একটি ইসলামিক থিওলজি ইনস্টিটিউট খোলার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে হুমবোল্ট ইউনিভার্সিটি৷ ইনস্টিটিউটের স্নাতকরা মসজিদের ইমাম বা স্কুলের ধর্মশিক্ষক হিসেবে কাজ করতে পারবেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যেই এ ধরনের ইসলামি ঈশ্বরতত্ত্ব পড়ানোর বিভাগ আছে৷ হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট সাবিনে কুন্সট জানান, হুমবোল্ট তাদেরই মতো একটি ইসলামিক থিওলজি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে, তার বেশি বা কম কিছু নয়৷
হুমবোল্টের এই নতুন কর্মসূচি মৌলবাদী প্রবণতা রোখার জন্য কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র হান্স-ক্রিস্টফ কেলার বলেন যে, তিনি সংবাদ সংস্থাগুলির জল্পনা-কল্পনা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন৷ ইমামদের ও স্কুলের ধর্মশিক্ষকদের প্রশিক্ষণই হবে এই ইনস্টিটিউটের কাজ, যোগ করেন কেলার ৷
সমকামী এক ইমামের কথা
দক্ষিণ আফ্রিকার এক মসজিদের ইমাম মুহসিন হেন্ড্রিকস গত ২০ বছর ধরে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন৷ তাঁদের জন্য একটি মসজিদও নির্মাণ করেছেন তিনি৷
ছবি: The Inner Circle
সমকামীদের জন্য মসজিদ
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরের ভিনবার্গ এলাকার একটি মসজিদের ইমাম মুহসিন হেন্ড্রিকস৷ বছর পাঁচেক আগে তিনি মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ হেন্ড্রিকস একজন সমকামী৷ তাঁর মসজিদে ২৫ জন নিয়মিত নামাজ আদায়কারী আছেন৷ মাঝেমধ্যে সমকামীদের মধ্যে বিয়েও পড়ানো হয় ঐ মসজিদে৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bosch
সমকামী মুসলিমদের সহায়তা
নিজে সমকামী হওয়ায় কেপটাউনের সমকামী মুসলিমদের অসহায়ত্বের কথা জানতেন হেন্ড্রিকস৷ তাই তাঁদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে ১৯৯৬ সালে ‘দ্য ইনার সার্কেল’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন তিনি৷ এই উদ্যোগেরই অংশ হিসেবে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়৷
ছবি: The Inner Circle
বিয়ে করেছিলেন হেন্ড্রিকস
অল্প বয়সেই নিজের সমকামিতার বিষয়টি অনুভব করেছিলেন হেন্ড্রিকস৷ কিন্তু তাঁর দাদা ইমাম ছিলেন৷ তিনি তাঁকে বলেছিলেন, সমকামীরা দোযখে যাবে৷ এছাড়া সেই সময় সমকামিতা বিষয়ে মুসলিম সমাজে মনে করা হত যে, বিয়ে হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে৷ সে কারণে এক নারীকে বিয়েও করেছিলেন হেন্ড্রিকস৷ কিন্তু বছরখানেকের মধ্যেই বুঝতে পারেন, বিরাট ভুল করেছেন৷ তবুও সেভাবে ছয় বছর কেটে যায়৷ দুই সন্তানের জন্মও হয়৷ পরে বিবাহবিচ্ছেদ হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/R.Bosch
সমকামিতা প্রসঙ্গে কোরান
ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে হেন্ড্রিকস বলেন, ‘‘কোরান সমকামিতার বিরুদ্ধে নয়৷ ইসলামি অনেক পন্ডিতও এখন সেটি বুঝতে শুরু করেছেন৷ এমনকি মহানবির (সা:) বাড়িতে এমন ব্যক্তিরা কাজ করতেন যাঁরা নারীদের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতেন না৷ মহানবি (সা:) এর বাড়িতে সমকামী চাকর থাকার মানে সমকামীদের প্রতি তাঁর সমর্থন ছিল৷’’
ছবি: Imago/B. Strenske
দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বে প্রথম
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সে দেশের ১৯৯৬ সালের সংবিধানে সমকামীদের অধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে৷ এছাড়া আফ্রিকার একমাত্র দেশ হিসেবে সেখানে সমলিঙ্গ বিয়ের বৈধতা রয়েছে৷
ছবি: Johann Hattingh/AFP/Getty Images
আফ্রিকার ‘সমকামী রাজধানী’
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে সমকামীবান্ধব অনেক রেস্তোরাঁ, বার, হোটেল ও ক্লাব আছে৷ সেজন্য এই শহরটি আফ্রিকার ‘সমকামী রাজধানী’ বলেও পরিচিত৷
ছবি: dapd
আছে তিন লক্ষ মুসলিম
কেপটাউনে প্রায় তিন লক্ষ মুসলিমের বাস৷ সেখানকার অধিকাংশ মসজিদের ইমাম সমকামিতার বিরুদ্ধে৷ তাঁদের মধ্যে অনেকে সমকামীদের গৃহবন্দি করে রাখার পক্ষে৷ হেন্ড্রিকসের মসজিদ থেকে ১০ কিমি দূরের একটি মসজিদের ইমাম বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘‘সমকামিতা গ্রহণযোগ্য নয়৷ এটি নিষিদ্ধ৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gupta
পরিবর্তন আনছেন হেন্ড্রিকস
সমকামীদের অধিকার নিয়ে কথা বলায় কয়েকবারই তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু থেমে যাননি তিনি৷ বরং তাঁর দৃঢ়তার কারণে সমাজে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসছে৷ তাইতো তাঁর মসজিদের দুই কিলোমিটারের এর মধ্যে আরেকটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে যেখানে সমকামীদেরও নামাজ পড়ার অধিকার রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Skarzynski
8 ছবি1 | 8
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই পাঠক্রমে অংশগ্রহণের জন্য ইসলাম ধর্মের সঙ্গে কোনো সংযোগ থাকা বাধ্যতামূলক নয়৷'
শুরু হতে আরো কিছু সময় লাগবে
বার্লিনের মেয়র মিশায়েল ম্যুলার হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগকে একটা ‘‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়'' বলে অভিহিত করেন৷
হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যযুগ সম্পর্কিত বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মিশায়েল বর্গল্টেনতুন ইসলামিক থিওলজি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার দেখাশোনা করবেন৷ খ্রিষ্টীয়, ইহুদি ও ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে ইউরোপের ইতিহাস ছিল এ যাবৎ তাঁর গবেষণার বিষয়৷
২০১৮/২০১৯ সালের শীতের সেমেস্টার থেকে পাঠক্রম চালু হবে বলে জানা গেছে৷ বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের প্রতিনিধিরা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা পরিষদে থাকবেন – এবং এই উপদেষ্টা পরিষদই পাঠক্রমে যাঁরা অধ্যাপনা করতে চান, তাঁদের আবেদনপত্র বিবেচনা করবে৷ আশা করা হচ্ছে প্রার্থীরা কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্য, সেটাও পরীক্ষা করে দেখবে পরিষদ৷
তুর্কি-ইসলামি ধর্মবিষয়ক সংঘ বা ডিটিব এই ১৫ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদে একটি আসন পাবে৷ তুরস্ক সরকারের ধর্ম সংক্রান্ত পরিদপ্তরের সঙ্গে যুক্ত ৯০০ মসজিদের ইউনিয়ন এই ডিটিব৷
জার্মানিতে কর্মরত ডিটিব-এর কিছু ইমাম যুক্তরাষ্ট্রবাসী ধর্মপ্রচারক ফেথুল্লাহ গুলেনের সমর্থকদের ওপর গোয়েন্দাগিরি করেছেন বলে সন্দেহ করা হয়৷ তবে এ যাবৎ ডিটিব প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘‘সংঘাতের'' কোনো কারণ ঘটেনি, জানান অধ্যাপক বর্গল্টে৷ মেয়র ম্যুলার অবশ্য সাবধান করে দেন এই বলে যে, ‘‘আমাদের দেখতে হবে, আমরা কাদের সঙ্গে কাজ করছি৷''
‘ফ্যাকাল্টি ফর থিওলজি'
প্রটেস্টান্ট ঈশ্বরতত্ত্ববিদরা আরো একটি প্রস্তাব দিয়েছেন: তাঁরা চান যে, খ্রিষ্টান, মুসলিম ও ইহুদিদের জন্য একটি যৌথ ‘‘ফ্যাকাল্টি ফর থিওলজি'' বা ঈশ্বরতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হোক৷ বার্লিনের মেয়র ম্যুলার ধারণাটির সপক্ষে, কিন্তু তিনি এবং হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট সাবিনে কুন্সট উভয়েই জানেন যে, এর বাস্তবায়ন করতে সময় লাগবে৷ ‘‘ওয়ান স্টেপ অ্যাট এ টাইম'', বলেন কুন্সট৷
মেলানি কুরা দাবাল/এসি
২০৭০ সালে ইসলাম হবে বিশ্বের সবচেয়ে ‘বড় ধর্ম’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার এক প্রতিবেদনে বলেছে, আগামী ২০৭০ সালে অনুসারীর সংখ্যায় বিশ্বের অন্য সব ধর্মকে ছাড়িয়ে যাবে ইসলাম৷ অর্থাৎ ৫৩ বছর পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি থাকবে মুসলমান৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/AFP/Stringer
খ্রিষ্টানদের ছাড়িয়ে যাবে...
২০১০ সালে সারা বিশ্বে মোট ২১৭ কোটি মানুষ খ্রিষ্ট ধর্ম অনুসরণ করতো৷ তারপরই ছিল ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা৷ তখন বিশ্বে মোট ১৬০ কোটি ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছিল৷ কিন্তু পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রতিবেদন বলছে, ৫ দশক পর খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের পিছনে ফেলে সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি হয়ে যাবে মুসলমান৷
ছবি: Reuters/A. Bianchi
জন্মহার সবচেয়ে বেশি
কেন এত দ্রুত ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বাড়বে? বলা হচ্ছে, সারা বিশ্বে মুসলমানদের জন্মহার বেশি আর মূলত এ কারণেই সংখ্যায় সব ধর্মকে পিছনে ফেলবে তারা৷ মুসলমানদের শিশু জন্মহার ৩ দশমিক ১ শতাংশ আর খ্রিষ্টানদের ২ দশমিক ৭ শতাংশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Taherkenareh
তরুণ অনুসারী বেশি
অন্য সব ধর্মের তুলনায় ইসলাম ধর্মের তরুণ অনুসারী বেশি৷ এ মুহূর্তে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নীচে৷ অন্যদিকে ৩৪ শতাংশ ইসলাম ধর্মবলম্বীর বয়স ১৫ বছরের কম৷ তার মানে, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের তুলনায় ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বেশি দিন সন্তান জন্ম দেয়ার সুযোগও বেশি৷
ছবি: AP
নাস্তিক কমবে
পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে নাস্তিক অনেক কমবে৷ এখন যেখানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ নাস্তিক, সেখানে ২০৫০ নাগাদ তা কমে হবে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ৷
ছবি: facebook.com/We.R.Atheists
২০৭০ সালে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মুসলমান
পিউ রিসার্চ সেন্টারের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে আরো যে বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে, তা হলো, ২০১০ সাল থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে৷ এই সময়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বী বাড়বে ৭৩ শতাংশ৷ ফলে এক সময় স্বাভাবিক কারণেই সংখ্যায় খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ছাড়িয়ে যাবে ইসলাম৷ পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০৭০ নাগাদ সারা বিশ্বে মুসলমানই সবচেয়ে বেশি থাকবে৷