জার্মান সেনাবাহিনীর ৬ জন সৈন্য ইরাকের উত্তরে কুর্দিস্তানে পৌঁছে গেছে৷ আইসিস বা আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মানবিক ও সামরিক সাহায্য সমন্বয়ের কাজ করবেন তাঁরা৷ সপ্তাহান্তেই অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জার্মানি৷
বিজ্ঞাপন
এরবিল শহরের জার্মান দূতাবাস থেকে ছয়জন জার্মান সৈন্য মানবিক ও সামরিক সাহায্য সমন্বয়ের কাজ চালাবেন৷ তবে তাঁরা কোনো সশস্ত্র অভিযানে অংশ নেবেন না, যেমনটা জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল শুরু থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন৷ ম্যার্কেল আইসিস জঙ্গিদের কার্যকলাপকে ‘গণহত্যা' হিসেবে দেখেন এবং তা বন্ধ করতে অস্ত্র পাঠানোর পক্ষে সওয়াল করছেন৷ জার্মানিতে কুর্দিদের জন্য অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছে৷ সপ্তাহান্তেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার৷
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
তারপর সোমবার জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে৷ বলা বাহুল্য, সেখানে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে সরকার তার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করতে পারবে৷ তবে কিছু অস্ত্র যে পাঠানো হবে, সে বিষয়টা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ জার্মানির দুই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সংগঠনও কুর্দিদের অস্ত্র সরবরাহের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে৷
নিজেদের পুরানো শত্রুতা ভুলে কট্টরপন্থি সুন্নি আইসিস জঙ্গিদের মোকাবিলায় ইরাকি কুর্দিস্তানের পাশে দাঁড়াচ্ছে অ্যামেরিকা থেকে ইরানের মতো দেশ৷ মার্কিন সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মোট সাতটি দেশ কুর্দি পেশমারগা বাহিনীকে অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করবে৷ তারা হলো আলবেনিয়া, ব্রিটেন, ক্যানাডা, ক্রোয়েশিয়া, ডেনমার্ক, ফ্রান্স ও ইটালি৷ আরও দেশ এগিয়ে আসবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল৷ বাগদাদে ইরাকের সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমেই এই আন্তর্জাতিক উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷ উদ্দেশ্য, দক্ষিণে ইরাকি সেনাবাহিনী ও উত্তরে কুর্দি বাহিনী যাতে সাঁড়াশি আক্রমণ চালিয়ে ইসলামি জঙ্গিদের মোকাবিলা করতে পারে৷
এদিকে কুর্দিস্তানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানি বলেছেন, ইরান প্রায় সবার আগে কুর্দিদের অস্ত্র সরবরাহ করতে শুরু করেছে৷ এরবিল শহরে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জরিফের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বারজানি এ কথা বলেন৷ জরিফ বলেন, তাঁর দেশ ইরাকে কোনো সৈন্য পাঠাচ্ছে না৷ তবে ইরাকের ফেডারেল সরকার ও কুর্দিস্তান প্রশাসনকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে তেহরান৷ তিনি ইরাকের ঐক্য ও অখণ্ডতার প্রতি ইরানের সমর্থন প্রকাশ করেন৷ তিনি আরও বলেন, ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ইরান তার নিজস্ব নিরাপত্তা হিসেবে গণ্য করে৷ তাঁর মতে, আইসিস জঙ্গিদের তৎপরতা শুধু আঞ্চলিক নয়, আন্তর্জাতিক মহলের কাছেও বড় হুমকি৷