ইরাক সরকারকে সামরিক সহায়তা দিতে পারে জার্মানি৷ এ নিয়ে কয়েকদিন ধরেই চলছে জল্পনা-কল্পনা৷ এক্ষেত্রে ইউরোপীয় সঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷
বিজ্ঞাপন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আরো দুই মন্ত্রীর বক্তব্য বিদেশে সামরিক সহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রে জার্মানির নীতিতে পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে৷ অথচ সোমবার জার্মান সরকারের মুখপাত্র জানান, সংকটপূর্ণ এবং যুদ্ধ এলাকায় জার্মানি অস্ত্র রপ্তানি করে না৷ আর বিগত সরকারের এই নীতি বর্তমান সরকারও অনুসরণ করছে৷
তবে উগ্র ইসলামপন্থি সন্ত্রাসী সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেট' বা আইএস এর নাটকীয় উত্থানের কারণে জার্মানিকে এখন বিকল্প ভাবতে হচ্ছে৷ ইরাকের উত্তরাঞ্চলে বর্তমানে বেশ কয়েক হাজার মানুষ গণহত্যার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে৷ আর এটা প্রতিরোধ গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন জার্মানির উপ-চ্যান্সেলর সিগমার গাব্রিয়েল৷ সংখ্যালঘু ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেন, ‘‘সেখানে (ইরাকের উত্তরাঞ্চলে) গণহত্যার প্রস্তুতি চলছে৷''
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
ইরাকের কুর্দি অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানি গত রবিবার কুর্দি বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান৷ তবে জার্মানি কুর্দিদের নয়, ইরাক সরকারকে অস্ত্র সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে৷ জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উর্সুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন জানান, ইরাককে ‘‘প্রাণঘাতী নয়'' এমন সামরিক সরঞ্জাম যেমন সাজোয়া যান কিংবা ‘বুবি ট্র্যাপ ডিটেকটর', হেলমেট এবং প্রতিরক্ষামূলক বর্ম প্রদান করা যেতে পারে৷ তবে সেগুলোর গ্রহণকারী হবে ইরাকি সরকার৷
জার্মানির পাবলিক ব্রডকাস্টার এআরডি-কে ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেন, ‘‘আমরা যদি একটা গণহত্যার আশঙ্কা করি, আর সেটা যদি কেউ বন্ধে সমর্থ না হয়, তাহলে জার্মানি সেটা বন্ধে উদ্যোগ নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা করা যেতে পারে৷''
তবে জার্মান সংসদের নিম্নকক্ষের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান নরবার্ট ব়্যোটগেন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইরাকে অস্ত্র সরবরাহ করা হলে তা জার্মানির অস্ত্র রপ্তানি নীতির লঙ্ঘন হবে৷ তাই তিনি এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সংসদে আলোচনাকে গুরুত্ব দিয়েছেন৷ শুধুমাত্র সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বলেই মত তাঁর৷
উল্লেখ্য, ইরাকের উত্তরাঞ্চলে বেশ কয়েক হাজার খ্রিষ্টান, ইয়াজিদি সম্প্রদায় এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ আইএস-এর ভয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে৷ বর্তমানে কুর্দি সেনারা তাদের রক্ষা করছে৷ পাশাপাশি মার্কিন বাহিনী বিমান হামলার মাধ্যমে আইএস জঙ্গিদের আগ্রাসন প্রতিরোধের চেষ্টা করছে৷