ইসলামিক স্টেট বা আইএস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য বাগদাদের কাছে স্থাপিত একটি ঘাঁটি ইরাকিদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট৷ গত কয়েক মাসে এ নিয়ে দেশটির আটটি সামরিক ঘাঁটি হস্তান্তর করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
বিজ্ঞাপন
রোববার ইরাকের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইএনএ-কে খবরটি নিশ্চিত করেছেন দেশটির জয়েন্ট অপারেশন্স কমান্ড এর মুখপাত্র তাহসিন আল-খাফাজি৷ যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সামরিক সদস্যরা ইরাকে সৈন্যদের প্রশিক্ষণে ক্যাম্প তাজি নামে পরিচিত ঘাঁটিটি ব্যবহার করে আসছিল৷ শুধু এটি নয় নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অন্য ক্যাম্পগুলোও তারা হস্তান্তর করবে বলে উল্লেখ করেছেন তাহসিন আল-খাফাজি, যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু তিনি বলেননি৷
ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গত কয়েক বছর ধরেই স্থানীয় বাহিনীগুলোকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট৷ সিরিয়ায় আইএসকে পরাজিত করা কুর্দি বাহিনীকেও সমর্থন যোগাচ্ছে তারা৷ এক্ষেত্রে যে ঘাঁটিগুলো ব্যবহার করা হচ্ছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল তাজি ক্যাম্প৷ বাগদাদের ২০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এই সামরিক স্থাপনা বেশ কয়েকবার ইরান সমর্থিত জঙ্গিদের হামলার শিকার হয়েছে৷
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল-কাদিমি শুক্রবার জানিয়েছেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে ইরাক থেকে সব সৈন্য সরিয়ে নিবে যুক্তরাষ্ট্র৷
এফএস/জেডএ (রয়টার্স, ডিপিএ)
ফেব্রুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...
ইরাকিরা বলছেন, ‘নেদারল্যান্ডসকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে’
বিমান থেকে ফেলা বোমার আঘাতে অন্তত ৭০ জনের প্রাণ গিয়েছিল৷ আহত হয়েছিলেন অনেক মানুষ, সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছিল ব্যাপক৷ ইরাকের হাওইজা শহরের সেই হামলায় ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ চায় নেদারল্যান্ডসের কাছে, চলছে মামলার প্রস্তুতি৷
ছবি: DW/J. Neurink
পাঁচ বছর আগে...
২০১৫ সালের জুলাই মাসের এক রাতে ইরাকের হাওইজা শহরে বোমা হামলা চালায় নেদারল্যান্ডসের যুদ্ধবিমান৷ হামলার লক্ষ্য ছিল তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর ঘাঁটি৷ আন্তর্জাতিক জোট বাহিনীর হয়ে ডাচ বিমান থেকে চালানো সেই হামলায় অন্তত ৭০ জন প্রাণ হারায়, আহত হয় অনেক মানুষ, ধ্বংস হয় ২০০টি দোকান ও অসংখ্যা বাড়িঘর৷
ঘুমন্ত অবস্থায় মৃত্যু
নেদারল্যান্ডসের সংবাদমাধ্যমের উদ্যোগে অবশেষে বেরিয়ে এসেছে অনেক তথ্য৷ জানা গেছে, মূলত আইএস-এর এক বোমা তৈরির কারখানা লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল হামলাটি৷ বিস্ফোরণ এত তীব্র ছিল যে কয়েকশ’ মিটার দূরেও প্রবল কম্পনে ধসে পড়ে বাড়ি-ঘর৷ মোহাম্মদ খালেফ বলেন, ‘‘আমি ঘুমাচ্ছিলাম ছাদে৷ হঠাৎ বাড়ির একটা অংশ ধসে পড়ল৷আমার বাবা-মা ছিলেন নীচ তলায়৷ সেখানে ধ্বংসস্তূপের নীচেই মৃত্যু হয়েছে তাদের৷’’
ছবি: DW/J. Neurink
স্বজনহারা অসহায় মানুষ
বোমা হামলার শিকার আব্দুল্লাহ রামাদান জানালেন, তার বেঁচে যাওয়া সন্তানরা এখনো আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেনি৷ কোনো শব্দ শুনলে বা আকাশে কিছু দেখলেই তারা আঁতকে ওঠে৷ আরেক নারী জানালেন, তার এক চাচাতো ভাইয়ের এখন পাগলপ্রায় অবস্থা, ‘‘এখন সে শুধু ওয়াশিং পাউডার খায়৷ বেঁধে রাখতে হয় তাকে৷’’ আরেক ভুক্তভোগী ফাতিমা দাউদ জানালেন, রাসায়নিকের প্রভাবে তার মেয়ে এখন ক্যানসার আক্রান্ত, অথচ চিকিৎসা করানোর টাকা নেই৷
ছবি: DW/J. Neurink
এক এনজিও আর এক আইনজীবীর উদ্যোগ
ইরাকের বেসরকারি সংস্থা আল-ঘাদ পাঁচ বছর আগের সেই হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করছে৷ উদ্যেশ্য, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবি পূরণের ব্যবস্থা করা৷ কাজ শেষ হলে সব তথ্য তুলে দেয়া হবে লিসবেথ সেগফেল্ডের হাতে৷ নেদারল্যান্ডসের আইনজীবী লিসবেথ তারপর নেদারল্যান্ডস সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলার কাজ শুরু করবেন৷
ছবি: DW/J. Neurink
ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে?
বিষয়টি নিয়ে নেদারল্যান্ডসের সংসদেও আলোচনা হয়েছে৷ সেখানে সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আঙ্ক বিফেল্ড বলেছেন, আন্তর্জাতিক জোটের সহায়তা চেয়েছিল ইরাক সরকার, হামলার ক্ষয়ক্ষতির তথ্যও তারাই গোপন করেছে৷ তিনি জানান, ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করার বিষয়ে শিগগিরই একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে৷