ইরাকে আবার কুর্দি -এলাকায় ড্রোন-হামলা করলো ইরান। ১৩ জনের মৃত্যু।
ইরান-বিরোধী কুর্দিদের ১০টি ঘাঁটিকে আক্রমণ ড্রোন-হামলা করেছে ইরান। ছবি: KURDPA
বিজ্ঞাপন
কুর্দি নারী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরান-জুড়ে এখন বিক্ষোভ হচ্ছে। তার মধ্যেই ইরাকে গিয়ে ইরান-বিরোধী বিক্ষুব্ধ কুর্দিদের বিরুদ্ধে আঘাত হানলো তেহরান। ২২ বছর বয়সি আমিনিকে ইরানের নীতি পুলিশ হিজাব না পরার অপরাধে গ্রেপ্তার করেছিল। তারপর তার মৃত্যু হয়।
বুধবার ইরাকি কুর্দিস্তান সন্ত্রাসবিরোধী সার্ভিস জানিয়েছে, ইরানের হামলায় ১৩ জন মারা যাওয়ার পাশাপাশি ৫৮ জন আহত হয়েছেন।
আমিনির মৃত্যু: ইরানে দশম দিনের মতো বিক্ষোভ
01:50
This browser does not support the video element.
ইরানের হামলা সম্পর্কে যা জানা গেছে
ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড 'সুইসাইড ড্রোন' এবং 'প্রিসিশন মিসাইল' ব্যবহার করেছে বলে সরকারি সংবাদসংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে। উত্তর ইরাকে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর ঘাঁটিতে তারা হামলা চালায় বলে তারা দাবি করেছে।
বিরোধী কুর্দিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ ইরান(কেডিপিআই) এই হামলার নিন্দা করেছে। তারা বলেছে, এই আক্রমণ কাপুরুষোচিত। যখন ইরানের সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ সরকার থামাতে পারছে না, কুর্দিদের মুখ বন্ধ করতে পারছে না, তখন তারা এই সন্ত্রাসের রাস্তায় হেঁটেছে।
কেডিপিআই জানিয়েছে, ইরবিল থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরের কোয়া-কে টার্গেট করেছিল ইরান।
কুর্দি কারা, কোথায় থাকে?
কুর্দিশ ইন্সটিটিউট অফ প্যারিসের ২০১৭ সালের হিসেবে বিশ্বে কুর্দিদের আনুমানিক সর্বোচ্চ সংখ্যা সাড়ে চার কোটির বেশি৷ আর্মেনিয়া, ইরাক, ইরান, সিরিয়া ও তুরস্কে বেশিরভাগ কুর্দির বাস৷
ছবি: Reuters/A. Lashkari
কুর্দির সংখ্যা ও ধর্ম
কুর্দিশ ইন্সটিটিউট অফ প্যারিসের ২০১৭ সালের হিসেবে বিশ্বে কুর্দিদের আনুমানিক সর্বোচ্চ সংখ্যা সাড়ে চার কোটির বেশি৷ তাদের বেশিরভাগই সুন্নি মুসলমান৷ বাকিরা শিয়া, অ্যালেভিজম, ইয়াদিজম, ইয়ারসানিজমসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারী৷ কুর্দিদের ভাষা অনেকটা ফার্সির মতো৷
ছবি: AFP/D. Souleiman
স্বাধীনতার প্রায় কাছাকাছি
অটোমান সাম্রাজ্যের শেষ দিকে ১৮৯০ দশকে কুর্দি জাতীয়তাবাদ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২০ সালে স্বাক্ষরিত এক চুক্তিতে কুর্দিদের স্বাধীনতা দেয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছিল৷ কিন্তু মাত্র তিন বছর পরই সেই চুক্তি ছিড়ে ফেলেন তুর্কি নেতা কামাল আতাতুর্ক৷ এরপর ১৯২৪ সালে অনুমোদন পাওয়া আরেক চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্টি হওয়া দেশগুলোর মধ্যে কুর্দিদের আবাসস্থল ভাগ হয়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
যেখানে থাকে
বর্তমানে বেশিরভাগ কুর্দির বাস আর্মেনিয়া, ইরাক, ইরান, সিরিয়া ও তুরস্কে৷ সেসব দেশে তারা মাঝেমধ্যে স্বশাসনের দাবি তুলে ধরে৷ এছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশে কুর্দিরা বাস করেন৷
ছবি: Getty Images/C. Court
সিরিয়া
আরব বসন্ত শুরুর আগে সিরিয়ার জনসংখ্যার ৮-১০ শতাংশ ছিল কুর্দি৷ ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়তে তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ আর সিরিয়ার সরকার মূলত ব্যস্ত ছিল সুন্নি আরব বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করতে৷ ফলে একসময় কুর্দিরা সিরিয়ার প্রায় এক-চতুর্থাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে সক্ষম হয়৷ তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার কুর্দি এলাকা থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিলে তুরস্ক সেখানে হামলা শুরু করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
তুরস্ক
তুরস্কের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ কুর্দি৷ স্বশাসনের দাবিতে ১৯৮৪ সালে সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয় কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি, পিকেকে৷ সেই থেকে সংঘাতে প্রায় ৪০ হাজার জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তুরস্ক পিকেকে-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে৷ তুর্কি প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান অবশ্য কুর্দি ভাষা ব্যবহারের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Al-Khatib
ইরাক
উত্তরাঞ্চলের তিন রাজ্যে কুর্দিদের বাস৷ মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫-২০ শতাংশ৷ ১৯৮০-র দশকে সাদ্দাম হোসেন কুর্দিদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহার করেছিলেন৷ ২০১৪ সালে আইএস ইরাকের একটি অংশ দখল করলে কেন্দ্রীয় সরকার দুর্বল হয়ে পড়ে৷ সেই সুযোগ কির্কুকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিল কুর্দিরা৷ পরে ২০১৭ সালে স্বাধীনতার দাবিতে গণভোটের আয়োজন করে ব্যর্থ হয় তারা৷ উলটো বাগদাদের কাছ থেকে প্রতিশোধের শিকার হয় কুর্দিরা৷
ছবি: picture-alliance/AP/K. Mohammed
ইরান
ইরানের জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ কুর্দি৷ তুরস্কের পিকেকে সংগঠনের অনুসারী ইরানের ‘পার্টি অফ ফ্রি লাইফ অফ কুর্দিস্তান’এর বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি নিয়োগ করা হয়েছিল৷ সংগঠনটি ইরানের কুর্দিদের জন্য আরও বেশি সায়ত্ত্বশাসনের দাবি জানিয়েছিল৷ ইরানের কুর্দিরা বৈষম্যের শিকার ও তাদের নেতাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড, এমনকি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করে থাকে৷
ছবি: IRNA
7 ছবি1 | 7
ইরাক সরকার এবং আঞ্চলিক কুর্দিদের সরকার ইরানের এই হামলার নিন্দা করেছে। ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বাগদাদে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে অত্যন্ত কড়া চিঠি দেয়া হচ্ছে। স্বশাসিত কুর্দিদের বিরুদ্ধে এই আক্রমণ তারা মেনে নেবেন না।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বার্লিন, ওয়াশিংটন, লন্ডন এই হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইরান তাদের দেশে বিক্ষোভের কারণ, অন্যদেশে খুঁজতে চাইছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এটা ইরাকের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার উপর আঘাত। যুক্তরাজ্য় মনে করে, ইরান ওই অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইছে।