পাকিস্তানের ভাবি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের জোট সরকারের আমলে ভারত-পাকিস্তান নীতি কি নতুন মোড় নেবে? দিল্লির কূটনৈতিক মহলে চলছে নানা জল্পনা৷ একাংশ পরিবর্তনের কথা বললেও, অন্যপক্ষ সেনাবাহিনীর সদিচ্ছার ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ইমরান খানের তেহেরিক-এ-ইনসাফ (পিটিআই) ২৫শে জুলাইয়ের সাধারণ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের শিরোপা পেলেও, সরকার গড়ার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাদের নেই৷ তাই তাঁকে ছোট ছোট দল এনং নির্দলীয়দের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জোট সরকার গড়তে হচ্ছে৷ এই জোটসঙ্গি বাছাইয়ের কাজেও সেনাবাহিনীর একটা সবুজ সংকেতের প্রয়োজন হচ্ছে৷ আর প্রশ্নটা এখানেই৷ পাকিস্তানের ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে বলা যায়, দেশটিতে কোনো সরকারই সেনা কর্তৃপক্ষের ছত্রছায়ায় না থাকলে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না৷ ইমরান খানের সরকারকেও সেনাবাহিনীর হাতের পুতুল হয়ে থাকতে হবে – এমনটাই ধারণা ভারতীয় গোয়েন্দা দপ্তরের৷ তাই ইমরানের ভারত-নীতি কোনদিকে মোড় নিতে পারে, তাই নিয়ে দিল্লির কূটনৈতিক অন্দর মহলে চলছে নানা জল্পনা৷ ভারতের বিভিন্ন মিডিয়ার বেশিরভাগ বিশ্লেষক মনে করছেন, নতুন কিছু হবার নয়৷ ইমরানের জয়কে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তাঁর নৈকট্যের জয় বলে মনে করছেন তাঁরা৷ এক কথায়, নতুন বোতলে পুরানো মদের বেশি কিছু নয়৷ কাজেই পাকিস্তানের ভারত-নীতিতে তেমন কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না তাঁরা৷
পাকিস্তানে নির্বাচন: কী ঘটছে?
সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে পাকিস্তানে চলছে নানা হিসেব-নিকেষ৷ রাজপথ যেমন হয়ে উঠছে সহিংস, তেমনি রাজনীতির মাঠেও চলছে যোগ-বিয়োগের খেলা৷ সেনাবাহিনী যেমন হয়ে উঠছে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ধর্মও৷
ছবি: Reuters/F. Mahmood
নির্বাচনের বছর, সহিংসতারও
নির্বাচনকে ঘিরে এ পর্যন্ত ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে৷ বিশেষ করে নির্বাচনের মাস জুলাইয়ে বেশ কয়েকটি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে৷ ১০ জুলাই আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির সমাবেশে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৪ জনের মৃত্যু ঘটে৷ ১২ জুলাই এক সাবেক সংসদ সদস্যকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়৷ ১৩ জুলাই দু’টি বোমা হামলায় ১৫৩ জনের মৃত্যু হয়৷
ছবি: picture-alliance/AA/M. Asad
ভাগ্য নির্ধারিত হবে যেদিন
আগামী পাঁচ বছরের জন্য পাকিস্তানের মজলিশ-ই-সূরা বা সংসদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে আগামী ২৫ জুলাই৷ সেদিন জাতীয় সংসদ ও চারটি প্রদেশের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করবেন পাকিস্তানের জনগণ৷
ছবি: Reuters/F. Mahmood
নির্বাচনি প্রক্রিয়া
জাতীয় সংসদের ৩৪২টি আসনের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করতে দু’টি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়৷ ২৭২ জন জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন৷ বাকি ৭০টি আসনের মধ্যে ৬০টি নারীদের জন্য ও ১০টি অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের জন্য সংরক্ষিত৷ এছাড়া প্রাদেশিক সভার আরো একশ’ জন সদস্য নির্বাচিত করা হয়৷
ছবি: AP
নতুন সীমা নির্ধারণ
২০১৮ সালের মার্চে নতুন করে আসন বিন্যাস করা হয়েছে৷ সে অনুযায়ী, ইসলামাবাদ ক্যাপিটাল টেরিটরিতে তিনটি, পাঞ্জাবে ১৪১টি, সিন্ধ-এ ৬১টি, খাইবার পাখতুনখোয়াতে ৩৯টি, বালোচিস্তানে ১৬টি ও কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত উপজাতীয় এলাকাগুলোতে ১২টি আসনে নির্বাচন হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Qureshi
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা
পাকিস্তান সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে কমপক্ষে ৩৪২টির মধ্যে কমপক্ষে ১৭২টি আসন জিততে হবে৷ প্রশ্ন হলো, কেউ কি পাবে তা? এবারের নির্বাচনে যে দু’টি দলের মধ্যে লড়াই হবার কথা সেগুলো হলো পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল)৷ পাকিস্তানের বিখ্যাত সিকিউরিটি ফার্ম একেডির করা এক জরিপ বলছে, পিটিআই এবার ৯৯টি ও পিএমএল ৭২টি আসন জিতবে৷ সে হিসেবে জোট সরকার ছাড়া গতি নেই৷
ছবি: Reuters/A. Soomro
জোট করতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠদেরই?
ইমরান খানের দল পিটিআই, শেহবাজ শরিফের পিএমএলের বাইরে তৃতীয় বড় দল হলো পাকিস্তান পিপলস পার্টি, যার প্রধান প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভূট্টো ও আসিফ আলি জার্দারির বড় সন্তান বিলাওয়াল জার্দারি৷ নির্বাচন পূর্ববর্তী বিভিন্ন জরিপ বলছে, এই তিন দলকেই জোট সরকার গঠন করতে হবে৷
ছবি: DW/T. Shahzad
কে হবেন প্রধানমন্ত্রী?
পাকিস্তানের প্রধাননমন্ত্রী হবার ক্ষেত্রে বিতর্কিত রাজনীতিক, এক সময়ের জনপ্রিয় ক্রিকেটার ইমরান খান এগিয়ে আছেন৷ তিনি ও তাঁর দল শক্তিশালী সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট বলে কথিত আছে৷ শুধু তাই নয়, নির্বাচনের আগেই বিচার বিভাগ, সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভোটের ফল পিটিআইয়ের পক্ষে আনতে কাজ করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ আছে৷ এমনকি উগ্র ডানপন্থিদেরও কাছে টানতে নানারকম চেষ্টা চালাচ্ছেন ইমরান৷
ছবি: DW/R. Saeed
সেনাবাহিনীর প্রভাব
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব কতটা তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ সম্প্রতি দেশটির জনপ্রিয় পত্রিকা ডনের করা এক জরিপে দেখা যায়, পাকিস্তানের ৮৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন আসছে নির্বাচনে সেনা প্রভাব থাকবেই৷ ৩৫ শতাংশ মনে করেন, সেনারাই ফলাফল নির্ধারণ করে দেবে৷ গেল মেয়াদে নেওয়াজ শরিফের জনপ্রিয়তা কমতে থাকলে এবং তালেবানদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে তাদের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed
ধর্মও বড় বিষয়
পাকিস্তানের রাজনীতিতে ধর্মও অনেক বড় বিষয়৷ এইতো ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী হতে মরিয়া ইমরান খান উগ্র ডানপন্থিদের সমর্থন পেতে ব্লাসফেমি আইনের প্রতি তাঁর জোর সমর্থন দিলেন৷ এমনকি জঙ্গি সংযোগের অভিযোগ অভিযুক্ত অনেক ‘ইসলামিক’ নেতাও লড়ছেন নির্বাচনে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed
নাড়িয়ে দিয়েছেন শরিফ-মরিয়ম
গত ৬ জুলাই পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এন)-এর নেতা নওয়াজ তাঁর মেয়ে মরিয়মের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করে পাকিস্তানের আদালত৷ দুর্নীতির দায়ে নওয়াজকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ৮৯ লাখ পাউন্ড জরিমানা এবং মরিয়মকে আট বছরের কারাদণ্ড ও ২০ লক্ষ পাউন্ড জরিমানার আদেশ দেয়া হয়৷ এরপরই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশে ফেরেন মরিয়ম ও নওয়াজ৷ গ্রেফতার হন৷ তাদের এই ফিরে আসায় ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে৷ নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে বলে মত অনেকেরই৷
ছবি: Reuters/H. McKay
অপূর্ণতার অভিশাপ
জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি৷ সবশেষ নওয়াজ শরিফের সামনে সে সুযোগ থাকলেও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে তাঁকে সরে দাঁড়াতে হয়৷ প্রশ্ন হলো, আগামী মেয়াদে যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি কি পারবেন?
ছবি: Reuters/A. Soomro
11 ছবি1 | 11
ইমরান খানের ইতিবাচক বার্তা
কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন, ইমরান খানের প্রাক-নির্বাচনি এবং নির্বাচন পরবর্তী ভাষণে ভারতের সঙ্গে একটা আপোষের সুর ছিল৷ একটা ইতিবাচক বার্তা দিতে চেয়েছেন তিনি৷ কী বলেছিলেন তিনি? বলা বাহুল্য, কাশ্মীর দু'দেশের মধ্যে সবথেকে বড় সমস্যা৷ তাই সেই সমস্যার সমাধানে ভারত এক পা বাড়ালে ইমরান খান দু'পা বাড়াতে রাজি৷ ভারতীয় নেতৃত্ব তৈরি থাকলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতেও তৈরি তিনি৷ তবে নরমে গরমে ইমরান খান ভারতকে এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, গত ৩০ বছর ধরে কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে এবং হচ্ছে৷ সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটলেই আসামির কাঠগোড়ায় তোলা হচ্ছে পাকিস্তানকে৷ এটার সুরাহা করতে ভারত-পাক নেতৃত্বের উচিত আলোচনার টেবিলে বসা৷ খোলাখুলি আলোচনা করা৷ কিন্তু কথা হচ্ছে বিড়ালের গলায় প্রথমে ঘণ্টা বাঁধবে কে?
ইমরান খানকে মোদীর ইঙ্গিতবাহী শুভেচ্ছা বার্তা
ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রী হবার জন্য জোট সরকার গঠন যখন পাকা হতে চলেছে, তখনই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইমরান খানকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়ে ইসলামাবাদকে শান্তি প্রতিষ্ঠার বার্তা দিয়েছেন৷ এমনকি মোদী ফোনেও কথা বলেন ইমরানের সঙ্গে৷ ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরসূত্রে বলা হয় এ কথা৷
ইমরানের প্রধানমন্ত্রিত্বে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক কোনদিকে মোড় নিতে পারেএবং ইমরানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মোদীর উপস্থিতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘এটা বোঝা যাচ্ছে যে, ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রী হবার পেছনে পাক সেনা বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদত আছে৷ পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনা বাহিনী এবং আইএসআই একটা গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা৷ ফলে এদের ভূমিকা কী হবে বা ভবিষ্যতে এরা কী ভূমিকা পালন করবে, তার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে৷''
‘ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রী হবার পেছনে পাক সেনা বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদত আছে’
ইমরান নিজের জয়লাভ আঁচ করে য়েসব কথাবার্তা বলেছেন, তা রক্ষণশীল কথাবার্তা৷ ক্রিকেটার হিসেবে ভারতবাসীর মনে যে ভাবমূর্তি রয়েছে, ইমরানে তার সঙ্গে একেবারেই মানানসই নয়৷ তাঁর রক্ষণশীল কথাবার্তা মোতাবেক তিনি যদি পদক্ষেপ নেন এবং তার পেছনে যদি সামরিক বাহিনীর মদত থাকে, তাহলে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রসারিত হবে বলে উনি মনে করেন না৷ যদিও উনি বলেছেন যে, ভারত দু'পা এগোলে পাকিস্তান তিন পা এগোবেন৷ মোটকথা ইমরানকে চলতে হবে সামরিক বাহিনীকে তুষ্ঠ করে, প্রতি পদক্ষেপেই৷ সেটা ইমরান কতটা পারবেন, সেটা দেখার৷ এত আগে সেটা বলা সম্ভব নয়৷
ইমরানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মোদীকে আমন্ত্রণ জানালে একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তাঁর যাওয়াই উচিত৷ এটা একটা সৌজন্যমূলক বিষয়৷ মোদী বলেছিলেন, পাকিস্তান যদি ভারতবিরোধী সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বন্ধ না করে, তাহলে ইসলামাবাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়৷ এটাকে মোদীর পাকিস্তান-নীতির নমনীয়তা বলে দেখাটা ঠিক হবে না৷ সেটা মোদী বলেছিলেন, রাষ্ট্রনীতির প্রেক্ষিতে৷ তাই বলে কি ভারতে পাকিস্তান হাইকমিশন নেই? কিংবা ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশন নেই? শুধু তাই নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে আসছে ভারত৷ সেটা তো তুলে নেওয়া হয়নি৷ পরিকাঠামো উন্নয়নেও ভারত কাজ করছে পাকিস্তানে৷ দু'দেশের সম্পর্কে চড়াই উতরাই চলে আসছে চিরকাল৷ ডয়চে ভেলেকে এমনটাই বললেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়৷
খেলার অঙ্গন থেকে রাজনীতিতে
এমন ঘটনা কিন্তু নতুন নয়৷ খেলোয়াড় থেকে রাজনীতিবিদ হিসেবেও সফল– এমন দৃষ্টান্ত অনেক আছে৷ দেখুন...
ছবি: picture alliance/dpa/B. von Jutrczenka
জর্জ উইয়াহ: গণদাবির মুখে আবার রাজনীতিতে
লাইবেরিয়ার ফুটবলার হয়েও সেই ১৯৯৫ সালে ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছিলেন উইয়াহ৷ ফুটবলকে বিদায় জানানোর কিছুদিনের মধ্যেই নাম লেখান রাজনীতিতে৷ ২০০৫ এবং ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছিলেন৷ কিন্তু দু’বারই হেরে যান৷ গণদাবির মুখে আবারও প্রার্থী হন ক্লাব ফুটবলের এই সাবেক বিশ্বতারকা৷ হয়ে যান প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Jallanzo
ভিতালি ক্লিচকভ: বক্সার থেকে মেয়র
ভ্লাদিমির ক্লিচকভের মতো তাঁর ভাই ভিতালিও ছিলেন ইউক্রেনের হেভিওয়েট বক্সার৷ তবে প্রায় এক দশক ধরে তিনি রাজনীতিবিদ৷ কিয়েভের মেয়র হয়েছেন তিনি ২০১৪ সালে৷
ছবি: picture alliance/dpa/B. von Jutrczenka
মানি পাকিইয়াও: ফিলিপাইন্সের ভবিষ্যৎ নেতা?
তিনিও সাবেক তারকা বক্সার৷ বক্সিং গ্লাভস তুলে রাখার পর থেকে তিনিও রাজনীতিতে সক্রিয়৷ ফিলিপাইন্সের প্রেসিডেন্ট দুতার্তের ঘোর সমর্থক তিনি৷ রাজনীতিবিদ হিসেবে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল৷ ইতিমধ্যে স্বয়ং দুতার্তে একাধিকবার বলেছেন, তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে পাকিইয়াওকে দেখতে চান তিনি৷
ছবি: Getty Images/M.Dejeto
ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতানো সেই রোমারিও
১৯৯৪ সালে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন তিনি৷ পেলে আর রোনাল্ডো ছাড়া ব্রাজিলের বাকি সব ফুটবলারের চেয়ে দেশের হয়ে তাঁর গোল এখনো সবচেয়ে বেশি৷ ফুটবলের মতো তিনিও রাজনীতিতে সফল৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ-এর সোশ্যালিস্ট পার্টির একনিষ্ঠ কর্মী তিনি৷ রিও ডি জানেরোর সেনেটর তিনি৷
ছবি: Getty Images/E.Sa
আর্নল্ড শোয়ার্ৎসেনেগার: দ্য টার্মিনেটর
হ্যাঁ, শোয়ার্ৎসেনেগার হলিউডের সুপারহিট মুভি ‘দ্য টার্মিনেটর’-এর নায়ক হিসেবেই বেশি পরিচিত৷ পরবর্তী জীবনে যে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার মেয়র হয়েছিলেন তা-ও অনেকের জানা৷ কিন্তু শোয়ার্ৎসেনেগার যে বডিবিল্ডার হিসেবে মাত্র ২৩ বছর বয়সে ‘মিস্টার অলিম্পিয়া’ হয়েছিলেন, সেটা কি জানেন?
ছবি: picture-alliance/dpa
বিল ব্র্যাডলি: এনবিএ-র চেয়েও যেন রাজনীতিতে সফল
এনবিএ-র ‘হল অফ ফেম’-এ নাম আছে তাঁর৷ ছিলেন নিউ ইয়র্ক নিক দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য৷ রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পরও সাফল্য পিছু নেয়৷ ডেমোক্র্যাট দলের হয়ে নির্বাচন জিতে প্রায় দু দশক ছিলেন নিউ জার্সির মেয়রের দায়িত্বে৷ ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলের মনোনয়নও চেয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/P.Newcomb
সেবাস্টিয়ান কো: অলিম্পিক সোনাজয়ী থেকে....
১৯৮০-র অলিম্পিকে ব্রিটেনের হয়ে ১৫০০ মিটার দৌড়ের সোনা জিতেছিলেন সেবাস্টিয়ান কো৷ রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে সেই ১৯৯২ সালেই হয়েছিলেন সংসদ সদস্য৷ ব্রিটেনের উচ্চ কক্ষের ‘লর্ড’ হয়েছেন ২০০০ সালে৷ তাঁর সাম্প্রতিক সাফল্য অবশ্য ক্রীড়ঙ্গনেই৷ ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিক আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সেবাস্টিয়ান কো এখন আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সভাপতি৷
ছবি: Getty Images/S. Powell
জেরাল্ড ফোর্ড: কলেজ ফুটবলার থেকে প্রেসিডেন্ট
রিচার্ড নিক্সন পদত্যাগ করায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন জেরাল্ড ফোর্ড৷ খেলাধুলার সঙ্গে তাঁরও একটা যোগাযোগ ছিল৷ ১৯৩২ থেকে ১৯৩৪ পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের কলেজ ফুটবল দলে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Public Domain/Gerald R. Ford Library
ইমরান খান: ক্রিকেটার থেকে প্রধানমন্ত্রী
ক্রিকেটের ভালো অনুসারীরা ইমরান খানকে অবশ্যই চেনেন৷ পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক, বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার – এ সবের বাইরেও যে পরিচয়টি বড় হয়ে উঠেছে তা হলো, ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তান দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি৷ ক্রিকেট ছাড়ার পরই গড়ে তোলেন ‘তেহরিক-ই ইনসাফ’৷ এ দলের নেতা হিসেবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা শুরু করেছেন সে-ও অনেক দিনের কথা৷
ছবি: DW/S. Khan Tareen
9 ছবি1 | 9
নতুন দিল্লির অবস্থান হলো, কাশ্মীরে বা ভারতের অন্যত্র পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাস বন্ধ না হলে কোনো আলোচনা নয়৷ নিয়ন্ত্রণ রেখায় জঙ্গি অনুপ্রবেশ এবং ভারতীয় সেনা শিবিরে সশস্ত্র হামলা এবং শান্তি একসঙ্গে চলতে পারে না৷ ইমরানের ক্রিকেট মুখ ভারতে জনপ্রিয়৷ ইমরানের গুগলি বলের সুনাম আছে ভারতে৷ সেটা দু'দেশের সম্পর্ককে মধুর করতে পারবে কিনা সেটা সময়ই বলবে৷ সামরিক বাহিনীর মন জুগিয়ে চলতে হলে ভারত, আফগানিস্তান কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ইমরান সরকার স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি নিলে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তাঁর মধুচন্দ্রিমা টিকবে কিনা – সেই প্রশ্নটা রয়ে যায়৷ ভারত সম্পর্কে পাক সামরিক নেতৃত্বের একটা নেতিবাচক মানসিকতা বদ্ধমূল৷ অনেকের মতে, সেটাই কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপে সমর্থন দিয়ে আসছে৷ এর জন্য পাকিস্তানকে হয়ত একঘরে হয়ে থাকতে হতে পারে, যেটা ইমরানের পক্ষে হবে একটা বড় বাধা৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাকিস্তান বিরোধিতায় পাকিস্তানের মনে আশঙ্কার উদ্রেক করেছে যে, ওয়াশিংটন পাকিস্তানকে সমরাস্ত্র জোগান ছাঁটাই করে ভারতকে সরবরাহ করবে বেশি৷ এছাড়া আর্থিক দিক দিয়েও আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মাধ্যমে ট্রাম্প পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়াতে পারে৷
সবদিক বিবেচনা করে ইমরান যদি ভারতকে অলিভ শাখা দেখাতে চায়, তাহলে বুঝতে হবে এতে সামরিক বাহিনীর শিলমোহর আছে৷ তবে বিশ্লেষকরা প্রায় সবাই একমত যে, আগামী বছর ভারতের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল কী হয়, তা না দেখা পর্যন্ত ইমরান সরকার অপেক্ষা করবে৷ বড় কোনো পদক্ষেপ নেবে না৷প্রসঙ্গত, আগামী ১১ই আগস্ট পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন ইমরান খান৷