মার্কিন সেনেটে ইমপিচমেন্ট তদন্ত পুরোপুরি বাতিলের আহ্বান জানালেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ অন্যদিকে বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা নানাভাবে এই তদন্ত সফল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন সংসদের নিম্নকক্ষে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট তদন্তের পর উচ্চকক্ষে এবার সেই প্রক্রিয়ার তোড়জোড় চলছে৷ সেখানে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঝুঁকি পুরোপুরি দূর হচ্ছে না৷ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সব তথ্যপ্রমাণ সেনেটের হাতে তুলে দেবার পর তদন্ত কমিটির সদস্যরা সেগুলি যাচাই করে তারপর সাক্ষী তলবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান৷ কিন্তু অ্যামেরিকার ইতিহাসে তৃতীয় ইমপিচমেন্ট তদন্তকে ‘লোক দেখানো' করে তোলার বদলে আন্তরিক উদ্যোগের জন্য সেনেটের উপর চাপ বাড়ছে৷ পেলোসি সেনেটের সদস্যদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, নতুন সাক্ষীদের বয়ানের সুযোগ না দিলে তাঁদের মূল্য চোকাতে হবে৷ মঙ্গলবার সকালে তিনি ডেমোক্র্যাটিক দলের নেতাদের সঙ্গে মিলে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করতে চান৷
এমনই প্রেক্ষাপটে সেনেটের উদ্দেশ্যে ইমপিচমেন্ট তদন্ত পুরোপুরি বাতিল করার ডাক দিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প৷ রবিবার এক টুইট বার্তায় এমন চাঞ্চল্যকর প্রস্তাব রাখেন তিনি৷ ট্রাম্পের মতে, সেনেট আদৌ ইমপিচমেন্ট তদন্তের পথে এগোলে বিরোধী ডেমোক্র্যাট দলের ‘উইচ হান্ট' বা তাঁর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রক্রিয়াকে বিশ্বাসযোগ্যতা দেওয়া হবে৷ ট্রাম্প নিজেকে নির্দোষ হিসেবে দাবি করে বলেছেন, তিনি সারা জীবন এই অপবাদ বয়ে বেড়াতে চান না৷
উল্লেখ্য, প্রাক্তন জাতীয় উপদেষ্টা জন বোল্টন সাক্ষ্য দেবার আগ্রহ দেখানোর পর থেকে ট্রাম্প আরও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন৷ ইউক্রেন কেলেঙ্কারির বিষয়ে বোল্টনের সাক্ষ্য ট্রাম্পের জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ রাজনৈতিক স্বার্থে তিনি ইউক্রেনের উপর অন্যায় চাপ সৃষ্টি করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, এমন অভিযোগের পক্ষে আরও তথ্যপ্রমাণ প্রকাশ্যে এলে রিপাবলিকান দলের ঐক্যে ফাটল ধরতে পারে৷ তাদের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে নিম্ন কক্ষই সরাসরি বোল্টনকে তলব করার ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ ট্রাম্প বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে বোল্টনকে সাক্ষ্য দেওয়া থেকে বিরত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন৷
এখনো পর্যন্ত রিপাবলিকান দল ঐক্যবদ্ধভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন দেখিয়ে চলেছে৷ তবে সাক্ষী তলবের প্রশ্নে সামান্য হলেও কিছু মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে৷ ইরানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্টের আরও সামরিক পদক্ষেপের আগে কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রশ্নে কয়েকজন রিপাবলিকান সংসদ সদস্য বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রতি সমর্থনের আভাস দিচ্ছেন৷ ইমপিচমেন্ট তদন্তের ক্ষেত্রেও এমন ‘বিচ্যুতি' ট্রাম্পের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এমন ঘটনা ট্রাম্পের জন্য মোটেই সুখকর হতে পারে না বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন৷
এসবি/কেএম (এপি, এএফপি)
কে হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট
চলতি বছরই অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন৷ ডেমোক্রেটরা এরই মধ্যে নিজ দলের প্রার্থীতা পেতে লড়াই শুরু করেছেন৷
ছবি: Getty Images/S. Olson
মাইকেল বেনেট
৫৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ বর্তমানে কলোরাডোর সিনেটর৷ প্রগতিশীল ডেমোক্রেট হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে৷ ২০১৩ সালের অভিবাসী আইন প্রণয়নের পেছনে যারা ভূমিকা রেখেছেন তিনি তাদের একজন৷ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে গলা চড়ানোটাই নম্রভাষী এই রাজনীতিবিদের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Bennett
জো বাইডেন
জো বাইডেন বা জোসেফ আর বাইডেন জুনিয়র৷ ওবামার শাসনামলের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এ পর্যন্ত দুইবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন৷ শেষবারের মত এই দৌড়ে নামার সুযোগ পাচ্ছেন ৭৭ বছর বয়সী ডেমোক্রেট৷
ছবি: picture-alliance/newscom/K. Dietsch
মাইকেল ব্লুমবার্গ
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতায় এরইমধ্যে আলোচিত হয়েছেন নিউ ইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ৷ ট্রাম্পকে হারাতে ১০০ কোটি ডলার খরচে প্রস্তুত আছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন এই বিলিওনেয়ার৷ গত অক্টোবরে রিপাবলিকান দলত্যাগ করে দুই যুগ পর আবারও ডেমোক্রেট শিবিরে ভিড়েছেন তিনি৷ তার বয়স ৭৭ বছর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Locher
করি বুকার
ডেমোক্রেটদের মনোনয়নের দৌড়ে আছেন নিউ জার্সির সিনেটর ও নুয়ার্কের সাবেক মেয়র করি বুকারও৷ বৈষম্য দূরীকরণের ইস্যুকে তিনি সামনে নিয়ে এসেছেন৷ ভালবাসা, ঐক্য আর সাম্যের প্রচারও চালাচ্ছেন পঞ্চাশ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ৷
ছবি: Reuters/L. Millis
পিট বুডিজেজ
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে সর্বকনিষ্ঠ পিট বুডিজেজ৷ ইন্ডিয়ানার সাউথ বেন্ডের এই মেয়র সাবেক সামরিক কর্মকর্তা৷ বয়স মাত্র ৩৭ বছর৷ কিন্তু নির্বাচনের জন্য অর্থ সংগ্রহে এগিয়ে আছেন সবার চেয়ে৷ অর্থনীতি আর জলবায়ু তার প্রচারের মূল বিষয়৷
ছবি: Reuters/R. Mummey
জন ডেলানি
সাবেক কংগ্রেসম্যান ও ব্যবসায়ী জন ডেলানি৷ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য মরিয়া তিনি৷ ২০১৭ সাল থেকেই এজন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন৷ আইওয়ার প্রতিটি কাউন্টি এরইমধ্যে ভ্রমণ করেছেন তিনি৷ কিন্ত শেষ পর্যন্ত টিকিট পান কীনা সেটি দেখার বিষয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Bennett
তোলসি গ্যাবার্ড
২০১৬ সালের নির্বাচনে বার্নি স্যান্ডার্সকে সমর্থন দিয়েছিলেন তোলসি গ্যাবার্ড৷ ৩৮ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ এবার নিজেই প্রার্থী হতে চাইছেন৷ পূর্বের সমকামী বিরোধী অবস্থানের জন্য এরই মধ্যে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন৷ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের সঙ্গে বৈঠক করেও সমালোচিত হয়েছে৷ বিদেশে মার্কিন সামরিক আগ্রাসণের বিরুদ্ধে অবস্থান রয়েছে তার৷
ছবি: AFP
এমি ক্লোবুসার
৫৯ বছর বয়সী এমি ক্লোবুসার মিনেসোটার সিনেটর৷ মাদক, ঔষধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অবস্থান নিয়ে আলোচিত হয়েছেন তিনি৷ জো বাইডেনের পর উদারপন্থী ডেমোক্রেটদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তাই সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Souffle
ডেভাল পেট্রিক
মেসাচুসেটস এর সাবেক গভর্নরও লড়ছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হতে৷ অ্যামেরিকার ইতিহাসের দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ গভর্নর নির্বাচিত হন তিনি ২০০৬ সালে৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বন্ধু হিসেবে ডেভাল পেট্রিকের পরিচিতি রয়েছে৷
ছবি: AFP/Getty Images/S. Maturen
বার্নি স্যান্ডার্স
৭৮ বয়সী স্যান্ডার্স ২০১৬ সালেও লড়েছেন নির্বাচনের টিকেট পেতে৷ সেবার পিছিয়ে পড়েন হিলারির কাছে৷ তিনি নিজেকে ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেন৷ সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা, বিনা পয়সায় পড়াশোনার প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচনে লড়তে চান এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ৷
ছবি: AFP/F. J. Brown
টম স্টেয়ার
৬২ বছর বয়সী এই বিলিওনেয়ার জলবায়ু কর্মী হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন৷ ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের পক্ষে তিনি কয়েক কোটি ডলার ব্যয় করে টিভি বিজ্ঞাপন প্রচার করেছেন৷
ছবি: Getty Images/A. Wong
এলিজাবেথ ওয়ারেন
ম্যাসাচুসেটসের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন৷ হার্বার্ডের সাবেক অধ্যাপক তিনি৷ ৭০ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদও আছেন ডেমোক্রেটদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর দৌড়ে৷
ছবি: AFP/F. J. Brown
ডনাল্ড ট্রাম্প
রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যে আবারও নির্বাচনে লড়ছেন সেটি নিশ্চিত৷ তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে কে আসছেন ডেমোক্রেট শিবির থেকে সেটিই এখন দেখার বিষয়৷