দীর্ঘ আড়াই মাস পর আবারো বাংলাদেশ থেকে ইরাকে কর্মী পাঠানো শুরু হয়েছে৷ অন্যদিকে লেবাবন থেকে সেখানে জন্মগ্রহণকারী বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো৷
বিজ্ঞাপন
ইরাকে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট-এর (আইএস) সদস্য ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে লড়াইয়ের কারণে প্রায় আড়াই মাস বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ ছিল৷ তবে গত মঙ্গলবার থেকে সেখানে আবার কর্মী পাঠানো শুরু করেছে বাংলাদেশ৷ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার ৩০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক ইরাকের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন৷ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত গেছেন আরও ৩০ জন৷
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো জানায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ৯২ জনকে ইরাকে যাওয়ার ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে৷ প্রবাসী কল্যাণ সচিব খন্দকার শওকত হোসেন বলেন, ‘‘মঙ্গলবার থেকে আমরা বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া শুরু করেছি৷ আমরা ইরাক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি৷ ধীরে ধীরে ছাড়পত্র দেওয়ার সংখ্যা আমরা বাড়াবো৷''
ইরাকের তিকরিত, মসুলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আইএস জঙ্গি ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে লড়াইয়ের কারণে গত ১৪ই জুন থেকে কর্মী পাঠানো বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ৷ এমনকি দুই পক্ষের লড়াইয়ের কারণে ইতিমধ্যে কয়েকশ' বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফিরতে বাধ্য হন৷
একসময় বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার ছিল ইরাক৷ ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধ এবং ২০০৩ সালে মার্কিন অভিযানের কারণে ইরাকে কর্মী পাঠানো দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল৷ ২০০৯ সালে ৪১২ জন কর্মী যাওয়ার মধ্যে দিয়ে ইরাকে আবার বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো শুরু হয়৷
২০১৩ সাল থেকে কর্মী পাঠানোর সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ ঐ বছর সাত হাজার ৪৫৬ জন এবং চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ছয় হাজার ৩৪ জন কর্মী ইরাকে যান৷ তবে যুদ্ধাবস্থার কারণে জুনের মাঝামাঝি লোক পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়৷
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
ইরাকে এখন ১৫ হাজার বাংলাদেশি বৈধভাবে অবস্থান করছেন৷ তবে সেখানে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে এখন মোট ৫০ হাজার বাংলাদেশি আছেন৷
বাগদাদে বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, ইরাকের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে৷ ফলে আবার বাংলাদেশি কর্মীরা যেতে শুরু করেছেন৷ তবে যাঁরা যাচ্ছেন সতর্কভাবে চলাফেরার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷
অন্যদিকে লেবাননে জন্মগ্রহণকারী বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের সন্তানদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ সব সন্তানের মাকেও ফেরত পাঠানো হবে৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) এ তথ্য প্রকাশ করেছে৷ বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনস, ঘানা, দক্ষিণ সুদান ও মাদাগাস্কার-এর শ্রমিকদের ব্যাপারেও একই ব্যবস্থা নিচ্ছে লেবানন৷
এইচআরডাব্লিউ-র প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক দিন ধরে লেবাননে বসবাস করছেন, এমন প্রায় এক ডজন অভিবাসী নারী শ্রমিক এ বছরের মে মাস থেকে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে অভিযোগ জানানো শুরু করেন৷ তাঁদের অভিযোগ হলো, তাঁরা নিজেদের এবং তাঁদের সন্তানদের লেবাননে বসবাসের কাগজ-পত্র নবায়ন করতে গেলে তাঁদের ফিরিয়ে দেয়া হয়৷ কাউকে কাউকে বলা হয়, ‘‘তোমাদের সন্তানদের এখানে থাকার অনুমতি নেই৷'' এ কথা বলে তাঁদের অল্প দিনের মধ্যে দেশত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়৷ তাঁরা বলেন, কাউকে আবার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেশ ছাড়তে বলা হয়৷