ইরাকে ইরানপন্থি বাহিনীর উপর মার্কিন হামলা। তার আগে ইরানপন্থিরা মার্কিন সেনার উপর আক্রমণ চালায় বলে অভিযোগ।
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন জানিয়েছেন, ''এই প্রত্যাঘাত জরুরি ছিল। কারণ, ইরানের মদতপুষ্ট বাহিনী এর আগে মার্কিন সেনার উপর হামলা করে। একজন মার্কিন সেনার অবস্থা সংকটজনক। আরো দুইজন আহত হয়েছেন।''
সাবেক টুইটার ও বর্তমানে এক্স-এ অস্টিন লিখেছেন, ''মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে ইরাকে কাতাইব হেজবল্লাহ ও তাদের সহযোগী গোষ্ঠীগুলির উপর তিন জায়গায় আক্রমণ করা হয়েছে। ইরাক ও সিরিয়ায় অ্যারিকার সেনার উপর একাধিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রত্যাঘাত করা হয়েছে।''
অস্টিন বলেছেন, ''মঙ্গলবার ভোরে ইরানের মদতপুষ্ট বাহিনীর আক্রমণে আহত মার্কিন সেনার জন্য তিনি প্রার্থনা করছেন।''
ইরাক যুদ্ধের ২০ বছর, প্রাণহানি থেমে নেই
২০ বছর আগে ২০০৩ সালের ১৯-২০ মার্চ রাতে ইরাকে হামলা শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ এর পেছনে দুটি কারণ দেখিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ দুটোই পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয়৷ সেই ইরাকে এখনও প্রাণহানি থেমে নেই৷
ছবি: Nicoletti/dpa/picture alliance
মিথ্যা কারণ দেখিয়ে যুদ্ধ শুরু
২০০৩ সালের ১৯-২০ মার্চ রাতে ইরাকে হামলা শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ এর পেছনে দুটি কারণ দেখিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ দুটোই পরে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়৷ প্রথমত যুদ্ধের পর ইরাকে কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্র পাওয়া যায়নি৷ দ্বিতীয়ত নাইন ইলেভেনের পেছনে ইরাকের কোনো ভূমিকা ছিল না৷ ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গেও সাদ্দাম হোসেনের কোনো সংযোগ ছিল না৷ ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ছিল যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও পোল্যান্ড৷
ছবি: Nicoletti/dpa/picture alliance
জাতিসংঘে প্রমাণ উপস্থাপন
২০০৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল জাতিসংঘে ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার ‘প্রমাণ’ দিয়েছিলেন৷ ইরাক পরমাণু শক্তিধর হতে চায় বলেও দাবি করেছিলেন তিনি৷ তবে ক্ষমতা ছাড়ার পর কলিন পাওয়েল যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে তার ভূমিকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন৷ জাতিসংঘে দেয়া বক্তব্যটি তার ক্যারিয়ারের একটি ‘কলঙ্ক’ বলেও আখ্যায়িত করেছিলেন৷
ছবি: AFPI/dpa/picture alliance
সাদ্দামকে সরাতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র
কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের সিনিয়র ফেলো স্টেফান ভেয়ার্টহাইম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পার্সিয়ান গালফ যুদ্ধে উতরে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে অবজ্ঞার প্রতিনিধি ছিলেন সাদ্দাম৷ মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার আধিপত্য বিস্তারেও বাধা ছিলেন তিনি৷’’ তাই নাইন ইলেভেনের অনেক আগেই সাদ্দামকে সরাতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ টুইন টাওয়ার হামলার পর নাগরিকদের মনে তৈরি হওয়া ক্ষোভকে বুশ প্রশাসন কাজে লাগিয়েছিল, বলেন তিনি৷
ছবি: Ahmad Al-Rubaye/dpa/picture-alliance
আগে সিদ্ধান্ত, পরে প্রমাণ খোঁজা
যুদ্ধ শুরুর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মিথ্যা তথ্য দেয়া প্রসঙ্গে হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের স্টেফান ওয়াল্ট বলেন, ‘‘বিষয়টা এমন ছিল যে, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তারা এটা (হামলা) করতে চান এবং সেজন্য বিভিন্ন কারণ সামনে নিয়ে এসেছেন৷ বিষয়টা এমন না যে, গোয়েন্দা তথ্যের কারণে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Sabah Arrar/dpa/picture-alliance
প্রাণহানি
হামলা শুরুর তিন সপ্তাহ পর ১ মে যুদ্ধ জয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ৷ পেন্টাগনের হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরাকে ২৯ হাজার ১৬৬টি বোমা ও রকেট ফেলেছিল৷ সাত হাজারের বেশি সাধারণ নাগরিক মারা গিয়েছিল বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ এনজিও ‘ইরাক বডি কাউন্ট’৷
ছবি: Stephen Jaffe/AFP/Getty Images
প্রাণহানি থেমে নেই
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর দীর্ঘ ও প্রাণঘাতী রক্তপাতের শুরু হয়েছিল৷ ২০০৬ সালে ‘ল্যানসেট’ মেডিকেল জার্নাল সাড়ে ছয় লাখ ‘অতিরিক্ত মৃত্যুর’ কথা জানিয়েছিল৷ এখনও মৃত্যু থেমে নেই৷ গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইরাকে গোলাগুলি, বোমাসহ অন্যান্য হামলায় কমপক্ষে ৫২ জন সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারান৷
ছবি: picture-alliance/AP
‘সম্পূর্ণ ব্যর্থ ছিল’
২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘প্রোজেক্ট সিন্ডিকেট’-এর জন্য লেখা এক সংবাদভাষ্যে ন্যাটোর সাবেক মহাসচিব হাভিয়ের সোলানা ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘‘হামলার উদ্দেশ্য যদি ইরাককে সন্ত্রাসমুক্ত করা, পুনর্গঠন করা এবং সর্বস্তরে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে, তবে তা সম্পূর্ণ ব্যর্থ ছিল৷’’
ছবি: Dave Chan/AFP/Getty Images
‘জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন’
জার্মানির গ্যোটিঙ্গেনের গেওর্গ-আউগুস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিশেষজ্ঞ কাই আম্বোস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ইরাকে হামলা জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন ছিল৷
ছবি: Karim Sahib/dpa/picture alliance
যুক্তরাষ্ট্রের সুনাম ধ্বংস
২০০৪ সালের শুরুতে ইরাকের আবু গারিব কারাগারের কথা বিশ্ববাসী জেনেছিল৷ কারণে সাদ্দাম হোসেনের আমলে কুখ্যাত হিসেবে পরিচিত কারাগারটির অবস্থা মার্কিন নিয়ন্ত্রণেও খুব একটা পরিবর্তিত হয়নি৷ বরং মার্কিন সেনাদের দ্বারা বন্দিদের নির্যাতনের বিভিন্ন ছবি সেই সময় প্রকাশিত হয়েছিল৷ প্রথমে মিথ্যা কারণ দেখিয়ে যুদ্ধ করা, পরে বন্দি নির্যাতনের ছবি বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের সুনাম আরও নিচে নামিয়ে দিয়েছিল৷
ছবি: AP/picture alliance
যুদ্ধে জার্মানির ভূমিকা
জার্মানি ইরাক যুদ্ধে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল৷ তবে জার্মানির আকাশ দিয়ে বিমান ওড়ার অনুমতি, জার্মানিতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটির নিরাপত্তা বিধান এবং আর্থিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে জার্মানি সহায়তা করেছিল৷ সে কারণে বার্লিন ‘আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি কাজে সহায়তা ও প্ররোচনা’ দিয়েছিল বলে মনে করেন আম্বোস৷
ছবি: Campbell/dpa/picture alliance
10 ছবি1 | 10
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ''অ্য়ামেরিকাকে রক্ষা করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বাইডেন দ্বিধা করবেন না। আমি এটও স্পষ্ট করতে চাই, বাইডেন এবং আমি অ্যামেরিকা, অ্যামেরিকার মানুষ ও সেনার স্বার্থরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো পদক্ষেপ নেব।'' অস্টিন বলেছেন, ''ওই অঞ্চলে আমরা বিরোধ বাড়াতে চাই না। কিন্তু আমাদের মানুষ ও নাগরিকদের স্বার্থে, আমাদের তৈরি করা ব্যবস্থা রক্ষার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতেও আমরা দ্বিধা করব না।''
কাতাইব হেজবোল্লাহ ২০০৭ সালে ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডের সাহায্যে একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠী তৈরি করেন। ২০০৯ সালে অ্যামেরিকা তাদের বিদেশি জঙ্গি সংগঠন বলে ঘোষণা করে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো
ইরাক থেকে তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি৷ আছে হাজারো সৈন্য৷ এই ঘাঁটিগুলো দিয়ে ইরানকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: imago/StockTrek Images
ইরাক
ইরাকে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৫,২০০ সৈন্য রয়েছে৷ তবে তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে পেন্টাগন৷ এর অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি ক্যাম্প থেকে এরিমধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারও করা হয়েছে৷ বর্তমানে গ্রিন জোন, বাগদাদের কূটনৈতিক এলাকা, আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে দেশটির সেনাসদস্য রয়েছে৷ গত নভেম্বরে আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে সৈন্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স৷
ছবি: imago/StockTrek Images
কুয়েত
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র কুয়েত৷ দুই দেশের মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা সহায়তা চুক্তি৷ দেশটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটি৷ যেখানে প্রায় ১৩ হাজার সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/S. Nelson
সিরিয়া
সিরিয়ার কোথায় যুক্তরাষ্ট্রের কত সংখ্যক সৈন্য রয়েছে সে বিষয়টি প্রকাশিত নয়৷ অক্টোবরে সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ তার আগ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ২০০০ সৈন্য ছিল, বর্তমানে যা ৮০০ জনে নেমে এসেছে৷ যেসব ঘাঁটি চালু আছে তার একটি সিরিয়ান-জর্ডান সীমান্তে৷ এর কাছেই রয়েছে ইরানীয় আর তাদের সমর্থিত বাহিনী৷
ছবি: -picture alliance/AP Photo/Z. Garbarino
জডার্ন
ইরাক, সিরিয়া, ইসরায়েল, আর সৌদি আরবের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে জডার্নের৷ কৌশলগত দিক থেকে তাই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থান এটি৷ দেশটির মুভাফফাক ছালটি বিমান ঘাঁটি থেকে সিরিয়ায় আইএস বিরোধী হামলা চালানো হয়েছে৷ অবশ্য কিং ফয়সাল বিমান ঘাঁটিতে ২০১৬ সালে তিন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিল জডার্নের বিমান বাহিনীর গুলিতে৷
ছবি: AP
সৌদি আরব
সৌদি আরবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের তিন হাজার সেনাসদস্য রয়েছে৷ অক্টোবরে সৌদি তেলক্ষেত্রে হামলার পর ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সংঘাতের শঙ্কায় সেখানে আরো সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
বাহরাইন
বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নৌ ঘাঁটি রয়েছে৷ দ্বীপ রাষ্ট্রটি বরাবরই সৌদি আরবের মিত্র৷ ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমর্থকও তারা৷ বর্তমানে সেখানে সাত হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: AP
ওমান
ওমানের অবস্থান হরমুজ প্রণালীর কাছে আরব উপকূলে, যা জ্বালানি পরিবহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথ৷ ২০১৯ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রেকে বিমান ও সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয় ওমান৷ বর্তমানে সেখানে ৬০০ মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Noroozi
সংযুক্ত আরব আমিরাত
হরমুজ প্রণালীর পাশে থাকা আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ তাদেরও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সাথে ভাল সম্পর্ক বিদ্যমান৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে পাঁচ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে পেন্টাগন৷
ছবি: picture-alliance/AP/K. Jebreili
কাতার
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিটি কাতারের আল উদিদে৷ এর আধুনিকায়নে ২০১৮ সালে ১৮০ কোটি ডলারে একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছে কাতার৷ বর্তমানে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ হাজার সৈন্য নিযুক্ত রয়েছে৷
ছবি: Reuters/N. Zeitoon
তুরস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য রয়েছে তুরস্কেও৷ দেশটির ইনজিরলিক বিমান ঘাঁটিসহ বেশ কিছু জায়গায় মার্কিন সেনা অবস্থান করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
10 ছবি1 | 10
গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার পর ইরাকে অ্যামেরিকার সেনার উপর আক্রমণের সংখ্যাও বেড়েছে। ইরাকে আড়াই হাজার ও সিরিয়ায় নয়শ মার্কিন সেনা আছে।