তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট তারকা হতে পারেন, কিন্তু তাই বলে নিজেকে আরেক ইমরান খান মনে করেন না মাশরাফি বিন মর্তুজা৷ সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন একসময় নিজের দেশকে বিশ্বকাপ এনে দেয়া ক্রিকেট তারকা খান৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে একটি আসন থেকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ক্রিকেট তারকা মাশরাফি বিন মর্তুজা৷ মূলত ক্রীড়াঙ্গনের আরো উন্নতি এবং দাতব্য কাজে নিজেকে আরো সম্পৃক্ত করতে রাজনীতিতে জড়িয়েছেন বলে জানান তিনি৷ তরুণদের রাজনীতিতে আসাটা জরুরি বলেও মনে করেন এই ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব৷
ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মাশরাফি বলেন, ‘‘সত্যি বলতে কী, ইমরান খান যে পর্যায়ে পৌঁছেছেন, মানুষ চাইলেও সবসময় সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে না৷''
ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ
ক্রিকেট থেকে রাজনীতিতে এসেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা৷ এমন ঘটনা নতুন নয় দক্ষিণ এশিয়ায়৷ এর আগেও ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের রাজনীতির ময়দানে দেখা গেছে৷ ছবিঘরে তেমন কয়েকজনকে দেখে নিই চলুন৷
ছবি: bdnews24.com
ইমরান খান
ক্রিকেটারদের মধ্যে রাজনীতিতে সবচেয়ে সফল ইমরান খান৷ ১৯৯২ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতা পাকিস্তান দলের অধিনায়ক ইমরান খান৷ ১৯৯৬ সালে যোগ দেন রাজনীতিতে৷ গঠন করেন রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফ৷ ২০১৮-র সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়৷ তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Yam G-Jun
অর্জুনা রানাতুঙ্কা
শ্রীলঙ্কার ১৯৯৬ ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা৷ অবসর গ্রহণের পর তিনি লঙ্কান বোর্ডের নানা দায়িত্ব পালন করেন৷ ২০০১ সালে রাজনীতিতে আসেন শ্রীলঙ্কান ফ্রিডম পার্টিতে যোগ দেয়ার মাধ্যমে৷ সে বছর কলম্বো থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন৷ পরে শিল্প, পর্যটন ও বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন৷ এখন তিনি বন্দর ও নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী৷
ছবি: AFP/Getty Images
সনত জয়াসুরিয়া
সনত জয়াসুরিয়া সর্বকালের সেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারদের একজন৷ মাশরাফির আগে তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি খেলোয়াড় থাকা অবস্থাতেই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন৷ ২০১০ সালে তিনি মাতারা’র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন৷ মাহিন্দা রাজাপাকশে’র মন্ত্রিসভায় উপমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন৷
ছবি: AP
কীর্তি আজাদ
কীর্তি ভগবত ঝা আজাদ ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন৷ ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী দলেও ছিলেন বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভগমত ঝা আজাদের পুত্র কীর্তি৷ তৃতীয়বারের মতো তিনি এখন লোকসভার নির্বাচিত সদস্য৷
ছবি: imago/Hindustan Times
নভজোত সিং সিধু
সিধু’র ১৯ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৮৩ সালে৷ ২০০৪ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন৷ বিজেপির হয়ে অমৃতসর থেকে সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেন৷ জিতেও যান৷ ২০১৬ সালে তিনি দল থেকে রাজ্যসভার জন্য মনোনীত হলেও বিজেপি ত্যাগ করেন৷ ২০১৭ সালে যোগ দেন কংগ্রেসে৷ পূর্ব অমৃতসর থেকে নির্বাচনও জেতেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন
ভারতের এই সাবেক অধিনায়কের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু ১৯৮৪ সালে৷ ২০০৯ সালে তিনি ভারতের রাজনৈতিক দল কংগ্রেসে যোগ দেন৷ উত্তর প্রদেশের মোরাদাবাদ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ নানা কারণে ভারতের আলোচিত ক্রিকেটারদের একজন তিনি৷
ছবি: AP
বিনোদ কাম্বলি
শচীন টেন্ডুলকারের স্কুলের বন্ধু বিনোদ কাম্বলি৷ নিজে ভারত দলে খেলতেন মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে৷ বলিউডে অভিনয়ও করেছেন৷ পরে লোক ভারতী পার্টিতে যোগ দেন৷ ২০০৯ সালের নির্বাচনে মুম্বাইয়ের ভিখরোলি থেকে অংশ নিয়ে হেরে যান৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
মনসুর আলী খান পতৌদি
পতৌদিকে বলা হয় ভারতের সেরা অধিনায়কদের একজন৷ তাঁর সময়ে মাঠের সেরা ফিল্ডারও ছিলেন তিনি৷ ১৯৯১ সালে ভোপাল থেকে কংগ্রেসের হয়ে জাতীয় নির্বাচনেও লড়েন তিনি৷ তবে হেরে যান৷
ছবি: dapd
নাঈমুর রহমান দুর্জয়
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়৷ তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন৷ ২০১৪ সালের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷
ছবি: Naimur Rahman Durjoy
মাশরাফি বিন মর্তুজা
জয়সুরিয়ার পর মাশরাফিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি খেলা অবস্থাতেই প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন৷ তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে ২০১৮ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেন৷ নড়াইল-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল এই অধিনায়ক৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Karanikos
10 ছবি1 | 10
তিনি বলেন, ‘‘আমি যেহেতু একজন ক্রীড়াবিদ, তাই ক্রীড়াঙ্গনের জন্য কিছু করার আগ্রহ আছে আমার৷ আমার আশা এখানে সমীবাদ্ধ৷ আমি আমার অঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী৷''
বাংলাদেশের নড়াইল জেলার ছেলে মাশরাফি বিন মর্তুজা৷ সেখানকার একটি আসন থেকেই নির্বাচনে লড়ছেন তিনি৷ ইতোমধ্যে এলাকায় ‘নড়াইল এক্সপ্রেস' নামের একটি দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি৷ সংস্থাটি বিভিন্ন হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স দান করাসহ কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ সরবরাহ পর্যন্ত নানা উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে৷
প্রসঙ্গত, ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদে রূপান্তরের বিষয়টি দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন কিছু নয়৷ তবে খেলা থেকে পুরোপুরি অবসর নেয়ার আগেই রাজনীতিতে সরাসরি প্রবেশের বিষয়টি বিরল৷ বর্তমানে বাংলাদেশের একদিনের ক্রিকেটের জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি৷ আসন্ন বিশ্বকাপেও দলকে নেতৃত্ব দেয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি৷
ইনজুরির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে সাফল্যের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাওয়া এবং তাঁর দেশপ্রেমের কারণে কোটি ভক্তের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন তিনি৷ অধিনায়ক হিসেবেও তাঁর সুখ্যাতি রয়েছে৷ তবে, তিনি সরাসরি রাজনীতিতে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর অনেকের কাছ থেকে বিরুপ প্রতিক্রিয়াও পেয়েছেন৷
‘অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চাই’
00:27
অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাশরাফির পাতাগুলোতে এই বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের সংখ্যাই বেশি৷ তাঁর অনেক ভক্ত চান না বাংলাদেশের তাদের ভাষায় ‘অত্যন্ত নোংরা' এবং ‘নর্দমার-মতো' রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেকে সম্পৃক্ত করুক মাশরাফি৷ কেউ কেউ আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দলে তিনি অংশ নেয়ার বিষয়টি পছন্দ করছেন না কেননা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীদের জেলে পাঠানো এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধের অভিযোগ রয়েছে৷
মাশরাফি অবশ্য এসব সমালোচনায় পিছু হটতে রাজি নন৷ আবার সমালোচকদের সমালোচনা করতেও আগ্রহী নন তিনি৷ অভিজ্ঞ এই ক্রীড়াবিদ বলেন, ‘‘আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, যেসব মানুষ অন্য দল কিংবা অন্য রাজনৈতিক চেতনায় বিশ্বাসী, তাদের আমি অসম্মান করি না৷''
তিনি বলেন, ‘‘যদিও আমি আমার দলকে হৃদয়ের সর্বস্ব দিয়ে সমর্থন করি, আমার তাদের (সমালোচকদের) প্রতিও শতভাগ সম্মান রয়েছে এবং সেটা ভবিষ্যতেও থাকবে৷''