ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলে অ্যামেরিকা সে দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর হুমকি দিয়েছে৷ জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেন সব পক্ষের উদ্দেশ্যে সংযমের ডাক দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বাগদাদে কাসিম সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডের পর ইরাকের মাটিতে অ্যামেরিকা ও ইরানের সংঘাতের পরিণতি যে ইরাকের বর্তমান শাসকদের জন্য চরম অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা গত কয়েক দিনেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল৷ রবিবার ইরাকের সংসদ দেশের মাটি থেকে মার্কিন ও অন্যান্য বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারের ডাক দিয়ে ঘর সামলানোর চেষ্টা করেছে৷
ওয়াশিংটন অবশ্য ইরাকের এমন আচরণ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় এমন সিদ্ধান্তের পরিণতির পূর্বাভাষ দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, বছরের পর বছর ধরে মার্কিন প্রশাসন ইরাকে সামরিক খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে৷ ইরাক সেই অর্থ ফেরত না দিলে অ্যামেরিকা চলে যেতে প্রস্তুত নয়৷ মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করতে হলে ওয়াশিংটন ইরাকের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপাবে বলেও হুমকি দেন ট্রাম্প৷ ট্রাম্প বলেন, সেই নিষেধাজ্ঞার মাত্রা ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞার মাত্রাকেও ম্লান করে দেবে৷
এদিকে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে বেড়ে চলা উত্তেজনার ফলে ইউরোপে উদ্বেগ বাড়ছে৷ রবিবার জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেন সংযমের ডাক দিয়েছে৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক যৌথ বিবৃতিতে উত্তেজনা কমানোর ডাক দিয়েছেন৷ তাঁরা সব পক্ষের উদ্দেশ্যে চরম সংযম ও দায়িত্ববোধের আবেদন করেছেন৷ এই তিন নেতা ইরানের উদ্দেশ্যে আরও হিংসা এবং পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত কার্যকলাপের ক্ষেত্রে বিশেষ সংযমের ডাক দিয়েছেন৷ ইরাকের স্থিতিশিলতা নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তাঁরা৷ এ প্রসঙ্গে তাঁরা তথাকথিত ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রামকে আগের মতো অগ্রাধিকার দেন৷
পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস চলতি সপ্তাহেই ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছেন৷ পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে ইইউ পর্যায়ে সাধারণ নীতি নির্ধারণের উপর জোর দিচ্ছেন তিনি৷ তাঁর মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে সব পক্ষের সঙ্গে নির্ভরযোগ্য সংলাপের পথ রয়েছে৷ এই সুযোগের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা উচিত বলে তিনি মনে করেন৷
এসবি/কেএম (এপি, রয়টার্স)
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো
ইরাক থেকে তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি৷ আছে হাজারো সৈন্য৷ এই ঘাঁটিগুলো দিয়ে ইরানকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: imago/StockTrek Images
ইরাক
ইরাকে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৫,২০০ সৈন্য রয়েছে৷ তবে তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে পেন্টাগন৷ এর অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি ক্যাম্প থেকে এরিমধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারও করা হয়েছে৷ বর্তমানে গ্রিন জোন, বাগদাদের কূটনৈতিক এলাকা, আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে দেশটির সেনাসদস্য রয়েছে৷ গত নভেম্বরে আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে সৈন্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স৷
ছবি: imago/StockTrek Images
কুয়েত
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র কুয়েত৷ দুই দেশের মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা সহায়তা চুক্তি৷ দেশটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটি৷ যেখানে প্রায় ১৩ হাজার সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/S. Nelson
সিরিয়া
সিরিয়ার কোথায় যুক্তরাষ্ট্রের কত সংখ্যক সৈন্য রয়েছে সে বিষয়টি প্রকাশিত নয়৷ অক্টোবরে সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ তার আগ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ২০০০ সৈন্য ছিল, বর্তমানে যা ৮০০ জনে নেমে এসেছে৷ যেসব ঘাঁটি চালু আছে তার একটি সিরিয়ান-জর্ডান সীমান্তে৷ এর কাছেই রয়েছে ইরানীয় আর তাদের সমর্থিত বাহিনী৷
ছবি: -picture alliance/AP Photo/Z. Garbarino
জডার্ন
ইরাক, সিরিয়া, ইসরায়েল, আর সৌদি আরবের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে জডার্নের৷ কৌশলগত দিক থেকে তাই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থান এটি৷ দেশটির মুভাফফাক ছালটি বিমান ঘাঁটি থেকে সিরিয়ায় আইএস বিরোধী হামলা চালানো হয়েছে৷ অবশ্য কিং ফয়সাল বিমান ঘাঁটিতে ২০১৬ সালে তিন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিল জডার্নের বিমান বাহিনীর গুলিতে৷
ছবি: AP
সৌদি আরব
সৌদি আরবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের তিন হাজার সেনাসদস্য রয়েছে৷ অক্টোবরে সৌদি তেলক্ষেত্রে হামলার পর ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সংঘাতের শঙ্কায় সেখানে আরো সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
বাহরাইন
বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নৌ ঘাঁটি রয়েছে৷ দ্বীপ রাষ্ট্রটি বরাবরই সৌদি আরবের মিত্র৷ ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমর্থকও তারা৷ বর্তমানে সেখানে সাত হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: AP
ওমান
ওমানের অবস্থান হরমুজ প্রণালীর কাছে আরব উপকূলে, যা জ্বালানি পরিবহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথ৷ ২০১৯ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রেকে বিমান ও সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয় ওমান৷ বর্তমানে সেখানে ৬০০ মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Noroozi
সংযুক্ত আরব আমিরাত
হরমুজ প্রণালীর পাশে থাকা আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ তাদেরও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সাথে ভাল সম্পর্ক বিদ্যমান৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে পাঁচ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে পেন্টাগন৷
ছবি: picture-alliance/AP/K. Jebreili
কাতার
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিটি কাতারের আল উদিদে৷ এর আধুনিকায়নে ২০১৮ সালে ১৮০ কোটি ডলারে একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছে কাতার৷ বর্তমানে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ হাজার সৈন্য নিযুক্ত রয়েছে৷
ছবি: Reuters/N. Zeitoon
তুরস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য রয়েছে তুরস্কেও৷ দেশটির ইনজিরলিক বিমান ঘাঁটিসহ বেশ কিছু জায়গায় মার্কিন সেনা অবস্থান করছে৷