‘ইরাকের ভুল আফগানিস্তানে পুনরাবৃত্তি করলে চলবে না’
১৬ অক্টোবর ২০১৪
চলতি বছরের শেষে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তুতি চলছে৷ পরবর্তী অভিযানও ২০১৬ সালে শেষ হবার কথা৷ এমনটাই ছিল কথা৷ তবে এবার জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল সেই সময়সীমা বাড়ানোর কথা ভাবছেন বলে শোনা যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ প্রায় এক দশকের বিদেশি সামরিক অভিযানের পর আফগানিস্তানের সরকার ও সামরিক বাহিনী নিজস্ব ক্ষমতায় দেশের সুরক্ষা করতে পারবে – এমনটাই আশা করা হচ্ছে৷ অ্যামেরিকা ও জার্মানি সহ দেশগুলিও সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে উদগ্রীব হয়ে রয়েছে৷ এই অবস্থায় জল্পনা-কল্পনা চলছে আইসাফ-পরবর্তী সামরিক সহযোগিতা নিয়ে৷
পরিকল্পনা অনুযায়ী আইসাফ মিশন শেষ হবার পর ‘রেজোলিউট সাপোর্ট' নামের অভিযানের আওতায় প্রায় ১২,০০০ বিদেশি সৈন্য সে দেশে সক্রিয় থাকবে৷ এর আওতায় প্রায় ৮০০ জার্মান সৈন্য ২০১৬ সাল পর্যন্ত সামরিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাবে৷ অর্থাৎ ২০১৭ সাল থেকে আফগানিস্তানে আর কোনো বিদেশি সৈন্য থাকবে না – এমন লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল৷
আফগানিস্তান ত্যাগ করছে জার্মান সেনাবাহিনী
আফগানিস্তানে জার্মান সামরিক বাহিনী ‘বুন্ডেসভেয়ার’ এর কম্ব্যাট মিশন শেষ হচ্ছে ২০১৪ সালে৷ তাই সেনাসদস্যদের সঙ্গে কয়েক হাজার টন যুদ্ধ উপকরণ এবং অন্যান্য পণ্যও ফেরত আনতে হবে৷ বিছানা থেকে শুরু করে বিশাল ট্যাংক রয়েছে তালিকায়৷
ছবি: cc-by/Sebastian Wilke/Bundeswehr
বিশাল কর্মযজ্ঞ
জার্মান সেনাবাহিনীর সাড়ে চার হাজারের মতো সেনা সদস্য, সতের শত যান এবং ছয় হাজারের মতো কন্টেইনার রয়েছে আফগানিস্তানে৷ ২০১৪ সালে আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক বাহিনী আইসাফ এর কর্মকাণ্ড শেষ হওয়ার আগেই জার্মান সেনাবাহিনীর অনেক সম্পদ ফিরিয়ে আনা হবে৷ এই সম্পদের মধ্যে মেশিনগান থেকে শুরু করে পঞ্চাশ টন ওজনের ট্যাংক রয়েছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Bienert
ট্রাবজন হাব
হিন্দুকুশ থেকে বিভিন্ন পণ্য ফিরিয়ে আনতে জার্মানি যে দুটি হাব ব্যবহার করছে তার একটি তুরস্কের ট্রাবজন৷ এই বন্দর হয়ে জার্মানিতে পৌঁছাবে বুন্ডেসভেয়ার-এর বিভিন্ন পণ্য৷ তবে আফগানিস্তান থেকে ট্রাবজন পর্যন্ত পণ্য পৌঁছানোর প্রক্রিয়া সহজ নয়৷
ছবি: cc-by-nd/Sebastian Wilke/Bundeswehr
পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার
গত এগারো বছরের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে অবস্থান করছে জার্মান সেনাবাহিনী৷ তাদেরকে মূলত সেদেশের উত্তরে মোতায়েন করা হয়েছিল৷ ইতোমধ্যে অনেক ক্যাম্প খালি করা হয়েছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Bienert
সবাই সম্ভবত ফিরছেন না
২০১৪ সালের শেষ নাগাদ সম্ভবত সকল জার্মান সেনা ঘরে ফিরবেন না৷ জার্মানি আইসাফের ম্যান্ডেট মেনে আটশো সেনা আরো দীর্ঘ সময়ের জন্য আফগানিস্তানে রাখতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সব পণ্য ফিরবে না
আফগানিস্তানে পাঠানো কিছু জার্মান পণ্য ফেরত আনা হবে না৷ কিছু পণ্য বিক্রি অথবা ধ্বংসে করে ফেলা হবে৷ তবে অস্ত্রশস্ত্র কন্টেইনারে ভরে নিয়ে আসা হবে৷ ইতোমধ্যে এসব পণ্য জমা করা শুরু হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আরেক হাব: মাজার-ই-শরিফ
আফগানিস্তান থেকে জার্মান সেনাবাহিনীর পণ্য ফিরিয়ে আনার আরেকটি হাব হচ্ছে মাজার-ই-শরিফ৷ সে দেশের চতুর্থ বড় এই শহর থেকে অধিকাংশ পণ্য বিমানে পরিবহন করা হচ্ছে৷ তবে পাকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং তাজাকিস্তান হয়ে সড়ক পথেও কিছু পণ্য ফেরত আনা হবে৷ তবে নিরাপত্তার কারণে বেশি পণ্য এভাবে পরিবহন হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রক্ষণাবেক্ষণ এবং জীবাণুমুক্তকরণ
জার্মান সেনাবাহিনীর এসব পণ্যের মাধ্যমে আফগানিস্তান থেকে কোন জীবাণু যাতে জার্মানিতে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য এসব পণ্য জীবাণুমুক্ত করা হবে৷ জার্মানিতে এসব পণ্য প্রবেশের আগেই এটা করা হবে৷
ছবি: Bundeswehr - PIZ SKB/Foto: Vanita Schanze
বিমানে আফগানিস্তান ত্যাগ
বড় এবং ভারি যানবাহন পরিবহনের মতো বিমান জার্মান সামরিক বাহিনীর নেই৷ ফলে ছবির এই বিশাল সামরিক যান পরিবহনের জন্য একটি ইউক্রেনীয়-রাশিয়ান কনসর্টিয়ামের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে৷ এই ব্যবস্থায় প্রত্যেক উড়ালে ৩৭ মিটার দীর্ঘ জায়গায় ১৫০ টন পণ্য পরিবহন সম্ভব হচ্ছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Weinrich
সরাসরি জার্মানিতে ফেরত
অস্ত্র এবং কারিগরিভাবে সংবেদনশীল বিভিন্ন পণ্য বিমানে আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফ থেকে সরাসরি জার্মানিতে ফেরত আনা হচ্ছে৷ ছবির ট্যাংকটি এই সুবিধা পাচ্ছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Schmidt.
বাকি পণ্য আসছে তুরস্ক হয়ে
অস্ত্রবিহীন গাড়ি, রেডিও এবং তাঁবুর মতো পণ্য সরাসরি জার্মানিতে আনা হচ্ছে না৷ আফগানিস্তান থেকে বিমানে এগুলো তুরস্কের ট্রাবজন বন্দরে আনা হচ্ছে৷
ছবি: cc-by/Sebastian Wilke/Bundeswehr
জাহাজে প্রত্যাবর্তন
ট্রাবজন বন্দরে জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য কাজ করছেন ১৭০ ব্যক্তি৷ এই বন্দর থেকে ত্রিশ হাজার বর্গমিটার পণ্য জাহাজে জার্মানিতে পাঠাতে কাজ করছেন তারা৷ সমুদ্রপথে বিভিন্ন পণ্য ট্রাবজান থেকে জার্মানিতে পোঁছাতে সময় লাগে দুই সপ্তাহের মতো৷
ছবি: Bundeswehr - PIZ SKB/Foto: Vanita Schanze
11 ছবি1 | 11
জার্মানির ‘ডেয়ার স্পিগেল' পত্রিকা জার্মান সরকারের নীতি সম্পর্কে গত সপ্তাহান্তে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগ-এর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক কমিটির এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এ বিষয়ে তাঁর সরকারের মনোভাব প্রকাশ করেছেন বলে সেই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে৷
‘ডেয়ার স্পিগেল'-এর দাবি, ম্যার্কেল এখন সেই সময়সীমা বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ আফগান পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বর্তমান অবস্থা দেখে তিনি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন৷ আসলে অ্যামেরিকা ও ন্যাটোর পরিকল্পনা সম্পর্কে তাঁর মনে বেশ সংশয় রয়েছে৷ ইরাকের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে ম্যার্কেল উপস্থিত সাংসদদের বলেন, সে দেশ থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর ইরাকি বাহিনী এতই দুর্বল হয়ে পড়েছে, যে আজ তারা আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাতে পারছে না৷ তাই অ্যামেরিকার সঙ্গে তিনি আফগানিস্তানের বিষয়ে আরও আলোচনা করতে চান৷
সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, সময়সীমা স্থির করার ক্ষেত্রে নমনীয়তা অর্থবহ হবে৷ কারণ জার্মানি আফগানিস্তানের দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখতে চায়৷ সেই প্রক্রিয়ায় কত সময় লাগবে, এই মুহূর্তে তা বলা যাচ্ছে না৷