয়ে সমস্যা হচ্ছে৷ শিক্ষকরা এতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেননি, ছাত্র-ছাত্রীরাও বিষয়টিকে সহজভাবে নিচ্ছে না৷ কী বলছে আজকের তরুণ সমাজ?
ছবি: DW/K. Andrade
ফারজানা খানম
অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী ফারজানা৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা হচ্ছে যা থেকে যৌনতা সম্পর্কে জানা যায়৷ এ শিক্ষা প্রত্যেকের জীবনে প্রয়োজন৷ বাচ্চাদের পরিবার এবং শিক্ষকরা এটা শিখাতে পারেন৷ এছাড়া যৌনতা সম্পর্কে তাদের জানার উৎস হতে পারে পরিবার অথবা বন্ধু-বান্ধব৷ তাছাড়া ইন্টারনেট থেকেও যৌনতা সম্পর্কে জানা যায়, জানান ফারজানা৷
ছবি: DW
নাফিসা হক অর্পা
অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্রী নাফিসা হক অর্পা৷ নারী-পুরুষের শারীরিক মিলন সম্পর্কে জ্ঞানকেই যৌন শিক্ষা৷ নাফিসার কথায়, ‘‘আমাদের সময়ে ইন্টারনেট এত সহজলভ্য ছিল না৷ তখন বন্ধু, সহপাঠী, আত্মীয়স্বজনরাই ছিলেন মূল ভরসা৷’’ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষাটাকে ট্যাবু হিসেবে না দেখে একে শিক্ষার অংশ করা উচিত৷ এতে করে যৌন বিষয়ক অপরাধ কমবে৷
ছবি: DW
জান্নাতুল ফেরদৌস কনক
নাফিসার মতোই মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করছেন জান্নাতুল ফেরদৌস কনক, তবে তিনি পড়ছেন পঞ্চম সেমিস্টারে৷ তাঁর মতে, যৌনতা হচ্ছে বয়সের পরিবর্তনে শারীরিক এক ধরণের চাহিদা৷ আগে এ নিয়ে সীমাবধ্যতা থাকলেও, এখন ছেলে-ছেলে কিংবা মেয়ে-মেয়ের যৌন সম্পর্কও বেশ জনপ্রিয়৷ ‘‘বন্ধুদের আড্ডায় এটাই সবচেয়ে আলোচিত বিষয়’’, জানান কনক৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষার দরকার না থাকলেও এ বিষয়ে জ্ঞান থাকা জরুরি৷
ছবি: DW
ইমরান খান
অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ইমরান খান৷ তিনি যৌন শিক্ষা বলতে যৌনতা সম্পর্কে সব ধরণের ধারণাকে বোঝেন৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা সবার জন্য একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয়৷ আর এ কথাটা শিশুদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য৷ তবে ইমরানের কথায়, ‘‘সঠিক যৌন শিক্ষা স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, পরিবার থেকেই গড়ে উঠতে পারে৷’’
ছবি: DW
কেডিএস সাকিব
বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নাফিসা আর কনকের মতো মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়ছেন সাকিব, পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা হলো যৌন মিলনের উপর জ্ঞান৷ তবে শিক্ষকদের কাছ থেকে নয়, বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই বন্ধুদের কাছ থেকে এ বিষয়ে জেনেছেন তিনি৷ সাকিবের মতে, পর্যাপ্ত যৌন শিক্ষা অবশ্যই দরকার৷ যৌনতা সম্পর্কে তাঁর জানার মূল উৎস বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্লগ এবং এ সম্বন্ধে লিখা বিভিন্ন বই৷
ছবি: DW
মাহবুব টিপু
নাফিসা, কনক, সাকিব আর ফারজানার মতোই মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করছেন মাহবুব টিপু৷ অবশ্য তিনি এখনও দ্বিতীয় সেমিস্টারে৷ যৌন শিক্ষা তাঁর কাছে যৌনতা সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষাটা বয়সের সঙ্গে সঙ্গেই চলে আসে৷ এ বিষয়ে জানার সবচেয়ে বড় জায়গা বন্ধু-বান্ধব৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষার মৌলিক বিষয়গুলো সবারই কম-বেশি জানা থাকে৷ তারপরও এ বিষয়ে শেখার সবচেয়ে বড় মাধ্যম বিভিন্ন ওয়েবসাইট৷
ছবি: DW
সামিয়া রহমান
সামিয়া রহমানও মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী৷ যৌন শিক্ষা বলতে তিনি বোঝেন নারী ও পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক বিষয়ে জ্ঞান৷ তাঁর কথায়, ‘‘যৌন শিক্ষা আমাদের দেশে নিষিদ্ধ একটি বিষয়ের মতো৷ তাই এ বিষয়ে আমি শিক্ষা পায়নি৷’’ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা খুবই জরুরি৷ এ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকায় অনেকেই ভুল পথে চলে যায়৷ তাই বাবা-মায়েরও এ বিষয়ে সন্তানদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলা উচিত৷
ছবি: DW
নাফিউল হক শাফিন
টিপু আর সামিয়ার মতো অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের মাস কমিউনিকেশন বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাফিউল৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা জীবনের জৈবিক চাহিদা সম্পর্কে জানা এবং যৌনতার সঠিক প্রয়োগ ও সতর্কতাকে বোঝায়৷ তিনি শিক্ষকদের কাছ থেকে এ বিষয়ে কিছু শেখেননি৷ তবে এই শিক্ষাটা খুবই জরুরি বলে মনে করেন তিনি৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষার জন্য বড় কেউ কিংবা সহপাঠীরাই বড় মাধ্যম৷
ছবি: DW
মালিহা রহমান
মালিহা রহমানও ঐ একই বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী৷ তাঁর মতে, যৌন শিক্ষা হলো শারীরিক সম্পর্কের হাতে কলমে শিক্ষা৷ অবশ্য তাঁর কথায়, যৌন শিক্ষা একটা স্বাভাবিক বিষয় যেটা মানুষ থেকে শুরু করে সব প্রাণীই প্রাকৃতিকভাবে জানে৷ তাঁর মতে, এ বিষয়ে আগে থেকে জানার কিছু নেই, নেই ভালো কোনো দিক৷ যখন এ বিষয়ে জানার প্রয়োজন হবে তখন এমনিতেই তা জানা যাবে৷
ছবি: DW
9 ছবি1 | 9
কোনোদিন মোটেই উত্যক্ত হননি এমন নারী পাওয়া বিরল৷ খুঁজলে এমন পুরুষ পাওয়া যেতে পারে, যারা কখনোই কোনো নারীকে ‘নারী বলেই উত্যক্ত করেনি৷ তবে কোনোদিন ইভ টিজিংয়ের শিকার হননি, এমনি নারী পাওয়া দুঃসাধ্য৷
ইভ টিজিংয়ের মূল কারণ, একটি শক্তির খেলা, যেখানে পুরুষেরা শক্তিশালী আর নারীরা দুর্বল৷ তবে নারীদের এই দুর্বল থাকা একটি সামাজিক প্রচেষ্টার ফল৷ ধরুন, একটি পরিবার সে পরিবারে একটা মেয়ে টিজিংয়ের শিকার হয়৷ মেয়েটি এই বিষয়টি বাড়িতে উত্থাপন করে৷ বাড়ি থেকে প্রথম প্রশ্ন করা হয়, তুই কী করিস? নিশ্চয়ই তুই কিছু করেছিস, অন্য কাউকে করল না, তোকেই কেন করল? এভাবে ঘটনা সেখানেই মিটে যায়৷
একই পরিবারের একটা ছেলে যখন শিস দিতে গিয়ে ধরা পড়ে, তখনও সবাই মিলে মেয়েটার পোশাক, চাল-চলন, দিনের কোন সময় বের হয় ইত্যাদি নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত হয়৷ ফলে ছেলেরা জানেই কাউকে টিজ করা হলে দোষ ভিকটিমের দিকেই যাবে৷ সে একটি সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে থেকে নিরাপদে টিজিং চালিয়ে যায়৷
টিজিং নিয়ে বাংলাদেশের আইনও খুব শক্তিশালী কিছু না৷ পেনাল কোড ৫০৯-এ শুধু বলা আছে যে, কোনো নারীর শালীনতা ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্য, কোনো শব্দ উচ্চারণ, আওয়াজ বা অঙ্গভঙ্গি তৈরি বা কোনো কিছু প্রদর্শন করে, এটা জেনে যে উক্ত নারী সেই শব্দ, আওয়াজ শুনবেন বা উক্ত নারী সেই অঙ্গভঙ্গি দেখবেন বা তা উক্ত নারীর গোপনীয়তায় আঘাত হানবে, সেক্ষেত্রে তিনি সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন৷
এ ধারার শাস্তি পর্যন্ত যেতে হলে একজন নারীকে অনেক বাধা পার করতে হবে, সমাজ উলটো তার উপর দায় আনবে, তাকে লজ্জা দেবে, অনেকক্ষেত্রেই এইসব আইনের মারপ্যাঁচে লেগে থাকার মতো শক্তি খরচ করার আগে তাকে অনেক অনেক শক্তি খরচ করতে হবে সামাজিক শৃঙ্খল ছিঁড়তে৷ এর পরেও যদি ধরে নেওয়া হয়, অপরাধীর শাস্তি হবে, তাহলে কে বলতে পারবে, এ সমাজে পরম-শক্তিশালী পুরুষ এক বছর কারাদণ্ড ভোগ করে এসে এই নারীর জীবন ধ্বংস করে দেবে না? আসলে এত দূর যেতে হয় না৷ একজন নারী যখন রুখে দাঁড়ায়, তখন পুরুষের পৌরুষ বাঁচিয়ে রাখতে তার পাশে পুরো সমাজ দাঁড়িয়ে যায়৷ ফলাফল – এ দেশে আট বছরের ধর্ষিত শিশুকন্যাকে নিয়ে বাবা বিচারের আশা বাদ দিয়ে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দেয়৷
ইভ টিজিংয়ের আরেকটি শক্তিশালী প্রভাবক গণমাধ্যম৷ প্রচলিত গণমাধ্যমে নানান উপায়ে ইভ টিজিংকে মহিমান্বিত করা হয়৷ কখনও সেটা শুধুই ছেলেদের মজা করা, আবার কখনও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ৷ কখনও ছেলেদের অধিকার তাদের হিসেব মতো নারীদের সীমায় বেঁধে দেওয়া৷
এগুলোর বাস্তব প্রয়োগ পুরো বিপরীত৷ যখন একটি মেয়ে ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়, সে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, আতঙ্কিত বোধ করে৷ পরিবার নিরাপত্তার খাতিরে মেয়েটির লেখাপড়া বা বাইরে বের হওয়ায় বাধা দেয়, তাঁকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, কিছু দেশে অনার কিলিং পর্যন্ত হয় ইভ টিজিংয়ের জন্য৷
এখন প্রশ্ন হচ্ছে,ইভ টিজিং কীভাবে রুখে দেওয়া যায়? চেষ্টা করলে এটাও রুখে দেওয়া সম্ভব৷ তবে সম্ভব কাজটা খুব অসম্ভব হয়ে যায়, কারণ, নারী আক্রান্ত হলে, সবচেয়ে বেশি হেরে যায় জন সমর্থন তৈরিতে৷ দেখবেন, যখন একজন নারী কোনোভাবে হেয় হয়, আরেকজন নারী এসে তার পাশে দাঁড়ায় না৷ যে নিরাপদে আছে, সে নিজের গা বাঁচিয়ে সরে যায়৷ এমনকি যে আক্রান্ত হয়, সে-ও সহজে রুখে দাঁড়ায় না, কারণ, বাল্যকাল থেকে সে শিখে এসেছে ‘ভালো মেয়েরা গলার আওয়াজ তোলে না'৷ এমন বিষয়গুলো পুরুষদের সাথে হয় না৷ ছেলেদের দলে একটা ছেলে সামান্য আক্রান্ত হলেও দলের সব ছেলে বের হয়ে আসে৷ মেয়েদের সাধারণত কোনো দলই থাকে না৷
যখন একজন নারীকে হেয় করা হয়, পাশের নারীটি যদি গলা তোলেন, তারপরের জন....তারপরের জন....এভাবে দু'জন, পাঁচজন, দশজন? একজনকে দাবিয়ে রাখা যত সহজ, দশজনকে দাবানো এত সহজ নয়৷ যখন দশজন নারী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে, ইভ টিজিং অনেক কমে যাবে৷
পরিবার থেকে মেয়েদের যেভাবে শিখানো হয়, তাকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, ছেলেদেরও কি এভাবে শিখানো যায় না? অন্যকে আক্রমণ করা যাবে না? এটা অন্যায়? অবশ্যই যায়, তবে বিচিত্র কারণে পরিবারগুলো এখানে নীরব ভূমিকা পালন করে, যা এই দুষ্ট চক্রকে শুধু শক্তিশালীই করে যায়৷
আইনগুলোও শক্তিশালী করা যায়, এগুলো প্রয়োগে আরও কঠোর হওয়া যায়৷ দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায়৷ যেসব ছেলে এ কাজগুলো করছে, তাদের আলাদা করে কাউন্সেলিং করা যায়৷ ২০০৯ সালের নারীর প্রতি নিপীড়ন বিষয়ে হাইকোর্টের একটি পূর্ণাঙ্গ রায় রয়েছে, সেটির ব্যবহারও খুব সীমিত৷ এতে বলা ছিল, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও চাকুরিক্ষেত্রে নারীদের হয়রানির অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য আলাদা সেল খোলা হবে৷ এর প্রয়োগও প্রায় শূন্যের কোঠায়৷
পাঠ্যপুস্তকে, গণমাধ্যমে, মসজিদে, খেলার মাঠে, ঘরে বাবা-মায়েদের মধ্যে এ ধরনের আলোচনা শুরু করা যেতে পারে, যা ছোটবেলায় ছেলেদের বুঝতে শিখাবে, নারীদের উত্যক্ত করা অন্যায়৷ নারী পুরুষের চেয়ে ছোট নয়, বরং পুরুষেরই সম্পূরক অংশ৷ না শিখালে ছেলেগুলোই বা শিখবে কোথা থেকে?
মানসিকতা বদলানো খুব সহজ কাজ নয়৷ তবে, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি অনেক উন্নত করা সম্ভব৷ প্রয়োজন শুধু বিশ্বাস যে, বদল আনতে হবে এবং আমাদেরই আনতে হবে৷
বন্ধু, আপনি কি মাকসুদা আজিজের সঙ্গে একমত? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷
ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?
ভারতে প্রতিদিন অন্তত ৯২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ যখনই এ ধরনের কোন মামলা আদালতে উঠেছে তখন প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, ধর্ষণের শিকার ঐ নারী কি ধরনের পোশাক পরেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগের সাথে পোশাক
যুগে যুগে পোশাকের ধরনে পরিবর্তন এসেছে৷ আদিমকালে ছিল পশুর চামড়া, গাছের ছাল আর এখন রয়েছে নানা ধরনের পোশাক৷ বর্তমানে দেশ, সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা, কাজের ধরন, অনুষ্ঠান, পছন্দ ও ফ্যাশানের ভিত্তিতে বহু ধরনের পোশাক পরে থাকেন নারীরা৷
ছবি: AP
শরীর প্রদর্শন মানেই কি ধর্ষককে আমন্ত্রণ?
ভারতে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলায় দেখা গেছে, ধর্ষিতা সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পরেছিলেন৷ অর্থাৎ যাকে বলা হয় ভারতীয় নারীর আদর্শ পোশাক, সে ধরনের পোশাকই তাঁরা পরেছিলেন৷ অর্থাৎ এ জরিপ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, শরীর প্রদর্শন না করে বা তথাকথিত ‘আধুনিক’ পোশাক না পরেও শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷
ছবি: Reuters
আইনের ভয় নেই
২০১৩ সালে এক জরিপে দেখা গেছে যে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন পুরুষ জীবনে অন্তত একবার কোনো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ এর মধ্যে বেশিরভাগ পুরুষকেই কোনো আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷
ছবি: Fotolia/DW
ধর্ষণ যখন বিনোদনের মাধ্যম
ভারতের উত্তর প্রদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ এর কারণ হিসেবে পুলিশ নারীদের উপর পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, মেয়েদের মোবাইল ব্যবহার ও ছোট পোশাক পরিধানকে উল্লেখ করেছে৷ নারীদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ পুলিশ বলেছে, সেখানকার পুরুষরা তাদের বিনোদনের অভাব পূরণ করছে ধর্ষণের মাধ্যমে৷
ছবি: dapd
নারীদের দাবিয়ে রাখার হাতিয়ার
রাস্তা, অফিস বা যে কোনো পাবলিক প্লেসে পুরুষের যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় নারীদের দাবিয়ে রাখতে পুরুষরা ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে৷
ছবি: UNI
পরিচিতদের দ্বারাই বেশি ধর্ষণ
২০১৩ সালে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, সে বছর ১০০ জন ধর্ষণের শিকার নারীর মধ্যে ৯৮ জন এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন, যারা তাঁদের পরিচিত৷ আদালতে যেসব মামলা ওঠে, বা গণমাধ্যমে যেসব ঘটনা প্রকাশ পায় সেগুলো বেশিরভাগই বাইরের লোকের হাতে৷ ফলে পরিচিত ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণের ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে যায়৷
ছবি: Reuters/Ahmad Masood
যৌন নিগ্রহ সর্বত্র
ভারতে জন্মের আগে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনি হলেও, খুব সাধারণ ঘটনা৷ ফলে পৃথিবীর আলো দেখতে পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা এত কম যে, সমাজে নারী-পুরুষের অনুপাতে হেরফের হয়৷ এছাড়া বাল্যবিবাহ, কম বয়সে মা হওয়া, সন্তান জন্ম দিতে গিয়েও মৃত্যুবরণ করছেন নারীরা৷ পরিবারের ভেতরেও চলে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ৷ এরপরও কি আপনারা ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করবেন?