ইরাকের উত্তরে সংখ্যালঘুদের সম্ভাব্য গণহত্যা এড়াতে এবং আইসিস জঙ্গিদের আগ্রাসন বন্ধ করতে প্রয়োজনে মার্কিন বিমান বাহিনী হামলা চালাতে পারে৷ ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের জন্য এরই মধ্যে ত্রাণ সাহায্য পাঠাতে শুরু করেছে ওয়াশিংটন৷
বিজ্ঞাপন
আবার ইরাকে মার্কিন সেনা অভিযানের পথ খুলে দিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ এবারের লক্ষ্য দেশের উত্তরে গণহত্যার আশঙ্কা দূর করা৷ এই অভিযানের লক্ষ্য সংখ্যালঘু ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের জন্য আকাশ থেকে খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ করা এবং প্রয়োজনে আইসিস জঙ্গিদের উপর হামলা চালানো৷ ত্রাণ বণ্টনের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে৷ তাদের আগ্রাসী অভিযানের ফলে ইয়াজিদিরা অবরোধের মুখে পড়েছে৷ মাউন্ট সিঞ্জার এলাকায় খোলা আকাশের নীচে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে তারা৷ খ্রিষ্টীয় সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষও ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে৷ তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর কারাকশ-ও এখন জঙ্গিদের দখলে৷
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে দক্ষিণে প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকির শিয়া-প্রধান প্রশাসন অতীতের দ্বন্দ্ব ভুলে উত্তরের কুর্দি পেশমার্গা যোদ্ধাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে৷ এবার ইরাকি সেনাবাহিনী ও কুর্দি যোদ্ধাদের সাহায্য করতে বিমান হামলা চালাতে পারে মার্কিন বাহিনীর এয়ার আর্মাডা৷ আরবিল শহরে মার্কিন কনসুলেট বিপন্ন হলে অথবা ইরাকের অন্য প্রান্তে কোনো মার্কিন স্থাপনার উপর হামলার আশঙ্কা দেখা দিলেও অ্যামেরিকা আক্রমণ চালানোর হুমকি দিয়েছে৷
কট্টরপন্থি সুন্নি গোষ্ঠী আইসিস সিরিয়া ও ইরাকে এক ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়৷ তাদের চরমপন্থি মতাদর্শের সঙ্গে একমত না হলেই চলে হামলা ও নিপীড়ন৷ বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চালিয়ে তাদের তাড়িয়ে দেয় তারা৷
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
সংকটের এই মুহূর্তে ইরাকের পাশে দাঁড়াচ্ছে জাতিসংঘও৷ নিরাপত্তা পরিষদ ইরাকের সরকার ও জনগণের প্রতি সংহতি ব্যক্ত করেছে৷ মহাসচিব বান কি-মুন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে ইরাকের সরকারের প্রতি সহায়তার ডাক দিয়েছেন৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ প্রয়োজনে এই যুদ্ধে লিপ্ত সৈন্যদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন৷
নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে সামরিক হামলা চালানোর ছাড়পত্র দিলেও ওবামা আবার ইরাকে পুরোপুরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চান না৷ বিশেষ করে ইরাকের মাটিতে মার্কিন স্থলবাহিনীর কোনো উপস্থিতি দেখতে চান না তিনি৷ মার্কিন জনগণের মনে বুশ আমলের ইরাক অভিযানের ক্ষত এখনো দূর হয় নি৷ মানবিকতার খাতিরে সম্ভাব্য গণহত্যা এড়াতেই সীমিত হামলা চালাতে প্রস্তুত অ্যামেরিকা৷ তবে এই সীমিত সহায়তায় কোনো কাজ হবে কিনা, তা নিয়ে সামরিক বিশেষজ্ঞরা একমত নন৷ কিন্তু আইসিস জঙ্গিরা যেভাবে সিরিয়া ও ইরাকে একের পর এক অঞ্চল দখল করে ফেলছে, পরে তা সামলানো আরও কঠিন হবে৷ শুক্রবারই তারা সিরিয়ার এক সামরিক ঘাঁটি দখল করেছে৷ ইরাকি কুর্দিস্তানের সীমান্তেই তাদের থামানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে ইরাকি ও কুর্দি পেশমার্গা বাহিনী৷ এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন কৌশলগত সহায়তার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে৷ মনে রাখতে হবে, ইরাকের বিশাল পেট্রোলিয়াম ভাণ্ডারের একটা বড় অংশই কুর্দিস্তান এলাকায় অবস্থিত৷