কবে যুদ্ধ শেষ হয়েছে, কিন্তু হিংসা বন্ধ হচ্ছে না ইরাকে৷ বিশেষ করে গাড়ি বোমা হামলার খবর শোনা যায় প্রায়ই৷ এবার অবৈধ গাড়ি শনাক্ত করতে অত্যাধুনিক জার্মান প্রযুক্তির নম্বর প্লেট বসানো হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
মার্কুস ম্যুলার চাপের মধ্যে আছেন৷ তিনি ‘উচ' কোম্পানির মধ্যপ্রাচ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেলস ম্যানেজার৷ কয়েক দিনের মধ্যেই নম্বর প্লেট তৈরির সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় এই যন্ত্র ইরাকে পাঠাতে হবে৷ এখনো তার সফটওয়ার চূড়ান্ত হয়নি৷ ঘণ্টায় ৭৫০টি নম্বর প্লেট তৈরি করবে এই যন্ত্র৷
ইরাকে প্রায়ই অবৈধ গাড়ি কাজে লাগিয়ে গাড়ি বোমা হামলা চালানো হয়৷ তাই গাড়ির বৈধতা প্রমাণ করতে সিকিউরিটি ফিচার্স অত্যন্ত জরুরি৷ ম্যুলার বলেন, ‘‘ইরাকে গাড়ির নম্বর প্লেটের জন্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় করা হয়েছে৷ যেমন অত্যন্ত নিরাপদ এক হলোগ্রাম৷ অক্ষর ও সংখ্যার উপরেও হলোগ্রাফিক ইনস্ক্রিপশন রয়েছে৷ তাছাড়া প্রতিটি প্লেটের উপর লেজার দিয়ে আলাদা ক্রমিক সংখ্যা বসানো হয়েছে৷ মাঝখানে একটি ত্রিমাত্রিক ওয়াটার মার্ক-ও শোভা পাচ্ছে৷''
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে জার্মানির উচ কোম্পানি গাড়ির নম্বর প্লেটের ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে সেরা অবস্থান বজায় রেখেছে৷ বছরে তাদের ব্যবসার অঙ্ক প্রায় ২৫ কোটি ইউরো৷ বাগদাদে যে যন্ত্র পাঠানো হচ্ছে, তার দাম প্রায় ৯ লাখ ইউরো৷ সঙ্গে যন্ত্রাংশ ও ২ বছরের গ্যারেন্টিও রয়েছে৷ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবে স্থানীয় এক কোম্পানি৷ মার্কুস ম্যুলার প্রায় প্রতিদিনই টেলিফোনে বাগদাদে অগ্রগতির খোঁজ নেন৷
নিরাপত্তা পরিস্থিতিই একমাত্র সমস্যা নয়৷ তার উপর রয়েছে ইরাকের জটিল আমলাতন্ত্র৷ প্রথম বড় অর্ডারের প্রস্তুতির ফাইলপত্র একটা গোটা আলমারি ভরিয়ে ফেলেছে৷ কয়েক বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চলছে৷ কোম্পানির সিনিয়র পার্টনার মানফ্রেড উচ সেই ১৯৬৯ সালেই ইরাকে গিয়ে প্রাথমিক যোগাযোগ গড়ে তুলেছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ইরাকে ব্যবসা করা সে সময়েও বেশ কঠিন ছিলো৷ পুলিশ, সেনাবাহিনী, সরকারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হতো৷''
কিন্তু তিনি জানেন, ইরাকে একবার কিছু শুরু হলে সেটা চলতেই থাকে৷ উচ বলেন, ‘‘তাঁরা একবার কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে, তাঁরা সেটা পালন করেন৷ আমি কখনো দেখিনি যে, একজন ইরাকি অথবা একজন আরব কথার খেলাপ করেছে৷ সেই সঙ্গে তাঁরা বেশ অমায়িক ও সহযোগিতার মনোভাব দেখান৷''
ইরাকের পরিস্থিতি আবার স্থিতিশীল হয়ে উঠবে – এ বিষয়ে উচ কোম্পানি বেশ আশাবাদী৷ বিশেষ নিরাপদ নাম্বার প্লেট সরবরাহ করে এই কোম্পানিও ইরাকের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অবদান রাখছে৷