তথাকথিত ইসলামী জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঐ নারীকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে ইরাকের আদালত৷ ঐ নারী তাঁর দুই কন্যাকে নিয়ে সিরিয়া ও ইরাকে গিয়ে আইএস-এ যোগ দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
মরোক্কান বংশোদ্ভুত ঐ জার্মান নারী বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি জঙ্গি গ্রুপটিকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ‘সহযোগিতা করেছেন’, এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘হামলায় অংশ নিয়েছেন’৷ এমনটিই জানিয়েছেন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মুখপাত্র আবদুল-সাত্তার বের্কদার৷
তিনি আরো জানান যে, ঐ নারী জার্মানি থেকে দুই কন্যাসহ প্রথমে সিরিয়া ও পরে ইরাকে যান এবং আইএস-এ যোগ দেন৷ তাঁর দুই কন্যা পরে দুই জঙ্গি সদস্যকে বিয়ে করেন৷
গায়ক থেকে জঙ্গি হওয়া সেই জার্মানের মৃত্যু
জার্মানির সবচেয়ে পরিচিত জিহাদি ডেনিস কুসপার্ট সিরিয়ায় মারা গেছেন বলে জানিয়েছে ইসলামিক স্টেটপন্থি একটি ওয়েবসাইট৷ সাইটটিতে তার মৃতদেহের ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে৷ চলুন জেনে নিই কে এই ডেনিস কুসপার্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব়্যাপার থেকে জিহাদি
যখন মিউজিক করতেন তখন লোকে চিনত ‘ডেসো ডগ’ নামে৷ বার্লিনে জন্মগ্রহণ করা কুসপার্ট ২০০৯ সালে সঙ্গীত ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং সালাফিদের সঙ্গে মেশা শুরু করেন৷ ২০১২ সালে মিশর থেকে সিরিয়া গিয়ে নিরুদ্দেশ হন৷ প্রথমে আল কায়েদার অনুসারী আল নুসরায় যোগ দেন৷ পরে ২০১৪ সালে আইএসের সঙ্গে যুক্ত হন৷
ছবি: imago/S. Lambert
আকর্ষণীয় বক্তা কুসপার্ট
‘বিদেশি ভ্রাতাদের’ আইএস-এ আকৃষ্ট করতে বিশেষ ভুমিকা পালন করেন কুসপার্ট৷ ওয়াফা জানায়, আইএস-এর মিডিয়া ডিভিশন তৈরি করতেও ভুমিকা রেখেছেন তিনি৷
ছবি: twitter.com
জঙ্গি হামলার ডাক
ইউরোপে জঙ্গি আক্রমণের ডাক প্রায়ই দিতেন কুসপার্ট৷ কখনো কখনো হিংসাত্মক ভিডিও পোস্ট করতেন৷ জার্মান ভাষাভাষী তরুণদের জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কুসপার্টের প্রেমে এফবিআই কর্মকর্তা
কুসপার্টকে মনিটর করার জন্য এক এফবিআই অনুবাদককে নিয়োগ করা হয়েছিল৷ তিনি কুসপার্টের সঙ্গে দেখা করতে ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে তুরস্ক থেকে সিরিয়া যান৷ সেখানে গিয়ে ঘানাইয়ান বংশোদ্ভুত এই জার্মানের প্রেমে পড়ে যান সেই নারী৷ বিয়ে করেন তাকে৷ পরে অবশ্য ভুল বুঝতে পেরে সেই কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান এবং জেল খাটেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/M. Reynolds
ওয়াফা মিডিয়ার রিপোর্ট
আইএসপন্থি মিডিয়া ওয়াফাতে কুসপার্টের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হয়েছে৷ সেখানে তার মৃতদেহের ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে৷ তাদের তথ্য অনুযায়ী, কুসপার্ট গেল ১৭ জানুয়ারি পূর্ব সিরিয়ার দেইর-আল-জোর রাজ্যে নিহত হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রুপের সমর্থন
জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট অনলাইন সাইটগুলোকে অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ৷ কুসপার্টের মৃত্যু নিয়ে ওয়াফা মিডিয়ার এ রিপোর্টকে সমর্থন জানিয়েছে তারা৷ সাইট ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক রিতা কার্ৎজ টুইটারে লিখেছেন যে, যদিও আইএস এই মৃত্যুর কথা এখনো স্বীকার করেনি, তারপরও ওয়াফা মিডিয়া যেসব তথ্য প্রমাণ হাজির করেছে, তাতে রিপোর্টটি সত্য বলেই মনে হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আগেও মারা গিয়েছিলেন কুসপার্ট!
কুসপারের মৃত্যুর খবর এর আগেও চাউর হয়েছিলো ২০১৫ সালে৷ সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় তিনি মারা গিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছিল৷ পরে পেন্টাগন জানায়, কুসপার্ট মারা যাননি, আহত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ibrahim Erikan
জার্মানিতে জঙ্গিবাদ
স্বল্প পরিসরে হলেও জার্মানিতে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটেছে৷ গেল বছর অক্টোবর মাসে জঙ্গিবাদী গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আবশির নামের এক ব্যক্তিতে দুই বছর দশ মাসের কারাদণ্ড দেন জার্মানির আদালত৷ পরে ওজকান নামের আরেক ব্যক্তিও দুই বছর আট মাস কারাবাসের সাজা পান৷
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি বেড়েছে জার্মানিতে৷ গেল কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন জার্মান নাগরিককে জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতার জন্য সাজা দেয়া হয়েছে৷ ২০১৬ সালে ৮ জনকে আল শাবাবসহ সিরিয়ার জঙ্গিবাদী গ্রুপগুলোতে যোগ দেবার কারণে সাজা দেয়া হয়৷ ২০১১ সালের তুলনায় বার্লিনে সালাফিস্ট সন্ত্রাসীদের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ হয়েছে৷ এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে জার্মানির গোয়েন্দা সংস্থা বিএফভি৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Jaspersen
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিএসজি ৯
সন্ত্রাসের ঝুঁকি বাড়ার কারণে ১৯৭২ সালে মিউনিখে এক ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হত্যাকাণ্ডের পর বিশেষ বাহিনী জিএসজি-৯ গঠন করে জার্মানি৷ বাহিনীর একটি বিশেষ স্কোয়াডকে এখন রাজধানী বার্লিনে নিয়োজিত করা হয়েছে৷ রাজধানীতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়ায় এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে জার্মান পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/U. Baumgarten
10 ছবি1 | 10
গত বছর ইরাকী সেনাদের মোসুল অভিযানের সময় এই নারীকে আটক করা হয়৷ এই প্রথম কোনো বিদেশি নারীকে আইএস-এ যোগ দেয়ার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিল ইরাক৷ তবে ঐ নারী রায়ের বিরুদ্ধে আপীলের সুযোগ পাবেন৷
২০১৪ সালে ইরাক ও প্রতিবেশী সিরিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল আইএস দখল করার পর শত শত বিদেশি যোদ্ধা দলটিতে যোগ দেয়৷ ইরাককে আইএসমুক্ত করার অভিযানের সময় এদের অনেকেই সেনাদের হাতে আটক হন৷
গত সেপ্টেম্বরে এক জার্মান টিনএজ তরুণী আইএসে যোগ দিয়েছে সন্দেহে মোসুলে আটকের খবর নিশ্চিত করে জার্মানির বিচার মন্ত্রণালয়৷
জার্মান নিউজ ম্যাগাজিন ‘ড্যার স্পিগেল’ রিপোর্ট করেছে যে, ঐ তরুণীকে বাগদাদে আরো তিন জার্মান নারীর সঙ্গে বন্দি করা হয়েছে, যাদের একজন মরোক্কান বংশোদ্ভুত৷
লিন্ডা নামের ঐ তরুণী এক চেচেন আইএস যোদ্ধাকে বিয়ে করেন বলে জানা গেছে৷ ধারণা করা হয়, অনেক আইএস যোদ্ধার সহধর্মিনীরা ইরাকি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের সময় পলায়নরত সাধারণ জনগণের সঙ্গে মিশে যান৷
ডিসেম্বরে বাগদাদকে আইএসমুক্ত বলে ঘোষণা করা হলেও রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় এখনো হামলা চালাচ্ছে জঙ্গি দলটি৷