তাকে যাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে না পারে, সেজন্য হাজার কয়েক সমর্থক ইমরান খানের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেয়।
বিজ্ঞাপন
গত শনিবার ইমরান খান একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি পুলিশ ও বিচারবিভাগের কড়া সমালোচনা করেন। এরপরই পুলিশ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযোগ আনে। পুলিশের অভিযোগ, ইমরান বিচারবিভাগ ও পুলিশকে হুমকি দিয়েছেন।
এরপরই ইমরানকে গ্রেপ্তার করার সম্ভাবনা প্রবল হয়। তাই সোমবার সকাল থেকে তার সমর্থকেরা বাড়ি ঘিরে রাখেন। বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেন।
তেহরিক-ই-ইনসাফ(পিটিআই) নেতারা বলেন, ভোর থেকেই সমর্থকরা ইমরানের বাড়িতে পৌঁছে গেছেন। সংবাদপত্র ডন জানাচ্ছে, পিটিআই নেতারা হুমকি দিয়ে বলেছেন, ইমরানকে গ্রেপ্তার করা মানে সব সীমা অতিক্রম করে যাওয়া।
বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। দলের তরফ থেকে নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়, প্রয়োজন হলেই যেন তারা মানুষকে জড়ো করে বিক্ষোভে নেমে পড়েন।
সাবেক মন্ত্রী আলি আমিন গান্দাপুর বলেন, ''ইমরানকে গ্রেপ্তার করলে আমরা ইসলামাবাদ নিজেদের হাতে নিয়ে নেব।''
ইমরানের আরেক সহকর্মী ও সাবেক মন্ত্রী মুরাদ সইদ স্থানীয় টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, পুলিশ ইমরানকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ জারি করেছে। পুলিশ অবশ্য এনিয়ে কোনো কথা বলেনি।
ইমরান খান: জানা-অজানা কিছু তথ্য
ইমরান খান পাকিস্তানের জাতীয় ক্রিকেট দলের একসময়ের অধিনায়ক আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁর সম্পর্কে কিছু জানা-অজানা তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Rousseau
পুরো নাম
ইমরান খান নামেই সবার কাছে পরিচিত তিনি৷ কিন্তু তাঁর পুরো নাম কি জানেন? আহমেদ খান নিয়াজী ইমরান হচ্ছে তাঁর পারিবারিক নাম৷
ছবি: Reuters/C. Firouz
খেলা শুরু
১৯৫২ সালের ৫ অক্টোবর লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন ইমরান খান৷ ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট ছিলেন ইমরান৷ ১৯৬৮ সালে ষোল বছর বয়সে লাহোরের হয়ে সারগোরার বিরুদ্ধে প্রথম ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/Dinodia Photo Library
জাতীয় দলে ডাক
ক্রিকেটের প্রতি ইমরান খানের আগ্রহ এবং লেগে থাকাই তাঁকে দ্রুত স্থান করে দেয় পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলে৷ ১৯৭০ সালে যখন দলে ডাক পান, তখনও তাঁর পড়াশোনাই শেষ হয়নি৷
ছবি: Getty Images
পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়
বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন বলা হয় তাঁকে৷ তাঁর অধিনায়কত্বে পাকিস্তান ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয় করে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Holland
রাজনীতি
১৯৯৬ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন ইমরান৷ গঠন করেন তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টি৷ গত নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও এবার অন্যদের পেছনে ফেলে তাঁর দল উঠে এসেছে শীর্ষে৷
ছবি: Aamir QureshiAFP/Getty Images
ব্যক্তিগত জীবন
শুধু খেলা বা রাজনীতি নয়, ব্যক্তি জীবনের নানা খবর দিয়েও বরাবরই সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ইমরান খান৷ ৬৫ বছর বয়সে তৃতীয়বার বিয়ে করেন ইমরান৷ ভবিষ্যতবক্তা বুসরা মানেকার আগে ব্রিটিশ সেলিব্রেটি জেমিমা গোল্ডস্মিথ এবং পাকিস্তানি টিভি অ্যাংকর রেহাম খান ইমরানের স্ত্রী ছিলেন৷
ছবি: PIT
অভিযোগের পাহাড়
নির্বাচনের ঠিক আগে আগে ইমরানের দ্বিতীয় স্ত্রী রেহাম খান তাঁর আত্মজীবনীতে ইমরানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ আনেন৷ রেহামের অভিযোগ, ইমরানের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ালেই কেবল নারীরা দলে বড় পদ পেতে পারেন৷
ছবি: Facebook/Imran Khan Official
পাকিস্তানের ট্রাম্প!
ইমরান খানকে অনেকেই পপুলিস্ট বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন৷ জঙ্গিবাদের প্রতি তাঁর উদার দৃষ্টিভঙ্গীরও সমালোচনা করেন অনেকে৷ ধারণা করা হয় তালেবানের মতো বেশকিছু উগ্রপন্থি দলের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেন ইমরান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B.K. Bangash
অ্যামেরিকার সমালোচক
সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অ্যামেরিকার ভূমিকা এবং তাতে পাকিস্তানের অংশগ্রহণের বড় সমালোচক ইমরান৷ পাকিস্তানের অনেক সমস্যার পেছনে দেশটির অ্যামেরিকাপ্রীতিই বড় কারণ বলে একাধিক বক্তব্যে বলেছেন তিনি৷
ছবি: YouTube/PTI Scotland
দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান
দুর্নীতির বিরুদ্ধে বরাবরই সরব ইমরান খান৷ বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ছিলেন তাঁর আক্রমণের মূল লক্ষ্য৷ লন্ডনে বাড়ি ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার সাজায় নওয়াজ শরীফ ও তাঁর মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ এখন পাকিস্তানের কারাগারে আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Mughal
তরুণদের মন জয়
পাকিস্তানের তরুণদের মন দ্রুতই জয় করে নিয়েছেন ইমরান খান৷ তাঁর ‘নতুন পাকিস্তান’ স্লোগান তরুণ প্রজন্মের মুখে মুখে৷ ২০১২ সালে এশিয়া সোসাইটির জরিপে ‘এশিয়া’স পারসন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন ইমরান৷
ছবি: AP
11 ছবি1 | 11
রাজনৈতিক লড়াই
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন জোটের নেতা শাহবাজ শরীফের এখন তীব্র রাজনৈতিক লড়াই চলছে। শনিবার ইমরানের ভাষণের পর তা আরো তীব্র হয়েছে।
শনিবারের ভাষণে ইমরান খান তার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে গ্রেপ্তার ও নিগ্রহের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে ইসলামাবাদের পুলিশ প্রধান এবং এক নারী বিচারকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রয়টার্স জানাচ্ছে, ইমরান বলেছিলেন, পুলিশ প্রধান ও নারী বিচারককে ছাড়া হবে না।
পুলিশের বক্তব্য, বিচারবিভাগ ও পুলিশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা করছেন ইমরান। তিনি চান না, পুলিশ ও বিচারবিভাগ তাদের কাজ করুক।
রাজনৈতিক স্বার্থে সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ব্যবহার পাকিস্তানে নতুন কিছু নয়। ইমরান খান সরকারের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ উঠেছিল।
প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়ার পর ইমরানের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে তাকে এখনো পর্যন্ত আটক করা হয়নি।
পাক মিডিয়াকে নির্দেশ
পাকিস্তান ইলেকট্রনিক মিডিয়া রেগুলেটরি অথরিটি শনিবারই নির্দেশ দেয়, কোনো চ্যানেলে ইমরানের ভাষণ লাইভ দেখানো যাবে না। তবে রেকর্ড করে রাখা ভাষণ পরে দেখানো যাবে।
মিডিয়া রেগুলেটরের অভিযোগ, ইমরান সমানে ভিত্তিহীন অভিযোগ করে যাচ্ছেন। ঘৃণা ছড়ানোর মতো ভাষণ দিচ্ছেন। উসকানিমূলক কথা বলছেন। তার ভাষণের ফলে শান্তি নষ্ট হতে পারে।
এই নিষেধাজ্ঞার পর ইমরানের দল পাঁচশর বেশি ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক লাইভ করে সেই ভাষণ সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছাবার ব্যবস্থা করে। ইমরানের অভিযোগ, সরকার লাইভস্ট্রিমিং-ও আটকাবার চেষ্টা করেছে।