ইয়েমেনে যুদ্ধের কারণে ২০১৬ সালে ১,৩৪০ জন শিশু হতাহতের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব৷ এর জন্য অন্যতম দায়ী সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বৃহস্পতিবার তাঁর বার্ষিক ‘শিশু ও সশস্ত্র সংঘাত’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলেন, ২০১৬ সালে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের শিকার হয়ে আট হাজারেরও বেশি শিশু হতাহত হয়েছে৷
প্রতিবেদন বলছে, ইয়েমেনে মোট হতাহতের শিকার হওয়া শিশুদের মধ্যে ৬৮৩ জনের জন্য দায়ী সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট৷ কারণ এই সময়ে কয়েকটি স্কুল ও হাসপাতালে হামলা চালায় এই জোট৷ এজন্য জাতিসংঘের বার্ষিক ঐ প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত করা কালো তালিকায় সৌদি জোটের নাম রয়েছে৷ গতবছরেরও প্রতিবেদনেও সৌদি আরবের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল৷ তবে পরে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব বান কি-মুন এই নাম প্রত্যাহার করতে বলেছিলেন৷ সেই সময় তিনি দাবি করেছিলেন, নাম প্রত্যাহার করতে সৌদি আরব চাপ দিয়েছিল৷ তা না হলে শিশুদের জন্য সৌদি আরব যে তহবিল দিত তা হুমকির মুখে পড়ত বলেও জানান তিনি৷ সৌদি আরব অবশ্য হুমকি দেয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে৷
রাষ্ট্র না হয়েও বিচ্ছিন্ন
ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলের ৯০ শতাংশেরও বেশি ভোটার এক গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে রায় দিয়েছেন৷ অনেক বছর ধরেই অবশ্য এই অঞ্চল কার্যত স্বাধীনতা ভোগ করছে৷ গোটা অঞ্চলে এমন আরও কয়েকটি দৃষ্টান্তের দিকে নজর দেওয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress/B. Feher
ইরাকি কুর্দিস্তান
১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধ ও ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলার ফলে বিপর্যস্ত সাদ্দাম হুসেনের প্রশাসন উত্তরে কুর্দি এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ ধাপে ধাপে হারিয়ে ফেলে৷ কুর্দিরাও সেই সুযোগে নিজস্ব পতাকা, সরকার, সংসদ ও সেনাবাহিনী গড়ে তুলে এক রাষ্ট্রীয় কাঠামো সৃষ্টি করে৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress/B. Feher
দক্ষিণ সুদান
২০১১ সালের জুলাই মাসে বিশ্বের সবচেয়ে নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার আগে দক্ষিণ সুদানও বেশ কিছুকাল কার্যত স্বাধীনতা ভোগ করেছে৷ ২০০৫ সালের এক শান্তি চুক্তির আওতায় এক গণভোটে দক্ষিণের মানুষ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেন৷ ১৯৮৩ সালের গৃহযুদ্ধের সময়েই বিচ্ছিন্নতাবাদের এই বীজ বপন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Messara
লিবিয়ার পূ্র্বাঞ্চল
২০১১ সালে মুয়াম্মার আল গদ্দাফির পতনের পরেই লিবিয়ায় অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে৷ ত্রিপোলি শহরে যে প্রশাসন গঠিত হয়, তার আনুগত্য মানতে নারাজ ছিল দেশের পূ্র্বাঞ্চলের উপজাতীয় নেতারা৷ মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশের মদতে তোবরুক শহরে এক সমান্তরাল প্রশাসন উগ্র ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাচ্ছে৷
ছবি: dapd
উত্তর ইয়েমেন
২০১৪ সালে সর্বশেষ গৃহযুদ্ধের ফলে আবারও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আরব উপদ্বীপের সবচেয়ে গরিব দেশ ইয়েমেন৷ ইরানের মদতে রাজধানী সানা ও দেশের উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে শিয়া সম্প্রদায়ের বিদ্রোহীদের হাতে৷ ইয়েমেনের সরকারের অস্তিত্ব শুধু দেশের দক্ষিণাচলেই সীমিত রয়েছে৷ উল্লেখ্য, ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ ইয়েমেন স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক দেশ ছিল৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল
দীর্ঘ ও জটিল গৃহযুদ্ধের জের ধরে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুর্দি সম্প্রদায় কার্যত এক স্বাধীন ছিটমহল গড়ে তুলেছে৷ পিওয়াইডি নামের সিরীয় কুর্দি গোষ্ঠী সেই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে৷ ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধের সময় থেকেই বাশার আল আসাদ প্রশাসনের সঙ্গে তাদের একটা বোঝাপড়া রয়েছে৷ মার্কিন বিমান হামলার সুযোগ নিয়ে পিওয়াইডি-র সামরিক বাহিনী ওয়াইপিজি আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Suna
5 ছবি1 | 5
বিতর্ক এড়াতে জাতিসংঘের মহাসচিব এবার কালো তালিকাটি দুই অংশ ভাগ করেছেন৷ প্রথম অংশে যেসব দেশ ও গোষ্ঠী শিশুদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তাদের নাম রয়েছে৷ আর দ্বিতীয় অংশ আছে তাদের নাম যারা শিশুদের রক্ষায় ‘ব্যবস্থা নিয়েছে’৷ সৌদি আরবের নাম আছে তালিকার এই অংশে৷ অর্থাৎ দেশটি শিশুদের রক্ষায় কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে৷
কালো তালিকায় সৌদি আরবের নাম অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডাব্লিউ, সেভ দ্য চিলড্রেন এবং ওয়াচলিস্ট অন চিলড্রেন অ্যান্ড আর্মড কনফ্লিক্ট৷
এদিকে, সৌদি আরবের বিরোধিতা সত্ত্বেও ইয়েমেনের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সেখানে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ৷
শিশু হত্যা বন্ধ না করা পর্যন্ত সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা এইচআরডাব্লিউ৷
সংস্থার শিশু অধিকার বিষয়ক পরিচালক জো বেকের বলেন, ‘‘ইয়েমেনে এই বেআইনি হামলা বন্ধ করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া ও আক্রান্ত শিশুদের প্রয়োজনীয় সাহায্য নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে৷’’ তিনি বলেন, ‘‘সব সরকারকে সৌদি অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে৷’’